Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কাজের চাপে মোকাবেলা করবেন যে ৬টি উপায়ে

কাজের চাপ আমাদের সবাইকেই কমবেশি মোকাবেলা করতে হয়, আর বর্তমান সময়ের প্রতিযোগিতামূলক ব্যস্ত জীবনে এই কাজের চাপ হয়ে গেছে আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

সাধারণত দেখা যায়, যে ব্যাপারগুলো আমাদের এই কাজের চাপকে অসহনীয় করে তোলে সেগুলো আসলে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বা অফিসের কোনো কাজের ডেডলাইন, বা পারিবারিক কাজ- এগুলো আমাদের করতেই হবে, চাইলেও এড়াতে পারবো না, নিয়ন্ত্রণও করতে পারবো না।

কিন্তু একটু শান্ত হয়ে ভাবলে আমরা বের করতে পারব ঠিক কোন ব্যাপারগুলো আসলে আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। আর সেগুলোকে ব্যবহার করেই আমরা মোকাবেলা করবো আমাদের কাজের চাপ।

তো দেখা যাক কাজের চাপের উপশমের ৬টি উপায়।

১. শ্বাস ফেলা

এ প্রবন্ধে উল্লেখিত সবগুলো উপায় হয়তো আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কার্যকর হবে না। কিন্তু নিজে থেকে মন্থর ও গভীরভাবে শ্বাস নেবার কাজটা যেকোনো সময়ই করা যায়, এবং সবসময়ই এটা কার্যকরী হবে।

যদি ব্যস্ত থাকা অবস্থায় এভাবে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, তবে এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনে তার সাথেও শ্বাস ফেলে দেখতে পারেন। আরেকটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে যে কক্ষে আছেন সে কক্ষের বিভিন্ন জিনিসের নাম বলে সাথে সাথে শ্বাস নেয়া।

এই পদ্ধতি কার্যকর হওয়ার কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। আমাদের দেহ বিপদ দেখলে ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’ দিয়ে মোকাবেলা করে। অর্থাৎ হয় বিপদ থেকে পালাবে, না হয় যুদ্ধ করবে। কাজের অসহনীয় চাপ পড়লে আমাদের এই রেসপন্স সক্রিয় হয়ে যায়, আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি। ধীরে ধীরে শ্বাস ফেললে রেসপন্সটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, আমরা একটু শান্ত হতে পারি।

ফলে আমরা ধীরস্থিরভাবে যে কাজটা করছিলাম সেটায় মনোনিবেশ করতে পারি।

একটি গভীর নিঃশ্বাস কাজের চাপ কমিয়ে দিতে পারে অনেক; image source: livestrongcdn.com

২. ছোট্ট বিরতি নেয়া

কাজের অতিরিক্ত চাপের মধ্যেই, যদি সুযোগ থাকে, আমাদের উচিত ছোট একটি বিরতি নেয়া।

পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসা যেতে পারে। প্রসাধনকক্ষে ঘুরে আসাও কার্যকর। যদি কাজ করতে ঘর্মাক্ত এবং ক্লান্ত হয়ে পড়েন, ঠাণ্ডা পানিতে একটু মুখ ধোয়াটাও বেশ কাজে দেয়। অনেক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন দাঁত ব্রাশ করবার, ব্যাপারটা অদ্ভুত শোনালেও ফলপ্রদ হয়। আর কাজের মাঝখানে কফি বা কোনো পানীয় পান করলে, গবেষকরা পরামর্শ দেন কাজের জায়গা ছেড়ে অন্য কোথায় গিয়ে পান করতে।

৩. একটি তালিকা তৈরি করা

যদি একসাথে অনেক অনেক কাজ দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন, প্রথম ধাপ হতে পারে সেই কাজগুলোকে একটি তালিকায় সাজিয়ে ফেলা। আর যদি মনে হয় আপনার শুধু বড়সড় একটি কাজই করতে হবে, সেই কাজটিই কিছু ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে একটি তালিকা বানিয়ে ফেলতে পারেন।

এরপর একেকটি কাজ সম্পন্ন করে তালিকা থেকে একেকটি কাজ কেটে দিতে থাকুন। তালিকা এভাবে ছোট করার মাঝে প্রচুর মানসিক শান্তি রয়েছে, স্বীয় অগ্রগতির একটি বাহ্যিক রূপ পাওয়া যায়।

তাছাড়া তালিকাটি আপনার চিন্তার সংরক্ষণাগার হিসেবেও কাজ করতে পারে। বারবার নিজের একগাদা কাজ স্মরণ করাটা আমাদের বিচলিত করে ফেলে। তাই সব কাজ মনে বারবার মাথায় না এনে, একটি তালিকা থেকে নির্দিষ্টভাবে একটি একটি করে কাজ করা আমাদের মানসিক চাপ অনেক কমিয়ে দিতে পারে।

সেটা আপনি অগ্রাধিকার অনুযায়ীও করতে পারেন, আবার সহজ কাজটি আগে করে আস্তে আস্তে কঠিনগুলোর দিকে যেতে পারেন, আপনার যেটাতে সুবিধা হয়।

অনেক কাজ সামনে দেখলে একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন; image source: techrepublic.com

৪. অন্যদের মতামত নেয়া

যেকোনো সমস্যায় অন্যদের মতামত নেয়াটা সে সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করতে পারে।

প্রত্যেকটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তাই অন্যদের মতামতের প্রতি চোখ-কান খোলা রাখলে একটি সমস্যাকে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিক থেকে দেখা সম্ভব।

কিন্তু এ কাজটি আপনি কিভাবে করবেন?

আপনার বিশ্বাস বা শ্রদ্ধাভাজন কারো সাথে আপনি সরাসরি বা ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। সামাজিক জীব হিসেবে অপরকে সাহায্য করা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির মধ্যেই পড়ে। কারণ কাউকে সাহায্য করতে পারা একজন মানুষের ভালো সামাজিক অবস্থান নির্দেশ করে। তাই পরামর্শ চাইলে ভালো পরামর্শ পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এছাড়া পেশাদারি কাজে আপনি আপনার অধীনস্ত বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সরাসরি সাহায্য নিতে পারেন, একাডেমিক কাজে নিতে পারেন শিক্ষকের। আমরা সাধারণত এটা করতে সংকোচবোধ করি। অথচ এরা সবাই নিজেদের প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষের জন্য কাজ করেন, এবং আপনিও সেই প্রতিষ্ঠানেরই অংশ। তাই তাদের কাছে ভালো পরামর্শ পাবার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে তাদের কাছে আপনার সমস্যা উপস্থিত করার আগে সেটা অবশ্যই ভালোমত গুছিয়ে নেয়া উচিত।

হয়তো সবক্ষেত্রে আপনি কার্যকরী সমাধান পাবেন না তাদের থেকে, কিন্তু তারা অন্তত আপনার সমস্যাটি সম্পর্কে অবগত হবেন। এ ব্যাপারটিই আপনার সম্পর্কে তাদেরকে ভাবাবে, আপনাকে চেনাবে তাদের কাছে। পেশাদারি জীবনে এ ব্যাপারটি আপনার জন্য বেশ উপকারী হবে। ভবিষ্যতে দেখা যাবে নিজ থেকেই তারা আপনার সমস্যায় এগিয়ে আসছেন।

অন্যদের মতামত নেবার চেষ্টা করুন যেকোনো সমস্যায়; image source: startundziel.at

৫. ব্যায়াম করা

ব্যায়াম আমাদের মানসিক চাপ কমায়, এ ব্যাপারটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত। তবে ব্যায়াম মানে এই নয় যে আপনি কাজের মাঝখানে হঠাৎ কসরত করে ঘাম ঝরিয়ে ফেলবেন।

শুধু একটু অফিস বা রুমে হেঁটে বেড়ালেও সেটা অনেক বড়সড় পার্থক্য তৈরি করে দিতে পারে।

এছাড়া সকালবেলা যোগব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করাটাও বেশ উপকারী। কাজের মাঝখানে সহকর্মী বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ছোটখাট খেলা বা একটু বিনোদন করা যেতে পারে।

যদি লাঞ্চের সময় একটু বেশি অবসর পান, একটু হেঁটে আসুন। কাজের মাঝেই ব্যায়ামের ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন।

সেই লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে পারলে আপনি নিজস্ব একটি আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাবেন যে, শুধুমাত্র আপনার পেশার আয় বা রেজাল্টের গ্রেড পয়েন্টই আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে না। আরো অনেক কিছুই আপনি করতে পারেন। তাই পারতপক্ষে আপনি এর থেকে অনেক বেশি কিছু।

এখান থেকেই চলে যাই আমাদের সর্বশেষ কাজের চাপ মোকাবেলার উপায়টিতে।

কাজের মাঝখানে সহকর্মীদের সাথে নিয়ে একটু শারীরিক ব্যায়াম মানসিক চাপ অনেকগুণ কমিয়ে দেয়; image source: incimages.com

৬. বৃহত্তর দৃশ্যপটকে দেখা

একটি মানুষের আছে অনেকগুলো দিক, আর আপনার পড়াশোনা বা পেশা সেগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র একটি।

হ্যাঁ, হতে পারে সে দিকটি আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই বলে আপনি নিজের শুধু একটি দিক দিয়েই নিজেকে মূল্যায়ন করবেন, এ ব্যাপারটি নিতান্তই অযৌক্তিক।

এবং আপনার মতো একটি জটিল জীবসত্তার সংজ্ঞা হিসেবে আপনার পেশা বা ডিগ্রি আসলে অসম্পূর্ণ। তাই এ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা নিরর্থক। পেশাদারি কাজ বা পড়াশোনার চাপ যখন আপনাকে উদ্বিগ্ন করছে, তখন দৃষ্টিভঙ্গিটাকে একটু বড় করে আপনার কাজগুলোর তাৎপর্য যে আপনি যতটা ভাবছেন তার থেকে অনেক কম সেই সত্যকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। দেখবেন দুশ্চিন্তা অনেক কমে এসেছে।

এ ব্যাপারে বুদ্ধের একটি বচনকে স্মরণ করা যেতে পারে-

“তোমার যদি কোনো সমাধানযোগ্য সমস্যা থাকে, তার সমাধান হবেই, তাই দুশ্চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। আর তোমার যদি এমন কোনো সমস্যা থাকে যা সমাধানের অযোগ্য, তবে তা তো সমাধান হবেই না, তাই সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেও কোনো লাভ নেই।”

পৃথিবীর সবচেয়ে সফল মানুষগুলোও জীবনে ভুল করেছেন, অবিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অনেক কাজের সামনে পড়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। এই চাপ আসলে মানুষ হবারই একটা অংশ, আমাদের বিকাশের একটি সুযোগ।

তাই যখন অনেক কাজের চাপ অনুভব করছেন, একটু স্থির হয়ে বসে দৃষ্টিভঙ্গিটাকে একটু বড় করে কাজটাকে দেখুন, নিজেকে পীড়ন না দিয়ে বরং আপনার সম্ভবপর পদক্ষেপগুলোকে লিখে, তারপর একটু একটু  করে এগিয়ে যান লক্ষ্যের দিকে। একসময় দেখবেন নিজেই নিজের নৈপুণ্যে অবাক হয়ে গেছেন।

ফিচার ইমেজ: huffingtonpost.com

Related Articles