Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্বামীর নাম গ্রহণে নারীরা এখনও কেন আগ্রহী?

মনির হোসেন মাহবুব (২৮)। পেশায় ব্যাংকার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সহপাঠিনী শাকিলা তাসনিমের (২৯) সাথে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব কখন যে প্রেমে গড়িয়ে গেছে দুজনের কেউই টের পাননি। প্রণয়কে পরিণয়ে রূপ দিতে তাই দুজনেই বদ্ধপরিকর। বিয়ের পর শাকিলা নিজের নামের সাথে হবু স্বামীর নামের শেষ অংশ ‘মাহবুব’ যুক্ত করে নেওয়ার প্রস্তাব দিলে আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠেন মনির হোসেন।

লিন্ডসে ইসাবেলা (৩০)। নেহাতই কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিয়েটা পিছিয়ে গেলো। আসছে বছরের জুলাই মাসে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন লিয়াম নেসোনের (৩২) সাথে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতে দুজনে মিলে একটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করছেন যৌথভাবে। পছন্দের মানুষের সাথে গাঁটছড়া বাধবার সময় যত এগিয়ে আসছে, ইসাবেলার উত্তেজনার পারদ ততই ঊর্ধ্বমুখী। তার আনন্দের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে যে, এই বিয়ের মাধ্যমেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেমিকের নামের শেষাংশ গ্রহণ করবেন।

দুটো ঘটনাই বাস্তব, কেবল গোপনীয়তার স্বার্থে স্থান, কাল, পাত্র সামান্য বদলে দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য করুন পাঠক, উভয় ঘটনায়ই পাত্র-পাত্রীরা আধুনিক যুগের নাগরিক। নারীবাদ যখন নতুন করে আরেকবার তার প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে অত্যন্ত সরব, নারীরা যখন স্বীয় অধিকার রক্ষায় যথেষ্ট সচেষ্ট, তখনও নারীরা স্বেচ্ছায় তাদের স্বামীদের নাম গ্রহণ করতে আগ্রহী। বলা বাহুল্য, স্বামীর নাম গ্রহণ আক্ষরিক অর্থেই তীব্র পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার একটি উপাদান। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭০ শতাংশ নারীই বিয়ের পর তাদের স্বামীর নাম গ্রহণ করে থাকেন। ব্রিটেনে সংখ্যাটি আরও বৃহৎ, প্রায় ৯০ ভাগ ব্রিটিশ নারী বিয়ের পর নিজেদের নামের সাথে স্বামীর নাম জুড়ে নেন। এই নারীদের মাঝে ৮৫ ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মাঝে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কিছুটা পার্থ্যকের কারণে হলো, এই দু’দেশে নারীবাদের সংজ্ঞায়নের তারতম্য। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যেসব নারীর বয়স ৩০ বছরের নিচে, তাদের মাঝে শতকরা ৬৮ এবং ৬০ ভাগ নিজেদেরকে নারীবাদী বলে দাবি করেন।

পিউ রিসার্চের নারীবাদ বিষয়ক গবেষণার তথ্য; Image Source: pewresearch.org

যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিমন ডানকান। তার বক্তব্য অনুযায়ী,

বর্তমান যুগে এসেও স্বামীর নাম গ্রহণের প্রতি নারীদের এতটা আগ্রহ সত্যিই আশ্চর্যজনক। স্বামীর নাম গ্রহণের চর্চাটি মূলত এই ধারণাকেই সমর্থন যোগায় যে, বিয়ের পর একজন স্বামী তার স্ত্রীকে অধিকৃত করে নেয়। দখলদারিত্বমূলক মনোভাব ছাড়া এটি আর কিছুই হতে পারে না। বিয়ের মাধ্যমে নিজের স্ত্রীকে অধিকৃত করার যেই ধারণা সেটি বহু আগেই বিলুপ্ত হলেও অধিকাংশ ইংরেজি ভাষাভাষী লোকেদের দেশগুলোতে বৈবাহিক নাম পাল্টে নেওয়ার রেওয়াজটি এখনও বিদ্যমান।

স্পেন, আইসল্যান্ড ও গ্রিস; ইউরোপের এই তিনটি দেশ ব্যতীত আর প্রায় সকল দেশেই নারীরা বিয়ের পর পুরুষ সঙ্গীর নাম ধারণ করবেন, এটিই রীতি। এমনকি লিঙ্গ সমতার স্বর্গরাজ্য এবং পুরুষতান্ত্রিকতার বিরোধী বলে সমধিক পরিচিত নরওয়েতেও অধিকাংশ নারী বিয়ের পর স্বামীর নামে পরিচিত হতে ভালোবাসেন। প্রশ্ন হচ্ছে, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই নারীরা নিজেদের সক্ষমতা উপভোগ করতে সদা প্রস্তুত থাকলেও এক্ষেত্রে কেন তারা স্বনির্ভর আচরণ প্রদর্শন করতে পারছেন না?

Image Source: theconversation.com

সিমন ডানকান ও তার সহকর্মীদের গবেষণা দুটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করছে। তাদের গবেষণা প্রাথমিকভাবে বলার চেষ্টা করেছে যে, নারীরা বিভিন্ন কারণে নাম পরিবর্তনে ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন। পারিবারিক নাম যার কাছ থেকে তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন, তিনি মৃত হতে পারেন কিংবা একজন সহিংস ব্যক্তি হতে পারেন; কিংবা নামের ঐ অংশটি স্রেফ তার পছন্দ নয়। প্রকৃতপক্ষে কারণগুলো একেবারেই ব্যক্তিগত এবং গুরুত্বের দিক থেকে লঘু।

প্রণিধানযোগ্য দুটি কারণ রয়েছে নারীদের এ আচরণের পেছনে। প্রথমত, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বলিষ্ঠ উপস্থিতি। সদ্য বিবাহিত যুগল নিজেরা পুরুষতান্ত্রিক কি না, তা এখানে আসলে ভূমিকা রাখে না, তারা স্রেফ এই প্রথাতে বিশ্বাসী এবং বুঝে বা না বুঝেই তারা নিজেরাও একই নিয়মের পুনরাবৃত্তি করে চলেছেন। দ্বিতীয়ত, একজন সুযোগ্য স্ত্রী ও দায়িত্ববান মা হওয়ার স্বপ্ন থেকে নারীরা এই কাজটি করে থাকেন। স্বামীর নাম গ্রহণের মাধ্যমে নারীরা মূলত স্বামীর প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে থাকেন। স্বামীর নামগ্রহণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এটিই বলে যে, একজন নারী তার পরিবারকে এক সুতোয় গেঁথে রাখতে ইচ্ছুক। 

Image Source: bbc.com

স্রোতের বিপরীতে গিয়ে যদি কোনো নারী তার স্বামীকে এই যুক্তি দেখান যে, তিনি বিয়ের পরেও নিজের নামেই পরিচিত হতে চান, কিংবা নামের মতো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের একটি মৌলিক দিককে তিনি স্বামীর নামের সাথে মিশিয়ে ফেলতে চান না, সেখানেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে কোনো নারী প্রচলিত এ আচরণের বিরোধিতা করলে স্বামীর ত্বরিত জবাব থাকে যে, তাহলে বিয়ের উদ্দেশ্যটাই তো পূর্ণ হচ্ছে না! এই স্বামীদের কাছে স্ত্রীদের নাম পরিবর্তন এতটাই জরুরি যে তারা এর অন্যথাকে বিয়ে না করার শামিল করছেন।

আরেকটি বিষয়ে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সমুচিত বলে মনে করছি। নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন তো, নারীবাদের ঝাণ্ডাধারী দেশগুলোর বিভিন্ন সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান, টিভি সিরিজ, চলচ্চিত্র ইত্যাদিতে যখন কোনো নারীকে প্রথমবারের মতো পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, তখন তা কীরকম হয়ে থাকে? অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীটির নিজের নাম, পেশার পাশাপাশি তিনি বিবাহিত হলে কার স্ত্রী, সেটা বাধ্যতামূলকভাবে উচ্চারিত হয়ে থাকে। কিন্তু পুরুষদের বেলায় কখনও দেখেছেন কি, এতটা নিয়ম মেনে ঘোষণা করতে যে, সেই পুরুষটি কার স্বামী? এখান থেকে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত মিলছে যে ব্যক্তি হিসেবে; একজন একক, স্বাধীন, মানুষ হিসেবে; একটি মৌলিক সত্ত্বা হিসেবে নারীরা পরিচিত হন না সমাজে। একজন নারী- তা সে আমলা, শিক্ষক, পরিচ্ছন্নকর্মী, দোকানদার যে-ই হোন না কেন, বিবাহিত হলে তিনি কার স্ত্রী, বিষয়টি উল্লেখ করা একান্ত স্পৃহনীয় বটে। 

নারীরা প্রায়ই অভিযোগ করে থাকেন যে, সন্তানের প্রাথমিক যত্নআত্তির দায়িত্ব সবসময় মায়ের উপরেই কেন পড়ে? বাচ্চা অসুস্থ হলে প্রধানত মা-ই উদ্যোগী হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান, বাচ্চার পড়ালেখার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা-ই কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নেন এবং এরকম উদাহরণের কোনো শেষ নেই। তারা এটাও অভিযোগ করে থাকেন যে সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে স্বামীর অংশগ্রহণ নিতান্তই কম হওয়ায় তাদের ক্যারিয়ার বিপর্যস্ত হয়। আবার তারাই কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে স্বেচ্ছায় স্বামীর নাম গ্রহণ করে থাকেন এমনকি ব্যপারটিকে প্রেমময়তার অংশ হিসেবে দেখে থাকেন। দিনশেষে এসব দ্বিমুখিতা কিন্তু নারীবাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে বাধা হিসেবেই কাজ করছে।

Image Source: Image Source: theconversation.com

নারীবাদীদের মাঝে কেউ কেউ অবশ্য নাম পরিবর্তনের বিষয়টিকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখে থাকেন। নারীবাদের ভিত্তি হচ্ছে নারীর স্বাধীনতা। জোরপূর্বক যেসব ঘটনা ঘটে, সেগুলোকে বাদ দিয়ে কোনো নারী যদি স্বেচ্ছায়, ভালোবেসে স্বামীর নাম গ্রহণ করে থাকেন তাহলে এটি তার ব্যক্তি স্বাধীনতা। এখানে চর্চাটি পুরুষতান্ত্রিকতার সমর্থন যোগাচ্ছে নাকি এর প্রতিবাদ করছে, সেটি গৌণ বিষয়। মেধাবী পাঠকদের কাছে প্রশ্ন থাকবে, আপনি কি এই চিন্তাধারায় বিশ্বাসী? নাকি সমগ্র জীবন জুড়ে নারীর নিজের নাম অক্ষুণ্ণ রাখাকেই তার জন্য সম্মানজনক বলে মনে করেন? 

This is a Bangla article which describes why women are still wiling to change their names after marriage. All the references are hyperlinked within the article.

Feature Image: theatlantic.com

Related Articles