Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তুমি কী ভালোবাসো তা তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে: স্টিভ জবস

স্টিভ জবস প্রযুক্তির জগতে এক প্রবাদ পুরষ। তিনি অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। পৃথিবীর অন্যতম সেরা এনিমেশন স্টুডিও পিক্সার এর অধিকাংশ শেয়ার তাঁর কেনা। তৈরি করেছিলেন নেক্সট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্টিভ জবস কখনও কলেজ পাশ করেননি। কিন্তু জীবনে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে নিজের সৃজনশীলতাকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য মাত্রায়। তিনি ২০০৫ সালের স্ট্যানফোর্ডে সমাবর্তনী বক্তব্য দেন। আজ সেই বক্তব্য ফিরে দেখা যাক।

“পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আমি গর্ব অনুভব করছি। আমি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করিনি। সত্যি বলতে এটাই আমার কলেজ স্নাতকের সবচেয়ে কাছাকাছি আসা। আজ আমি তোমাদের আমার জীবনের তিনটি গল্প বলবো। বড় কোনো ব্যাপার নয়, শুধুই তিনটি গল্প।

স্টিভ জবস; Source: idownloadblog

প্রথম গল্পটি হলো, বিন্দু মেলানো নিয়ে। প্রথম ছয় মাস পরেই আমি রিড কলেজ থেকে ড্রপ আউট হই। কিন্তু আরও ছয় মাস কলেজে আসা-যাওয়া থাকে। তারপর আমি কলেজ একেবারে ছেড়ে দিই। তো আমি কেন কলেজ ছেড়েছি?

এটা শুরু হয়েছিলো আমি জন্ম হওয়ার আগে থেকেই। আমার জন্মদাত্রী মা ছিলেন কম বয়সী কলেজ ছাত্রী। তিনি আমাকে দত্তক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি অনুভব করেছিলেন আমাকে কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের কাছে দত্তক দেয়া উচিত। একজন উকিল ও তাঁর স্ত্রীর আমাকে দত্তক নেবার কথা ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আমার জন্ম হওয়ার পর শেষ মুহূর্তে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন তারা আসলে মেয়ে সন্তান চান।

আমার বাবা-মা, যারা অপেক্ষমান তালিকায় ছিলো, তাঁদের কাছে মাঝরাতে ফোন আসলো, “অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের একটি ছেলে সন্তান হয়েছে, আপনারা কি তাকে চান?” তাঁরা বললেন, “অবশ্যই”। আমার জন্মদাত্রী মা জানতে পারলেন আমার মা কখনও কলেজ পাশ করেননি, আমার বাবা হাই স্কুল পাশ করেননি। তিনি দত্তক নেয়ার চূড়ান্ত কাগজে সই করতে মানা করে দিলেন। কয়েক মাস পর তিনি মন ফেরালেন, যখন আমার বাবা কথা দিলেন আমি একদিন কলেজে যাবো।

সতেরো বছর পর আমি কলেজে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি বোকার মতো এমন একটি কলেজ নির্বাচন করেছিলাম যা ছিল স্ট্যানফোর্ডের মতোই ব্যয়বহুল। আমার বাবা-মায়ের সঞ্চয়ের সব টাকা আমার কলেজের বেতনে খরচ হয়ে যাচ্ছিল। ছয় মাস পরে আমি দেখলাম এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। আমার জীবন নিয়ে আমি কী করবো এর কোনো ধারণা আমার ছিলো না। কলেজ আমাকে এটা বুঝতে কীভাবে সাহায্য করবে এর কোনো ধারণাও আমার ছিলো না। কিন্তু আমি আমার বাবা-মায়ের সারা জীবনের সঞ্চয় খরচ করে যাচ্ছিলাম। তাই কলেজ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আর বিশ্বাস রাখলাম সব ঠিক হয়ে যাবে।

ঐ সময় এই সিদ্ধান্ত খুবই ভয়ঙ্কর ছিলো। কিন্তু পেছন ফেরে তাকালে বুঝি, এটা আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্তগুলোর একটি। কলেজ ছেড়ে দেয়ার পর যে ক্লাসগুলো বাধ্য হয়ে আমাকে করতে হতো কিন্তু আমার ভালো লাগতো না, সেগুলো বাদ দিতে পারতাম। আর যে বিষয়গুলো আমাকে আকর্ষণ করতো সেগুলোতে অংশগ্রহণ করা শুরু করি।

কিন্তু এটা এতটা রোমাঞ্চকর ছিলো না। আমার থাকার জন্য ডর্ম রুম ছিলো না, তাই আমি বন্ধুদের রুমের মেঝেতে ঘুমাতাম। খাবার কেনার জন্য আমি পাঁচ সেন্টের বদলে কোকের বোতল ফেরত দিতাম। সপ্তাহে একবার ভালো খাওয়ার জন্য আমি প্রতি রবিবার ৭ মাইল হেঁটে হরে কৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম। আমি এটা ভালোবাসতাম। আমি আমার কৌতূহল এবং আমার অন্তর্জ্ঞানকে অনুসরণ করে যা করেছি পরবর্তীতে তা অমূল্য হয়ে গিয়েছে। তোমাদের একটি উদাহরণ দেই।

ঐ সময় রিড কলেজে সম্ভবত দেশের সেরা ক্যালিগ্রাফি কোর্স হচ্ছিলো। পুরো ক্যাম্পাসের প্রতিটি পোস্টার, ড্রয়ারের উপর প্রতিটা লেভেল খুব সুন্দরভাবে হাতে ক্যালিগ্রাফ করা ছিলো। যেহেতু আমি কলেজ ছেড়ে দিয়েছিলাম এবং আমাকে সাধারণ ক্লাস করতে হতো না, আমি এটা শেখার জন্য ক্যালিগ্রাফি ক্লাসে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি সারিফ সান সারিফ টাইপফেইস শিখেছিলাম এবং বিভিন্ন বর্ণের মধ্যকার ফাঁকা স্থান পরিবর্তন করা শিখেছিলাম, যা সাধারণ টাইপোগ্রাফিকে অসাধারণ করে তোলে। এটা ছিলো সুন্দর, শিল্পের বিচারে নিগূঢ়। আমার কাছে এটা আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।

এর কিছুই আমার ব্যক্তিগত জীবনে দরকার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিলো না। কিন্তু দশ বছর পর যখন আমরা ম্যাকিন্টোস কম্পিউটার নকশা করছিলাম তখন এর পুরোটুকুই দরকারি হয়ে পড়ে। আমরা ম্যাকে এটা ব্যবহার করেছি। সুন্দর টাইপোগ্রাফির সাথে ছিলো এটা প্রথম কম্পিউটার। আমি যদি ঐ কোর্সটি না করতাম, ম্যাকের বহু টাইপফেইস এবং সমানুপাতিক স্পেস ফন্ট থাকতো না। যেহেতু উইন্ডোজ ম্যাককে নকল করেছে, তাই অন্য কোনো কম্পিউটারের হয়তো এই টাইপফেইস থাকতো না। অবশ্যই কলেজের সময় এই বিন্দুগুলো যোগ করা সম্ভব ছিলো না। কিন্তু দশ বছর পেছন ফেরে তাকালে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়।

 ম্যাকন্টোসের সাথে স্টিভ জবস; Source: finance news 24

আমার দ্বিতীয় গল্পটি হলো ভালোবাসা এবং ক্ষতি নিয়ে। আমি ভাগ্যবান, কারণ আমি যা করতে ভালোবাসি তা জীবনে তাড়াতাড়ি খুঁজে পেয়েছিলাম। বিশ বছর বয়সে আমি ও ওজ আমার বাবা-মায়ের গ্যারেজে অ্যাপল শুরু করেছিলাম। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম এবং ১০ বছরে অ্যাপল গ্যারেজ থেকে শুরু করে ৪০০০ কর্মচারীর ২ বিলিয়ন ডলারের একটা কোম্পানিতে পরিণত হয়। আমরা আমাদের সেরা সৃষ্টি ম্যাকিন্টোস বাজারে ছাড়ি এবং এর পরের বছর আমার ত্রিশ বছর পূর্ণ হয়।

সে বছরই আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। যে কোম্পানি আপনি তৈরি করেছেন ওখান থেকে আপনাকে বের করে দেয়া কীভাবে সম্ভব? অ্যাপল যখন প্রসার পাচ্ছিলো তখন আমরা একজনকে ঠিক করি। যাকে আমি মনে করেছিলাম খুবই মেধাবী, যে কি না আমার সাথে কোম্পানি চালাতে পারে। প্রথম এক বছরের মতো সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছিলো। কিন্তু তারপর আমাদের ভবিষ্যৎ ভাবনায় পার্থক্য দেখা দেয় এবং আমাদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। তখন আমাদের বোর্ড অফ ডিরেক্টরস তার পক্ষ নেয়। তাই ৩০ বছর বয়সে আমি চাকরিচ্যুত হই এবং প্রকাশ্যভাবেই হই। আমার প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের সকল ধ্যান-সাধনা মুহূর্তেই হারিয়ে গিয়েছিলো এবং এটা আমাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলো।

স্টিভ জবস এবং ওজ; Source: cnbc

কয়েকমাসের জন্য আমি জানতাম না আমি কী করবো। আমার মনে হচ্ছিলো গত প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের আমি হতাশ করেছি। আমার কাছে যে ব্যাটন দেয়া হয়েছিলো তা আমি ফেলে দিয়েছি। আমি ডেভিড পার্কার এবং জব নয়েসের সাথে দেখা করি এবং সব কিছু নষ্ট করে দেয়ার জন্য তাদের কাছে ক্ষমা চাই। আমি সবার কাছে ব্যর্থ হিসেবে পরিচিত ছিলাম এবং এমনকি আমি উপত্যকা থেকে পালিয়ে যেতেও চেষ্টা করি। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি একটা জিনিস বুঝতে শুরু করলাম। আমি এখনও আমার কাজ করতে ভালোবাসি। অ্যাপলে আমার ব্যর্থতা আমার কাজের প্রতি ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমাতে পারেনি। আমি প্রত্যাখ্যাত হয়েছি, কিন্তু আমি কাজের ভালোবাসায় মগ্ন ছিলাম। আমি আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

আমি তখন এটি বুঝতে পারিনি, কিন্তু পরে বুঝি অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুত হওয়া থেকে ভালো কিছু আর ছিলো না। সাফল্যের ভারের পরিবর্তে এসেছিলো একজন নবীশ হওয়ার মতো হালকা অনুভূতি। সবকিছু সম্পর্কে আরেকটু কম নিশ্চিত। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল পর্যায়ে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।

পরবর্তী পাঁচ বছরে আমি নেক্সট এবং পিক্সার নামে দুটি কোম্পানি শুরু করি এবং একজন অসাধারণ নারীর প্রেমে পড়ি, যে পরে আমার স্ত্রী হয়। পিক্সার পৃথিবীর প্রথম অ্যানিমেটেড মুভি ‘টয় স্টোরি’ তৈরি করে। বর্তমানে পিক্সার পৃথিবীর সেরা অ্যানিমেশন স্টুডিও। এতসব ঘটনার পরে অ্যাপল নেক্সট কিনে নেয় এবং আমি অ্যাপলে ফিরে যাই। নেক্সটে আমরা যে প্রযুক্তি তৈরি করেছিলাম তা এখন অ্যাপলের মাঝে রেনেসাঁ হিসেবে কাজ করছে। আমি এবং লরেন্স সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছি।

টয় স্টোরির পোস্টার; Source: impawards

আমি মোটামুটি নিশ্চিত, অ্যাপল থেকে আমাকে চাকরিচ্যুত না করলে এর কিছুই হতো না। এটা ছিলো এক বিদঘুটে ওষুধ। কিন্তু রোগীর এই ওষুধ দরকার ছিলো। মাঝে মাঝে জীবন তোমাকে দারুণভাবে আঘাত করবে। বিশ্বাস হারিও না। একটা জিনিসই আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েছিলো, আর তা হলো আমি সেই কাজই করেছিলাম যা আমি ভালোবাসি।

তুমি কী ভালোবাসো তা তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে। তোমার প্রিয়ার জন্য তা যেমন সত্যি, তোমার কাজের জন্যও এ কথা সত্যি। তোমার কাজ তোমার জীবনের বড় একটা অংশ পূরণ করবে। তাই তৃপ্ত হওয়ার একমাত্র উপায় হলো তুমি সেই কাজই করো যা তুমি অসাধারণ কাজ বলে মনে করো। আর অসাধারণ কাজ করার উপায় হলো যে কাজ করবে তাকে ভালোবাসা। তুমি যদি এখনও সে কাজ খুঁজে না পাও তাহলে খুঁজতে থাকো। থেমো না। তুমি যখন সেই কাজ পাবে তোমার হৃদয় তা জানান দেবে। প্রতিটা সুন্দর সম্পর্কের মতো যত বছর যেতে থাকবে, কাজের সাথে তোমার সম্পর্কও ভালো হতে থাকবে। তাই সেই কাজ কী বুঝতে পারার আগপর্যন্ত থেমো না, খুঁজতে থাকো।

আমার তৃতীয় গল্পটি হলো মৃত্যু নিয়ে। আমার বয়স যখন ১৭ বছর তখন আমি একটি উক্তি পড়েছিলাম, “তুমি যদি প্রতিটি দিন জীবনের শেষ দিন হিসেবে ভাবো, একদিন সে ভাবনা অবশ্যই সত্যি হবে।” এটা আমার উপর একটা বড় প্রভাব ফেলেছিলো। পরবর্তী ৩৩ বছর প্রতিদিন সকালে আয়নায় তাকিয়ে আমি জিজ্ঞেস করেছি, “আজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হয়, আমি যা করতে যাচ্ছি তা কি করবো?” যদি অনেকদিন ধরে উত্তরটি না হয়, তাহলে আমি বুঝতে পারি কিছু পরিবর্তন করতে হবে।

আমি শীঘ্রই মারা যাবো এই জিনিসটা স্মরণ রাখা আমাকে জীবনে অনেক বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করেছে। কারণ সব বাহ্যিক প্রত্যাশা, সব অহংকার, ব্যর্থতার গ্লানি সব মৃত্যুর সামনে ম্লান হয়ে যায়। শুধুমাত্র তা-ই থাকে যা সত্যিকার অর্থে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে, তুমি একদিন মরে যাবে এটা স্মরণ রাখাই তোমার হারানোর কিছু আছে এ চিন্তার ফাঁদ থেকে রক্ষার উপায়। তুমি এমনিতেই নগ্ন। তোমার হৃদয়কে অনুসরণ না করার কোনো কারণ নেই।

Source: gettyimages

এক বছর আগে আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে। সকাল সাড়ে সাতটায় আমার একটা স্ক্যান করা হয় এবং তাতে আমার প্যানক্রিয়াসে টিউমার ধরা পড়ে। প্যানক্রিয়াস কী আমি তাই জানতাম না। ডাক্তার আমাকে বলেছিল এটা এমন একধরনের ক্যান্সার যার নিরাময় সম্ভব না এবং আমি তিন থেকে ছয় মাসের বেশি বাঁচবো না। ডাক্তার আমাকে বাসায় গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিতে বললেন।

ডাক্তারদের ভাষায়, এ কথার মানে হলো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। এটার মানে হলো আপনি আগামী দশ বছরে আপনার সন্তানদের যা বলবেন বলে মনে করেছিলেন তা কয়েক মাসে বলতে হবে। এটার মানে হলো সব কিছু গোছানো, যাতে করে আপনার পরিবারের জন্য ব্যাপারটা সহজ হয়। এটার মানে হলো বিদায় বলা।

আমি টেস্টের এই ফল নিয়ে সারাদিন ছিলাম। পরে সন্ধ্যাবেলা আমার একটা বায়োপসি করানো হয়। তারা আমার গলা দিয়ে এন্ডোস্কোপ নিয়ে তা পাকস্থলী হয়ে অন্ত্রে নিয়েছেন। সেখান থেকে সুই দিয়ে কিছু টিউমার কোষ নিয়েছেন। আমাকে অচেতন করা হয়েছিলো, কিন্তু আমার স্ত্রী সেখানে উপস্থিত ছিলো। সে বলেছে ডাক্তাররা যখন মাইক্রোস্কোপের নিচে কোষগুলো দেখলো তারা কাঁদতে শুরু করলো। কারণ দেখা গেলো এটা একটি বিরল প্রকৃতির প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, অপারেশনের মাধ্যমে যার নিরাময় সম্ভব। আমার অপারেশন করা হয়েছিলো এবং আমি এখন সুস্থ আছি।

নিজের বাড়িতে স্টিভ জবস;  Source: gettyimages

এটাই ছিলো আমার মৃত্যুর সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া। আমি আশা করি আরও কয়েক দশকের মধ্যে এত কাছাকাছি আর যেতে হবে না। আগে মৃত্যু ছিলো একটি ধারণামাত্র। কিন্তু এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর আমি আরেকটু নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারি, কেউ মারা যেতে চায় না। এমনকি যারা স্বর্গে যেতে চায় তারাও সেখানে যাওয়ার জন্য মারা যেতে চায় না। কিন্তু তা-ও মৃত্যু এমন একটি গন্তব্য যা আমাদের সবার জন্য এক। কেউই এখন পর্যন্ত এটা থেকে পালাতে পারেনি। এটা এমনই হওয়া উচিত। কারণ মৃত্যু হলো জীবনের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। এটা জীবনের পরিবর্তনের নিয়ামক। এটা পুরাতনকে সরিয়ে নতুনকে নিয়ে আসে। এখন তোমরা নতুন, কিন্তু একদিন, যা এখন থেকে খুব বেশি দূরে নয়, তোমরাও পুরাতন হবে। তখন তোমাদেরকেও সরিয়ে দেয়া হবে। নাটকীয় হওয়ার জন্য দুঃখিত, কিন্তু এটাই সত্যি।

তোমার সময় সীমিত। আরেকজনের কথা অনুযায়ী জীবন চালিয়ে তা নষ্ট করো না। কোনো মতবাদে জীবনকে আবদ্ধ করে ফেলো না। মতবাদ হলো আরেকজনের চিন্তার ফলাফল অনুযায়ী নিজের জীবন কাটানো। অন্যদের মতবাদের কোলাহল যাতে তোমার ভেতরের কণ্ঠকে নিশ্চুপ করে না দেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের হৃদয় ও অন্তরাত্মার কথাকে অনুসরণ করার সাহস রাখা। তোমার ভেতরকার সত্ত্বা জানে তুমি কী হতে চাও। আর বাকিসব হলো পরের বিষয়।

আমরা যখন তরুণ ছিলাম তখন ‘হোল ওয়ার্ল্ড ক্যাটালগ’ নামে একটি অসাধারণ ম্যাগাজিন ছিল। সেটা ছিলো আমাদের সময়ের বাইবেল। এই ম্যাগাজিনটা স্টুয়ার্ড ব্র্যান্ড নামের এক ব্যক্তি তৈরি করেছিলেন, যিনি এখানে কাছেই মেনলো পার্কে ছিলেন। তাঁর কাব্যিক স্পর্শে ম্যাগাজিনটা জীবন পেয়েছিলো। এটা ১৯৬০ সালের দিকের কথা। তখন পার্সোনাল কম্পিউটার এবং ডেক্সটপ ছিলো না। সব কাজ টাইপরাইটার, কাঁচি আর পোলারয়েড ক্যামেরা দিয়ে করা হতো। ৩৫ বছর পূর্বে গুগল আসার আগে এটাই ছিলো কাগজে মোড়ানো গুগোল। এটা ছিলো আদর্শ এবং ভালো যন্ত্র ও অসাধারণ কল্পনা দিয়ে তৈরি।

স্টুয়ার্ট এবং তাঁর দল হোল ওয়ার্ল্ড ক্যাটালগের অনেকগুলো সংখ্যা বের করেন। শেষমেষ এটা শেষের দিকে চলে আসে এবং তারা একটি শেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। এটা ১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি, আমি তখন তোমাদের বয়সের ছিলাম। তাদের ম্যাগাজিনের পেছনের প্রচ্ছদে সকাল বেলায় গ্রামের রাস্তার একটা ছবি ছিলো। রাস্তাটা এমন, তুমি যদি রোমাঞ্চপ্রিয় হও তাহলে তুমি তাতে বেড়াতে যাবে। ছবির নীচে একটা লেখা ছিলো, “ক্ষুধার্ত থাকো এবং বোকা থাকো।” এটা ছিলো তাদের পক্ষ থেকে শেষ বার্তা। ক্ষুধার্ত থাকো এবং বোকা থাকো। আমি সবসময় নিজের জন্য এটা কামনা করেছি। তোমরা কলেজ পাশ করেছো। তোমাদের জন্য আমি এটা চাই। “ক্ষুধার্ত থাকো এবং বোকা থাকো”।

তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ।”

Related Articles