Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘মা দিবস’ ভিন্ন ভিন্ন দেশ কেন ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালন করে?

মা দিবস ব্যাপারটি ঠিক আমাদের কাছে মায়েদের জন্য রাখা সময়কে কেবল একটি দিনে আটকে দেয় না। তাই মা দিবস কেন একটি স্থানে একটি নির্দিষ্ট দিনে পালিত হয়, আর কেন অন্য স্থানে অন্য দিনে পালিত হয় সেই প্রশ্ন অবান্তর। তবে কৌতূহল মেটানোর জন্য মা দিবসের ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পালিত হওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলাই যায়। তবে মা দিবসের দিনক্ষণ নিয়ে কথা বলার আগে কেন এবং কখন, কে মা দিবস প্রথম পালন করেছিলেন, এই দিবসটির জন্ম দিয়েছিলেন সেটি জানা খুব প্রয়োজন।

মা দিবস আমাদের সবারই খুব ভালোবাসার একটি দিবস; Source: psychology today

মা দিবসের শুরু যেভাবে

মা দিবসের চিন্তা প্রথম আসে অ্যানা জারভিসের মাথায়। অ্যান রিভস জারভিস ছিলেন অ্যানার মা। তিনি শিক্ষকতা করতেন। মায়েদের জন্য ‘মাদার্স ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ গড়ে তুলেছিলেন অ্যান। উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে মায়েদের আরো বেশি জানানো। ১৮৭৬ সালের কথা সেটা। অ্যানার মনে ছিল, মা একদিন তার প্রার্থনা শেষে বলেছিলেন এমন একটা সময় যদি আসে যেদিন কেউ একজন ‘মা দিবস’ নামে কোনো দিবস তৈরি করবে। ১৪ বছর বয়সী অ্যানা এসব কিছুই ভোলেননি। মা মারা যান ১৯০৫ সালে। তার অনেক পরের কথা। ৪০ বছর বয়সী অ্যানার মাথায় মায়ের ওই ইচ্ছেটুকু নাড়া দিয়ে যায় বারবার। মা চেয়েছিলেন, কেউ একজন মা দিবস নামে মায়েদের জন্য একটি দিবস তৈরি করুক। কাজে নেমে পড়েন অ্যানা। মা পারেননি তো কী হয়েছে, মায়ের জন্য এটুকু তো করতেই পারেন অ্যানা। পরের একটি বছর তিনি শান্তিতে সময় কাটাতে পারেননি। প্রচুর চিঠি পাঠান তিনি প্রশাসনের কাছে। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালন করার ব্যাপারে। দিনটি ছিল অ্যানার মায়ের মৃত্যুদিনের সবচাইতে কাছের রবিবার। মার্ক টোয়েন, থিওডর রুজভেল্ট থেকে শুরু করে যত প্রভাবশালী মানুষ ছিলেন সেসময়, তাদের সবাইকে সাধ্যমতো চিঠি পাঠান অ্যানা। ১৯০৮ সালের এক স্নিগ্ধ সকাল। গ্রাফটনে অবস্থিত সেইন্ট এন্ড্রুর মেথোডিকাল চার্চে প্রথমবারের মতো পালিত হয় মা দিবস। পূরণ হয় অ্যানার স্বপ্ন।

অ্যানা জারভিস; Source: BuzzFeed

বছর দুয়েক পরের কথা। জারভিসের কথানুসারে পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে দিনটিকে মেনে নিয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জারভিস তাতে থেমে থাকেননি। তিনি সবখানে ভ্রমণ করেন, সবাইকে চিঠি পাঠান। অ্যানা জারভিস চেয়েছিলেন দিনটি, তার মায়ের মৃত্যুর দিনটি যেন জাতীয় ছুটির দিন হয়। ১৯১৪ সালের ৮ই মে। অবশেষে কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে মেনে নিয়ে বিল পাস করে। প্রথম মা দিবসটিকে উৎসর্গ করা হয় সেসব মায়েদের, যারা কিনা যুদ্ধে তাদের সন্তানকে হারিয়েছেন। কিন্তু এসবেও জারভিসের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। অ্যানা জারভিস কেবল চেয়েছিলেন তার মা, পৃথিবীর সমস্ত মা সম্মান পাক। সেই সম্মানটুকু পাক, যেটি তাদের প্রাপ্য। কিন্তু ব্যাপারটা পুরোপুরি তা হয়নি। সবার কাছে দিবসটি হয়ে উঠেছিল ব্যবসা করার এক নতুন মাধ্যম। কার্ড, ফুল, উপহার সামগ্রীর মাধ্যমে ব্যবসা করে নিচ্ছিলো সবাই। আর সেই ব্যাপারটিকে থামানোর জন্য উঠেপড়ে লাগেন জারভিস। তাতে কতটা লাভ হয়েছে সেটা অবশ্য চিন্তার ব্যাপার। কারণ এখনো পর্যন্ত মা দিবসকে ঘিরে এমন অনেক পণ্য কেনাবেচার হিড়িক পড়ে যায় দিনটি এলেই!

মায়ের জন্য একটি আলাদা দিবসের কথা ভাবেন প্রথম অ্যানা; Source: Vox

মা দিবস কেন ভিন্ন ভিন্ন তারিখে হয়?

শুরুটা হয়েছিল মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে কেন্দ্র করে। তবে এই বছর যুক্তরাজ্য দিনটি উদযাপন করবে ১১ই মার্চ। অন্যদিকে বেশ কিছু দেশে সেটা পালিত হবে ১৩ই মে। প্রতিটি দেশই চায় মা দিবস পালন করতে, মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতে। তবে এই ক্ষেত্রে তাদের সম্মান জানানোর দিনটিতে থাকে ভিন্নতা। কেন? অন্য দেশের যদি মা দিবস মে মাসের রবিবারে পালিত হয়, তাহলে যুক্তরাজ্যে কেন সেটা মার্চ মাসে? প্রশ্নটি কেবল আপনার নয়। আরো অনেকের মাথাতেই এসেছে এই জিজ্ঞাসা। কারণটা খুব স্বাভাবিক এবং সহজ।

মা দিবস হয়ে গেছে ব্যবসার আরেকটি ভালো মাধ্যম; Source: Bespoke Hotels

যুক্তরাজ্যের মা দিবসের আসল নাম ‘মাদারিং সানডে’। আর এই ব্যাপারটির সাথে মা দিবসের কিংবা আমাদের মায়েদের কোনো সংযোগ নেই। ভাবছেন, তাহলে মা দিবস কেন পালিত হয় সেখানে এই দিনে? কারণ আর কিছু না, পৃথিবীর আর অন্যের দেশের সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নেওয়া। আপনিই ভাবুন, আপনার পাশের দেশ যখন মা দিবস পালন করছে তখন আপনিই বা সেই স্রোতে গা ভাসাবেন না কেন? মাদারিং সানডে ব্যাপারটি এসেছে ১৬ শতক থেকে। সেই সময় ‘মাদার’ চার্চে যাওয়ার একটি ব্যাপার ছিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। আর এই দিন পড়তো লেন্টে। লেন্টের চতুর্থ রবিবার পালিত হত দিনটি। লেন্ট অর্থ ইস্টারের সেই সময় যখন মানুষ তাদের কোনো না কোনো খারাপ অভ্যাস ছেড়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। এছাড়া কোনো খাবার বা পানীয়ে সমস্যা থাকলে সেটাও ছেড়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। মাদারিং ডে-তে সবাই তার নিজের পরিবার পরিজনের সাথে সময় কাটানো এবং আচার অনুষ্ঠান পালন করবে এমনটাই নিয়ম ছিল প্রাচীনকালে। সেই নিয়ম এখনো মানা হয়। বাড়ির কর্মচারীদের ছুটি দেওয়া হয় এই দিনে নিজের পরিবারের সাথে মিলিত হয়ে প্রার্থনা এবং সমস্ত আচার অনুষ্ঠান পালন করার জন্য। তবে খুব দ্রুত এই মাদারিং সানডেকে আরেকটু পাল্টে নিয়ে মায়েদের শুভেচ্ছা জানানো এবং উপহার দেওয়ার মাধ্যমে মা দিবসও পালন করে ফেলে এখন যুক্তরাজ্য একই দিনে। মা কতটা কাজ করছে, সেটির প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই দিনটি এখন পালিত হয় যুক্তরাজ্যেও। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি বাকি দেশগুলো মে মাসেই পালন করে মা দিবস।

মেক্সিকোতে মা দিবস পালিত হয় একটু আগেই; Source: mageSerenity.com

এদিক দিয়ে নরওয়ে অবশ্য একটু আলাদা। মার্চ কিংবা মে মাস নয়, সরাসরি ফেব্রুয়ারি মাসেই পালন করে ফেলে দেশটি মা দিবস। এই দিবস পালনের প্রক্রিয়া অবশ্য অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে নরওয়েতে। তাই দিনের হিসেবে একটু ভিন্নতা থাকলেও সেটা নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। শুধু তা-ই নয়, নরওয়েতে মা দিবস একেকটি বছর একেক দিনে পালিত হয়। যদিও মাস বদল হয় না। মাস থেকে যায় নির্দিষ্ট স্থানেই। মা দিবসের ক্ষেত্রে ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ আর অনেক দেশ আমেরিকাকে অনুসরণ করে। কিন্তু নরওয়ে আর যুক্তরাজ্যের মতো এই দিবস পালনে ভিন্নতা আছে মেক্সিকোর ক্ষেত্রেও। মেক্সিকোকে মে মাসের ১০ তারিখে পালিত হয় মা দিসব। ফলে একটু পাল্টে যায় পুরো ব্যাপারটি। যেমন, এই বছরে, অর্থাৎ ২০১৮ সালে আমেরিকায় যখন মা দিবস পালিত হবে দ্বিতীয় রবিবার, তখন মেক্সিকোতে সেটা পালিত হবে কিছুদিন আগেই। দিন নয়, বরং তারিখ দেখে দেশটি মা দিবস পালন করে। কেন? কারণ জানতে হলে যেতে হবে ১৯২০ সালের দিকে।

সেসময় হুট করে সবার নজরে পড়ে যে, নারীরা মাতৃত্বকে নয়, বরং অন্যদিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। মাতৃত্ব যে অসম্ভব সম্মানজনক ব্যাপার, তা নারীদের বোঝাতেই শুরু হয় মেক্সিকোর মা দিবস। তবে কেবল এই দুটো একটি দেশ নয়। এছাড়াও ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ইত্যাদি দেশে মা দিবস পালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে ভিন্ন দিনে। এখন প্রশ্ন হল, দিন কি আসলেই এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ? একদম নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল, মাকে আমরা কতটা ভালোবাসি সেটা। তাই কোনো নির্দিষ্ট দিন নয়, বরং মাকে ভালোবাসুন আর ভালোবাসার কথা জানান বছরের প্রতিটি দিন।

ফিচার ইমেজ: psychology today

Related Articles