Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নাক ডাকা কী? কেন মানুষ নাক ডাকে? পড়ুন মুক্তির উপায়

শ্বসনতন্ত্রের কম্পন এবং ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাস প্রশ্বাসের সময় বাধাগ্রস্ত বায়ু চলাচলের ফলে সৃষ্ট শব্দই হচ্ছে নাক ডাকা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, শব্দ নরম হতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি জোরে এবং অপ্রীতিকর হতে পারে। নিদ্রাহীনতার সঙ্গে শ্বাস-কষ্ট (অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপ্নিয়া বা OSA) রোগের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে নাক ডাকা। সহজ কথায়, যখন নাক এবং গলার মধ্য দিয়ে নিঃশ্বাস নেবার সময় বাতাস সঠিকভাবে যাতায়াত করতে পারে না তখন আশেপাশের টিস্যুগুলোতে কম্পনের সৃষ্টি হয়। ফলে যে শব্দ উৎপন্ন হয় সেটাকেই নাক ডাকা বলে।

নাক ডাকা হয়ে উঠে বিরক্তির কারণ; ছবিসূত্র: notley.healthcare.uk

বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় অর্ধেক মানুষই নাক ডাকেন। সোয়া ভাগ হয়ত বেশিই ডাকেন। আর বাকিদের কাছে এই প্রসঙ্গটাই হাস্যকর। নাক ডাকা স্বাভাবিক ঘটনা হলেও প্রায়ই ‘নাক ডাকা’ ব্যক্তিকে লজ্জার মুখে পড়তে হয়। একই কক্ষে থাকা বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, সমবয়সী ভাই-বোন এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মাঝেও এই নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ (ক্ষেত্রবিশেষে ঝগড়া) চলতেই থাকে। যিনি নাক ডাকছেন তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকলেও পাশেরজনের ঠিকই সারা রাত জেগেই পার হচ্ছে। নাক ডাকার বিশেষ কারণসমূহ এখানে তুলে ধরা হলো।

১. শরীরে বাড়তি ওজন, গর্ভাবস্থা এবং কিছুটা বংশগত কারণে মানুষ নাক ডেকে থাকে।

২. অ্যালার্জি, নাক বন্ধ হওয়া অথবা নাকের ভিন্ন গঠনও নাক ডাকার একটি কারণ। এসব কারণে নাকের ভেতরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে না এবং নাক ডাকার সৃষ্টি হয়।

৩. মদ্যপান, ধূমপান এবং বিশেষ কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষ নাক ডাকে।

৪. বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরে চামড়া ঝুলে যায়, পুরু হয় এবং গলার কিছু পেশীও ফুলে যায়। এর জন্য বয়স্করা নাক ডাকেন তুলনামূলক বেশি

বয়স্করা নাক ডাকেন বেশি; ছবিসূত্র: huffingpost.com

নাক ডাকা সাধারণত পুরুষদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। বয়স, ওজন কিংবা কিছু বিশেষ রোগ বাড়ার সাথে সাথে এর তীব্রতাও বাড়তে থাকে। এটা নিদ্রাহীনতার একটি লক্ষণ বলা চলে। কারণ যিনি নাক ডাকেন তার নিজেরও মাঝে মাঝে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যা একসময় রুটিনে পরিণত হয়ে যায়।

নাক ডাকার এই অভ্যাস পুরোপুরি বদলানো না গেলেও এর তীব্রতা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। নাক ডাকা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন। আশা করি এই বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি এবং আপনার সঙ্গী রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারবেন।

১. ওজন কমানো

শরীরের অতিরিক্ত ওজন নাক ডাকার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বাড়তি ওজন নাকের ভেতরে বাতাস চলাচলের জায়গা সংকীর্ণ করে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের সময় শব্দের সৃষ্টি করে। তাই ওজন কমালে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত হওয়া সম্ভব।

২. শোয়ার অবস্থান পরিবর্তন

সোজা এবং চিৎ হয়ে শোবার কারণে জিহ্বা এবং নরম তালু পেছনের দিকে হেলে যায়। যার কারণে মুখের ভেতরে বাতাস চলাচলের জায়গাটা আটকে যায় এবং শব্দের সৃষ্টি হয়। ডান কাতে শোয়া এক্ষেত্রে খুবই ভালো একটি সমাধান। বাম কাতে শোয়ার জন্য বুকের উপর বেশি চাপ পড়তে পারে। তাই সবদিক থেকে ডান কাতে শোয়াটা একটি ভালো উপায়।

কাত হয়ে ঘুমালে নাক ডাকা কমে; ছবিসূত্র: reader’sdigest.com

৩. মদ্যপান করা যাবে না

অ্যালকোহল শরীরের বিভিন্ন পেশীকে অনেক বেশি শিথিল করে দেয়। ফলে শিথিল মাংস পেশীগুলো মুখের ভেতরে জায়গা আটকে দেয়। এটি শরীরের জন্যেও খুব ক্ষতিকর। যারা মদ্যপান ছাড়তে পারছেন না তারা নাক ডাকার হাত থেকে রেহাই পেতে অনুপ্রাণিত হতে পারেন।

৪. পর্যাপ্ত ঘুম

আপনার যদি দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুম (৭ থেকে ৯ ঘণ্টা) না হয়ে থাকে তাহলে নাক ডাকা বেড়ে যেতে পারে কিংবা হঠাৎ করে শুরুও হতে পারে। অতিরিক্ত ক্লান্তি শরীরের পেশীগুলোকে অলস করে দেয় যা নাক ডাকার আরেকটি কারণ।

৫. নাসারন্ধ্র খোলা রাখুন

নাক বন্ধ থাকার জন্যও নাক ডাকার সৃষ্টি হতে পারে। এজন্যই অনেকে যারা কখনোই নাক ডাকেন না তাদের বিরুদ্ধেও নাক ডাকার অভিযোগ আসে। আপনার যদি ঠাণ্ডাজনিত কারণে নাক বন্ধ থেকে থাকে তাহলে শোবার আগে গরম পানির ভাপ নিয়ে যথাসম্ভব নাক পরিষ্কার করে ফেলুন।

৬. কক্ষ পরিষ্কার রাখুন

ধুলাবালিতে অ্যালার্জির কারণে নাকের ভেতরে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। দৈনিক আপনার কক্ষের ফ্যান, আসবাবপত্র, বই-খাতা, চেয়ার-টেবিল এবং প্রাত্যহিক ব্যবহার্য জিনিসপত্র ঝেড়ে রাখুন।

৭. মুখ, চোয়াল এবং গলার পেশীর ব্যায়াম করুন

আমরা সাধারণত শরীরের বাড়তি মেদ বলতে হাত, পা বা পেটের মেদ বুঝি এবং এগুলো কমাতেই ব্যায়াম করে থাকি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে শরীরের প্রতিটি পেশীকে সুস্থ রাখতে আলাদা আলাদা ব্যায়ামের প্রয়োজন রয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক মুখের কিছু ব্যায়াম:

  • জিহ্বাকে উপরে তালুর দিকে ধাক্কা দিন এবং আস্তে আস্তে পেছনের দিকে নিন।
  • জিহ্বাকে উপরের দিকে চুষে নিন এবং আস্তে আস্তে পুরো জিহ্বা উপরের তালুতে চেপে ধরুন।
  • জিহ্বার পেছনের অংশকে মুখের নিচের অংশে চেপে ধরুন। একইসাথে জিহ্বার অগ্রভাগ নিচের পাটির সামনের দাঁতে চেপে রাখুন।
  • আলাজিহ্বা এবং নরম তালু (মুখের একদম ভেতরের নরম ভাগ) চেপে ধরে “আ-আ-আ” শব্দ করুন।

নাক ডাকা রোধে কিছু ব্যায়াম; ছবিসূত্র: theartofmanliness.com

এই ব্যায়ামগুলো মুখের এবং চোয়ালের পেশীকে সুস্থ রাখে এবং রাতে নিঃশ্বাসের জন্য জায়গা রাখতে সাহায্য করে।

৯. ধূমপানকে ‘না’ বলুন

সিগারেটের ধোঁয়া নাকের ভেতরে এবং গলার মেমব্রেন টিস্যুর ক্ষতি করে। গলার ভেতরে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে এবং মাংসপেশী ফুলে যায়। নাক ডাকা তখন আসলে একটি ক্ষতিকর লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়।

১০. উঁচু জায়গায় শোয়া

ঘুমানোর সময় একটি বাড়তি বালিশ নিয়ে মাথাটা একটু উঁচু জায়গায় রেখে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। লক্ষ্য রাখুন যেন শুধু মাথাই নয়, বুকের দিকটাতেও যেন সামঞ্জস্য বজায় রাখে। তা না হলে ঘাড়ে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হতে পারে।

১১. কক্ষের আর্দ্রতা বজায় রাখুন

শুষ্ক বাতাসে শ্বাসকষ্ট বাড়ে। সেজন্য কক্ষের আদ্রতা স্বাভাবিক থাকলে নাক ডাকা কমানো সম্ভব। এটা আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারী।

১২. ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন

ঘুম হলো শরীর এবং ব্রেনকে শিথিল করার ও বিশ্রাম দেয়ার সময়। ঘুমের উপর নির্ভর করছে আপনার পরের দিনের শক্তি। তাই এই ব্যাপারে কোনো আপোষ না করাই শ্রেয়। একজন ভালো চিকিৎসকের কাছে যান। আপনাকে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ব্যায়াম (যা শরীরকে ক্লান্ত করবে) দেয়া হতে পারে। ডাক্তারের দেয়া নিয়ম-কানুন অনুসরণ করুন এবং বেরিয়ে আসুন এই সমস্যা থেকে।

১৩. ধ্যান করুন

ধ্যান বা মেডিটেশন শারীরিক এবং মানসিক বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম সমাধান। ধ্যানের মাধ্যমে আপনার অজানা অনেক সমস্যার সমাধানও হতে পারে। হয়ত এর মাধ্যমে আপনি নাক ডাকা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন!

সর্বোপরি ‘নাক ডাকা’ কারো জন্যই সুখকর নয়। যিনি নাক ডাকেন এবং যিনি তার পাশে থাকেন উভয়ের জন্যই ব্যাপারটি কষ্টদায়ক। তাই সহজ কিছু উপায়ে নাক ডাকা প্রতিরোধের চেষ্টা করা উচিত। নাক ডাকা না কমলে দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। নাক ডাকা বিভিন্ন রোগের কারণ হিসেবে দেখা হয়। তাই ডাক্তারকে দেখিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেয়াই শ্রেয়।

ফিচার ইমেজ- asbestosinspection.co

Related Articles