Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক

বাংলা ভাষার অনেক শব্দেরই দুটো অর্থ থাকে; আক্ষরিক এবং ভাবার্থ। উদাহরণস্বরূপ আলোচনা করা যাক ‘সব্যসাচী’  শব্দটি নিয়ে।

সব্যসাচী শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে, যার দুটো হাতই সমানে চলে অর্থাৎ দুই হাতেই কাজ করতে দক্ষ যিনি। শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল মহাভারতের অর্জুনের দক্ষতা বোঝাতে। দুই হাতেই অসামান্য দক্ষতায় শর নিক্ষেপ করতে পারতেন তিনি। তবে পরবর্তীতে এই শব্দটির ব্যাপক প্রসার ঘটে। কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের প্রতিটি কাজেই যিনি সমানভাবে পারদর্শী, তিনিই সব্যসাচী। ক্রিকেটে যে মানুষটা ব্যাটিং করতে পারেন তাকে ব্যাটসম্যান, যিনি বোলিং করতে পারেন তাকে বোলার, আর যিনি ব্যাটিং এবং বোলিং দুটো কাজই ঠিকভাবে করতে পারে তাকে সব্যসাচী বলা হয়ে থাকে।

সাহিত্যেরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে- কবিতা, গল্প, নাটক, সিনেমা, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছড়া ইত্যাদি। প্রত্যেক সাহিত্যিকই কয়েকটি ক্ষেত্রে কাজ করলেও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় তার শক্তির জায়গা থাকে। তবে ব্যতিক্রম সব জায়গাতেই থাকে। কিছু কিছু লেখক সাহিত্যের সব জায়গাতেই বেশ দাপটের সাথে পদচারণা করে থাকেন। এদেরকেই সব্যসাচী লেখক বলা হয়ে থাকে।

বাংলা ভাষায় এমনই একজন লেখক হচ্ছেন সৈয়দ শামসুল হক। একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক তার কীর্তিতে।   

বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন। নিজে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হবার কারণে বড় ছেলেকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখাটা বিচিত্র ছিল না। তবে শুধু সাধ থাকলেই তো হবে না, সাধ্যও থাকতে হয়। চাইলেই যে কেউ ডাক্তার হতে পারে না, পড়ার সুযোগ পাবার জন্যেও যোগ্যতা থাকতে হয়। ডাক্তারি পড়ার জন্য যে মেধাটুকু প্রয়োজন, সেটা হয়তো ছেলেটার ভেতর ছিল। ১৯৫০ সালে কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুল থেকে গণিতে লেটার মার্কসহ ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা সেই সাক্ষ্যই দেয়। এই ছেলেটাই হচ্ছেন শামসুল হক।  

তরুণ শামসুল হক; Image Source: BBC Bangla

পরীক্ষার পরপর অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা যেখানে পরবর্তী পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত, সেখানে তিনি তার ব্যক্তিগত খাতায় ২০০টির মতো কবিতা লেখেন। তার প্রথম রচিত কবিতাটি লেখা হয়েছিল ১১/১২ বছর বয়সে। টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে জানালা দিয়ে দেখছিলেন রান্নাঘরের পাশে সজনে গাছে লাল টুকটুকে একটা পাখি। সেখান থেকেই দুই লাইনের একটা কবিতা মাথায় চলে আসে

আমার ঘরে জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে
তাহার উপর দুটি লাল পাখি বসিয়া আছে।

এই সময়েই ফজলে লোহানি সম্পাদিত ‘অগত্যা’ নামের একটা ম্যাগাজিনে ‘উদয়াস্ত’ নামে একটা ছোট গল্প প্রকাশিত হয়। হয়তো তিনি বুঝতে পারেন যে সাহিত্য চর্চাটাই তার ভালো লাগার জায়গা। ডাক্তারি পড়ার অনিচ্ছাই হোক কিংবা বাবার চাপ থেকে মুক্তি– কোনো এক কারণে ১৯৫১ সালে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বোম্বে চলে যান তিনি। সেখানে একটা চলচ্চিত্র প্রোডাকশন হাউজে সহকারী হিসেবে চাকরি করেন বছরখানেক। কিন্তু প্রতিভাবানদের কি আর ছকে বাঁধা একটা কাজে মন বসে? ১৯৫২ সালে আবার ফিরে আসা দেশে। এসে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হলেন মানবিক শাখায়। সেখান থেকে পাশ করে ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন ইংরেজি বিভাগে। এই সময়েই শুরু হয় তার লেখালেখি। প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’। এর মাঝে তিনি পড়াশোনাটাও ছেড়ে দেন।

সৈয়দ হক তার বাবা মারা যাবার পর বেশ অর্থকষ্টে পড়েন। এ অভাব থেকে মুক্তি পাবার জন্য তিনি চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে ‘মাটির পাহাড়’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য দিয়ে শুরু, এরপর কালে কালে লিখে ফেলেন ‘তোমার আমার’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘পুরস্কার’ সহ আরো কয়েকটি সিনেমার চিত্রনাট্য। মজার বিষয় হচ্ছে, এর মাঝে তিনি কিছু কিছু সিনেমার শুধু চিত্রনাট্যই লেখেননি, একইসাথে কাহিনীকার ও সংলাপ রচয়িতাও ছিলেন। ‘বড় ভালো লোক ছিলেন’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে এবং ‘পুরস্কার’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন।

সবচেয়ে কম বয়সে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার; Image Source: jagonews24.com

তবে এত ব্যস্ততার মাঝেও তার উপন্যাস লেখা থেমে থাকেনি। ষাটের দশকে ‘পূর্বাণী’ ঈদ সংখ্যায় তার উপন্যাস প্রকাশিত হতো। এই সময়ে তার রচিত ‘এক মহিলার ছবি’, ‘অনুপম দিন’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’ উপন্যাসগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

১৯৬৬ সালে তিনি পান বাংলা একাডেমি পুরস্কার। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই তিনি এই পুরস্কারটি পান, যা কি না এই পুরস্কার পাওয়া সব সাহিত্যিকের মাঝে সর্বকনিষ্ঠ

ধীরে ধীরে লিখে যান ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘আয়না বিবির পালা’, ‘কালধর্ম’, ‘দূরত্ব’, ‘না যেয়ো না’, ‘এক মুঠো জন্মভূমি’, ‘নারীরা’, ‘গল্প কারো নয়’, ‘ক্ষুধাবৃত্তান্ত’ ইত্যাদি।

বিতর্কিত, কিন্তু লেখকের মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘ভুল বোঝা’ উপন্যাস; Image Source: Amarboi.com

তার উপন্যাস সংখ্যা ৩৮টি। তবে প্রথাগত জনপ্রিয়তার পেছনে ছোটেননি তিনি। আবার খুব সিরিয়াসও হননি। নিজস্ব একটা ধারা তৈরি করতে চেয়েছেন হয়তো। তবে তার রচিত ‘খেলারাম খেলে যা’ উপন্যাসটি ভিন্ন ধারণা দেয়। প্রথমে গাজী শাহাবুদ্দিন সম্পাদিত ‘সচিত্র সন্ধানী’ পত্রিকায় উপন্যাসটি ছাপা হলে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মাঝে পত্রিকাটির সবক’টা কপি বিক্রি হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে বই আকারে প্রকাশ পাওয়ার পরেও এর চাহিদা অব্যাহত থাকে। প্রায় ৪৮ বছর পরেও বইটি পুনঃমুদ্রণ হচ্ছে, এ তথ্য বইটির জনপ্রিয়তার বিষয়ই প্রমাণ করে। অবশ্য বইটির সম্পর্কে অশ্লীলতার অভিযোগ ছিল, এ সম্পর্কে পরবর্তীতে শামসুল হক বলেছিলেন,

‘খেলারাম খেলে যা’ রচনার প্রায় কুড়ি বছর পরও এর জন্য আমাকে অন্যান্য রচনার চেয়ে অনেক বেশি জবাবদিহি করতে হয়। খেলারাম খেলে যা এদেশে সবচেয়ে ভুল বোঝা উপন্যাস। না, এ-উপন্যাসের জন্য আমি লজ্জিত নই, বরং আমি লজ্জিত তাদের জন্য, যারা উপন্যাসের নেপথ্য একটি চরিত্র– বাবর আলীর বোনকে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে কেবল বাবলী বা জাহেদার কথা মনে রাখে।

সৈয়দ শামসুল হক তার অনেক উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’, ‘নীল দংশন’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী’– প্রতিটি উপন্যাসেই মুক্তিযুদ্ধের এক একটি দিক ফুটিয়ে তুলেছেন। কিছুদিন আগে (২০১১ সাল) তার রচিত উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ অবলম্বনে ‘গেরিলা’ সিনেমা নির্মিত হয়েছে।  

বলা হয়ে থাকে, সাহিত্যের সবচেয়ে কঠিন এবং শক্তিশালী মাধ্যম নাকি কবিতা। এই কবিতার ক্ষেত্রেও সৈয়দ শামসুল হক তার স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একদা এক রাজা’ প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে। কালক্রমে প্রকাশিত হয় ‘বিরতিহীন উৎসব’ (১৯৬৯), ‘বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা’ (১৯৭০), ‘প্রতিধ্বনিগণ’ (১৯৭৩), ‘অপর পুরুষ’ (১৯৭৮), ‘পরাণের গহীন ভিতর’ (১৯৮০), ‘রজ্জুপথে চলেছি’ (১৯৮৮), ‘বেজান শহরের জন্য কোরাস’ (১৯৮৯), ‘এক আশ্চর্য সংগমের স্মৃতি’ (১৯৮৯), ‘অগ্নি ও জলের কবিতা’ (১৯৮৯), ‘কাননে কাননে তোমারই সন্ধানে’ (১৯৯০), ‘আমি জন্মগ্রহণ করিনি’ (১৯৯০), ‘তোরাপের ভাই’ (১৯৯০), ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (১৯৯০), ‘নাভিমূলে ভস্মাধার’ (১৯৯০) ইত্যাদি। তার কবিতায় ফুটে উঠে বাকপ্রতিমা নির্মাণ ও বাকপটুতা।

কাব্যজগতেও সৈয়দ শামসুল হকের সফল পদচারণা; Image Source: irapadnews.com

১৯৭০ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’র জন্য তিনি আদমজী পুরস্কার লাভ করেন। আরেক বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘পরানের গহীন ভিতর’ দিয়ে তিনি তাঁর কবিতায় আঞ্চলিক ভাষাকে উপস্থাপন করেছেন।

কবি অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদের মতে, সৈয়দ হক তাঁর কবিতা দিয়ে বারবার সাড়া ফেলেছেন।

কবিতায় তার ধারাবাহিকভাবে যে অবদান, তা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। সৈয়দ হককে অনুসরণ করে আমাদের কালের কবিরা বা তার পরবর্তী কালের কবিরা আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা লেখার চেষ্টা করেছেন।

তার সর্বশেষ কবিতার নাম, ‘আহা, আজ কী অপার আনন্দ’, যা রচিত হিয়েছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে।

খুব বেশি গান লেখেননি, তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যতগুলো লিখেছেন, তার মাঝে অনেকগুলোই শ্রুতিমধুর হয়েছে এবং কালের বিচারে টিকেও গিয়েছে। ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ সিনেমায় অ্যান্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস দম ফুড়াইলে ঠুস’ গানটা এতটাই জনপ্রিয় যে বাংলাদেশের কোনো যুগের কোনো মানুষেরই গানটি না শোনার কথা নয়। এছাড়া আশীর্বাদ সিনেমার ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা’ গানটিকে ভাবা হয় দেশীয় চলচ্চিত্রের সেরা ১০ রোমান্টিক গানের মাঝে একটি। এগুলো ছাড়াও ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ সিনেমার ‘যার ছায়া পড়েছে’ কিংবা ‘এমন মজা হয় না, গায়ে শোনার গয়না’ শীর্ষক অসংখ্য কালজয়ী গানের রচয়িতা শামসুল হক।

যুবক শামসুল হক বিয়ের আসরে; Image Source: The Daily Star

নাট্যকার হিসেবেও শামসুল হক ছিলেন অনবদ্য। দেশের মঞ্চনাটক সমৃদ্ধ হয়েছে তার হাত ধরে। নাটক লিখা শুরু করেছিলেন লন্ডনের বিবিসি বাংলায়, সেখানে প্রায় সাত বছর কাজ করেন। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ এবং ‘নূরলদিনের সারাজীবন’ নাটক দুটি বাংলা নাটকে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকে ধর্মীয় বিষয়ে মানুষের অজ্ঞতা এবং কুসংস্কারকে তুলে ধরেছেন। নাগরিক নাট্যদলের হয়ে নূরলদিনের সারা জীবন নাটকটির অন্যতম একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। শামসুল হক সম্পর্কে তার মন্তব্য হচ্ছে,

তার যে শব্দের ব্যবহার, রূপকল্প, কাব্যময়তা এবং তার সঙ্গে সঙ্গে নাটকের যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত এই সমস্ত কিছু তিনি যেভাবে ধারণ করেছেন, বাংলা নাটকে এই ঘটনা আর কেউ ঘটাতে পেরেছে বলে আমি মনে করি না।

তার লেখা নাটকের মধ্যে আরও আছে ‘ঈর্ষা’, ‘ম্যাকবেথ’ ইত্যাদি।

কলাম লেখক হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন Image Source: Dhaka Tribune

কলাম লেখক হিসেবেও সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ‘মার্জিনে মন্তব্য’ নামে একটা কলাম লিখতেন। সেখানে তিনি লেখালেখির কৌশল সম্পর্কে লিখেছিলেন। বিদেশে এ সম্পর্কিত প্রচুর লেখা পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে সেটাই ছিল প্রথম। পরবর্তীতে অনেক লেখক এ থেকে উপকৃত হয়েছিলেন। এছাড়া বিচিত্রায় লিখতেন ‘গল্পের কলকব্জা’ শিরোনামে কলাম। পরবর্তীতে নান্দনিক প্রকাশনী থেকে ২০১৪ সালে তার কলাম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ‘হৃৎকলমের টানে’ শিরোনামের বই।

এতগুলো অঙ্গনে পদচারণা থাকলেও শামসুল হক তার স্মরণীয় কাজ হিসেবে উল্লেখ করেন বিবিসি বাংলার খবর পাঠকের ভূমিকাটাকে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবরটা পাঠ করেছিলেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেছিলেন প্রথিতযশা লেখিকা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সৈয়দা আনোয়ারা হককে। এই দম্পত্তির এক ছেলে এবং এক মেয়ে।

স্ত্রী আনোয়ারা হকের সাথে; Image Source: The Daily Star

২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল ফুসফুসের সমস্যার কারণে তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি নেওয়ার পর ২রা সেপ্টেম্বর তাকে দেশে নিয়ে আসা হয়। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

৮১ বছরের জীবনে লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেন ৬২ বছর। সেটির পুরস্কারও অবশ্য পেয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক পান ১৯৮৪ সালে এবং স্বাধীনতা পুরস্কার পান ২০০০ সালে।

যে লেখকের পদচারণা শিল্প সাহিত্যের এতগুলো অঙ্গনে, তাকে কি মৃত্যুর পর পাঠকসমাজ ভুলে যেতে পারে?

প্রখ্যাত লেখক আনিসুল হকের একটা বক্তব্য দিয়ে লেখাটার সমাপ্তি টানা যাক,

তিনি যদি অন্য সব বাদ দিয়ে দুটো বই লিখতেন ‘পরানের গহীন ভেতর’ এবং ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’ তাহলে এ দুটো বই তাকে অমর করে রাখত। তিনি যদি শুধু তার কাব্যনাট্যগুলো লিখতেন ‘নুরলদিনের সারাজীবন’ এবং ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ তাহলেও আমরা চিরদিনের জন্য তাকে বাংলা সাহিত্যে স্মরণ করতে বাধ্য থাকতাম। তাঁর কবিতা-নাটক-কলাম সবটা মিলিয়ে যে ব্যক্তিত্বটি দাঁড়ায়, তা তুলনারহিত।

Related Articles