Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কল্পনায় রাজ্যের রহস্যময় দুই দেশ নেভারল্যান্ড ও ক্যামেলট

অচিনপুর সত্যিই কি দূরের কোনো দেশ? নাকি আমাদের এই পৃথিবীর আশেপাশের চেনা জগতের মাঝে লুকিয়ে আছে সেই স্বপ্নপুরীর দেশ। যদি খোঁজ পাওয়া যেত সেই সব কল্পরাজ্যের, তবে কেমন হতো? আমাদের চেনা পৃথিবীর ছকে বাঁধা নিয়ম থেকে একদম ব্যতিক্রম সেসব রাজ্য। সেখানে নেই কোনো সময়ের বন্ধন, বয়স সেখানে থমকে দাঁড়ায়। চেনা সব হিসেব যেন এলোমেলো হয়ে যায় সেখানে। আহা, সত্যি যদি এমনি হতো, কী ভালই না হতো!

গল্পের বইয়ে ডুব দিলেই খোঁজ পাওয়া যায় এরকমই নানা কল্পলোকের খোঁজ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোকমুখে, মিথে ঘোরাফেরা করে এরকম অজস্র  ‘নেই’ শহরের হদিশ। আজব সব ঘটনা ঘটতে দেখা যায় এসব কল্পরাজ্যে। আর তাই কল্পনার রাজ্যের দেশগুলোকে নিয়ে রচিত নানা কাহিনী আমাদের কাছে এতটা প্রিয়।

সত্যি সত্যি নেই বলেই বোধ হয় দেশগুলো এত প্রবলভাবে আছে আমাদের মনের মধ্যে। মানুষের কল্পনার রাজ্যে থাকা এমনই দুটি অচিনপুরের দেশ নেভারল্যান্ড ও ক্যামেলট। একটি রাজ্যে যেমন বয়স থমকে দাঁড়ায়, আরেক শহরে তেমনি শুনতে পাওয়া যায় এক রাজার বীরত্বপূর্ণ  গৌরবগাথা কাহিনী।

নেভারল্যান্ড: সে এক ‘নেই দেশ’

‘পিটার প্যান’ গল্পের দেশ ‘নেভারল্যান্ড’ কল্পনার রাজ্যের এমন এক ‘নেই-দেশ’, যেখানে বয়স চিরকাল থেমে থাকবে সেই ছেলেবেলাতেই। স্কটিশ লেখক জে এম ব্যারি ১৯১১ সালে ‘পিটার প্যান’ নাটক, পরবর্তীকালে ‘পিটার এন্ড ওয়েন্ডি’ উপন্যাস লেখেন, সেখানে পিটার ও তার বন্ধুরা থাকে নেভারল্যান্ড নামের এক দেশে।

কল্পনার রাজ্য নেভারল্যান্ড; Source: Pinterest.com

গল্পের সেই  কিশোরদের বয়স চিরকাল আটকে আছে একই জায়গায়। শুধু তা-ই নয়, দেশটিতে যে-ই যায়, তারই বয়স পিটারের মতো থমকে দাঁড়ায়। বয়সকে আটকে দিতে পারে যে কিশোর, সেই পিটারের দেশের নাম নেভারল্যান্ড ছাড়া আর কী হবে? বাস্তবে যা কখনো সম্ভব নয়, তাই যেন কল্পনার তুলি দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন লেখক।

কল্পনার মানচিত্রে নেভারল্যান্ড; Source: AmberSkies Cosplay Storenvy

নেভারল্যান্ড তাই সকলের মনের মধ্যে লুকানো এক রূপকথার দেশ, যা আসলে মনের ইচ্ছে, আশা, স্বপ্ন দিয়ে তৈরি এক ইমারত, যা কখনো হারিয়ে যায় না। আবার সবসময় সকলের কাছে ধরাও দেয় না।

অনিয়মের হাওয়ায় পাল তুলে চলে বলে এই দুনিয়ার আকাশে সূর্য-চাঁদও সংখ্যায় বেশি। সে ভারি মজার দেশ। পিটারের সেই দেশে যাওয়ার গল্পটিও তেমন রোমাঞ্চকর। সে তখন সদ্যোজাত। বাবা-মায়েরা আলোচনা করছিলেন বড় হয়ে পিটারকে কী কী করতে হবে? তা শুনেই পিটার বেজায় ভয় পেয়ে যায়। পালিয়ে যায় সেই দেশে, যেখানে বয়স বাড়ার কোনো ভয় নেই।

‘পিটার এন্ড ওয়েন্ডি’ উপন্যাসের অমর চরিত্র পিটার প্যান; Source: wikimedia commons

এই গল্পে আছে টিঙ্কার বেল নামের মিষ্টি এক মায়াবী পরি, যে পিটারের খুব ভালো বন্ধু।  কল্পরাজ্যের এই নেভারল্যান্ড এখন সাহিত্যের সীমানা ছাড়িয়ে জীবনেও ঢুকে পড়েছে, হয়ে উঠেছে এক রূপক। যে দেশটি সত্যি নেই, কিন্তু থাকলে যেন বড় ভাল হতো। চিরন্তন শৈশব, নিয়মের শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত জীবন, অমরত্ব ইত্যাদি সবকিছুর প্রতীক যেন এই নেভারল্যান্ড। আর তাই পৃথিবীর কল্পনার মানচিত্রে নেভারল্যান্ড রয়ে গিয়েছে ছোট-বড় সকলের প্রিয় দেশ হয়ে, বয়স বাড়ছে ভেবে মন খারাপ লাগলেই যেখানে পালিয়ে যাওয়া যায়।

ক্যামেলট: রাজা আর্থারের তৈরি রূপকথার রাজ্য

রাজা আর্থারকে নিয়ে নানা গল্প-কাহিনী ইংল্যান্ডের ছোট-বড় সকল মানুষের মুখে-মুখে ফেরে। রাজা আর্থার যেন রূপকথার এক রাজপুত্র। আর্থারকে নিয়ে এসব প্রাচীন কাহিনী প্রায় হাজার বছরের পুরনো। ক্যামেলট শহরের গল্প এই আর্থারকে ঘিরেই। সেই সময় ব্রিটেনের রাজা পেন্ড্রাগন ও রানী ওয়াইগ্রেন। তাদের একমাত্র ছেলে ছিলেন আর্থার। তবে তার জীবন খুব সুখের ছিল না। রানীর ছিল এক সৎ মেয়ে। নাম তার মর্গ্যান লিফে। সে মনে-প্রাণে শিশু আর্থারকে ঘৃণা করতো। সবসময় চাইতো শিশু আর্থারের ক্ষতি করতে। সেই মর্গ্যানের আবার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। জাদুবিদ্যায় সে ছিল বেশ পারদর্শী। সেই জাদুবিদ্যার সাহায্যে মর্গ্যান তার সৎ বাবা আর ভাইয়ের উপর রাগ মেটাতো।

আর্থারের যখন ১৬ বছর বয়স, তখন রাজার রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়। সবাই মনে মনে সন্দেহ করতে থাকে মর্গ্যানকে। কিন্তু সেই-ই যে দায়ী তা কিন্তু কেউ প্রমাণ করতে পারল না। ফলে প্রমাণের অভাবে মর্গ্যানের কোনো বিচার হলো না।

রাজ্যের সিংহাসন খালি। সিংহাসনের উত্তরাধিকার আর্থার তখনও নাবালক। তাই অনেকেই সিংহাসনে বসতে কলকাঠি নাড়তে লাগলেন। ক্ষমতা দখলের জন্য অনেকে নানা ফন্দিফিকির করতে লাগলেন। রাজ্যের এই দুঃসময়ে উপস্থিত হলেন প্রাক্তন রাজার বন্ধু, মার্লিন। রাজ্যের জন্য উপযুক্ত রাজা নির্বাচনের জন্য তিনি এক জমকালো প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন। সেই প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ডের সমস্ত নাইট আর লর্ডরা এলেন। আরো যারা রাজা হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন সেসব ক্ষমতাবান ব্যক্তিরাও তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য উপস্থিত হলেন সেই উৎসবে।

যথাসময়ে প্রতিযোগিতা শুরু হলো। মার্লিন উপস্থিত সবাইকে এক আশ্চর্য তরবারি দেখালেন, এক প্রকান্ড পাথরের উপর রাখা আছে সেই তরবারি।  মার্লিন ঘোষণা করলেন, যে ওই তরবারিটি পাথর থেকে তুলতে পারবে, তিনিই হবেন ব্রিটেনের সিংহাসনের আগামী উত্তরাধিকার।

একে একে সকলেই চেষ্টা করতে থাকলেন সেই তরবারি তুলতে। কিন্তু ব্যর্থ হন প্রত্যেকেই। কিশোর আর্থার তখন ভাই কে’র সাথে খেলছিল। খেলতে খেলতে  হঠাৎই ভাইয়ের তরবারিটি হারিয়ে ফেলে আর্থার। সেই তরবারি খুঁজতে-খুঁজতে একসময় আর্থার চলে আসে সেই প্রতিযোগিতার আসরে। তরবারিটি দেখে ভাবে, এটি তো ভাইকে দিলে বেশ হয়। যেমন ভাবা, তরবারিটি হাতে তুলে নেয় আর্থার।

রাজা আর্থার; Source: Ancient Origins

সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায় এই ঘটনায়। তাদের এতক্ষণের সব চেষ্টা এই বাচ্চাটি কত সহজে ধুলিসাৎ করে দিল। সবাই অবাক হয়ে দেখেন তাদের নতুন রাজাকে।  নতজানু হয়ে অভিবাদন করতে থাকেন তারা। তখন মার্লিন আর্থারকে নিয়ে এক পবিত্র সরোবরে যান। সরোবর থেকে বেরিয়ে আসে একটি হাত। সরোবরের পানি থেকে বেরিয়ে আসা সেই হাতে ছিল একটি তরবারি। এ সময় দৈববাণী হয়, এই তরবারিটি তৈরি হয়েছে শুধুমাত্র আর্থারের জন্য। সে-ই একমাত্র তরবারিটি ব্যবহার করতে পারবে।

Source: historic-uk.com

তবে, আর্থারের মৃত্যুর সময় এই তরবারি সে যেন আবার সেই সরোবরেই ফিরিয়ে দেয়। রাজা আর্থারের সেই দৈবক্ষমতাসম্পন্ন বিখ্যাত তরবারির নাম এক্সক্যালিবার। এই তরবারির সাহায্যে রাজা আর্থার বড় বড় সব যুদ্ধ জয় করেন। এর বেশ কিছুদিন পর ডিফরে এসে আর্থার গড়ে তোলেন ক্যামেলট নামের রাজ্যটি। পাঁচ বছর লাগে এই অপূর্ব সুন্দর রাজ্যটি তৈরি হতে। তারপর রাজা বিয়ে করেন জিনিভার নামের এক রূপসী রাজকন্যাকে।

কল্পনার রাজ্যে ক্যামেলট শহর; Source: richardmichellepentelbury.com

রাজা হিসেবে আর্থার ছিলেন বেশ সাহসী এবং দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। নানা দেশ জয় করেন আর্থার। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযান হলো ‘কোয়েস্ট ফর দ্য হোলি গ্রেল’। যিশুখ্রিস্ট শেষ ভোজনের সময় যে কাপ থেকে পান করেছিলেন, সেটির খোঁজ। ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে আছে রাজা আর্থারের আশ্চর্য সব বীরত্বগাঁথা।

কল্পনার মানচিত্রে শহর ক্যামেলট; Source: pinterest.com

একবার অভিযানে বেরিয়ে আর্থার খবর পান, তার রাজ্য অধিকার করেছেন মড্রেড। ফিরে এসে প্রবল যুদ্ধ হয়। প্রাণ হারান আর্থার ও মড্রেড দুজনেই। মৃত্যুর সময় আর্থার এক নাইটকে দিয়ে সেই সরোবরের জলে এক্সক্যালিবার বিসর্জন দেন। মৃত রাজাকে নিয়ে একটি জাহাজ পাড়ি দেয় আভালনের দিকে। প্রচলিত বিশ্বাস, সেখান থেকে তিনি নাকি কোনো একদিন ফিরে আসবেন।

ক্যামেলট শহরের খোঁজে প্রত্নতত্ত্ববিদদের নানা অনুসন্ধান; Source: hk.on.cc

এই আর্থার সত্যিই কেউ ছিল নাকি পুরোটাই কল্পনা, এই নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। অনেক ইংল্যান্ডবাসীরই ধারণা, ওয়েলস,  গ্ল্যাস্টনবেরি, উইনচেস্টার, কোলচেস্টার এই জায়গাগুলোতে ক্যামেলট শহরটি থাকলেও থাকতে পারে।  শিল্পীর ভাবনায়, এক নদীর ধারে এই ক্যামেলট  শহরটি ছিল সবুজ বন দিয়ে ঘেরা। বড়ই মনোরম তার শোভা। সাদা রঙের রাজপ্রাসাদটি যেমন প্রকান্ড, তেমনি জমকালো। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে বিস্তর খোঁজাখুঁজির পরেও সেই শহরের কোনো হদিশ মেলেনি। কিন্তু কল্পনার রাজ্যে আজও দিব্যি সাম্রাজ্য চালাচ্ছে ক্যামেলট ।

 

ফিচার ইমেজ: Pinterest.com

Related Articles