Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কত খুশির খবর বলে যাই!

জীবনটা স্রেফ কেটে যাচ্ছে, নাকি কাটাচ্ছেন আপনি? “কেমন আছেন?” প্রশ্নের উত্তরে মনে আনন্দ নিয়ে “বেশ ভালো আছি” বলতে পারছেন কি? নাকি প্রায়ই উত্তরটা হয়ে যাচ্ছে, “এই তো আছি একরকম!” কোনো রকম থাকার জন্য কি আমরা মূল্যবান জীবনটা নিয়ে এসেছি? ভালো থাকা, আনন্দে বাঁচার ব্যাপারটি এতই চড়া দামের হয়ে গেলো? নাকি আমরাই এর দাম বাড়াচ্ছি অযথাই, অকারণেই? ভাবার বিষয় আছে বটে। আর তাই এবার আপনিও ভাবুন। খুশি আছেন কি না, খুশির সংজ্ঞা আপনার কাছে কেমন, কিংবা জীবনে হতাশা আর দুঃখের বোঝা বেশি ভারী করে ফেলেছেন কি না- এই সবই একবার মনে করে নিন এই বেলা। 

হরেক রকম হাসির গল্প! Image Source: Lifehack

কাগজের পাতায় নিত্যদিনের জরুরি কিংবা তুচ্ছ বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করার অভ্যাস আছে? না থাকলে শুরু করতে পারেন এই লেখার কাজটি। খুব জটিল বিষয়ের কথা, কোনো পরিকল্পনা, বা নিছকই কিছু অনুভূতি; লিখে রাখুন। মগজ আর মন খালি করে শব্দের স্তূপ সাজিয়ে ফেলুন কাগজে।

রোজ রাতে ঘুমোতে যাবার আগে তিনটি ভালো জিনিস লিখে রাখার অভ্যাসও করতে পারেন। ইচ্ছা হলে এই কাজটি আপনার দিনের শুরুতেও হতে পারে। বিশেষজ্ঞগণ নানা রকম জরিপ চালিয়ে কিছু বুদ্ধি বের করে থাকেন, এবং সেগুলো কার্যকর হয় বটে। এই তিনটি ভালো জিনিস লিখে রাখাও তেমন একটি ব্যাপার। আপনার মন চাইলে আরো বেশি লিখুন, বা অন্তত একটা কিছু লিখুন।

পার করা দিনটি আপনার জন্য কী কী সুন্দর মুহূর্ত নিয়ে এসেছে, আপনার সাথে ঘটা খুব দারুণ ঘটনা কী ছিলো, কেউ আপনার প্রতি সহযোগী মনোভাব দেখিয়েছে; এই সবই তো ভালোর দলে। এগুলোই লিখে রাখুন। ব্যাপারগুলো ঠিক কেন ইতিবাচক ছিলো আপনার জন্য, এবং ফলশ্রুতিতে আপনার মনের অনুভূতি কেমন ছিলো, ডায়রির পাতা যেন সব জেনে নেয়।

লিখে রাখুন সুখ-দুঃখের যত কথা; Image Source: Shutterstock

যা কিছু সুন্দর, সহজ আর শুদ্ধ, চর্চা করুন সেসবের। যেমন ধরুন, পাশাপাশি দুটো ঘটনা চলমান। চায়ের আসরে রগরগে ঘটনা বলছে চেনা একজন, সত্যি কী মিথ্যা তার বালাই নেই, তবু তাকে ঘিরে ভীড় জমিয়েছে একদল মানুষ। ঘটনার চরিত্রদের সাথে আপনার যোগাযোগ নেই কোনো। কিন্তু মিশে যেতেই পারেন সে ভীড়ে, অনেকেই তো গেছে। একই সময়ে নজরে আসে একটি ছোট কুকুরছানা, যে ভাব জমাচ্ছে ফুটপাতে বসে থাকা একজন পথশিশুর সঙ্গে। মানবশিশু আর কুকুরছানা আনন্দের কয়েকটা মুহূর্ত কী সুন্দর ভাগাভাগি করে নিচ্ছে! চোখের সাথে সাথে মনকেও আটকে ফেললেন তাদের মাঝে। মন ভরে দেখলেন তাদের আনন্দ। কয়েকটা ছবিও উঠে গেলো মুঠোফোনে। এবার বলুন, সময়টা বৃথা গেলো কি? ওই মশলা দেয়া গালগপ্প না শুনে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে গেলো? উত্তরটা আপনার ভেতর থেকেই আসুক নাহয়।

কাজে যাবার পথে বা কাজ শেষে ফেরার পথে রোজ কিছু না কিছু সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরায় স্মৃতিবন্দী করা যায়। সামান্য একটি ঘাসফুলই যদি দারুণ ছবি হয়ে আপনার ফোনের গ্যালারিতে জায়গা নেয়, নিতে দিন না। মনোসংযোগ চলুক জগতের সৌন্দর্যে। অনেক কুচিন্তা দূরে পালাবে।

জগতের সকল সুন্দর মুগ্ধতা ছড়াক অফুরান; Image Source: The Photo Argus

বাংলা সিনেমার সেই বিখ্যাত সংলাপের সুরে বলা যায়, “চৌধুরি সাহেব, মনে রাখবেন, জোর করে আনন্দ পাওয়া যায় না!” সত্যিই যায় না। খুব ভালো, বড় একটি কাজ করছেন, কিন্তু আত্মতৃপ্তি হচ্ছে না, সেখানে সুখ ধরা দেবে না। অযথা নিজেকে সুখী ভাবার বিভ্রান্তি না-ই বা তৈরি করলেন। দিনটি এমনভাবে সাজান, যাতে আপনার সুখের বিষয়গুলো তাতে উপস্থিত থাকে। যে কাজে শান্তি খুঁজে পান, হাসতে পারেন, সময় দিন তাতে। সামান্যই হোক, কিন্তু সেসবে সময় ব্যয় করাটা আপনার জন্য দরকারি।

রান্নার শখকে খানিকটা প্রশ্রয় দেয়া হোক। বই পড়ার প্রায় ভুলতে বসা স্বভাবটা ধরে রাখতে কিছু করছেন না কেন? রোজ দশ পাতা তো পড়াই যায়। অফিস ফেরত হাতে যদি বাড়তি সময় থাকেই, শরীর সায় দিলে যাত্রাপথটা দীর্ঘ করে নিন। প্রিয় কোনো রাস্তায় রিকশা ভ্রমণে আনন্দ আসুক, গাড়ি থাকলেও বেশ। তবে হ্যাঁ, এই ট্রাফিক জ্যামের দেশে এহেন স্বপ্ন দেখার বিশেষ উপলক্ষ লাগে বটে, রোজ রোজ তা সম্ভব হয় না! কিন্তু হ্যাঁ, শরীর আর মনের ক্লান্তিকে বেশি চড়ে বসতে দেবেন না মাথায়। ঘরে ফিরে কোনো একটা পছন্দের কাজে সময় কাটান। আলস্য যেন জীবনে সুখের মুহূর্তকে আসতে বাধা না দেয়।

যাত্রাপথই কখনো নিয়ে আসতে পারে এক ঝুড়ি আনন্দ; Image Source: thepossibility.in

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কি নেতিবাচক ব্যাপারগুলোই বেশি চোখে পড়ছে? হতাশ হচ্ছেন? বিরতি নিন তবে। ইনবক্সের বার্তা চালাচালির রোজকার নিয়ম ছুটিতে যাক কয়েকদিনের জন্য। সময়টা বরং বাস্তব দুনিয়ায় অন্য কোনো কাজে ব্যয় করুন। অথবা পাল্টে ফেলুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ধরন। হতাশা জন্ম দিচ্ছে যেসব ব্যাপার, আটকে দিন সেসব, কিংবা যতটা সম্ভব কম আসতে দিন নিজের কাছে।

কাছের বন্ধুগুলোকে অন্তর্জালের নীল-সাদা এক দুনিয়ায় দূরে না ঠেলে সত্যিকার অর্থে কাছে রাখুন। সময় দিন, দেখা-সাক্ষাৎ রাখুন নিয়মিত বিরতিতে। আচ্ছা, আদরের যে পোষাপ্রাণীর ছবি প্রায়ই দিচ্ছেন একটি সামাজিক মাধ্যমে, তাকে তার প্রাপ্য সময়টা দিচ্ছেন তো?

ব্যস্ত জীবনে প্রিয় বন্ধুটিকে সময় দিচ্ছেন তো? Image Source: 7-Themes.com

দয়ালু হওয়া, অন্যের প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব রাখা আপনারই আত্মতৃপ্তির কারণ হবে। কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখে দেয়া খুব কঠিন কাজ নয়, বরং আপনার ব্যবহার সেই মানুষকে সন্তুষ্ট করে তার মনেই আপনার প্রতি ভালো চিন্তা নিয়ে আসবে। কারো প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশও মন খুলে করুন। ক্ষমা করুন অন্যকে এবং নিজেকেও। ক্ষমা অবশ্যই মানুষের বড় গুণ।

আনন্দের একটি দারুণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অন্যের জন্য তা এনে দেয়া গেলেও নিজেরই তৃপ্তি হয়। অন্যকে খুশি করার চর্চাও রাখুন জীবনে। ছোট একটি কাজে নিজে থেকে কাউকে সাহায্য করলেন, খুব প্রয়োজনের সময়ে একজনকে পৌঁছে দিলেন গন্তব্যে। বন্ধু বা আত্মীয়ের কোনো একটা সমস্যা স্রেফ মন দিয়ে শুনলেন, তাকে বোঝার চেষ্টাটুকু করলেন, এড়িয়ে গেলেন না। মানুষগুলো কতটা খুশি হবে, আর তাদের খুশি কী পরিমাণে আপনার কাছেই ফিরে আসবে, নিজেই দেখে নেবেন।

কৃতজ্ঞতার প্রকাশ নিজের আনন্দের চাবিকাঠি; Image Source: Medium

নিজের নেতিবাচক চিন্তাগুলোয় লাগাম পরান। যা কিছু ভুল বা অন্যায্য হয়েছে, হয়েই গেছে। তার রেশ ধরে আরো কোনো ভুল কেন হতে দেবেন? মনের শান্তির বড় শত্রু এই ভাবনারা, এদের বকুনি দিন খুব করে!

নিখুঁত নই আমরা কেউ, তো হবার চেষ্টাই বা কেন করা? নিরীহ দোষগুলো কারো ক্ষতি যদি না করে থাকে, কেন বিদায় করতে চাচ্ছেন সেগুলোকে? থাকতে দিন। কাজে-কর্মে, আচার-ব্যবহারে নিখুঁত হবার এই নেশা জীবনকে আরো কঠিন করবে। সুখের চিন্তাও তখন দূর আকাশের তারা হয়ে ভেলকি দেখাবে। অযথা জটিলতা বাড়িয়ে লাভ কোথায়! নিজের মতো থাকুন, নিজের জন্য বাঁচুন। প্রিয় মানুষগুলোর জন্য হয়তো কিছু ক্ষেত্রে সমঝোতা করতেই হয়। তাই বলে নিজের আগাগোড়া পুরোটাই পাল্টে ফেলতে যাবেন না। তেমন পদক্ষেপ আপনার সুখ-শান্তির পথ বন্ধ করে দেবে চিরতরে। আর কার সুখের জন্য বাঁচা তাহলে?

আনন্দের ফেরিওয়ালা নিজের জন্যেই হতে হবে! Image Source: NPR

তো, নিজের জন্য খুশির উপলক্ষ তৈরি করতে কোন অভ্যাসটির চর্চা করবেন বলে ভাবছেন?

Description: This is a Bangla article describing the joy of living happily. References have been hyperlinked inside the article.

Feature Image: The Ascent

Related Articles