Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তোতলামি কেন হয়? এর সমাধান কী?

শিক্ষক ক্লাসে আপনার বন্ধুকে পড়া জিজ্ঞাসা করেছেন। আপনার বন্ধু পড়া জানে, কিন্তু বলতে পারছে না। কথা বলতে গেলেই তার মুখে কথা আটকে যাচ্ছে। বন্ধুর এই নাজেহাল অবস্থা দেখে ক্লাসের বাকি সবাই পেছন থেকে হাসা শুরু করে দিলো। আপনার এবং আপনার বন্ধু, দুজনেরই তখন বেহাল দশা। এমনটা আমাদের অনেক বন্ধুর সাথেই হয়েছে কিংবা হয়তো আপনার নিজের সাথেই হচ্ছে।

কথা আটকে যাওয়া; Image source: Etc-Expo

তোতলামি জিনিসটাকে আমাদের সমাজে অনেকটা হাসি-তামাশার বিষয় হিসেবে দেখা হয়। এটা স্বাভাবিক কারো কাছে সাময়িক মজার জিনিস মনে হলেও, যার তোতলামির সমস্যা আছে, তার জন্য ব্যাপারটা বেশ পীড়াদায়ক। আমরা অনেকেই এটা বোঝার চেষ্টা করি না যে, যার তোতলামি হচ্ছে, তার কেন হচ্ছে? বা এই তোতলামির সমাধান কী? এর কি কোনো চিকিৎসা আছে? এই লেখায় আমরা এসব বিষয় নিয়েই জানার চেষ্টা করব।

তোতলামি বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এর পেছনে শারীরিক, মানসিক, পরিবেশগত বিভিন্ন কারণ কাজ করে। অনেক সময় পরিবার থেকেও এই তোতলামি পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। সাধারণত মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের তোতলামির পরিমাণ বেশি হয়। তোতলামির সমস্যা থাকা প্রতি ৫ জন ছেলের বিপরীতে মেয়ে আছে মাত্র ১ জন। আর পুরো পৃথিবীতে তোতলামির সমস্যায় ভুগছে, এমন লোকের সংখ্যা মাত্র ১%। 

কথা পেটে আসে কিন্তু মুখে আসে না; Image source: Whittington Health NHS

বয়সের সাথে তোতলামির একটা সম্পর্ক আছে। বিভিন্ন বয়সে এর কারণ ভিন্ন। চলুন এবার দেখে নেয়া যাক, বয়সের সাথে সাথে তোতলামির সমস্যাগুলো কী হতে পারে।

১. ভাষাগত জটিলতা

সাধারণত ২-৫ বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে তোতলামির লক্ষণ দেখা যায়। তবে এটা হয়ে থাকে নতুন কথা বলা শেখার কারণে। নতুন নতুন শব্দ শেখা, এর সাথে পরিচয় হওয়া, নতুন শব্দ উচ্চারণের চেষ্টা করা- এগুলোর কারণে বাচ্চাদের তোতলামি দেখা যায়। নিজের ভাষার সাথে পরিচিত হয়ে গেলে কিংবা অভ্যস্ত হয়ে গেলে এই তোতলামি চলে যায়। এক্ষেত্রে তোতলামির সমস্যাটা স্থায়ী নয়।

২. শারীরিক ও মানসিক জটিলতা

সারাদিন কাজ করে অনেক ক্লান্ত। শরীর চলতে চাইছে না। এরকম সময় কেউ এসে প্রশ্ন করতে থাকলে দেখা যাবে যে, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। শুধু ক্লান্ত হওয়ার ক্ষেত্রেই এমন না। ধরুন আপনি হয়তো কোনো একটি বিষয় নিয়ে খুব বেশি উৎসাহী অথবা কোনো কারণে মানসিক বিষন্নতায় দিন কাটাচ্ছেন। কিংবা হয়তো শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এগুলো আপনার তোতলামির কারণের সাথে জড়িত হতে পারে। কোনো কারণে ভয় পেলেও আমরা এই তোতলামি দেখতে পাই। অনেকে হয়তো খুব দ্রুত কথা বলতে চায়। এগুলোর কোনোটা চিরস্থায়ী না হলেও, মাঝে মাঝে দীর্ঘস্থায়ী হয়।

অনেকের মধ্যে তোতলামির কারণে কথা আটকে যাওয়ার একটি ভয় কাজ করে। এই ভয়ের কারণে কথা আরো বেশি জড়িয়ে যায়। কথা আটকে যাওয়ার যে ভয় কাজ করে, তার পেছনে একটি রোগ দায়ী। একে বলে সেলিসমোফোবিয়া। এই রোগটি সম্পূর্ণ মানসিক। এই রোগের কারণে কেউ কেউ সবার সামনে কথা বলতে ভয় পায়। মনে করে, কথা বলতে চাইলেই মুখ দিয়ে কথা বের হবে না। তখন নিজেদের সবার সামনে লজ্জায় না ফেলার জন্য কথা গুটিয়ে নেয়। তবে কারো সাহায্য কিংবা অনুপ্রেরণা পেলেই এই সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব।

শিশুদের সাথে হাসি খুশি থাকুন; Image source: qualitycareforchildren.org

৩. পরিবেশগত জটিলতা

একজন ব্যক্তি কোন পরিবেশে বেড়ে উঠছেন, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করে তার মানসিক বিকাশ কী রকম হবে। তার বাসার আশেপাশের পরিবেশ কেমন, তার বন্ধু-বান্ধব কেমন? তার ঘরে বাবা-মায়ের সম্পর্ক কেমন? ইত্যাদি। এই সম্পর্কগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তির মানসিক বিকাশে কাজ করে।

আলোচনার স্বার্থে ধরে নিলাম সে ব্যক্তিটির বাসায় বাবা-মার সম্পর্ক বেশ খারাপ। তারা একে অপরকে দেখতে পারে না। কেবল বিয়ে আর সন্তানদের কারণে তারা একসাথে বসবাস করছে। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই তিনি দেখেন তার বাবা-মা কে ঝগড়া-বিবাদে লেগে থাকতে। এরকম পরিস্থিতিতে বেশ বড় ধরনের সম্ভাবনা আছে লোকটি ভীরু প্রকৃতির মানুষ হওয়ার। কোনো কাজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস থাকতে পারে তলানিতে। যেকোনো কাজের বেলায় ভুগতে থাকবে সিদ্ধান্তহীনতায়। যেহেতু পরিবারের কাছের লোকদের মধ্যে সুসম্পর্ক দেখছে না, তাই হয়তো নিজেকে একা ভাবতে শুরু করবে। কারো সাথে মন খুলে কথা বলবে না।

যেহেতু তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি আছে, তাই অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার সময় তার মধ্যে কথা আটকে যাবার ভয় কাজ করতেই পারে। এটি তার জীবনে বেশ বড় একটা সময় ধরে প্রভাব ফেলে রাখে। এটি সম্পূর্ণ সমাধানযোগ্য না হলেও, নিজে চেষ্টা করলে কথা বলাটা অনেকটাই ঠিক করে ফেলা যায়।

উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে শিশুরা নিজেদের আলাদা ভাবতে থাকে; Image source: Family Corner

এবার আসি এর সমাধানের দিকে। ভাষাগত জটিলতার জন্য যে সমস্যা হয়, তা দ্রুতই সেরে যায়। সেটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। বড় সমস্যা হলো শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত জটিলতা নিয়ে। চলুন দেখে নিই এক্ষেত্রে কী করা যায় বা কী করা উচিত।

শুরুতে শিশুদের কিংবা ১৯ বছর বয়সের নিচে যারা তাদের কথা বলি। এই বয়সে মানসিক সমস্যাটা বেশ প্রকট থাকে। শিশু যে পরিবেশে বড় হয়, সে পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারলে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয় না। সেক্ষেত্রে তারা যেন সঠিক সঙ্গ খুঁজে পায়, সেদিকে নজর দেয়া উচিৎ। পরিবারের বড়দেরকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় এ বিষয় নিয়ে কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে। যেসব শিশুদের শ্রবণ জটিলতা আছে, তাদের নিয়ে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নাম সাহিক। যাদের তোতলামি বা কথা আটকে যাওয়ার সমস্যা আছে, তাদের নিয়ে কাজ করা হয় সেখানে। তাদের জন্য বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা সেখানে আছে। 

সাহিকের লগো; Image source: sahic.org

আর বড়দের ক্ষেত্রে নিজেদেরই পরিস্থিতি তৈরি করে নিতে হবে। নিজেরা গিয়ে মানুষজনের সাথে পরিচিত হতে হবে। এটা মনে রাখবেন, আপনি একা নন যে এই সমস্যা ভুগছেন। এমন অনেকেই আছে যারা আপনার মতোই একজনের সঙ্গ খুঁজছে।

তোতলামি ছাড়া ঠিকমতো কথা বলার অভ্যাস করার জন্য কিছু উপায় আছে। এগুলো নিজে চেষ্টা করে বেশ সুফল পেতে পারেন। 

  • দ্রুত কথা বলার সমস্যা হলে ধীরে কথা বলার চেষ্টা করুন। 
  • কোনো কথা বলার আগে লম্বা শ্বাস নিয়ে নিন। দরকার হলে ৩ সেকেন্ড বিরতি নিয়ে কথা বলুন।
  • কী বলতে চান, তা আগে থেকেই মাথায় গেঁথে নিন। এতে আপনার এক কথার মাঝে আরেক কথা হারিয়ে ফেলার ভয় থাকবে না।
  • কোনো কথা বলা শুরু করলে, তার মাঝে কোনো বিরতি দেবেন না। কারণ একবার কথা বলার গতি পেয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার আর কথা আটকাবে না।
  • বিশেষ কোনো শব্দ উচ্চারণে সমস্যা হলে, তা বারবার বলে অভ্যাস করুন। দেখবেন ঠিক হয়ে গেছে।
সবসময় হাসি খুশি থাকুন; Image source: actionforstammeringchildren.org

এগুলো ছাড়াও নিজের আশেপাশের লোকজনের সাহায্য দরকার পড়ে। কেউ যদি আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, তাহলে তাকে আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন। বুঝিয়ে বলুন আপনার কী সাহায্য প্রয়োজন। সবসময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করুন। একটি বিষয় খেয়াল করে দেখবেন, আপনি যখন কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছেন, তখন আপনার কথা আটকানোর ভয় থাকে না। আপনি স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে যাচ্ছেন। তাই চেষ্টা করবেন যতবেশি সম্ভব আপন এবং কাছের মানুষ তৈরি করার।

Feature image: ox.ac.uk

Related Articles