Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাংলা সাহিত্যে প্যালিনড্রোম

‘প্যালিনড্রোম’ শব্দটি শুনে অনেকেরই হয়তো ছোটবেলার কথা মনে পড়েছে। হয়তো মনে নাড়া দিয়ে গেল সেই ‘রমাকান্ত কামার’-এর স্মৃতি, যার মাধ্যমে শিক্ষকরা আমাদের অবাক করে দিতেন। আর আমরা ভাবতাম, কী করে এমন সম্ভব? ডান-বাম, যেদিক থেকেই পড়ি, একই অর্থ হয়।

বিজ্ঞান ও গণিতের ছাত্রদের কাছে শব্দটি খুবই পরিচিত। গণিতে অনেক প্যালিনড্রোম সংখ্যা থাকায় এ নিয়ে কাজ করার সময় প্যালিনড্রোম আপনা-আপনিই তাদের সামনে থাকে। আর যারা ইংরেজি সাহিত্যের খবর রাখেন, তারা নিশ্চয় জানেন যে, ইংরেজি সাহিত্যেও প্যালিনড্রোম নতুন নয়। ইংরেজিতে অনেক প্যালিনড্রোম লেখা হয়েছে।

কিন্তু অনেকের কাছে বিষয়টি একবারেই নতুন, তারা হয়তো কৌতূহল মেটানোর জন্য প্যালিনড্রোমের সংজ্ঞায় চোখ বোলানো জরুরি। প্যালিনড্রোম মূলত এমন শব্দ, শব্দগুচ্ছ বা ক্রম, যা সামনে-পেছনে দু’দিক থেকে পড়লে একই অর্থ মেলে।

‘Palindrome’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘palin’, যার অর্থ ‘again’ বা ‘পুনরায়’। এর সাথে আরেকটি গ্রিক শব্দ ‘dramein’, যার ইংরেজি অর্থ ‘to run’ থেকে ‘drom’ শব্দাংশ নিয়ে গঠিত হয় গ্রিক শব্দ ‘palindromos’। এর ইংরেজি অর্থ দাঁড়ায় ‘running back again’। আর সেখান থেকেই উৎপত্তি হয় ‘palindrome’ শব্দটি।

অবাক করার বিষয় হলো, বাংলা ভাষায় প্যালিনড্রোমের প্যালিনড্রোমিক সজ্ঞাও রয়েছে; “ইহা উল্টে পাল্টে উহাই”। এটি লিখেছেন বাংলাদেশি তরুণ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। এর বিশ্লেষণ করলে হয়, “ওল্টালে পাল্টালে যা একই হয়”

প্যালিনড্রোম কে আবিষ্কার করেন বা কে এটি প্রথম লেখেন, তা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে গ্রিক সম্রাট দ্বিতীয় টলেমির সময়কালের গ্রিক কবি সোতাদেস প্যালিনড্রোমের স্রষ্টা। এছাড়াও জানা যায়, গ্রিসে প্যালিনড্রোমকে ‘সোতাদিক কাব্য’ বলা হয়। তার কবিতা ছিল কিছুটা অশ্লীল ধরনের। রাজা দ্বিতীয় টলেমির সাথে তার বোন দ্বিতীয় আরসিনো’র বিয়েকে কেন্দ্র করে তিনি একটি বিদ্রূপাত্মক কবিতা লিখেন। রাজা কবিতাটির কথা জানতে পেরে ক্ষেপে গিয়ে তাকে বন্দি করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি বন্দি অবস্থা থেকে পালিয়ে কাউনোস দ্বীপে আশ্রয় নেন। পরে তিনি সেখান থেকে আবারও আটক হন এবং এবার রাজা তাকে সীসার তৈরী বাক্সে ভরে সমুদ্রে ফেলার আদেশ দেন। এভাবেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় প্রথম প্যালিনড্রোম স্রষ্টার।

সামান্য কিছু রচনা ছাড়া তার সব লেখাই ধ্বংস হয়ে গেছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম যে রচনা পাওয়া যায়, তা খ্রিস্টীয় ৭৯ শতকের বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন রোম সাম্রাজের অন্তর্গত সমৃদ্ধ শহর হারকিউলেনিয়াম ৭৯ শতকে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের ছাইয়ে ঢেকে যায়। তখন এর সব বাসিন্দা শহর ছেড়ে চলে যায়। ছাইয়ে চাপা পড়া সেই শহর ১৭৩৮ সালে পুনরাবিষ্কৃত হবার পরে সেখান থেকেই পাওয়া যায় প্রাচীন প্যালিনড্রোম রচনা। সেটি ছিল, Sator Arepo Tenet Opera Rotas। এর অর্থ, “বীজ বপনকারী অ্যারিপো চেষ্টা করে চাকা ধরে আছে”। বাক্যটি ডান বা বাম যেদিক থেকেই পড়া হোক না কেন, একই অর্থ হবে। আর এটির আরো একটি মজার দিক রয়েছে,

 S         A         T          O         R

A         R          E          P          O

T          E          N         E          T

O         P          E          R          A

R          O         T          A         S

পাঁচ অক্ষরের এই বাক্যটি বর্গাকারভাবে সাজালে দেখা যাবে, বাক্যটিকে ডান, বাম, উপর বা নিচ যেদিক থেকেই পড়া হোক না কেন, একই অর্থ হবে। একটি গ্র্যাফিটোতে এই বিখ্যাত প্যালিনড্রোমটি আবিস্কৃত হয়। যা ‘সাতোর চত্বর’ নামে পরিচিত। এটিকেই সবচেয়ে প্রাচীন প্যালিনড্রোম ধরা হয়ে থাকে।

বিখ্যাত সাতোর চত্বর; Image Source: Memento
সবদিকে একই রকম; Image Source: lujuba.cc

সোতাদেস শুরু করলেও ক্রমে ক্রমে এই কৌশলটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিভিন্ন ভাষায় লেখা হয় অসংখ্য প্যালিনড্রোম। ল্যাটিন ভাষায় জনপ্রিয় একটি প্যালিনড্রোম হলো, In girum imus nocte et consumimur igni। এর অর্থ, “আমরা চক্রাকারে ঘুরি এবং আগুন আমাদের গ্রাস করে”। আরো একটি প্যালিনড্রোম বাক্য দেখা যায়, NIYON ANOMHMATA MH MONAN OYIN। এর অর্থ, “শুধু মুখ নয়, পাপকেও ধোও”। এই বাক্যটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের গীর্জার সামনে লেখা হয়েছে এবং এখনো আছে।

চার্চের ফটকে ল্যাটিন ভাষায় লেখা প্যালিনড্রোম; Image Source: Naturallyzagori

এছাড়াও সংস্কৃত সাহিত্যে প্রচুর প্যালিনড্রোম দেখা যায়। প্রাচীন কিরাতার্জুনীয় কাব্যে বহু অনুচ্ছেদে প্যালিনড্রোমের দেখা মেলে। চতুর্দশ শতকের দৈবজ্ঞ সূর্য পণ্ডিতের লেখা ৪০ শ্লোকের ‘রামকৃষ্ণ বিলোম কাব্যম’ নামের একটি কবিতা পাওয়া যায়, যার প্রতিটি শ্লোক একেকটি প্যালিনড্রোম। যেমন, তামসীত্যসতি সত্যসীমতা মায়য়াক্ষমসমক্ষয়ায়মা। মায়য়াক্ষমসমক্ষয়ায়মা তামসীত্যসতি সত্যসীমতা॥ (৩ নং শ্লোক)।

সংস্কৃত ভাষায়  দৈবজ্ঞ সূর্য পণ্ডিতের লেখা ‘রামকৃষ্ণ বিলোম কাব্যম’; Image Source: Splrarebooks

তবে সবচেয়ে বেশি প্যালিনড্রোমের দেখা মেলে ইংরেজি ভাষায়। ভুরি ভুরি প্যালিনড্রোম শব্দ তো আমাদের হরহামেশা ব্যবহারেই লাগছে; EYE, DEED, CIVIC, NUN, NOON, MADAM, WOW, POP, TOOT  ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় ইংরেজি প্যালিনড্রোম শব্দটি হলো: REDIVIDER, যার অর্থ: উদ্ধারক।

গিনেস বুক অনুযায়ী, সবচেয়ে বড় প্যালিনড্রোম শব্দটি হলো: ‘SAIPPUAKIVIKAUPPIAS’। 

ইংরেজিতে কিছু প্যালিনড্রোম বাক্য দেখে নেওয়া যাক,

  • A dog! A panic in a pagoda.
  • A lot not new I saw as I went on to L.A.
  • A man, a plan, a canal – Panama
  • A new order began, a more Roman age bred Rowena.
  • A Toyota. Race fast, safe car. A Toyota

এছাড়াও ইংরেজিতে প্যালিনড্রোম উপন্যাসও রয়েছে,

  • Satire: Veritas – David Stephens
  • Dr Awkward & Olson in Oslo – Lawrence Levine

ইংরেজিতে অনেক প্যালিনড্রোম দেখা গেলেও ২০১৯ সালের আগপর্যন্ত বাংলা ভাষায় খুব কম প্যালিনড্রোম লেখা হয়েছিল। বাংলা ভাষায় প্রথম প্যালিনড্রোম লিখেন দাদাঠাকুর খ্যাত শরৎচন্দ্র পণ্ডিত। তার সম্পাদিত বিদূষক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত প্যালিনড্রোম চর্চা করতেন। জন্ম থেকেই প্যালিনড্রোম বয়ে নিয়ে চলেছেন এই ব্যক্তি, কেননা শরৎচন্দ্র পণ্ডিত জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮১ সালের ২৭ এপ্রিল। তার জন্মসালটিও একটি প্যালিনেড্রোম! তার লেখা বিখ্যাত কিছু বাংলা প্যালিনড্রোম বাক্য হলো,

  • কাক কাঁদে কাঁক কা
  • চেনা সে ছেলে বলেছে সে নাচে
  • তাল বনে নেব লতা
  • মার কথা থাক রমা
  • রমা তো মামা তোমার
দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিত, বাংলা ভাষার প্রথম প্যালিনড্রোম রচয়িতা। তার সম্পাদিত বিদূষক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত প্যালিনড্রোম লিখতেন; Image Source: Bongodorshon

তার মৃত্যুর পর বাংলা ভাষার তেমন প্যালিনড্রোম চর্চা হয় না। থমকে থাকে বাংলা প্যালিনড্রোম। তবে তার কিছু লেখা নিয়ে বিভ্রান্তিও রয়েছে। যেমন অনেকে মনে করেন,

“রাধা নাচে অচেনা ধারা

রাজন্যগণ তরঙ্গরত, নগণ্য জরা

কীলক-সঙ্গ নয়ঙ্গ সকল কী?

কীর্তন মঞ্চ ‘পরে পঞ্চম নর্তকী।”

এই চার লাইনের কবিতাটি পুরোটাই শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের লেখা, কিন্তু এর প্রথম তিন লাইন আসলে বাংলাদেশের প্রথম প্যালিনড্রোম লেখক সৌমিত্র চক্রবর্তীর লেখা। ক্যাডেট কলেজে থাকাকালীন এক দেয়ালিকার জন্য তিনি কবিতাটি লিখেছেন বলে জানান। তবে শেষ লাইনটি শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের লেখা, যেটি তার লেখা সবচেয়ে জটিল প্যালিনড্রোম বাক্য বলে ধরা হয়।

সৌমিত্র চক্রবর্তী; Image Source: saumitra-chakravarty.com

এর পর অনেক বছর পেরিয়ে যায়। বাংলা প্যালিনড্রোম কয়েকটি বাক্য এবং শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলা প্যালিনড্রোমের যে পথ দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিত দেখিয়ে গিয়েছিলেন, তা প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে যায়।

২০০৮ সালের দিকে বন্ধুর কাছ থেকে প্যালিনড্রোম সম্পর্কে জানার পর দীর্ঘ সময় ধরে প্যালিনড্রোম চর্চার পরে ২০১৯ সালে ফরিদ উদ্দিন প্রকাশ করেন তার লেখা প্যালিনড্রোম কবিতার বই ‘কথাথাক’, যেটি কিনা বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম প্যালিনড্রোম বই। এটি সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্যালিনড্রোম কবিতা দিয়ে।

বইয়ের প্রথম কবিতাটি হলো,

“মালিনী নীলিমা,

থাক বসন্তে তেন সব কথা

তেমনি মতে।

সেবা লভা লিলি? ভালবাসে

দিগন্তের তেন গদি।”

শব্দার্থ: লভা- লাভ করা বা পাওয়া। তেন- এমন, তেমন, সেই।

টীকা: একজন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে মালিনী, নীলিমা ও লিলি নাম ধরে ডেকে বলছে, ঋতুরাজ বসন্তে থাক সেই কথাগুলো। তুমি কিছু জয় করতে চাও, প্রিয়? তাহলে দিগন্তের বিছানা ভালোবেসে তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়বে।

তার লেখা সেই বই পাঠকেরা সাদরে গ্রহণ করে। ফরিদ উদ্দিন বাংলা প্যালিনড্রোমের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছেন। তবে তিনি শুরু করেই থমকে থাকেননি, বরং এটি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তিনি বইটি প্রকাশ করে সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, একটু চেষ্টা করলে বাংলা ভাষায়ও সুন্দর সু্ন্দর প্যালিনড্রোমের জন্ম দেয়া যায়।

২০১৯ সালে ফরিদ উদ্দিনের লেখা প্যালিনড্রোম কবিতার বই: ‘কথা থাক’ বেহুলা বাংলা প্রকাশনীর বেস্টসেলার হয়। সেখানে অতিথিদের নিজের লেখা বই উপহার দিচ্ছেন ফরিদ উদ্দিন; Image Source: Farid Uddin

তার প্যালিনড্রোম জগতে প্রবেশের গল্পটিও অবাক করার মতো। তিনি ২০০৭ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আহসানউল্লাহ হলের গার্ড হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন। সেখানে ২০০৮ সালের দিকে সেখানকার কয়েকজন ছাত্রের অনুপ্রেরণায় বই পড়া শুরু করেন। তখন থেকে লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জন্মায়। তিনি সে সময় ভিন্ন ধরনের কিছু লেখার চেষ্টা করেন। সে বিষয়ে তার এক বন্ধুর সহযোগিতা চইলে তার বন্ধু মোঃ নূরুল ইসলাম রনজু তাকে প্যালিনড্রোম বিষয়ে উৎসাহ দেন, তবে ফরিদ উদ্দিন তখনো প্যালিনড্রোমের আগাগোড়া জানেননি।

তিনি বন্ধুর পরামর্শমতো লেখার চেষ্টা করেন এবং নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যান। প্রায় একমাসের চেষ্টায় নতুন ধরনের কবিতা লিখে ফেললেন। এক রাতে তিনি কবিতাটি লেখার সময় হলের এক শিক্ষার্থী এসে তার কবিতা দেখেন। তিনিই ফরিদ উদ্দিনকে জানান, তিনি যে নতুন নিয়মে কবিতা লিখেছেন, তাকে প্যালিনড্রোম বলে। এর পর থেকে তিনি প্যালিনড্রোম নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। প্রায় আট বছর ধরে গবেষণার পর নানা বাধা-বিঘ্ন পার করে প্যালিনড্রোমকে আবারো সবার সামনে নিয়ে আসেন।

২০১৯ সালে তার বই প্রকাশিত হবার পর থেকে বাংলা প্যালিনড্রোম নতুন দিশা খুঁজে পায়। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নানা বয়সের, নানা শ্রেণির মানুষ বাংলা ভাষায় প্যালিনড্রোম লেখার চেষ্টা করেছেন। অনেকে নিয়মিত চর্চা করে যাচ্ছেন।

তিনি নিজে বই প্রকাশ করার পরের বছর, ২০২০ সালে সম্পাদনা করেন আরো দু’টি প্যালিনড্রোম বই। একটি ‘নব প্লাবন’, অপরটি ‘নব যৌবন’। বই দুটোতে রয়েছে প্যালিনড্রোম ছড়া, অণুগল্প, গান, গজল, কথোপকথন সহ আরো বিভিন্ন রচনা। তিনি নিজে সম্পাদনা করলেও বই দু’টিতে তার নিজের কোনো লেখা ছিল ন। বই দু’টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষের চেষ্টার ছাপ রয়েছে। আর এ কাজে তার সাথে ছিলেন দেশের আরেক পরিচিত মুখ, গণিতবিদ চমক হাসান। মাত্র এক বছরে এতগুলো মানুষকে সংগঠিত করা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। এই কঠিন কাজটিকে পরিশ্রম দিয়ে স্বার্থক করেছেন ফরিদ উদ্দিন। 

 ২০১৯ সালের পর থেকে প্রকাশিত প্যালিনড্রোম বইসমূহ; Image Source:  Farid Uddin

২০২১ সালে বের হয় আরো দু’টি মৌলিক প্যালিনড্রোম বই। একটি হাফেজ আহমেদের কবিতার বই ‘মাটি মা’। বইটিতে ৪৪ ধরনের প্যালিনড্রোম কবিতা রয়েছে। আর অপরটি হলো, ‘প্যালিনড্রোম কবিতাবলী’, লেখক সঞ্জয় মুখার্জী।

যেখানে কিছু্ই ছিল না, সেখানে তিন বছরে পাঁচটি বই প্যালিনড্রোম নিয়ে লেখা হয়েছে। যেখানে বাংলা সাহিত্যের প্যালিনড্রোম ভাণ্ডার বলতে ছিল দাদাঠাকুরের লেখা সামান্য কিছু প্যালিনড্রোম বাক্য, সেখানে বাংলায় হাজার হাজার প্যালিনড্রোম লেখা হয়েছে। ভাষাগত দিক থেকে বাংলা এমনিতেই বেশ জটিল। তাতে সাহিত্য করা মোটেও সহজ কাজ নয়। তাও আবার প্যালিনড্রোমের মতো একটি বিষয় নিয়ে লেখা মুখের কথা নয়। কারণ, বাংলা ভাষায় ভিন্ন ধরনের বর্ণমালা, কার চিহ্ন ‍ও যুক্তবর্ণ ইত্যাদি বিষয় ঠিক রেখে উভমুখী একই অর্থবোধক কিছু তৈরি করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।

তবে এখনো অনেকে মনে করেন যে, প্যালিনড্রোম সাহিত্যের সাথে যায় না। যারা এমন মনে করেন, তাদেরকে ভুল প্রমাণ করতে প্যালিনড্রোমিস্টরা চেষ্টা করে চলছেন, বাংলা ভাষায় প্যালিনড্রোমকে আরো সমৃদ্ধ করতে। চেষ্টা আর অধ্যবসায় দিয়ে প্যালিনড্রোমকে বাংলা সাহিত্যে মর্যাদার স্থানে নিয়ে যাবেন বলে বিশ্বাস করেন প্যালিনড্রোম যোদ্ধারা।

Related Articles