মিশরীয়রা সর্বপ্রথম একক সভ্যতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর ইতিহাসে। প্রাচীন ফারাওদের আমলেই যে বুদ্ধিদীপ্ত উন্নয়ন হয় নীলনদের তীরে, তা ছিল বিস্ময়কর। পিরামিড আর স্ফিংসের মতো প্রযুক্তিগত কৌশল, মমি এবং ওষুধ তৈরির মতো বিজ্ঞান-চিন্তা, রাজ্যশাসনের মতো যথাযথ রাজনীতি ও সামরিক জ্ঞান- প্রায় সকল দিকেই তাদের ভূমিকা পথিকৃতের মতো। মানুষের সাথে বিশ্বাস আর ধর্মচিন্তার যে চিরন্তন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে; সেই যাত্রাতেও চুপ করে থাকেনি মিশরের মাটি। জন্ম দিয়েছে নতুন আদর্শ। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০ অব্দের দিকে আলেকজান্দ্রিয়ার সাথে বহির্বিশ্বের বাণিজ্যিক যোগাযোগে অপর সংস্কৃতি গ্রহণ করেছে জীবনের নানা উপাদান। পরিচিত হয়েছে তাদের ধর্ম ও উপকথার সাথেও।
মিশরীয় পুরাণ বলতে সুসংহত সেই সব বিশ্বাসকে নির্দেশিত করা হয়, যা খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার বছর আগে মিশরীয় সংস্কৃতির সাথে অবিচ্ছেদ্য ছিল। মৃত্যুর পরে আরো একটা জীবনের ধারণা, ঈশ্বরকে দয়াময় এবং অবতার হিসাবে প্রকাশের চিন্তায় আছে মিশরীয় অনুপ্রেরণা। প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত দার্শনিক পিথাগোরাস এবং প্লেটো, দু'জনই ঋণী মিশরীয় বিশ্বাসের কাছে। ঋণী খোদ রোমান সংস্কৃতিই। বিচিত্র আর সমৃদ্ধ পুরাণের অন্যতম দলিল তাদের সৃষ্টিতত্ত্ব। আবার সময় এবং স্থানের ব্যবধানে কয়েকটি পৃথক বিবরণী পাওয়া যায় পৃথিবীতে মানুষের আগমন নিয়ে।
হেলিওপোলিস
প্রাচীন মিশরীয় পঞ্চম সাম্রাজ্যের ‘পিরামিড বিবরণী’ হেলিওপোলিসের বৃহত্তম ধর্মীয় নিদর্শন। যার পেছনে কাজ করেছে যাজকেরা। এই মতবাদ অনুযায়ী, আদিতে কোনোকিছুর অস্তিত্ব ছিল না; কেবল ছিল নু। নু এখানে আদিম পানি বা বিশৃঙ্খলা হিসাবে প্রতিকায়িত; যা সৃষ্টির সম্ভাব্যতাকে ধারণ করে। ওই নু থেকে জন্ম নেয় দেবতাদের সৃষ্টিকর্তা আটুম। বস্তুত, আটুম নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছেন। তার মাধ্যমে রূপায়িত হয় অস্তগামী রবি অর্থাৎ দিনের সম্পূর্ণতা। সূর্যের সাথে এই সম্পৃক্ততার দরুন তাকে আটুম-রা বলেও উদ্ধৃত করা হয়েছে।
আটুমের নিক্ষেপ করা থুতু থেকে জন্ম নিলো পুত্র ‘শু’ এবং বমি থেকে ‘তেফনুত’। অন্য বর্ণনায় তাদের জন্ম হয়েছে আটুমের স্বমেহনের মাধ্যমে। বাতাসের দেবতা শু আর আর্দ্রতার দেবী তেফনুত। পিতার ব্যস্ততার সময় তারা সেই আদিম জলে নামল রহস্য উদঘাটনের জন্য। তাতে হারিয়ে যেতেও দেরি হলো না। সন্তানদের অনুপস্থিতিতে আটুমের তো পাগলপ্রায় অবস্থা। উপায় একটা বের হলো শেষমেশ। সন্তানদের খুঁজে বের করার জন্য নিজের চোখ তুলে ছেড়ে দিলেন নিঃসীম শূন্যতায়।
খুলে ফেলা চোখের জায়গায় স্থাপন করলেন আরো বড় নতুন একটা চোখ। প্রথম চোখটা ঠিক ধরে আনলো পুত্র-কন্যাকে। আটুম এবার প্রথম চোখটাকে স্থাপন করলেন নিজের কপালে মাঝে। এই চোখটি দিয়ে তিনি দেখতে পেলেন সৃষ্টির সমস্ত কিছুর অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। অন্যদিকে সন্তানদের ফিরে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন আটুম। তার প্রতি ফোঁটা চোখের জল থেকে জন্ম নিল মানুষ।
পাহাড় আর পাথর ছাড়া তখনো তেমন কিছুই নেই। আটুম, শু আর তেফনুত মিলে মানুষের জন্য যথোপযুক্ত বাসভূমি সৃষ্টিতে নেমে পড়লেন। শু এবং তেফনুতের মিলনে জন্ম নিলো পুত্র ‘গেব’ বা ভূ-পৃষ্ঠ এবং কন্যা ‘ন্যুত’ বা আকাশ। তাদের জন্মের সাথে সাথে প্রকৃতির প্রাচীন বিষয়গুলো সম্পর্কে ঈশ্বর-তত্ত্বীয় ধারণা বিবেচনায় আসা শুরু করে। গেব এবং ন্যুতের সন্তান সংখ্যা চার- আইসিস, ওসিরিস, নেফথিস এবং সেথ। শু এবং তেফনুতই পৃথক করলেন গেব এবং ন্যুতকে। তারপর ধারণ করে রাখলেন আকাশ।
হারমোপোলিস
মধ্য মিশরের হারমোপোলিসে সৃষ্টি সম্পর্কিত স্বতন্ত্র মতবাদ জন্ম নেয়। অনেকের মতে এই তত্ত্ব বিদ্যমান অন্যান্য তত্ত্বের চেয়ে অনেক বেশি প্রাচীন। হারমোপোলিসে সৃষ্টির আখ্যান শুরুই হয় ওগদোয়াদ অর্থাৎ আট দেবতার দলের মাধ্যমে। চারজন দেবতা এবং সাথে চারজন নারী সঙ্গী। নু ও নাউনেত, হাহ ও হাউহেত, কুক ও কাউকেত এবং সবিশেষ আমোন ও আমাউনেত। এই আটজনের শাসনকেই বিবেচনা করা হয় স্বর্ণযুগ হিসাবে। নীলনদের স্রোত প্রবাহ টিকিয়ে রাখা এবং প্রতিদিন সূর্যোদয়ের দায়িত্বটি ছিল আট দেবতার। নু প্রতিনিধিত্ব করত আদিম পানির।
হাহ, কুক এবং আমোন প্রতিনিধিত্ব করতো যথাক্রমে অসীমতা, অন্ধকার এবং বাতাসের। হারমোপোলিয় সৃষ্টি গাথায় বায়ুপ্রবাহ হিসাবে আমোন সম্মানিত হওয়ার পাশাপাশি স্থির আবদ্ধ পানির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা গতিকেও নির্দেশ করতেন। বস্তুত, তিনি ছিলেন অত্যাবশ্যকীয় শক্তি; যা সঞ্চারিত হয় পৃথিবীর যাবতীয় গতিতে। প্রাচীন মিশরীয় চিত্রকলায় চার পুরুষ ঈশ্বরকে চিত্রিত করা হয়েছে ব্যাঙের মাথার মাধ্যমে। ঈশ্বরীরা সজ্জিত হয়েছে সাপের মাথায়।
আট দেবতা মিলে প্রথমে পানির মধ্যে একটা পদ্মফুল সৃষ্টি করলেন। ফুলটি ফুটলে ভেতর থেকে বের হলো একটা গুবরে পোকা। সময়ের ব্যবধানে পোকাটা রূপান্তরিত হলো স্বর্গীয় বালকে। প্রকৃতপক্ষে এই বালকটিই দেবতা ‘রা’। এভাবে পদ্ম পরিণত হয় সূর্যদেবতার জন্মস্থান হিসাবে। পদ্মফুলের পাপড়ি প্রতিদিন খোলে এবং বন্ধ হয়; যা সম্পর্কিত হতে পারে সূর্যের উদয়-অস্তের সাথে। যা-ই হোক, রা যখন কাঁদল, তখন চোখের পানি থেকে জন্ম নিলো সমগ্র মানবজাতি। অন্যান্য দেবতারাও বের হয়েছেন তার মুখ থেকে। অর্থাৎ আট দেবতা থেকে পদ্মফুল, পদ্মফুল থেকে রা এবং রা থেকে সমগ্র সৃষ্টি। সৃষ্টি প্রক্রিয়া শেষ হলে আট দেবতা মৃত্যুবরণ করে পাতালে চলে গেলেন। পৃথিবীতে রইলো রা এবং অন্যান্য দেবতারা।
পৃথিবী সৃষ্টি নিয়ে আরো কয়েকটি ধারণা দেয় হারমোপোলিস। আদিতে একটি ঢিবি ছাড়া কিছুই ছিল না। তাতে এসে ডিম পাড়ল একটা রাজহংসী। যথা সময়ে ডিম থেকে আলোর আকারে বের হয়ে আসলো দেবতা রা। তারপর তিনিই সৃষ্টি করলেন সমস্ত কিছু। অন্য বিশ্বাস অনুসারে ডিমটা রাজহংসীর না; একটা সারসের। সারস পাখিটি প্রতিনিধিত্ব করতো দেবতা থোতের। থোত শূন্য থেকে নিজে নিজেই সৃষ্ট। ওগদোয়াদ বা আট দেবতার মাঝে তার আত্মা। আট দেবতার সাথে মিলে থোতই পৃথিবী এবং সবকিছু সৃষ্টি করেন।
মেম্ফিস
শাবাকা শিলালিপি থেকে মেমফিস সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। সবকিছু অস্তিত্বশীল হবার আগে অস্তিত্বশীল ছিলেন কেবল পিতাহ। একই সাথে তিনি ছিলেন নু বা আদিম শূন্যতা ও পানি। মিশরীয়রা মস্তিষ্কের চেয়ে প্রাধান্য দিতো হৃৎপিণ্ডকে। পিতাহ যখন হৃদয় থেকে কিছু চাইবেন; সাথে সাথে তা সত্যিতে পরিণত হবে। তার হৃৎপিণ্ড এবং জিভ থেকে জন্ম নেয় প্রথম দেবতা আটুম। আবার আটুমের শুক্রাণু থেকে জন্ম শু এবং তেফনুতের। ক্রমান্বয়ে আসে আরো নয় দেবতা ও সমগ্র সৃষ্টিকুল।
পিতাহ সকল দেবতার উপরে ক্ষমতাবান। তার মধ্যে দিয়েই সকল কিছু উৎসারিত। পিতাহই মিশরকে সৃষ্টি করে একে বিভিন্ন শহরে বিভক্ত করেছেন। শিখিয়ে দিয়েছেন সভ্যতার রীতি-নীতি। সৃষ্টি করেছেন দেবতাদের মন্দিরগুলো এবং জানিয়েছেন কোথায় কীভাবে উপাসনা করতে হয়। আত্মা এবং তার বেঁচে থাকার ব্যবস্থা তার-ই অবদান। প্রাণী এবং উদ্ভিদকুলের সমস্ত মঙ্গলজনক সৃষ্টি এসেছে তার ইচ্ছায়। গ্রীকরা তাকে তুলনা করতো হেফায়েস্টাসের সাথে। ‘ইজিপ্ট’ নামটিই উৎসারিত গ্রিক Aigyptos থেকে; যা মিশরীয় Ha(t)-ka-ptah এর রূপান্তর। অর্থ পিতাহর আত্মার জন্য নির্মিত মন্দির।
থিবিস
থিবিস মধ্য মিশরের একটা শহর। নতুন সাম্রাজ্য স্থাপনকালে (১৫৪৬-১০৮৫) এখানে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা চালু হয়। প্রধান ঈশ্বর ছিলেন আমোন। সৃষ্টির প্রতিটি শক্তি এবং ওগদোয়াদের প্রতিটি সদস্যের উপর রয়েছে আমোনের অদৃশ্য শক্তির প্রভাব। পাতাল থেকে সুউচ্চ আকাশ অব্দি- সবকিছুকে ঘিরে আছে আমোন। প্রথম বার যখন তিনি কাঁদলেন; তখন সমাপ্তি ঘটলো দীর্ঘ অন্ধকার এবং নৈঃশব্দ্যের। জন্ম হলো ওগদোয়াদ এবং এনিয়াদ। ওগদোয়াদ বলতে হারমোপোলিসের আট দেবতার দল এবং এনিয়াদ বলতে হেলিওপোলিসের নয় দেবতার পরিবারকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ সৃষ্টির সূচনা ঘটেছে আমোনের মাধ্যমেই। সৃষ্টির পর তিনি রা এর মতো স্বর্গে স্থায়ী হন।
আমোনের অবস্থান দৃঢ় এবং রহস্যজনক। মানুষ এমনকি দেবতারাও তার প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞাত না। অন্য যেকোনো দেবতাই তার কোন না কোন গুণের প্রকাশ। থিবিসের মন্দিরগুলো আমোনকে অন্যান্য দেবতাদের চেয়ে অগ্রগণ্য হিসাবে উৎকীর্ণ করেছে। আমানোর সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় হেলিওপোলিস, হারমোপোলিস এবং মেম্ফিসের মিথস্ক্রিয়া দেখা যায়।
এলিফ্যান্টাইন
আদিতে কিছুই ছিল না; কেবল ছিল খনুম। খনুম সৃষ্টি করার জন্য মনস্থ হলেন; ফলে জন্ম নিলো দেবতারা। খনুমকে গণ্য করা হতো নীলনদ প্রবাহের উৎস। নীলনদ বাৎসরিক পানি ও পলি বহনের মধ্য দিয়ে প্রাচীন মিশরীয় জীবনের বড় অংশের সাথে জড়িত ছিলো। ফলে তাকে ভাবা হতো স্বর্গীয় কুমোর; যে কাদা দিয়ে শিশু তৈরি করে মায়ের গর্ভে স্থাপন করে দেন। বস্তুত খনুম সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন কাদা থেকে। দেবতা, মানুষ, পশু-পাখি, মাছ এবং গাছকেও। তবে মানুষ সৃষ্টির ব্যাপারে ছিলেন সবচেয়ে সতর্ক। শরীরের আকৃতি ও রক্তপ্রবাহের জন্য নালী সৃষ্টির পর ঢেকে দিলেন চামড়া দিয়ে। বিভিন্ন রকম মানুষ সৃষ্টির জন্য তার কাছে রয়েছে কুমোরের চাকা।
এলিফ্যান্টাইনে খনুমের উপাসনা করা হতো আড়ম্বরের সাথে। তার স্ত্রী সাতেত এবং কন্যা আনুকেত। হেকেত নামে তার নারী রূপ কিংবা স্ত্রী পালন করতো শিশু জন্মের স্বর্গীয় ভূমিকা। খনুম মাটি থেকে সৃষ্টি করলে সে তাকে জীবন ফুকে দিতো। এলিফ্যান্টাইন পুরাণ লিখিত হয়েছে উচ্চ মিশরের এসনাতে স্থাপিত মন্দিরে।
আর তারপর
মিশরীয়দের ধর্ম বিশ্বাস সব সময় এক রকম ছিল না। সময় এবং অঞ্চলের ভিন্নতা পরিবর্তন ঘটিয়েছিল বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও। জড়বাদী চিন্তা, যাদুবিদ্যা, বহু ঈশ্বরবাদ এমনকি একসময় একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রচার প্রবণতা প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় ইতিহাসকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। তাদের শিল্প, সাহিত্য, দর্শন এমনকি বিজ্ঞানও প্রভাবিত হয়েছে ধর্মের দ্বারা। মন্দির এবং অন্যান্য নির্মাণাদিতে ধর্মীয় আঁচর স্পষ্ট। স্ফিংস এবং সোলার ডিস্ক-এর মতো প্রতীকগুলো অনেক সংস্কৃতি নিজেদের মতো করে গ্রহণ করেছে। মৃত্যু পরবর্তী জীবনের ধারণার সাথে পরবর্তী কালে আগত ধর্মগুলোর বেশ মিল দেখা যায়। প্রাচীন গ্রিসে পিথাগোরাসের মতো অতীন্দ্রিয়বাদীরা অনুপ্রেরণা পেয়েছে মিশরীয় অতীন্দ্রিয়বাদের চর্চা থেকে।
ধর্ম বরাবরই বিস্ময়ের। ব্যক্তির ভেতরে পবিত্রতার অনুভূতি দিয়ে একটা স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থার ধারণা ধর্মই দিয়েছে নানা সভ্যতায়। পুরাণগুলো যেহেতু মানব মনের সেই পবিত্র বিস্ময় থেকেই সৃষ্ট; তাকে সেভাবেই পাঠ করা উচিৎ। অন্য সময় কিংবা অন্য স্থানের উপকথাগুলো সরাসরি নাকচ করে ক্ষতি বৈ লাভ নেই। তারচেয়ে তারা যেভাবে অনুভব করে; সেভাবে অনুভব করার চেষ্টা করলে নতুন কোন দরজা খোলার সম্ভাবনা জন্ম নেয়। যে দরজা জ্ঞানের, উদারতার, বিশ্ব-আত্মার সাথে একীভূত হবার।
আরো জানতে পড়তে পারেন বই। অনলাইনে কিনতে ক্লিক করতে পারেন নিচের লিংকে
This Bengali article is about Ancient Egyptian Creation myths and cosmogony; a rich and wonderful compilation of belief from the ancient human mind.
References:
1) The Mythology of all races, Vol.- XII, Editor- Louis Herbert Gray, Marshall Jones Company, Boston, 1918, Page: 68
2) Egyptian Mythology, Don Nardo, Ensllow Publishers, UK, 2001, Page: 16
3) Egyptian Mythology: A fascinating guide to understanding the Gods, Goddesses, Monsters and Mortals, Createspace Independent Publishing Platform, 2017
Featured Image: An illustration of the deities Geb (lying on the ground) and Nut (arching over Geb), taken from the book The Gods of the Egyptians Vol. II, by E. A. Wallis Budge.