Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানসিকভাবে শক্তিশালী নারীরা যে কাজগুলো করে না

পুরুষ নাকি নারী, কাদের মনোবল বেশি দৃঢ়, সে প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এবং সেসব গবেষণায় পারস্পরিক সাংঘর্ষিক বিভিন্ন তথ্যও উঠে এসেছে। তবে ২০১৭ সালে হওয়া এক গবেষণার ফলাফলে দাবি করা হয়েছিল, অন্তত প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে, চাপের মুখে পুরুষদের চেয়ে নারীরা শ্রেয়তর ভূমিকা পালন করেন।

অর্থাৎ নারীরা চাপের মুখে সহজেই ভেঙে পড়েন না, বরং চাপ সামলানোতে পুরুষদের অপেক্ষা তাদের বেশ ভালোই দক্ষতা রয়েছে। তাই এ কথা আমরা নিঃসন্দেহভাবে বলতেই পারি যে, নারীদের মানসিক শক্তিকে ছোট করে দেখার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।

কিন্তু এখন বিবেচ্য বিষয় হলো, সকল নারীই কি মানসিকভাবে সমান শক্তিশালী? তা তো আর সম্ভব নয়। সার্বিকভাবে নারীরা মানসিকভাবে শক্তপোক্ত হলেও, কোনো কোনো নারী অন্যদের তুলনায় মানসিকভাবে বেশি শক্তিশালী, আবার কোনো কোনো নারী কম শক্তিশালী।

কীভাবে বোঝা যাবে যে একজন নারী আসলেই পর্যাপ্ত মানসিক শক্তির অধিকারী কি না? এতদিন এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না থাকলেও, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লেখিকা অ্যামি মরিন তার নতুন প্রকাশিত 13 Things Mentally Strong Women Don’t Do বইটিতে লিপিবদ্ধ করেছেন সেসব কাজের তালিকা, যা মানসিকভাবে শক্তিশালী নারীদেরকে সচরাচর করতে দেখা যায় না।

তাহলে চলুন পাঠক, আমরাও আর দেরি না করে জেনে নিই কী সেই ১৩টি কাজ, যেগুলো না করা একজন মানসিকভাবে শক্তিশালী নারীর পরিচায়ক।

মানসিকভাবে শক্তিশালী নারীদের তুলনা কেবল নিজের সাথে; Image Source: The Telegraph

নিজেদেরকে অন্যের সাথে তুলনা না করা

যখনই একজন মানুষ নিজের সুখ, সম্পদ ও বাহ্যিক অবয়বের সাথে অন্য কারো তুলনা করে, তখনই সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় তার নিজের মানসিক শক্তি হ্রাসের। তাই একজন মানসিকভাবে শক্তিশালী নারী কখনোই অন্যের সাথে নিজের তুলনা করার মতো বোকামিতে সামিল হয় না। বরং সে ‘আজকের আমি’র সাথে তুলনা করে ‘গতকালকের আমি’র, এবং এভাবে বোঝার চেষ্টা করে যে সে কতটুকু আত্মিক উন্নয়ন সাধন করতে পেরেছে।

নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা না করা

যারা সবসময় নিখুঁত হতে চায়, সমাজের চোখে তারা অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু আসলেই কি সবসময় নিখুঁত হওয়া সম্ভব? প্রকৃত বাস্তবতা হলো, একজন রক্তমাংসের মানুষের পক্ষে কখনোই শতভাগ নিখুঁত হওয়া সম্ভব নয়। একটি কাজের পেছনে যত শ্রমই ব্যয় করা হোক না কেন, তাতে কিছু না কিছু খুঁত থাকবেই। যেমন, সারাবেলা বসে চুল বাঁধার পরও, দুই-একটি চুল বাইরে বের হয়ে যেতেই পারে; কিংবা অনেক চেষ্টার পরও একটি লাইনের কোনো একটি অক্ষর অন্যগুলোর তুলনায় আকারে ছোট বা বড় হতেই পারে। তাই মানসিকভাবে শক্তিশালী নারীরা কখনো নিখুঁত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় নিজেদের মানসিক সুখকে বিসর্জন দেয় না, বরং তারা প্রতিনিয়ত তাদের ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণের চেষ্টা করে।

ভঙ্গুরতাকে দুর্বলতা হিসেবে না দেখা

ব্যথা পাওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও যখন একজন ব্যক্তি কোনো কাজ থেকে পিছপা হয় না, তখন বোঝাই যায় তার মানসিক শক্তি ঠিক কতটা বেশি। কিন্তু তারপরও কখনো কখনো তো ভুল হয়ে যেতেই পারে। প্রিয়জনকে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কষ্ট দেয়া হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের ভঙ্গুরতা মনুষ্যত্বেরই অংশ। তাই টুকটাক ভঙ্গুরতা প্রদর্শন করে ফেলে ক্ষণিকের জন্য বিব্রত বা লজ্জা পেলেও, মানসিকভাবে শক্তিশালী নারীরা দ্রুতই নিজেদের শুধরে ও সামলে নিতে পারে। আর এভাবেই তারা সুখী ও স্বাস্থ্যসম্মত সম্পর্কের অংশীদার হতে পারে।

নিজের ব্যাপারে থাকতে হবে নিঃসন্দেহ; Image Source: oprah.com

নিজের প্রতি অতিরিক্ত সন্দেহ পোষণ না করা

যে যা-ই বলুক না কেন, নিজের প্রতি যেকোনো মানুষেরই সন্দেহ হয়। যেকোনো কাজ শুরুর আগে অন্তত একবারের জন্য হলেও তার মনে হয়, “এই কাজটি আমি করতে পারব তো?” কিন্তু প্রকৃত শক্তিশালী তো তারাই, যারা এ ধরনের সন্দেহকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয় না। এসব ভেবে তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া বন্ধ করে না, বরং তারা বিশ্বাস করে, “ফলাফল যা-ই হোক, কাজটি আমাকে করতেই হবে।”

অতিরিক্ত চিন্তা না করা

অতিরিক্ত চিন্তার সাথে অবসাদগ্রস্ত হওয়ার সরাসরি যোগসাজশ রয়েছে। কোনো সমস্যা নিয়ে যত বেশি চিন্তা করা হবে, সমস্যাটিকে ততই জটিল ও অসমাধানযোগ্য বলে মনে হতে থাকবে। আর এর ফলে পরবর্তীতে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই মানসিকভাবে শক্তিশালী নারীরা কেবল সমস্যা নিয়েই চিন্তা করতে থাকে না। বরং কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সেক্ষেত্রে তারা গুরুত্ব বেশি দেয়। এভাবে সহজেই তারা যেকোনো মানসিক বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়।

কঠিন চ্যালেঞ্জকে এড়িয়ে না যাওয়া

মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো, কঠিন কোনো চ্যালেঞ্জ দেখলেই কয়েক পা পিছিয়ে আসা। তারা মনে করে, কঠিন কাজটি করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে তার পরিণতি ভয়ংকর হবে। কিন্তু তারা এটি চিন্তা করে না যে, কঠিন কাজটিতে যদি তারা কোনোভাবে সফলতার দেখা পেয়ে যায়, তবে তা কতটা আনন্দময় হবে। মানসিকভাবে শক্তিশালী নারীরা এর ব্যতিক্রম। তারা কেবল ব্যর্থতার পরিণতি নিয়েই চিন্তা করে না, বরং সফলতার আনন্দ নিয়েও ভেবে দেখে, আর কঠিন চ্যালেঞ্জ জয়ে এগিয়ে যায়।

নিয়ম ভাঙায় ভয় পেলে চলবে না; Image Source: Getty Images

নিয়ম ভাঙতে ভয় না পাওয়া

আমাদের সমাজটাই এমন যে, লিঙ্গভেদে নারীদেরকে এখানে অনেক বেশি নিয়ম-শৃঙ্খলার জালে আবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। একটি কাজ পুরুষেরা করলে হয়তো কেউ ঘুরেও তাকায় না, অথচ কোনো নারী করলেই ‘গেল গেল’ রব তুলতে শুরু করে দেয়। ছোটবেলা থেকেই নারীরা এগুলো দেখে অভ্যস্ত, তাই অনেক নারীর ভেতরই নিয়ম ভাঙার ব্যাপারে অনীহা দেখা যায়। কিন্তু মানসিকভাবে শক্তিশালী নারীরা ‘লোকে কী বলবে’ জাতীয় ভীতিকে তাদের মনে জায়গা দেয় না। নিজেদের আশা পূরণে তারা যেকোনো বিদ্যমান নিয়মকেই বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পারে।

অন্যকে ছোট করে নিজে বড় না হওয়া

অনেকেই মনে করে থাকে, সাফল্য মানে হয়তো অন্যের ব্যর্থতা। আর তাই তারা নিজেরা ভালো কিছু করার বদলে, অন্য কেউ ভালো কিছু করতে গেলে তাকে পেছন থেকে টেনে ধরে রাখে, প্রয়োজনে ফেলে দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু একজন মানসিকভাবে শক্তিশালী নারী জানে, এভাবে অন্যের গতিরোধ করে নিজের সাফল্যের পথ প্রশস্ত করা যায় না, বরং এতে করে নিজের মূল্যবান সময় নষ্টই কেবল হয়। তাই তারা অন্যকে ছোট করার নেশায় মত্ত না থেকে, নিজে বড় হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যায়।

অন্যকে নিজের মেধার সীমা নির্ধারণ করতে না দেয়া

নারীদের সাথে এই ব্যাপারটি সাধারণত বেশি ঘটে থাকে যে, অন্যরা তাদের মেধা, সম্ভাবনা প্রভৃতির মাত্রা নির্ণয় করতে চায়, এবং বলে দিতে চায় কোন পর্যন্ত তাদের যাওয়া উচিত, এবং কোথায় গিয়ে তাদের থেমে যাওয়া উচিত। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অধিকাংশ নারীই এতে প্রভাবিতও হয়। কিন্তু একজন মানসিকভাবে শক্তিশালী নারী অন্যের অযাচিত পরামর্শ, সমালোচনা বা নিন্দায় কর্ণপাত করে না। সে নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল থাকে, এবং নিজের আত্মতৃপ্তি লাভের আগ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয় না।

নিজের প্রতিভার সীমা নির্ধারণ করতে হবে নিজেকেই; Image Source: Indie Wire

নিজেকে দোষারোপ না করা

কোনো কাজে ব্যর্থ হলে, নিজেকে ধিক্কার দেয়া বা দোষারোপ করার প্রবণতা খুবই স্বাভাবিক। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে তো আরো বেশি। আশেপাশের সবাই নানাভাবে তাদের সমালোচনা করতে থাকে বলে, এক পর্যায়ে তারা নিজেরাও ভাবতে শুরু করে, আসলে দোষটা হয়তো তার নিজেরই, তারই হয়তো এমন কোনো কাজে হাত দেয়া উচিৎ হয়নি। কিন্তু একজন মানসিকভাবে শক্তিশালী নারী এমন কাজ কখনোই করে না। নিজেকে দোষারোপ করার বদলে সে বরং ভাবে, “এবার আমি ভুল পথে এগিয়েছিলাম, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আগামীবার অবশ্যই আমাকে সঠিক পথে এগোতে হবে।”

নীরব না থাকা

নারীদেরকে ছোট থেকেই এমনটা শেখানো হয় যে, “তুমি নারী, তোমার সবসময় মুখ খুললে হবে না। নিজের সম্ভ্রম রক্ষার্থে তোমাকে নীরব থাকতে হবে।” ফলে অনেক নারীই তাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না, ন্যায়বিচারের আশায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও জানায় না। তারা ভাবে, কাউকে কিছু না বললেই বুঝি আত্মসম্মান রক্ষা করা যাবে। কিন্তু একজন মানসিকভাবে শক্তিশালী নারী কখনোই এভাবে ভাবে না। নীরবতা মানেই যে সমাধান নয়, বরং প্রকৃত সমাধানের জন্য মুখ বুজে না থেকে প্রতিবাদমুখর হতে হবে, এ কথা তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস কর।

নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারে বিব্রত না হওয়া

পরিবর্তন জীবনেরই অংশ। জীবনের যেকোনো পর্যায়ে পৌঁছেই একজন মানুষের মনে হতে পারে, সে এতদিন ভুলভাবে জীবনযাপন করে এসেছে, এখন তার উচিত জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন করা। কিন্তু একজন পুরুষ যত সহজে কাজটি করতে পারে, চাইলেই নিজের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে পেশা, সবকিছু খোলনলচে পাল্টে ফেলতে পারে, একজন নারী তা পারে না। নিজের পুরনো জীবনকে মুছে ফেলে নতুন জীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে তার অস্বস্তির অন্ত থাকে না। বারবার সে ভাবতে থাকে, কী দরকার এখন আর এসবের, যা চলছে চলুক না! কিন্তু প্রকৃত মানসিকভাবে শক্তিশালী নারী সে-ই, যে তার মনের নেতিবাচক অংশকে থামিয়ে দিয়ে, নিজের প্রকৃত স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল অস্বস্তি-লজ্জাকে মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারে।

নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারে বিব্রত হলে চলবে না; Image Source: The Health Site

নিজের সাফল্যকে ছোট না করা

পুরুষের তুলনায় নারীরা সাধারণত বেশি বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করে। তাই অনেক নারীই ভাবে, কোনো কাজের কৃতিত্ব যদি তারা নিজে নেয়ার চেষ্টা করে বা নিজের দক্ষতার কথা সবার সামনে নিজমুখে বলতে চায়, তাহলে সবাই তাকে অহংকারী ভাববে। এমন আশঙ্কা থেকেই তারা নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখতে চায়। এমনকি অন্য কেউ তার কাজের প্রশংসা করলেও তারা বলে, “আরে না না, এই কাজটা তো আমি খুবই বাজে করেছি।” কিন্তু একজন মানসিকভাবে শক্তিশালী নারী কখনোই এভাবে সকলের সামনে নিজের কাজকে ছোট করে না। বরং হাসিমুখে, ‘ধন্যবাদ’ বলে তারা প্রশংসা গ্রহণ করে, এবং যেখানে প্রয়োজন, নিজমুখে তারা তাদের দক্ষতার কথাও জানান দিতে পারে।

(বিভিন্ন সময় নিজেদের মানসিক শক্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, মানসিক অবসাদকে জয় করেছেন, কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছেন এমন তারকা নারীদের ছবি এই লেখায় প্রাসঙ্গিক ছবি হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে)

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about the things that mentally strong women do not do. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © India TV

Related Articles