Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়ানোর কলাকৌশল

গুছিয়ে কাজ করতে পারেন বলে মিলি ভাবীর খুব সুনাম পরিবারে। অনুষ্ঠানপর্ব তো বটেই, তার খোঁজ পড়ে অন্য যেকোনো কাজেও। কেনাকাটা হোক, খাবারের বন্দোবস্ত হোক আর ঘর সাজানোর কথাই হোক, মিলির উপস্থিতি থাকলে বড়রাও বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করেন। মিলি নিজে যেমন কাজ করে, বাকি সবার কাজ তত্বাবধানও করতে পারে দারুণভাবে। কেবল ঘরেই নয়, মিলির কাজের সুনাম পাওয়া যায় অফিসেও। দক্ষতার সাথে কাজ সামলানোর জন্য কর্মক্ষেত্রেও নামডাক আছে তার। তার দারুণ ব্যবস্থাপনা জ্ঞান তাকে সব কাজেই সাফল্য এনে দেয়। ব্যবস্থাপনা জ্ঞান এমনই এক জিনিস, যা ব্যক্তিজীবন আর কর্মজীবন দুই ক্ষেত্রেই মানুষকে সফল করে তুলতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট বিষয় রয়েছে, যেগুলোয় দক্ষ হওয়া চাই একজন ভালো ব্যবস্থাপকের।

একটি ব্যবসা কিংবা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পর্যায়ে কাজ করতে গেলে এই বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার আবশ্যিকভাবে থাকা চাই। প্রথম কথা, নিজের কাজ আপনাকে ভালোভাবে জানতে হবে। দ্বিতীয় আরেকটি কথা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মীদের কাছ থেকেও তাদের সেরা কাজটা আদায় করে নিতে জানতে হবে আপনাকে। সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, পেশাদারি মনোভাব, যোগাযোগ ক্ষমতা, নতুন চিন্তাভাবনা, এই বিষয়গুলোর সমন্বয় আপনাকে একজন যথার্থ ব্যবস্থাপক হিসেবে গড়ে তুলবে।

ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা সাফল্যের পথ সুগম করে; Source: AspirantSG

একজন ব্যবস্থাপককে এমন হতে হবে, যেন বাকি কর্মীরা তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়। প্রতিষ্ঠানের একদল কর্মী স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে কাজ করছে না, দায়সারা রুটিনবাঁধা কর্মজীবন টেনে চলেছে, তেমন জায়গায় উন্নতি খুব বেশি ডালপালা মেলে না। সবার মধ্যে কাজের উদ্যম তৈরি করার মন্ত্র জানা চাই একজন ব্যবস্থাপকের, তাতে কর্মীরাও খুশি হবে আর প্রতিষ্ঠানের উন্নতি অব্যাহত থাকবে। কাজ চাপিয়ে না দিয়ে কর্মীদের দক্ষতা বুঝে কাজ বন্টন করা, কার ভালো দিক কোনটা, তা খুঁজে বের করা এবং সে অনুযায়ী তাদের কাজে লাগানোটাই সবচেয়ে ভালো ফল বয়ে আনে। এছাড়া ভালো কাজের জন্য কর্মীদের প্রশংসা করাও জরুরি বটে। কাজটা যে ভালোমত করতে পেরেছে, তার যথার্থ মূল্যায়ন করাটা একজন যোগ্য ব্যবস্থাপকের বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন কাজে নিজের কর্মীদের মূল দায়িত্ব নিতে বলা, তাদের মাঝে নেতৃত্বদানের স্বভাব তৈরি করা, সবার প্রতি সহায়ক আচরণ, এসবই আপনার দক্ষ ব্যবস্থাপনা জ্ঞানের পরিচায়ক।

অনুপ্রেরণা বড় শক্তি; Source: Opstart

সমস্যার সমাধান করা আয়ত্তাধীন হওয়া চাই ভালোভাবে। যেকোনো কাজেই এটি সবচেয়ে জরুরি দিকগুলোর একটি। নানারকম সমস্যা প্রতিনিয়ত তৈরি হতে পারে কর্মক্ষেত্রে, সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ে সমাধানের পদক্ষেপ না নিতে জানলে কিন্তু আপনি একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক হতে পারছেন না। ‘প্রবলেম সলভিং স্কিল’ যাকে বলে ইংরেজিতে, অর্থাৎ সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, কেবল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেই নয় বরং যেকোনো কাজে আপনার দক্ষতার মাত্রা নির্দেশ করবে। কাজের খুঁটিনাটি দিকে সজাগ নজর থাকলে ছোট একটি সমস্যাও সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।

একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের যেকোনো সমস্যা তৈরি হবার সময়ই চিহ্নিত করতে পারে, আর সেটি বাজে প্রভাব ফেলার আগেই সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারে। সমস্যা তৈরি হবার কারণ খুঁজে বের করা চাই, যাতে পরবর্তীতে আগেভাগেই সেসব সামলানো যায়। বিশ্লেষণী ক্ষমতা এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি ব্যবস্থা সংক্রান্ত একটি ত্রুটি হচ্ছে দিনকয়েক ধরে, ওয়েবসাইট কাজ করছে না আর গ্রাহকদের থেকে অসন্তুষ্টি পাওয়া যাচ্ছে। আর এদিকে আপনি খতিয়ান দেখছেন বিপণন বিভাগে কোনো ঝামেলা হয়েছে কিনা, তাহলে কিন্তু আদতে প্রতিষ্ঠানেরই ঝামেলা! সমস্যার মূল কারণ যাচাই করা আর সেটির সমাধান করা, ঠিক সময়ের মধ্যে, খুব জরুরি বিষয়।

সমস্যাটা কী? সঠিক সমাধান কী? Source: Brian Tracy

যোগাযোগে দক্ষতা-যোগাযোগ মানে কুশল বিনিময় নয় কিন্তু! কুশল বিনিময় অবশ্যই করুন, কিন্তু যোগাযোগ বলতে বোঝানো হচ্ছে কাজের খবরাখবর জায়গামত পৌঁছানো। প্রতিষ্ঠানে সবার সাথে একটি সুষ্ঠু যোগাযোগ রাখা আপনার ব্যবস্থাপনা ক্ষমতা আরো উন্নত করবে। উল্টোটা যদি হয়, যদি আপনি যোগাযোগ রাখতে সমর্থ না হন, তবে অনেকটাই মাটি হবে আপনার কাজ। একজন ব্যবস্থাপক হিসেবে আপনার প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগে থাকা আপনার কাজের আবশ্যিক অংশ। যেকোনো ধরনের তথ্য জানা থাকতে হলে এই যোগাযোগ খুবই জরুরি। মৌখিক এবং লিখিত, দুই উপায়েই তথ্য আদান-প্রদান করার দক্ষতা থাকা চাই আপনার। প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মজীবীরা আপনারই মাধ্যমে একে-অপরের সাথে যুক্ত, মাথায় রাখতে হবে এটাও আর এসব কারণেই নিজের দক্ষতা বাড়াতে হবে যোগাযোগ রক্ষায়।

বাড়ানো চাই যোগাযোগের দক্ষতাও; Source: parityprofessionals.co.uk

পেশাদারি মনোভাব বজায় রাখুন কাজের ক্ষেত্রে। আপনার পেশাদারিত্ব বাকি কর্মীদেরকেও কাজে মনোযোগী হতে উদ্বুদ্ধ করবে।আপনার কাজকর্ম আর আচরণেই যেন কর্মীবৃন্দের কাছে আপনাদের কাজের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করুন। গ্রাহকদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রেও পেশাদারি ভাব থাকা চাই। আরো চাই কাজের উদ্যোগ নেয়ার ক্ষমতা। বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে কর্মক্ষেত্রে অনেকের প্রিয় হতে পারবেন, কিন্তু সব কাজে সাফল্য আনতে পারবেন না।

পেশাদারি আচরণ আপনাকে শেখাবে, কীভাবে যেকোনো অবস্থাতেই কোনো কাজ সম্পন্ন করা যায়। অপেশাদার মনোভাবের একজন মানুষ যেখানে সম্ভাবনা ক্ষীণ দেখে কাজ নিয়ে আগ্রহ পাবে না, সে জায়গাতেই একজন পেশাদার ব্যক্তি কাজটাকে শেষ করার সব সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করবে। আপনার পেশাদারিত্ব আপনাকে প্রতিনিয়ত নিজেকে আরো ভালোভাবে তৈরি করার প্রেরণা দেবে। কাজ সংক্রান্ত বিভিন্ন সেমিনারে নিয়মিত অংশ নেয়া, কোর্স করা এবং আরো বেশি কিছু শেখা, পেশাদার একজন ব্যক্তির এই গুণগুলো তাকে কর্মজীবনে চূড়ান্ত সাফল্য দিতে পারে।

পেশাদারি মনোভাব জরুরি জিনিস; Source: The Balance

প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি করুন। এর বিকল্প নেই কোথাও। আপনি একটা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কাজ করছেন, অথচ প্রযুক্তির কলাকৌশলে আপনার জ্ঞান অতি সামান্য, এটি আপনাকে অবধারিতভাবে পিছিয়ে দেবে। তথ্য-প্রযুক্তির ভালো ধারণা থাকলে আপনার ব্যবস্থাপনা ক্ষমতার মানোন্নয়ন আরো সুনিশ্চিত হবে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ তথ্যাদির সুরক্ষিত সংরক্ষণ, গ্রাহকসেবা, কর্মীদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেয়া, এসব কাজের তদারকি করতে গেলে আগে নিজের প্রযুক্তি জ্ঞান বাড়ানো আবশ্যক।

আয়ত্তে থাকুক প্রযুক্তির নানা দিকও; Source: mashup.nz

উদ্ভাবন, ব্যবসায় সাফল্য ধরে রাখার অতি গুরুত্ববাহী এক জিনিস। আপনি জানেনই যে বাজারে নিত্য-নতুন জিনিস তৈরি হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন কিছু না কিছু সেবা নিয়ে আসছে আর আপনি নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন কিছু দিতে পারছেন না, এমন করে খুব বেশিদিন ব্যবসার দৌড়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়। আর তাই দরকার নতুনত্বের ভাবনা।

নতুন পণ্য আর সেবার ধারণা নিয়ে কাজ করা, বর্তমান গ্রাহকদের মতামত জানা আর তাদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা, পণ্য বাজারজাত করার কৌশলে নতুনত্ব আনা, সর্বোপরি নতুন সব সম্ভাবনার পথ উন্মোচন করা একজন যোগ্য ব্যবস্থাপকের কাজ। নতুন কিছু ভাবা চাই পুরনোর মধ্যে থেকেও। অর্থাৎ চলমান সেবাগুলোতে বাড়তি কিছু যোগ করতে পারছেন না, সেসবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিশ্লেষণ করা, পাশাপাশি নতুন কিছু বাজারে আনার তাড়া তো আছেই, ব্যবস্থাপক হতে গেলে সামলাতে হবে এই সবক’টি জিনিস।

নতুন কিছু ভাবুন; Source: atkearney.com

আগামীতে নিজেকে একজন সফল ব্যবস্থাপক হিসেবে দেখতে চান? চর্চা শুরু করতে পারেন আজ থেকেই। তাছাড়া ভালো ব্যবস্থাপনা জ্ঞান ব্যক্তিজীবনেও ভালো ফলদায়ী, এই দিকগুলো তাই চর্চায় রাখতে কোনো মানা নেই।

ফিচার ইমেজ: CSU-Global Campus

Related Articles