Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সফলতার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যে কারণে জরুরি

মার্শম্যালো খেতে তো আমরা অনেকেই পছন্দ করি। মিষ্টি জাতীয় নরম একটি খাবার। ১৯৬০ এর শেষ এবং ১৯৭০ এর শুরু, এই সময়ের মধ্যে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের গবেষক ওয়াল্টার মিশেল এই মার্শম্যালোকে ব্যবহার করে ছোট একটি পরীক্ষা করলেন। তিনি বিভিন্ন নার্সারি স্কুল থেকে কয়েকজন শিশুকে নিয়ে আসলেন। তাদের সবাইকে এক ঘরে নিয়ে একটি করে মার্শম্যালো দিয়ে বললেন, “তোমরা চাইলে এটি এখনই খেতে পারো। তবে তোমরা যদি আরও ১৫ মিনিট অপেক্ষা করো, তাহলে তোমাদের আরও একটি মার্শম্যালো দেয়া হবে।” এই বলে তিনি ঘর থেকে চলে গেলেন। ১৫ মিনিট পর এসে তিনি দেখলেন ৭০% শিশু তাদেরকে দেয়া মার্শম্যালোটি খেয়ে ফেলেছে। আর বাকি ৩০% শিশু ধৈর্য্য ধরে ছিলো পরবর্তী মার্শম্যালোর জন্য।

পরীক্ষাটা এখানেই শেষ না। ১৫ বছর পর সেই পরীক্ষার্থীদেরকেই আবার ডাকা হলো। দেখা গেলো, যে ৩০% শিশু পরবর্তী মার্শম্যালোর জন্য ধৈর্য্য ধরে ছিলো, তারা মোটামুটি সব কাজেই অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে। পড়ালেখা, খেলাধুলা, শিল্প কিংবা অন্য যেকোনো কাজে তারা অধিক সফলতা দেখিয়ে আসছে। এই পরীক্ষা এটাই প্রমাণ করে যে, ভবিষ্যতে উন্নতির জন্য কিংবা সফলতার জন্য বর্তমানের আরাম যারা কিছুটা হলেও ত্যাগ করেন, তারাই জীবনে অধিক সফলতা লাভ করে থাকেন। অর্থাৎ যারা বর্তমানের আরামকে অধিক প্রাধান্য দেন, তাদের তুলনায় যারা ভবিষ্যতকে অধিক গুরুত্ব দেন তারা সবক্ষেত্রে বেশি সফল।

আপনার দৃষ্টিভঙ্গিই বলে দেবে আপনার ভবিষ্যৎ কীরকম হবে; image source: casthighlight.com

সময়ের গুরুত্বের বিচারে মানুষ ভাগ করলে আমাদের আশেপাশে তিন ধরনের মানুষ দেখতে পাবো- কেউ ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করে, কেউ বর্তমানকে উপভোগ করে আর কেউ আবার নিজের অতীত নিয়েই পড়ে থাকতে পছন্দ করে। যারা সাধারণত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, তারা কোনো কাজে সফলতার জন্য লম্বা একটি পরিকল্পনা হাতে নেয়। তারা আগে থেকেই ঠিক করে ফেলে কোন কাজের পর কোন কাজ করতে হবে। কোনো কাজ ঠিকমতো শেষ করার ক্ষেত্রেও তারা অধিক সফলতা দেখিয়ে থাকে

একটি দেশের রাজনৈতিক কার্যক্রম কিংবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যও ভবিষ্যতের কথা ভেবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হয়। যারা রাজনীতি করেন, তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে চিন্তা করেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী ১০ বছরে তাদের কী কী সফলতা আসবে কিংবা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। শুধু বর্তমানের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভাবা অনেকটা বাজি ধরার মতো। এতে জীবনে সফলতা আসতেও পারে আবার বড় রকমের ব্যর্থতাও হানা দিতে পারে। তারা জানেই না তাদের সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে।

অনেকে আবার কেবল অতীত নিয়ে পড়ে থাকে। অতীতের ভুল থেকে যদি কোনো শিক্ষা নেয়া যায়, তাহলে তা ভালো। কিন্তু আপনি যদি অতীতের ব্যর্থতার জন্য নিজের ভবিষ্যতকেও নষ্ট করে ফেলেন, তাহলে তা কোনো অর্থেই ভালো নয়।

ভবিষ্যৎ নিয়ে অধিক পরিকল্পনা কেন নিবেন? image source: TeenLife

তাহলে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা কেন এত জরুরি? আলোচনার সুবিধায় ধরে নিলাম, আপনার জীবন এখন অনেকটা ছন্নছাড়া ধরনের। পড়ালেখা, কাজকর্ম, স্বাস্থ্য কিংবা অন্যান্য দিক সামলিয়ে চলতে আপনি রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। এখানে আপনি চাইলে আপনার জন্য একটি ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে পারেন। ধরা যাক, আপনি চাচ্ছেন শরীরের ওজন কমাতে। সেজন্য সামনের ৩-৪ মাস নিজের স্বাস্থ্য কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন তা ঠিক করে নিতে পারেন। আপনি যদি চিন্তা করেন, আজকে ব্যায়াম শুরু করা হলো না, সামনে একসময় শুরু করবো। অথবা আগে যেহেতু ব্যায়াম করতে পারিনি, তাই এবারও পারবো না, তাহলে কিন্তু আপনার আর স্বাস্থ্য ঠিক হবে না। সেজন্য আপনার উচিৎ নিজের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা, যেখানে আপনি চিন্তা করতে পারবেন ভবিষ্যতে আপনি নিজেকে কেমন দেখতে চান।

যেভাবে ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা করবেন; image source: ubiSafe

এখানে কিছু উপায় তুলে ধরা হলো, যেগুলো মেনে চললে আপনার জন্য একটি পরিকল্পনা দাঁড় করানো অনেক সহজ হয়ে যাবে।

লক্ষ্যের তালিকা নির্দিষ্ট করে ফেলুন

আমাদের যখন প্রশ্ন করা হয়, আমরা জীবনে উল্লেখযোগ্য কী করতে চাই, তাহলে অনেকগুলো চিন্তা আমাদের মাথায় একসাথে কাজ করে। ছবি তোলা, বিতর্ক শেখা, লেখালেখি করা, শরীরের ওজন কমানো- এমন অনেক চিন্তা একসাথে মাথায় ঘুরপাক খায়। কিন্তু দিনশেষে এগুলোর কোনোটাই ঠিকমতো শুরু করা হয় না। শুরু করা গেলেও দেখা যায় একটি লক্ষ্যের কাজ আরেকটিকে বাঁধা দিচ্ছে। তাই শেষপর্যন্ত কোনোকিছুই ভালো মতো করা হয় না।

এজন্য আমাদের লক্ষ্যের তালিকা ছোট করে আনতে হবে। একসাথে ২-৩টির বেশি বড় লক্ষ্য রাখা উচিৎ না। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই লক্ষ্যগুলো পূরণ করে তারপর বাকি লক্ষ্যগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।

বড় লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য ছোট ছোট কয়েকটি লক্ষ্য ঠিক করুন

বড় একটি লক্ষ্য নিয়ে এগোতে গেলে কাজের মাঝে অনেক ভুল ধরা পড়ে। এই ভুলগুলোর কারণে পুরো লক্ষ্যটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্য সবসময় বড় কোনো কাজকে ছোট ছোট কাজে ভাগ করে নিতে হয়। ছোট কাজগুলোর মাঝে ভুলগুলো সহজেই শুধরে নেয়া যায়। এতে ভবিষ্যতে কাজের মাঝে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সহজেই ঠিক করে নেয়া যায়।

বড় কাজগুলোকে ছোট অংশে ভাগ করে নেয়া উচিৎ; image source: Royal Ottawa Health Care Group

কাজে সহযোগীতের জন্য বিশ্বস্ত কোনো বন্ধুর সাথে কথা বলুন

আপনার লক্ষ্যটি যদি খুবই ব্যক্তিগত না হয়ে থাকে, তাহলে বিশ্বস্ত কোনো বন্ধুকে সেই ব্যাপারে বলুন। হতে পারে আপনার বন্ধুর থেকে ভালো কোনো উপদেশ আপনি পেয়ে গেলেন যা আপনাকে লক্ষ্য পূরণে আরও সহযোগিতা করবে। অথবা এমনও হতে পারে, আপনি হয়তো কোনো কারণে আপনার লক্ষ্য পূরণের কথা ভুলে গেলেন। কিন্তু আপনার বন্ধু ঠিকই আপনার সেই লক্ষ্যের কথা মনে রেখেছে। কোনো একদিন কথার মাঝে আপনার বন্ধু সেই লক্ষ্যের কথা মনে করিয়ে দিলে হয়তো আপনি আবার সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার তাগিদ অনুভব করবেন।

কাজের অগ্রগতি হিসাব করুন

আপনার কাজ কতটুকু সফলভাবে এগোলো তার একটি হিসাব আপনার কাছে থাকা উচিৎ। তা না হলে বুঝবেন কীভাবে আপনার লক্ষ্য পূরণে আপনি কতটুকু সফল? রোমান দার্শনিক সেনেকার একটি উক্তি আছে- “আপনি যদি না-ই জানেন কোন বন্দরে আপনার নোঙর ফেলতে হবে, তাহলে কোনো বাতাসই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না।” অর্থাৎ আপনার কাজের মধ্য দিয়েই জানতে হবে আপনি লক্ষ্য পূরণ থেকে কতটুকু দূরে আছেন কিংবা কতটুকু কাছে এগিয়ে এসেছেন।

লক্ষ্য পূরণে কাজের অগ্রগতির হিসাব রাখুন; image source: Goalcast

এমন কিছু করুন যাতে সবসময় আপনার লক্ষ্যের কথা মনে থাকে

অনেকেই বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি পোস্টার আকারে বানিয়ে ঘরের দেয়ালে লাগিয়ে রাখেন। এটি তাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় তারা কার আদর্শ মনে লালন করছেন। এটি তাদের প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। আপনিও তেমনি আপনার লক্ষ্যের কথা কোনো পোস্টারে লিখে ঘরের দেয়ালে লাগিয়ে রাখতে পারেন। এর ফলে প্রতিনিয়ত আপনার লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাওয়ার কথা মনে পড়বে। অথবা মোবাইল ফোনের এমন কোথাও আপনার লক্ষ্যের কথা লিখে রাখলেন, যাতে করে মোবাইল হাতে নিলেই আপনার লক্ষ্যের কথা মনে পড়ে।

লক্ষ্য পূরণে নিজের চেষ্টাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ; image source: Personnel Today

তাই জীবনে যত বড় লক্ষ্যই স্থির করুন না কেন, তা ভেঙে ছোট ছোট কাজে পরিণত করুন, বিশ্বস্ত কোনো বন্ধুর সাথে তা নিয়ে কথা বলুন, সফলতার পরিমাণ হিসাব করুন এবং সবসময় নিজের লক্ষ্যের কথা মাথায় রাখুন। কিন্তু তাই বলে সবসময় ভবিষ্যতের সফলতার কথাই ভাববেন তা কিন্তু না। আপনার পরিবার, বন্ধুসমাজকে সময় দিন। বর্তমানে থেকে জীবনটা উপভোগ করুন এবং ভবিষ্যতকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলুন।

ফিচার ইমেজ: GetApp Lab

Related Articles