Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জুডিথ আর আসিরিয়ানদের গল্প || শেষ পর্ব

[প্রথম পর্ব পড়ুন]

বেথুলিয়া

জুডিয়ার পাহাড়ি এলাকায় ছিল বেথুলিয়া শহর। মনে করা হয়, প্রাচীন কানান দেশের সেচেম নগরীই এই বেথুলিয়া। হিব্রু বাইবেলে একে উল্লেখ করা হয়েছে ইসরায়েলের প্রথম রাজধানী হিসেবে। এই বেথুলিয়ার সামনেই পাহাড়ের নিচে আসিরিয়ানদের অবস্থান। জুডিয়ার উপর হামলা করতে হলে প্রথম আঘাত করতে হবে বেথুলিয়াকেই।     

হলোফার্নেসের চরেরা সংবাদ নিয়ে এল জুডিয়ার মানুষ প্রতিরক্ষা গড়ে তুলছে। তিনি একইসাথে কৌতুক আর বিস্ময় অনুভব করলেন। পাহাড়ি এই লোকেরা লড়বে পরাক্রমশালী সুপ্রশিক্ষিত আসিরিয়ানদের সাথে? এত সাহস পায় এরা কোথা থেকে? তবে হলোফার্নেসে কৌতূহলী হলেন এদের ব্যাপারে জানতে। ডেকে পাঠালেন উপকূলীয় এলাকার মিত্রদের। জানতে চাইলেন জুডিয়ার বিষয়ে।

মুখ চাওয়াচাওয়ি করল হলোফার্নেসের মিত্ররা। অবশেষে সাহস করে মুখ খুলল এচিওর (Achior) নামে এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি,

মহাশক্তিশালী জেনারেল, এসব পাহাড়ে বাস করে বড় অদ্ভুত এক জাতি। যতদিন তারা পাপাচার পরিহার করে জীবনযাপন করেন, ততদিন তাদের ঈশ্বর তাদের রক্ষা করেন। কোনো মানবসন্তান তখন তাদের পরাজিত করতে পারে না। কিন্তু যখনই তারা পাপাচারে মত্ত হয়ে যায়, ঈশ্বর তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এরপর সামান্য আঘাতেই খড়কুটোর মতো উড়ে যায় তারা। আমার মনে হয় এই মুহূর্তে তাদের আক্রমণ না করাই উত্তম।  

বেথুলিয়া অবরোধ

এচিওরের কথায় হলোফার্নেসের অনুচরেরা হৈ হৈ করে উঠল। কাপুরুষ এচিওরের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করল তারা। হলোফার্নেস রক্ষীদের আদেশ দিলেন তাকে জুডিয়ার নাগরিকদের হাতে তুলে দিতে, তারাই এই বিশ্বাসঘাতকের ব্যবস্থা করবে।

যেই কথা সেই কাজ। প্রহরীরা এচিওরকে বেঁধে নিয়ে গেল পাহাড়ের সামনে। উপরে বসে থাকা বেথুলিয়ার সৈনিকেরা তাদের উপর আক্রমণ করলে এচিওরকে ঠেলে ফেলে দিয়ে হলোফার্নেসের রক্ষিরা পালিয়ে এল।

বেথুলিয়ার সৈনিকেরা এচিওরকে উদ্ধার করে নিয়ে গেল তাদের শাসকের কাছে। তৎকালীন বেথুলিয়ার ক্ষমতায় ছিল তিনজন- অযিয়াস, চ্যাব্রিস আর গথোনিয়েল। এচিওরকে নিয়ে তারা শহরের সমস্ত অধিবাসীকে ডেকে পাঠালেন। সবার সামনে এচিওর বর্ণনা করলেন হলোফার্নেসের ঘটনা। হলোফার্নেসের থেকে রক্ষা পেতে সবাই প্রার্থনা করলেন ঈশ্বরের কাছে। এরপর অযিয়াস এচিওরকে নিজ গৃহে আশ্রয় দেন। 

পরদিন হলোফার্নেস পাহাড়ের ঠিক নিচে সমতলভূমিতে শিবির সরিয়ে আনলেন। পাহারা বসিয়ে নিজে অশ্বারোহীদের নিয়ে ঘুরে দেখলেন চারপাশ। শহরের পানির উৎস হতে পারে এমন প্রতিটি ঝর্নার সামনে অবস্থান নিল আসিরিয়ানরা। এরপর বেথুলিয়াতে প্রবেশ আর বের হবার রাস্তা বন্ধ করে দিল তারা। 

অবরুদ্ধ বেথুলিয়া © Jacob Isaacsz. van Swanenburg

হলোফার্নেসের অবরোধে নাগরিকদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠলে তারা সমবেত হলো অযিয়াসের সামনে। তারা বলতে লাগল হলোফার্নেসের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য। এতে অন্তত প্রাণ তো বাঁচবে। অযিয়াস তাদের আর পাঁচটা দিন ধৈর্য ধরার অনুরোধ করলেন। প্রতিশ্রুতি দিলেন পাঁচদিন পরও অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে তিনি শহরের ফটক আসিরিয়ানদের জন্য খুলে দেবেন, হলোফার্নেসকে অনুরোধ করবেন তাদের প্রতি কঠোর আচরণ না করতে।

জুডিথ

বেথুলিয়াতেই বাস করত অপরূপা এক বিধবা নারী, জুডিথ। তার স্বামী মানাসেস ছিল সম্পদশালী। বেশ কয়েকবছর আগে তার মৃত্যুর পর শোকের পোশাকে জুডিথ মানাসেসের বাড়িতেই সময় অতিবাহিত করে। অত্যন্ত ধার্মিক হিসেবে তার সুনাম ছিল।

জুডিথ © Giorgione ion

জুডিথ যখন শহরের লোকেদের আত্মসমর্পণের দাবিতে কলরব করতে শুনল, নিজ পরিচারিকাকে সে পাঠাল অযিয়াস, চ্যাব্রিস আর গথোনিয়েলের কাছে। তারা হাজির হলে সে প্রতিজ্ঞা করল আজ রাতে বেথুলিয়া ত্যাগ করার, এরপর ঈশ্বরের ইচ্ছায় জুডিথই শত্রুদের পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। 

জুডিথ শোকের পোশাক ছেড়ে মূল্যবান পরিচ্ছদ গায়ে চাপাল। ছোট্ট এক থলিতে কিছু খাবারদাবার নিয়ে এক পরিচারিকাকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়ল সে। বেথুলিয়ার শাসকেরা নগরফটকে তাকে বিদায় জানাল। পাহাড়ের উপর থেকে বেথুলিয়ার মানুষেরা দেখতে পেল জুডিথ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে হলোফার্নেসের শিবিরের দিকে। 

বেথুলিয়া ত্যাগ করছে জুডিথ; Image Source: artuk.org

শত্রুশিবিরে জুডিথ

আসিরিয়ান প্রহরীরা জুডিথকে দেখে অবাক হয়ে গেল। কে এই নারী? এত রাতে কোথা থেকে এল সে, যাচ্ছেই বা কোথায়? জুডিথ তাদের জানাল সে বেথুলিয়া থেকে পালিয়ে এসেছে। হলোফার্নেসের কাছে তাকে নিয়ে গেলে জুডিয়া জয়ের সহজ এক উপায় সে বাতলে দিতে পারবে।

হলোফার্নেসের সামনে নিয়ে যাওয়া হলে জুডিথ জেনারেলের কাছে নতজানু হলো। হলোফার্নেসের আদেশে ভৃত্যরা তাকে ধরে দাঁড় করায়। এরপর জুডিথ বয়ান করল তার গল্প, যার সারাংশ হলো জুডিয়ার লোকেরা পাপ করতে যাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম তোলা খাদ্যশস্য উৎসর্গ করার কথা ঈশ্বরের কাছে, কিন্তু তারা তা না করে ভক্ষণের জন্য তা রেখে দিচ্ছে। আর এই পাপের অংশ হতে না চাওয়াতে তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছিল তারা। ফলে ঈশ্বরের ইচ্ছায় জুডিথ পালিয়ে এসেছেন হলোফার্নেসের কাছে, নেবুশ্যাডনেজারকে সম্রাট স্বীকার করে নিয়ে জুডিয়া দখল করার পন্থা জানিয়ে দিতে চান জেনারেলকে। যেই মুহূর্তে বেথুলিয়ার লোকেরা প্রথম তোলা শস্য নিজেদের জন্য ব্যবহার করবে, সেই মুহূর্ত থেকে ঈশ্বরের বিরাগভাজন হবে তারা। তখন হলোফার্নেসের আঘাত সইতে পারার কোনো ক্ষমতাই তাদের থাকবে না। 

বেথুলিয়া ত্যাগ করছে জুডিথ; Image Source: artuk.org

হলোফার্নেস অভিভূত হলেন জুডিথের কথায়। তাকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে আলাদা তাঁবুর ব্যবস্থা করে দিলেন। জুডিথের খাবারের জোগাড় করতে বললেও সে অস্বীকৃত জানাল। তার থলিতে যা আছে সেটাই জুডিথ একমাত্র গ্রহণ করবে। হলোফার্নেসে তার ছোট্ট থলি যথেষ্ট নয় বলে মনে করলেন, কিন্তু জুডিথের ভাষ্য ঈশ্বরের ইচ্ছায় এর খাবার কখনোই ফুরোবে না।

জুডিথ এরপর পরিচারিকাকে নিয়ে নিজ তাঁবুতে ঘুমিয়ে পড়ল। মধ্যরাতে উঠে হলোফার্নেসের অনুমতি নিয়ে পাহাড়ি উপত্যকায় গিতে প্রার্থনায় রত হলো সে। চারদিন ধরে একই নিয়ম অনুসরণ করল সে। এর মধ্যেই কিন্তু হলোফার্নেস পটে গেছেন জুডিথের সৌন্দর্যে। তাকে কাছে পাবার একান্ত বাসনায় ভোজের আয়োজন করলেন তিনি। সেখানে কেবল তার একান্ত ভৃত্য আর জুডিথকে দাওয়াত করা হলো।

হলোফার্নেসকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে জুডিথ (১৯১৩ সালের জুডিথ অফ বেথুলিয়া ছবির দৃশ্য); Image Source: lilliangish1893.com

জেনারেলের একান্ত ভৃত্য বাগোস জুডিথকে নিয়ে এল। খানাপিনা চলল বহুক্ষণ ধরে। এরপর সবাই বাগোসের ইঙ্গিতে ধীরে ধীরে কেটে পড়ল। জুডিথ আর তার পরিচারিকা রয়ে গেল একা। ততক্ষণে মদের নেশায় হলোফার্নেসের মোটামুটি বেহুঁশ।

হলোফার্নেসের মৃত্যু

জুডিথ নিজ পরিচারিকাকে তাঁবুর বাইরে পাহারায় পাঠাল। এরপর পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল জেনারেলের বিছানার দিকে। বিশাল বিছানায় গা এলিয়ে তখন হলোফার্নেস নেশার সাগরে ডুবে আছেন। তার পাশেই রাখা বিশাল তরবারি।

জুডিথ হলোফার্নেসের তলোয়ার তুলে নিল। জেনারেলের চুলের গোছা টেনে ধরে উন্মুক্ত করে দিল তার গলা। সর্বশক্তি দিয়ে দুই দুবার আঘাত করে বিচ্ছিন্ন করে দিল আসিরিয়ান সেনাপতির মস্তক। এরপর নিজের থলিতে হলোফার্নেসের মাথা ভরে পরিচারিকাসহ বেরিয়ে গেল শিবির থেকে। রক্ষীরা জানত, প্রতিরাতে জুডিথ প্রার্থনা করতে বের হয়, ফলে তারা মাথা ঘামাল না।

জুডিথ দ্রুত বেথুলিয়া এসে পৌঁছল। শহরবাসীদের হলোফার্নেসের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তাদের সকালে অতর্কিত আক্রমণের পরামর্শ দিল সে। জুডিথের কথায় সবাই নতুন করে উদ্দীপ্ত হলো। হলোফার্নেসের মাথা টাঙিয়ে দেয়া হলো নগরপ্রাচীরে। এরপর সবাই অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হতে লাগল।

আসিরিয়ানদের পলায়ন

বেথুলিয়ার লোকেরা আক্রমণের জন্য বিন্যস্ত হতে থাকল আসিরিয়ানরা তাদের জেনারেলের খোঁজ করল। বাগোস হলোফার্নেসের তাঁবুতে ঢুকে আবিষ্কার করলেন নেতার মস্তকবিহীন দেহ। হলোফার্নেসের মৃত্যুর খবরে আসিরিয়ান আর তাদের মিত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। ঠিক সেই মুহূর্তে পাহাড়ের উপর থেকে এসে তীব্র গতিতে শত্রুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বেথুলিয়ার লোকেরা। বিশৃঙ্খল আসিরিয়ানরা মার খেয়ে পালিয়ে গেল।  

আসিরিয়ান শিবির পুড়িয়ে দিচ্ছে বেথুলিয়ার লোকেরা; Image Source: indefenseofthefaith.org

ত্রিশ দিন ধরে শত্রুদের ফেলে যাওয়া মালামাল লুট করল বেথুলিয়ার মানুষ। হলোফার্নেসের তাঁবু তারা দিয়ে দিল জুডিথকে। সেখানে থাকা সব মূল্যবান বস্তু গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে গেল জুডিথ। সেগুলো দিয়ে দেয়া হলো মন্দিরে।

পরবর্তী ঘটনা

জেরুজালেন থেকে জোয়াকিম আর অন্যান্য পুরোহিতেরা জুডিথের সাথে এসে দেখা করলেন। দেশকে বাঁচানোর জন্য তাকে ধন্যবাদ দিলেন তারা। জুডিথ এরপর বেথুলিয়াতেই তার সারা জীবন কাটিয়ে দেয়। অনেক যুবক তার পানিপ্রার্থনা করে, কিন্তু সবাইকেই ফিরিয়ে দেয় সে। প্রায় একশ পাঁচ বছর বয়সে মৃত্যু হয় জুডিথের। সমস্ত জুডিয়া সাত দিন তার জন্য শোক করল। তার সমস্ত সম্পদ জুডিথের শেষ ইচ্ছানুযায়ী বিলিয়ে দেয়া হলো আত্মীয়স্বজনের মধ্যে।

This is an Bengali language article about the story of Judith and the Assyrians and how she helped her people defeating the invading army. Necessary references are mentioned below.  

References

  1. Brine, K. R., Ciletti, E., & Lhnemann, H. (2010). The Sword of Judith: Judith Studies Across the Disciplines.(Illustrated ed.). Open Book Publishers. PP.21-109.
  2. Hood, S. C. (1995). The Book of Judith Carcanet Press.
  3. Book of judith. Encyclopedia Britannica.

Feature Image © Mihael Stroj

Related Articles