Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ: দ্রোণ পর্বের সারসংক্ষেপ || পর্ব–৪

[৩য় পর্ব পড়ুন]

অভিমন্যুর নিকট কর্ণের পরাজয়ের পর কর্ণের ছেলে বৃষসেন অভিমন্যুর বিরুদ্ধে দ্বৈরথ যুদ্ধে লিপ্ত হন। কিন্তু শীঘ্রই অভিমন্যুর তীরের আঘাতে বৃষসেনের রথের সারথি নিহত হয় এবং তার ধনুক কাটা পড়ে। এরপর অভিমন্যুর তীরে বৃষসেনের রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো বিদ্ধ হয় এবং সেগুলো নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে বৃষসেনের রথটিকে টেনে দূরে নিয়ে যায়। অভিমন্যুর নিকট বৃষসেনের পরাজয়ের পর বাসতীয় অভিমন্যুর দিকে অগ্রসর হন এবং তার বিরুদ্ধে দ্বৈরথ যুদ্ধে লিপ্ত হন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি অভিমন্যুর হাতে নিহত হন। এরপর কৌরব বাহিনীর বহুসংখ্যক শীর্ষ রথী অভিমন্যুকে আক্রমণ করেন, কিন্তু তারা সকলেই অভিমন্যুর নিকট পরাজিত ও নিহত হন। এর ফলে কৌরব সৈন্যরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

এসময় শল্যের ছেলে রুক্মরথ অভিমন্যুর দিকে অগ্রসর হন এবং তার বিরুদ্ধে দ্বৈরথ যুদ্ধে লিপ্ত হন। রুক্মরথের তীরের আঘাতে অভিমন্যু বিদ্ধ হন, কিন্তু শীঘ্রই অভিমন্যুর তীরের আঘাতে রুক্মরথের ধনুক কাটা পড়ে এবং তিনি নিজেও নিহত হন। অভিমন্যুর হাতে রুক্মরথ নিহত হওয়ার পর রুক্মরথের মিত্র রাজারাজড়ারা একযোগে অভিমন্যুকে আক্রমণ করেন এবং অভিমন্যুর ওপর তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। তখন অভিমন্যু মন্ত্র উচ্চারণ করে তাদের বিরুদ্ধে গন্ধর্বাস্ত্র প্রয়োগ করেন এবং এই অস্ত্রের আঘাতে উক্ত রাজারাজড়াদের সকলেই নিহত হন। এমতাবস্থায় দুর্যোধন ক্রুদ্ধ হয়ে নিজেই অভিমন্যুর দিকে অগ্রসর হন এবং তার বিরুদ্ধে দ্বৈরথ যুদ্ধে লিপ্ত হন। কিন্তু একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর দুর্যোধন পরাজিত হন এবং সেখান থেকে পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হন।

অভিমন্যুর নিকট দুর্যোধনের পরাজয়ের পর কৌরব সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পশ্চাৎপসরণ করতে আরম্ভ করে। এরপর দ্রোণাচার্য, কর্ণ, অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা, কৃপাচার্য, দুর্যোধন, শকুনি ও বৃহদ্বল একযোগে অভিমন্যুর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন, কিন্তু অভিমন্যুর তীরবৃষ্টির তোড়ে তারা কেউই অভিমন্যুর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারছিলেন না। কেবল দুর্যোধনের ছেলে লক্ষ্মণ অভিমন্যুর কাছাকাছি পৌঁছাতে সক্ষম হন এবং তার বিরুদ্ধে দ্বৈরথ যুদ্ধে লিপ্ত হন। লক্ষ্মণকে অভিমন্যুর দিকে অগ্রসর হতে দেখে দুর্যোধন লক্ষ্মণকে সহায়তা করার জন্য অভিমন্যুর তীরবৃষ্টি অগ্রাহ্য করে তার কাছাকাছি পৌঁছান এবং এটি দেখে অন্য সাত শীর্ষ কৌরব যোদ্ধাও অভিমন্যুর তীরবৃষ্টি উপেক্ষা করে অভিমন্যুর কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। তারা সকলে অভিমন্যুর ওপর তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং অভিমন্যু তাদের ওপর পাল্টা তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। এরপর অভিমন্যুর তীরের আঘাতে লক্ষ্মণ নিহত হন।

অভিমন্যুর হাতে লক্ষ্মণ নিহত হওয়ার পর দুর্যোধন ক্রোধান্বিত হয়ে অভিমন্যুকে হত্যা করার জন্য শীর্ষ কৌরব যোদ্ধাদের নির্দেশ দেন। দ্রোণাচার্য, কর্ণ, অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা, কৃপাচার্য ও বৃহদ্বল একযোগে অভিমন্যুকে আক্রমণ করেন, কিন্তু অভিমন্যু তাদের সকলকে তীরবিদ্ধ করে সেখান থেকে সরে যান এবং জয়দ্রথের নেতৃত্বাধীন সিন্ধুর সৈন্যদের ওপর আক্রমণ চালান। বস্তুত এসময় অভিমন্যু চক্রব্যূহ থেকে বের হয়ে আসার জন্য চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ক্রথের ছেলের নেতৃত্বে কলিঙ্গ ও নিষাদের সৈন্যরা অভিমন্যুকে বাধা প্রদান করে এবং দ্রোণাচার্যের নেতৃত্বে ইতিপূর্বে উল্লিখিত ছয় শীর্ষ কৌরব যোদ্ধা অভিমন্যুর দিকে অগ্রসর হন। তারা সকলেই অভিমন্যুর ওপর তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, কিন্তু অভিমন্যুর তীরের আঘাতে ক্রথের ছেলে নিহত হন।

চিত্রকর্মে চক্রব্যূহের অভ্যন্তরে যুদ্ধরত অভিমন্যু; Source: Wikimedia Commons

এরপর দ্রোণাচার্য, কর্ণ, অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা, কৃপাচার্য ও বৃহদ্বল অভিমন্যুকে ঘিরে ফেলেন এবং তার ওপর তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। কিন্তু অভিমন্যু তাদের সকলকেই তীরবিদ্ধ করেন এবং অভিমন্যুর তীরের আঘাতে কৃপাচার্যের রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো ও রথের দুই পার্শ্বনী নিহত হয়। এরপর অভিমন্যুর তীরের আঘাতে বৃন্দারক নিহত হন। অভিমন্যুর হাতে বৃন্দারক নিহত হওয়ার পর অশ্বত্থামা অভিমন্যুর ওপর তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং অশ্বত্থামা ও অভিমন্যু একে অপরকে তীরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকেন। এরপর উক্ত ছয় শীর্ষ কৌরব যোদ্ধা আবার একযোগে অভিমন্যুকে তীরবিদ্ধ করতে শুরু করেন এবং প্রত্যুত্তরে অভিমন্যু তাদেরকে তীরবিদ্ধ করতে থাকেন।

অভিমন্যুর তীরের আঘাতে বৃহদ্বলের রথের সারথি ও রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো নিহত হয় এবং তার ধনুক ও রথের ঝাণ্ডা কাটা পড়ে। বৃহদ্বল একটি তলোয়ার হাতে নেন, কিন্তু তার বিকল রথ থেকে নেমে অভিমন্যুর রথের দিকে অগ্রসর হওয়ার আগেই তিনি অভিমন্যুর তীরের আঘাতে নিহত হন। অভিমন্যুর হাতে বৃহদ্বল নিহত হওয়ার পর তিনি কর্ণকে তীরবিদ্ধ করেন এবং প্রত্যুত্তরে কর্ণ অভিমন্যুকে তীরবিদ্ধ করেন। তারা উভয়েই একে অপরকে তীরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকেন এবং এসময় তাদের দুইজনের শরীরই রক্তে ভিজে যায়।

এরপর অভিমন্যু কর্ণকে ছেড়ে কর্ণের ছয় পরামর্শককে হত্যা করেন এবং দ্রোণাচার্য, কর্ণ, অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা ও কৃপাচার্যকে তীরবিদ্ধ করেন। অভিমন্যুর তীরের আঘাতে একে একে মগধের রাজপুত্র, অশ্বকেতু এবং কৃতবর্মার ছেলে মার্তিকবৎ নিহত হন। এরপর দুঃশাসনের ছেলে (যার নাম মহাভারতে উল্লেখ করা হয়নি) অভিমন্যুকে তীরবিদ্ধ করেন, কিন্তু প্রত্যুত্তরে অভিমন্যু তাকে তীরবিদ্ধ করেন এবং তার দিকে একটি বিশেষ ধরনের তীর নিক্ষেপ করেন। অশ্বত্থামার তীরের আঘাতে অভিমন্যু কর্তৃক নিক্ষিপ্ত তীরটি কাটা পড়ে। এরপর অভিমন্যু শল্যকে তীরবিদ্ধ করেন এবং তার তীরের আঘাতে শল্যের ধনুক কাটা পড়ে ও তার রথের দুই পার্শ্বনী সারথি নিহত হয়। এরপর তিনি আবারো শল্যকে তীরবিদ্ধ করেন এবং শল্য তার বিকল রথ থেকে লাফিয়ে নেমে আরেকটি রথে আরোহণ করেন। এরপর অভিমন্যুর তীরের আঘাতে শত্রুঞ্জয়, চন্দ্রকেতু, মহামেগব, সুবর্চা ও সূর্যভাস নিহত হন।

সর্বশেষ অভিমন্যু শকুনিকে তীরবিদ্ধ করেন এবং প্রত্যুত্তরে শকুনি অভিমন্যুকে তীরবিদ্ধ করেন। এরপর শকুনি দুর্যোধনকে পরামর্শ দেন যে, তাদের উচিত সকলে একযোগে অভিমন্যুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, নয়ত তারা একাকী যুদ্ধ করলে অভিমন্যু তাদের সকলকেই হত্যা করবে। তিনি অভিমন্যুকে হত্যা করার উপায় নির্ধারণ করার জন্য দ্রোণাচার্য, কৃপাচার্য ও অন্যান্যদের পরামর্শ নেয়ার জন্য দুর্যোধনকে বলেন। এরপর কর্ণ দ্রোণাচার্যের কাছে অভিমন্যুকে হত্যা করার উপায় জানতে চান। দ্রোণাচার্য কর্ণকে বলেন যে, অভিমন্যুর হাতে যতক্ষণ তার ধনুক আছে ততক্ষণ তাকে হত্যা করা সম্ভব নয়। তিনি অভিমন্যুকে নিরস্ত্র করার জন্য কর্ণকে নির্দেশ দেন।

চিত্রকর্মে চক্রব্যূহ; Source: Daswanth and Tara/Wikimedia Commons

উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ দিনের যুদ্ধে অভিমন্যু যে ধনুকটি ব্যবহার করছিলেন, সেটি কোনো সাধারণ ধনুক ছিল না। কৃষ্ণের ভাই (এবং অভিমন্যুর মামা) বলরাম দেবতাদের কাছ থেকে ‘রুদ্র’ নামক উক্ত ধনুকটি পেয়েছিলেন এবং তিনি সেটি অভিমন্যুকে উপহার দিয়েছিলেন। যুদ্ধের দ্বাদশ দিন থেকে অভিমন্যু এই ধনুকটি ব্যবহার করছিলেন এবং এটিকে কেটে ফেলা ছিল খুবই কঠিন কাজ। বস্তুত যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিনে অভিমন্যু যে বিশেষ রণনৈপুণ্য প্রদর্শন করেন, তার আংশিক কৃতিত্ব ছিল তার এই বিশেষ ধনুকের। এজন্য অভিমন্যুকে পরাজিত করার জন্য তাকে নিরস্ত্র করা আবশ্যক ছিল এবং দ্রোণাচার্য সেই মর্মে কর্ণকে নির্দেশ প্রদান করেন।

অভিমন্যুর ওপর সপ্তরথীর আক্রমণ

দ্রোণাচার্যের নির্দেশে কর্ণ অভিমন্যুর দিকে অগ্রসর হন এবং তার বিরুদ্ধে দ্বৈরথ যুদ্ধে লিপ্ত হন। কর্ণের তীরের আঘাতে অভিমন্যুর ধনুক কাটা পড়ে। উল্লেখ্য, কর্ণ কীভাবে অভিমন্যুর ধনুক কেটে ফেলেছিলেন, সেটি নিয়ে একটি বিতর্ক রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মহাভারতের বিভিন্ন সংস্করণ প্রচলিত এবং এগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কর্ণ পিছন থেকে আক্রমণ চালিয়ে অভিমন্যুর ধনুক কেটে ফেলেছিলেন। অর্থাৎ, এই বিবরণীতে কর্ণকে যুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু কিশোরীমোহন গঙ্গোপাধ্যায় কর্তৃক অনূদিত মহাভারতের প্রথম ইংরেজি সংস্করণ (যেটিকে এই লেখায় মূল সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে) এবং ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের পুনে শহরে অবস্থিত ‘ভাণ্ডারকর ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ কর্তৃক প্রকাশিত মহাভারতের ‘ক্রিটিক্যাল এডিশনে’ এই ধরনের কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এই সংস্করণ দুইটিকে  মহাভারত বিষয়ক পণ্ডিতরা মহাভারতের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দুইটি সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন, এবং এগুলোর ভিত্তিতে বলা যায় যে, কর্ণ সম্মুখযুদ্ধে অভিমন্যুর ধনুক কেটে তাকে নিরস্ত্র করেছিলেন।

কর্ণের তীরের আঘাতে অভিমন্যুর ধনুক কাটা পড়ার পরপরই কার্যত অভিমন্যুর মৃত্যু সুনিশ্চিত হয়ে যায়। অভিমন্যুর ধনুক কাটা পড়ার পরপরই কৃতবর্মার তীরের আঘাতে অভিমন্যুর রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো নিহত হয় এবং কৃপাচার্যের তীরের আঘাতে অভিমন্যুর রথের দুই পার্শ্বনী সারথি নিহত হয়। দ্রোণাচার্য, অশ্বত্থামা, দুর্যোধন ও শকুনি অভিমন্যুর ওপর তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। তীরবিদ্ধ অভিমন্যু একটি ঢাল ও একটি তলোয়ার হাতে নিয়ে তার বিকল রথ থেকে নিচে নামার উদ্দেশ্য লাফ দেন, কিন্তু তিনি মাটিতে নামার আগেই দ্রোণাচার্যের তীরের আঘাতে অভিমন্যুর তলোয়ার কাটা পড়ে এবং কর্ণের তীরের আঘাতে অভিমন্যুর ঢালটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

এরপর অভিমন্যু একটি রথের চাকা উঠিয়ে নিয়ে দ্রোণাচার্যের দিকে ছুটে যান, কিন্তু দ্রোণাচার্য, কর্ণ, অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা, কৃপাচার্য ও দুর্যোধনের তীরের আঘাতে সেটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়। তখন অভিমন্যু একটি গদা হাতে নিয়ে অশ্বত্থামার রথের দিকে ছুটে যান। অভিমন্যুকে গদা হাতে ছুটে আসতে দেখে অশ্বত্থামা তার রথ থেকে লাফিয়ে নিচে নেমে পড়েন এবং কিছুদূর পশ্চাৎপসরণ করেন। অভিমন্যুর গদার আঘাতে অশ্বত্থামার রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো ও রথটির দুই পার্শ্বনী সারথি নিহত হয়।

চিত্রকর্মের সপ্তরথীর বিরুদ্ধে অভিমন্যুর লড়াই; Source: Ramanarayanadatta Shastri/Wikimedia Commons

উল্লেখ্য, প্রচলিত বিবরণ অনুযায়ী, কৌরব ‘সপ্তরথী’ অন্যায় যুদ্ধে অভিমন্যুকে হত্যা করেন, এবং মহাভারত সংক্রান্ত বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিজে এই বিবরণটিকেই নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু মহাভারতে প্রদত্ত বিবরণ এই বিবরণ থেকে আংশিকভাবে ভিন্ন। ত্রয়োদশ দিনের যুদ্ধে সপ্তরথী (দ্রোণাচার্য, কর্ণ, অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা, কৃপাচার্য, দুর্যোধন ও শকুনি) অভিমন্যুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাকে নিরস্ত্র করেন ঠিকই, কিন্তু তারা অভিমন্যুকে হত্যা করেননি।

অভিমন্যু অন্যায় যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন, এই বিবরণটি আংশিক সত্য। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরুর আগে উভয় পক্ষ যুদ্ধের যেসব নিয়মের ব্যাপারে একমত হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ছিল: একজন যোদ্ধার সঙ্গে কেবল একজন যোদ্ধাই যুদ্ধ করবে এবং সারথি ও রথের সঙ্গে যুক্ত পশুগুলোর ওপর আক্রমণ চালানো যাবে না। কিন্তু সপ্তরথী একযোগে অভিমন্যুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং কৃপাচার্য ও কৃতবর্মা যথাক্রমে অভিমন্যুর রথের সারথিদের ও রথটির সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলোকে হত্যা করেন। এগুলো যুদ্ধের নিয়মের লঙ্ঘন ছিল। কিন্তু অভিমন্যুর মৃত্যুর মূল কারণ ছিল তার দৈব ধনুক কাটা পড়া। কর্ণের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকা অবস্থায় তার এই ধনুক কাটা পড়ে, এবং মহাভারতের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংস্করণগুলোর বিবরণ অনুসারে, কর্ণ যুদ্ধের নিয়ম মেনেই অভিমন্যুর ধনুক কেটেছিলেন।

একই সঙ্গে এটিও উল্লেখ্য যে, যুদ্ধের একেবারে প্রথম দিন থেকেই উভয় পক্ষ এই নিয়মগুলোর লঙ্ঘন করে এসেছে এবং অভিমন্যু নিজেও বারবার এই নিয়মগুলো লঙ্ঘন করেছেন। যুদ্ধের প্রথম দিনই বৃহদ্বলের বিরুদ্ধে দ্বৈরথ যুদ্ধে লিপ্ত থাকা অবস্থায় অভিমন্যু বৃহদ্বলের রথের সারথিকে হত্যা করেন এবং ত্রয়োদশ দিনের যুদ্ধেও তিনি কর্ণ, শল্য ও বৃষসেনসহ বিভিন্ন কৌরব যোদ্ধার রথের সারথি ও রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলোকে হত্যা করেন। যুদ্ধের অষ্টম ও দ্বাদশ দিনে অভিমন্যু ও অন্যান্য শীর্ষ পাণ্ডব যোদ্ধারা একযোগে ভগদত্তের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। সুতরাং অভিমন্যুর ওপর সপ্তরথীর আক্রমণ যুদ্ধের নিয়মের লঙ্ঘন ছিল বটে, কিন্তু কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় এই ধরনের ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। অভিমন্যুর ওপর সপ্তরথীর আক্রমণের ঘটনাটি সাহিত্যে ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বেশি নাটকীয়তা লাভ করেছে, কারণ অভিমন্যু উভয় পক্ষের শীর্ষ যোদ্ধাদের তুলনায় বয়সে অনেক ছোট ছিলেন এবং পাণ্ডব বাহিনীকে রক্ষার জন্য চক্রব্যূহ থেকে বের হওয়ার কৌশল না জানা সত্ত্বেও একাকী চক্রব্যূহে প্রবেশ করেছিলেন।

অভিমন্যুর অন্তিম লড়াই এবং পতন

সপ্তরথীর হাতে অভিমন্যুর ধনুক, ঢাল–তলোয়ার ও রথের চাকা কাটা পড়ার পর এবং অভিমন্যুর গদার আঘাতে অশ্বত্থামার রথ বিকল হওয়ার পর অভিমন্যু সপ্তরথীকে এড়িয়ে যান এবং তার আশেপাশে থাকা অন্যান্য যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। অশ্বত্থামাকে পরাজিত করার পর তিনি শকুনির ভাই কালিকেয়কে আক্রমণ করেন এবং গদার আঘাতে কালিকেয়কে হত্যা করেন। এরপর অভিমন্যুর গদার আঘাতে কালিকেয়র অধীনস্থ গান্ধারের ৭৭ জন সৈন্য নিহত হয়। পরবর্তীতে অভিমন্যু গদার আঘাতে ১০ জন কৌরব রথীকে হত্যা করেন এবং এরপর তার হাতে ১০টি হাতি নিহত হয়।

ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের উবুদ শহরে অবস্থিত নেকা আর্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত একটি চিত্রকর্মে অভিমন্যুর মৃত্যুদৃশ্য; Source: Mx. Granger/Wikimedia Commons

সর্বশেষ অভিমন্যু দুঃশাসনের ছেলের রথের দিকে ছুটে যান এবং গদার আঘাতে দুঃশাসনের ছেলের রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলোকে হত্যা করেন ও রথটিকে ধ্বংস করেন। দুঃশাসনের ছেলে একটি গদা হাতে নিয়ে তার ধ্বংসপ্রাপ্ত রথ থেকে লাফিয়ে নেমে পড়েন এবং অভিমন্যুকে আক্রমণ করেন। অভিমন্যু ও দুঃশাসনের ছেলের মধ্যে একটি তীব্র গদাযুদ্ধ সংঘটিত হয়, এবং এক পর্যায়ে উভয়েই একে অপরের গদার আঘাতে দূরে ছিটকে পড়েন। অভিমন্যু সারা দিনের যুদ্ধে পরিশ্রান্ত ছিলেন এবং তার পুরো শরীর ছিল তীরবিদ্ধ ও রক্তাক্ত। এজন্য দূরে ছিটকে পড়ার পর তার উঠে দাঁড়াতে দেরি হয়। দুঃশাসনের ছেলে অভিমন্যুর আগেই উঠে দাঁড়ান এবং ছুটে গিয়ে গদার আঘাতে অভিমন্যুকে হত্যা করেন।

ত্রয়োদশ দিনের যুদ্ধের ফলাফল: পাণ্ডবদের কৌশলগত বিজয় এবং অর্জুনের কঠোর প্রতিজ্ঞা

দুঃশাসনের ছেলের হাতে অভিমন্যু নিহত হওয়ার পর কৌরব সৈন্যরা অত্যন্ত উল্লসিত হয়। অন্যদিকে, পাণ্ডব বাহিনীর শীর্ষ যোদ্ধারা চক্রব্যূহের প্রবেশমুখ থেকে অসহায়ভাবে অভিমন্যুর পতন পর্যবেক্ষণ করেন। অভিমন্যুর মৃত্যুর পর পাণ্ডব সৈন্যরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পশ্চাৎপসরণ করতে শুরু করে। এমতাবস্থায় পাণ্ডবরা ধীরে ধীরে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং এরপর কৌরবরাও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে শুরু করে।

সেদিনের যুদ্ধে পাণ্ডবরা চক্রব্যূহ ভেদ করতে ব্যর্থ হয় এবং অভিমন্যুর মৃত্যু ছিল তাদের জন্য একটি বড় ধরনের ক্ষতি। তদুপরি, সেদিনের যুদ্ধে তাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু সেদিনের যুদ্ধে কৌরবদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল আরো বেশি এবং কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকেও তারা ব্যর্থ হয়। চক্রব্যূহ গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাণ্ডব বাহিনীকে পরাজিত করে যুধিষ্ঠিরকে বন্দি করা। কিন্তু অভিমন্যু চক্রব্যূহে প্রবেশ করে সারাদিন কৌরবদের ব্যতিব্যস্ত রাখেন এবং এর ফলে যুধিষ্ঠিরকে বন্দি করার পরিবর্তে অভিমন্যুকে হত্যা করাই সেদিন তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত অভিমন্যু নিহত হন, কিন্তু কৌরবদের প্রকৃত লক্ষ্য অপূর্ণ থেকে যায়। এজন্য ত্রয়োদশ দিনের যুদ্ধে কার্যত কৌরবদের কৌশলগত পরাজয় ঘটে বলে ধরে নেয়া যায়।

অভিমন্যুর মৃত্যুর ফলে যুধিষ্ঠির অত্যন্ত শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এমতাবস্থায় মহর্ষি বেদব্যাস ও দেবর্ষি নারদ তাকে সান্ত্বনা প্রদান করেন। এদিকে সংশপ্তকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত অর্জুন যুদ্ধ চলাকালে অভিমন্যুর মৃত্যুর ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেননি। যুদ্ধ শেষে শিবিরে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি এই সংবাদ জানতে পেরে অত্যন্ত শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি যুধিষ্ঠিরের কাছে অভিমন্যুর মৃত্যুর ব্যাপারে বিশদভাবে জানতে চাইলে যুধিষ্ঠির তাকে সব ঘটনা খুলে বলেন এবং জানান যে, জয়দ্রথ চক্রব্যূহের প্রবেশপথে থাকায় তারা কেউ অভিমন্যুকে সহায়তা করতে পারেননি। এটি জানার পর অর্জুন জয়দ্রথের ওপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন এবং এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করেন যে, পরবর্তী দিনের সূর্যাস্তের আগে যদি জয়দ্রথ কৌরব পক্ষ পরিত্যাগ না করেন বা পাণ্ডবদের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা না করেন, সেক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই জয়দ্রথকে হত্যা করবেন। তিনি আরো যোগ করেন যে, যদি তিনি পরবর্তী দিনের সূর্যাস্তের আগে জয়দ্রথকে হত্যা করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে তিনি নিজেই আগুনে প্রবেশ করে আত্মাহুতি দেবেন।

চিত্রকর্মে অর্জুন ও সংশপ্তকদের মধ্যেকার যুদ্ধ। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিন জুড়ে অর্জুন সংশপ্তকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন; Source: Ramanarayanadatta Shastri/Wikimedia Commons

অবশ্য অর্জুন এই প্রতিজ্ঞা করার পর কৃষ্ণ তাকে ভর্ৎসনা করেন এবং মন্তব্য করেন যে, তার সঙ্গে পরামর্শ না করে ঝোঁকের বশে এরকম একটি প্রতিজ্ঞা করে অর্জুন মোটেই উচিত কাজ করেননি। কারণ এই প্রতিজ্ঞার কথা জানতে পারলে কৌরবরা জয়দ্রথকে রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে এবং তারা জয়দ্রথকে রক্ষা করতে সক্ষম হলে অর্জুনকে আত্মাহুতি দিতে হবে, যার ফলে এই যুদ্ধে পাণ্ডবদের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে পড়বে। কৃষ্ণের ধারণা সঠিক প্রমাণিত হয় এবং শীঘ্রই কৌরবরা গুপ্তচরদের মাধ্যমে অর্জুনের প্রতিজ্ঞার কথা জানতে পারে।

অর্জুনের প্রতিজ্ঞার কথা জানতে পেরে জয়দ্রথ উদ্বিগ্ন হন। তিনি দুর্যোধনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার কাছে জানতে চান যে, কৌরবরা তাকে সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করবে কিনা। তিনি যোগ করেন যে, কৌরবরা যদি তাকে রক্ষা করতে না পারে, সেক্ষেত্রে তিনি তখনই সিন্ধুতে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে চান। পরবর্তী ঘটনাবলি থেকে এটি প্রতীয়মান হয় যে, জয়দ্রথকে সিন্ধুতে ফিরে যেতে বলাই হতো দুর্যোধনের জন্য সবচেয়ে যৌক্তিক পদক্ষেপ, কারণ সেক্ষেত্রে জয়দ্রথের প্রাণরক্ষা ছিল সুনিশ্চিত (অর্জুনের প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী, জয়দ্রথ কৌরব পক্ষ ত্যাগ করলে তিনি তাকে হত্যা করতেন না)।

কিন্তু দুর্যোধনের হিসেব ছিল ভিন্ন রকমের। জয়দ্রথ যদি অর্জুনের ভয়ে কৌরব পক্ষ ত্যাগ করে সিন্ধুতে ফিরে যেতেন, সেটিকে কৌরব পক্ষের বাকি রাজারা পাণ্ডবদের হুমকির মুখে কৌরবদের অসহায়ত্ব হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং সেক্ষেত্রে তারা নিজেরাও হয়ত কৌরব পক্ষ ত্যাগ করতে উৎসাহিত হতেন। এর ফলে দুর্যোধনের সেনাবাহিনীতে ভাঙন দেখা দেয়ার আশঙ্কা ছিল। এজন্য দুর্যোধন জয়দ্রথকে সিন্ধুতে ফিরে যেতে দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তদুপরি, অর্জুনের প্রতিজ্ঞা কৌরবদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছিল। কেবল একদিন জয়দ্রথকে অর্জুনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলেই অর্জুন তার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী আগুনে আত্মাহুতি দিতেন এবং এর ফলে যুদ্ধে কৌরবদের বিজয় সুনিশ্চিত হয়ে যেত। অর্জুন অত্যন্ত দক্ষ যোদ্ধা ছিলেন বটে, কিন্তু দুর্যোধনের দৃষ্টিকোণ থেকে, অর্জুনের একার পক্ষে দ্রোণাচার্য, কর্ণ, অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা, কৃপাচার্য ও অন্যান্য শীর্ষ কৌরব যোদ্ধাদের সকলকে পরাজিত করে জয়দ্রথকে হত্যা করা সম্ভব ছিল না।

এই হিসেব থেকে দুর্যোধন জয়দ্রথকে আশ্বস্ত করেন এবং প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন যে, কৌরবরা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে জয়দ্রথকে রক্ষা করবে। এরপর দুর্যোধন ও জয়দ্রথ দ্রোণাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জয়দ্রথ দ্রোণাচার্যের কাছে তার নিজের ও অর্জুনের রণকুশলতার মধ্যেকার পার্থক্য জানতে চান। দ্রোণাচার্য তাকে বলেন যে, অর্জুন ও জয়দ্রথ উভয়েই একই ধরনের যুদ্ধবিদ্যার শিক্ষা লাভ করেছেন, কিন্তু অর্জুন তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি অভিজ্ঞ ও তার সহনশক্তি বেশি, এজন্য অর্জুন জয়দ্রথের চেয়ে অধিকতর দক্ষ যোদ্ধা। অবশ্য দ্রোণাচার্য জয়দ্রথকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি পরবর্তী দিন জয়দ্রথকে সুরক্ষা প্রদান করবেন এবং কেউই জয়দ্রথকে হুমকির সম্মুখীন করতে পারবে না।

বস্তুত অভিমন্যুর মৃত্যু কৌরবদের রণকৌশলকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। দ্রোণাচার্য কৌরব বাহিনীর প্রধান সেনাপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর যুদ্ধের একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ দিনে কৌরবরা আক্রমণাত্মক রণনীতি গ্রহণ করেছিল এবং এসময় তাদের মূল লক্ষ্য ছিল যুধিষ্ঠিরকে বন্দি করা। কিন্তু অভিমন্যুর মৃত্যুর ফলশ্রুতিতে অর্জুনের কঠোর প্রতিজ্ঞার পর কৌরবরা আক্রমণাত্মক রণনীতি পরিত্যাগ করে আত্মরক্ষামূলক রণনীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয় এবং যুধিষ্ঠিরকে বন্দি করার পরিবর্তে জয়দ্রথকে রক্ষা করা তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। কার্যত অভিমন্যু জীবন্ত অবস্থায় কৌরবদের জন্য যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির কারণ ছিলেন, মৃত অবস্থায় তিনি কৌরবদের জন্য তার চেয়েও বেশি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ান।

This is the fourth part of a Bengali article that provides a summary of the Drona Parva, the 7th chapter of the Indian epic Mahabharata. It describes the conclusion of the battle that took place on the 13th day of the legendary Kurukshetra War.

Source:

Source of the featured image: Ramanarayanadatta Shastri/Wikimedia Commons

Related Articles