Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যে সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত নয়

বর্তমান সময়টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে বর্তমান সময়টা ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এবং টুইটারের দখলে। কিশোর কিশোরীরা তুলনামূলক বেশি সময় পার করলেও অন্য সব বয়সের মানুষও আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিন-রাতের উল্লেখযোগ্য একটা সময় পার করছে। মানুষের জীবনে বড় একটি অংশ হয়ে ওঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে বেশকিছু কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে। এক জরিপে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে ১১-১৫ বয়সীরা দিনের চারভাগের একভাগের বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পার করছে। ঘুমের পেছনে তারা যে সময়টা বরাদ্দ রেখেছে, সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করা সময়ের চেয়ে কম। কিশোরদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের বড় একটা অংশও যথাযথ পরিমাণ ঘুমানোর চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুঁ মারাটাকে অভ্যাসে পরিণত করেছে বলে জরিপে ওঠে আসে।

Source: Getty Images

আরেক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়, ৪ বছর বয়সের আগেই যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ শিশুদের হাতে ট্যাব চলে আসে। ফলশ্রুতিতে বড়দের দেখাদেখি পূর্ব-অনুমিতভাবেই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করে। এদিকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কিশোর-কিশোরীরা, যাদের বয়স ১৩-১৮। তাদের ৭০ ভাগ স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারকারী। স্ন্যাপচ্যাটের পাশাপাশি কিশোরদের বড় একটি অংশ ইন্সটাগ্রামও ব্যবহার করে। যুক্তরাজ্যেও অনেকটা একই অবস্থা বিরাজ করছে।

আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এভাবে ঝুঁকে পড়াটা বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করছে বলেও মন্তব্য করেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যার বিষয় তুলে ধরেন গবেষকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তদের মধ্যে অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাসসহ বিভিন্ন মাত্রিক হতাশা দেখা যায় বলে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মিডিয়া, টেকনোলজি এন্ড হেলথের পরিচালক ব্রায়ান প্রিম্যাক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে বিষনণ্ণতা সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গবেষকরা দুই ধরনের বিষয় তুলে ধরেন। যেমন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিছু ক্ষেত্রে বিষনণ্ণতা দূর করলেও অন্য ক্ষেত্রে বিষনণ্ণতা বাড়িয়ে তুলছে। আরেকটি জরিপে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষনণ্ণতা বাড়াচ্ছে এবং একই সঙ্গে তা ব্যবহারকারীদের মধ্যে একধরনের বিচ্ছিন্নতার দেয়ালও তৈরি করছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে একজন সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারী সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, সবার সঙ্গে চ্যাট করছেন, লাইক দিচ্ছেন এবং কমেন্ট করছেন; কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে দেখলে বোঝা যাবে, তিনি সামাজিক বিচ্ছিন্নতাবোধে ভুগছেন, এমনটাই জানান ব্রায়ান প্রিম্যাক।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পরিচালিত এক জরিপে প্রিম্যাক এবং তার দল সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারের সঙ্গে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার একটি যৌক্তিক সম্পর্ক খুঁজে পান। রাতে ঘুমানোর আগে যারা ৩০ মিনিট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন, তারা কখনোই তাদের ঘুমকে উপভোগ করতে পারেন না। অর্থাৎ, ঘুমানোর আগে উল্লেখযোগ্য সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার রাতে কম ঘুম হওয়ার অন্যতম কারণ। এ কারণে ঘুমের আগে অন্তত আধা ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার না করতে পরামর্শ দেন ব্রায়ান ও তার দল।

Source: theguardian.com

ঘুমের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে সতর্কবার্তা জারির পেছনে কয়েকটি কারণও দেখান তারা। ফোন বা পিসির স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলো মেলাটোনিন লেভেলকে বাধা প্রদান করে। অথচ এ মেলাটোনিন লেভেল এমন এক রাসায়নিক উপাদান যা মানুষের ঘুমের উদ্রেক করে। সেক্ষেত্রে ঘুমের আগে যখন কেউ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকে, তার সঠিক সময়ে ঘুম আসে না এবং সুনিদ্রা হয় না। আরেকটি কারণ হিসেবে ব্রায়ান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ঘটনার ঘনঘটার রেষ আমাদের মস্তিষ্কে থেকে যায়। এ ব্যাপারটা ব্যবহারকারীর মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করে। এ অস্বস্তি থেকেই সুনিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটে।

সাধারণত শারীরিক কাজকর্ম মানুষের মাঝে ঘুমের উদ্রেক করে। কিন্তু কারো হাতে যখন স্মার্টফোন থাকে, তখন তার শারীরিক নড়াচড়া তুলনামূলকভাবে কমে যায়। যা পক্ষান্তরে যথেষ্ট ঘুম না হওয়ার আরেকটি কারণ বলে জানান চাইল্ড হেলথ এডুকেশন লেকচারার এরিক সিগম্যান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারো অসাধারণ সুখের মুহূর্ত দেখে অবচেতন মনেই একটা তুলনা কাজ করে। এ তুলনায় একজন ব্যবহারকারী আবিষ্কার করেন তিনি খুব বেশি সুখী নন। তিনি আরেকজন সুখী মানুষের মতো করে তার জীবন উপভোগ করতে পারছেন না। এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা বিষণ্ণতার সৃষ্টি করে এবং এ বিষণ্ণতা মানুষের ঘুমে প্রভাব বিস্তার করে। ফলশ্রুতিতে রাতে যথাযথ ঘুম হয় না।

এভাবে রাতে যথাযথ ঘুম না হওয়া একটা সময়ে ব্যক্তিগত জীবনেও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলকায় সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি পড়াশোনার এবং ক্যারিয়ারকে প্রভাবিত করে। তবে অন্যান্য যেকোনো বয়সের ব্যবহারকারীর চেয়ে বয়ঃসন্ধিকালে থাকা ব্যবহারকারীরা তুলনামূলক বেশি নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় বলে জানান গবেষকরা। কেননা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়কে প্রভাবিত করে।

Source: labroots.com

এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারের লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ দেন এরিক সিগম্যান। কেননা এতে স্বাভাবিক শান্তি ও সুস্থতা ফিরে আসবে। বয়ঃসন্ধিকাল যারা পার করছে তাদেরকে অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেন পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেসিকা লেভেনসন। প্রয়োজনে কিশোর-কিশোরীদের পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলারও তাগাদা দেন তিনি। সেক্ষেত্রে অভিভাবকদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নতুন নতুন যেসব ফিচার সংযোজন করছেন, তা কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়সীদের আরো বেশি কাছে টানছে। এ বিষয়ে ব্রায়ান বলেন, “সামাজিক যোগাযোগের দিকে ঝুঁকে পড়ার বিষয়টা অস্বাভাবিক নয়। তবে অতিরিক্ত ব্যবহারের বিষয়টি আরো সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা যেসব অপ্রিয় বাস্তবতা তুলে ধরছে, সেসব বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।”

চিন্তামগ্ন তরুণী; source: angusreid.org

শিশু ও কিশোরদের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়টি যাতে সহনীয় পর্যায়ে রাখার বিষয়টি অপেক্ষাকৃত কম বয়স থেকে অভ্যাসে পরিণত হলে তা কখনো আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছাবে না। সেক্ষেত্রে বড়রাও সহনীয় পর্যায়ে ব্যবহার করে ছোটদের উৎসাহিত করতে পারে। এতে দুপক্ষেরই উপকার হবে। তবে ঘুমের অন্তত ৩০ মিনিট আগে থেকে ব্যবহারকারীদের বিরত থাকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে পরামর্শ দেন ব্রায়ান প্রিম্যাক। ঘুমের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার না করে এর মধ্যে অনেকে সুফল পেয়েছেন বলেও জানান ব্রায়ান।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা স্মার্টফোনে বুঁদ তরুণ সমাজ; Source: iStock

তাই বলা যায়, ঘুমের আগে আপনি যতই আপনার স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকবেন সেটা আপনার সুনিদ্রায় ততোবেশি সহায়তা করবে। এছাড়া সহনীয় পর্যায়ের সামাজিক যোগাযোগে অংশগ্রহণ আপনার বাস্তব জীবন এবং ভার্চুয়াল জীবনের মধ্যে একটি সুষম পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। যা নিশ্চিতভাবেই আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং কর্মজীবনে সুখের পরশ বুলিয়ে দিয়ে যাবে। অপরদিকে বয়ঃসন্ধিকাল পার করা কিশোর-কিশোরীরা সহনীয় পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখলে সেটা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ইতিবাচকভাবে সহায়তা করবে বলেই জোর দিয়ে বলেছেন চিকিৎসক ও গবেষকরা। এজন্য সহনীয় পর্যায়ের সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকে ‘হ্যাঁ’ বলা এবং বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ ঘটানোর শ্রেষ্ঠ সময় এখনই। কেননা জীবনটা আপনার এবং এর সর্বোচ্চ যত্ন আপনাকেই নিতে হবে।

ফিচার ইমেজ: sciencemag

Related Articles