Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পৌরাণিক ফুল এবং তাদের গল্প

ফুল আমরা কমবেশি সবাই ভালোবাসি। ফুল যেমন সুন্দর, তেমনই সুন্দর হয় ফুলের নামগুলো। কিন্তু কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি ফুলগুলো বা ফুলের এই নামগুলো পৃথিবীতে কিভাবে এলো! বিভিন্ন ফুল নিয়ে বা ফুলের নাম নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গেলে পাওয়া যায় অদ্ভুত অদ্ভুত সব গল্প, যা ফুলগুলোর মতোই চমৎকার। বিভিন্ন পুরাণ ও উপকথায় উঠে এসেছে অনেক রকম ফুলের গল্প, যেগুলো আমাদের আশেপাশে এখনও ছড়িয়ে রয়েছে। আজকের এই আয়োজন তেমনই বেশ কয়েকটি ফুল ও তাদের উপকথা নিয়ে, যাদের গল্পগুলো তাদের নাম ও রূপের মতোই আকর্ষণীয় ও সুন্দর!

নার্সিসাস

নার্সিসাস এবং নার্সিসাস ফুল; Source: dutchgrown.com

ফুলের উপকথা বলতে গেলে সবার আগে যে ফুলটির নাম চলে আসে তা হচ্ছে নার্সিসাস ফুল। নার্সিসাস ছিল নদীর দেবতা সিফিসাস এবং পরী লিউরিপের অতি সুদর্শন পুত্র। নার্সিসাসের জন্মের পর পর লিউরিপ তাকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বক্তা টাইরেসিয়াসের কাছে যান। টাইরেসিয়াস ভবিষৎবাণী করেন, এই ছেলে অনেকদিন বাঁচবে যদি সে কোনোদিন তার রূপ সম্পর্কে অবগত না হয়। এই ভবিষদ্বাণী শুনে লিউরিপ খুব ভয় পেয়ে যান এবং ছেলে যাতে তার রূপ সম্পর্কে অবগত না হয় তাই তিনি তার ছেলেকে সবার থেকে আলাদা করে বড় করতে থাকেন।

এতে করে হয় আরো বিপদ। নার্সিসাস কারো সাথে না মেশার ফলে দিন দিন আরো অহংকারী হয়ে উঠতে থাকে। যে-ই নার্সিসাসকে দেখতো, সে-ই তার প্রেমে পড়ে যেতো। কিন্তু নার্সিসাস সবাইকে প্রত্যাখ্যান করতো। এভাবে একদিন নার্সিসাস শিকারে গেলে অরণ্যের দেবী ইকো তার প্রেমে পড়ে যায়। ইকো ছিল বোবা, সে কথা বলতে পারতো না। সে শুধু অন্যের কথার শেষ অংশের প্রতিধ্বনি তৈরি করতে পারতো। অতিরিক্ত বাচালতার জন্য জিউসের স্ত্রী হেরা শাস্তিস্বরূপ ইকোর বাকশক্তি কেড়ে নিয়েছিলেন।

যা-ই হোক, বনে নার্সিসাসকে প্রথম দেখেই ইকো তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু সে তো কথা বলতে পারে না, তাই ভালোবাসা প্রকাশের জন্য সে নিজেকে নার্সিসাসের বুকে ছুড়ে দেয়। কিন্তু অহংকারী নার্সিসাস তো আর ভালোবাসা বুঝতে পারে না, সে ঘৃণা ভরে ইকোকে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, আর বলে ওঠে, “আমি মরে যাবো, কিন্তু তবুও কোনোদিন তোমার হবো না।” এই কথা শুনে অপমানে-লজ্জায় ইকো বনের মধ্যে ছুটে গিয়ে কাঁদতে শুরু করে। তার এই কান্না দেখতে পায় প্রতিশোধের দেবী নেমেসিস, আর তখনই সে নার্সিসাসের ভাগ্য নির্ধারণ করে ফেলে। বনের ধারে নদীতে জল খেতে যায় নার্সিসাস, জলের ছায়ায় দেখে তার রূপ। নিজের রূপ দেখে সে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায়, আর বলে ওঠে, “আরে, একেই তো আমি এতদিন খুঁজছিলাম!” এভাবে নিজের রুপের প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে পানি না খেয়ে নার্সিসাসের মৃত্যু ঘটে। কাদামাটিতে মিশে যায় নার্সিসাসের দেহ। সেখানে ভালোবাসার দেবী আফ্রোদিতি তৈরি করেন এক সবুজ গুল্ম। অসম্ভব সুন্দর আর তীব্র সুবাসিত সেই ফুল। তারই নাম নার্সিসাস

হায়াসিন্থ

হায়াসিন্থ ফুল; Source: pixabay.com

হায়াসিন্থাস ছিলো একজন সুদর্শন স্পার্টান তরুণ এবং সূর্যদেবতা অ্যাপোলোর বন্ধু। অ্যাপোলো এবং হায়াসিন্থাস প্রায় সময়ই বিভিন্ন খেলাধুলা আর হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একদিন চাকতি ছোড়াছুড়ি খেলার সময় অ্যাপোলোর ছোড়া চাকতি হায়াসিন্থাসের মাথায় গিয়ে লাগে ফলে হায়াসিন্থাস সাথে সাথে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে জায়গায় মৃত্যুবরণ করেন। নিজ হাতে বন্ধুর এই করুণ পরিণতি দেখে অ্যাপোলো শোকে উন্মত্ত হয়ে পড়েন। তিনি হায়াসিন্থাসের মৃতদেহ আর আত্মাকে পাতালপুরীতে নিয়ে যেতে বারণ করেন, আর তার পরিবর্তে যেখানে হায়াসিন্থাসের মৃত্যু হয়েছিলো সেখানে তার মৃতদেহ থেকে একটি ফুলগাছ তৈরি করে তার নাম দেন হায়াসিঙ্কস বা হায়াসিন্থ। অনেকের মতে, হায়াসিন্থ ফুলের পাপড়িগুলোতে যে দাগ দেখা যায়, তা আসলে বন্ধুর শোকে ফেলা অ্যাপোলোর চোখের জল।

হায়াসিন্থাসের মৃত্যুর পর অ্যাপোলোর নির্দেশে এর পর থেকে প্রতি বছর স্পার্টাতে হায়াসিন্থাসের স্মরণে হায়াকিন্থিয়া উৎসব নামে তিন দিনব্যাপী একটি উৎসব উদযাপিত হতে থাকে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। বর্তমানে আমরা যে হায়াসিন্থ ফুল দেখে থাকি তা আর তৎকালীন গ্রিক হায়াসিন্থ বা হায়াসিঙ্কস ফুলের মাঝে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তৎকালীন হায়াসিঙ্কস ফুল দেখতে অনেকটা শাপলা বা পদ্মফুলের কাছাকাছি ছিল।

পিওনি

অ্যাসক্লেপিয়াস এবং পিওনি ফুল; Source: vauvat.info

পিওন ছিলেন ঔষধ এবং চিকিৎসার দেবতা অ্যাসক্লেপিয়াসের অধীনে কর্মরত একজন চিকিৎসক। পিওন তার এই চিকিৎসাবিদ্যায় বেশ পারদর্শী ছিলেন এবং দেবতা হ্যাডিস ও দেবতা অ্যারিসের চিকিৎসা করে দেবতাদের মধ্যে তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেন।

নিজের ছাত্রের বাড়াবাড়ি এই খ্যাতি পিওনকে তার শিক্ষক অ্যাসক্লেপিয়াসের কাছে চক্ষুশূল করে তোলে। তিনি পিওনকে খুন করার হুমকি দেন। এমতাবস্থায় দেবতাদের রাজা জিউস এর মাঝে হস্তক্ষেপ করেন এবং তিনি পিওনকে বাঁচানোর জন্য তাকে পিওনি ফুলে রূপান্তর করে ফেলেন। অনেকে মনে করেন, এই উপকথাটির আসলেই বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে। কারণ পিওনি ফুল গর্ভবতী মহিলাদের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন চিকিৎসায় এখনও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সূর্যমুখী

সূর্যের দিকে তাকানো অবস্থায় অনুতপ্ত ক্লাইটি; Source: blog.freddiesflowers.com

সূর্যমুখী ফুলের গল্পটি হচ্ছে ক্লাইটি নামের একটি পরীর বিষাদের গল্প, যে সূর্যদেবতা হেলিওসের প্রেমে প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হেলিওস ক্লাইটিকে ভালো না বেসে তার বোন লিউকোথিকে ভালোবাসতো। হিংসায় অন্ধ হয়ে গিয়ে ক্লাইটি তাদের বাবাকে হেলিওসের সাথে লিউকোথির প্রেমের কথা জানিয়ে দেয়। আর এর ফলে লিউকোথির বাবা শাস্তিস্বরূপ লিউকোথিকে জীবিত মাটিতে পুতে ফেলে হত্যা করে।

এই ঘটনায় হেলিওস প্রচন্ড ক্ষেপে যায় এবং সে ক্লাইটিকে অনবরত লাথি মারতে মারতে তার দেহকে বিবস্ত্র ও ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। নিজের ভালোবাসার দেবতার কাছ থেকে এই আচরণে ক্লাইটি প্রচণ্ড হতাশায় নিজের ক্ষতবিক্ষত দেহটিকে টেনে হিচড়ে নিয়ে এসে একটি পাথরের উপর এসে বসে এবং এই অবস্থায় সে সূর্যের দিকে মুখ করে টানা নয় দিন থাকে। এভাবে নয় দিন কোনো প্রকার খাবার আর পানি গ্রহণ না করার ফলে সে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে শুরু করে এবং একপর্যায়ে নবম দিনে সে সূর্যমুখী ফুলে পরিণত হয়। আর তখন থেকে এখনো সে প্রতিদিন সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে তার ভালোবাসার কাছ থেকে ক্ষমা পাবার আশায়

হেলেবোর

হেলেবোর ফুল; Source: www.lepona.nl

হেলেবোর বা ক্রিসমাস-রোজ ফুল মূলত ব্যবহার হত প্যারালাইসিসসহ বিভিন্ন চিকিৎসার কাজে। এমনকি পাগলের চিকিৎসার কাজেও এ ফুল ব্যবহার করা হত। কথিত আছে, মদের দেবতা ডাইনিসাসের অভিশাপে রাজা আরগোসের মেয়ে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যান এবং সেই নগ্ন অবস্থায় প্রাসাদ থেকে ছুটে বেরিয়ে গিয়ে রাস্তায় জনসম্মুখে চিৎকার চেঁচামেচি করা শুরু করেন। এমন সময় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন পাইলোসের মেলাম্পাস নামক একজন বিখ্যাত গণৎকার। তিনি তখন তার ঝোলা থেকে এই হেলেরোব ফুল বের করে রাজকুমারীকে খাইয়ে দেন এবং রাজকুমারীও তাৎক্ষণিক সুস্থ হয়ে ওঠেন।

পুরষ্কারস্বরূপ রাজা আরগোস মেলাম্পাসকে তার নগরীর এক-তৃতীয়াংশ দিয়ে দেন এবং রাজকুমারীর সঙ্গে তার বিয়েও দেন। অনেকের মতে, মেলাম্পাসের সাথে সেখানে তার ভাই বায়াসও ছিল।

কাজুবাদাম ফুল

কাজুবাদাম বা আমোন্ড ফুল; Source: greece-is.com

কাজুবাদাম বা আমোন্ড ফুলের গল্পটা এর ফুলের মতোই সুন্দর। রূপবতী রাজকন্যা ফিলিস ছিলেন একজন থ্রিসিয়ান রাজার একমাত্র মেয়ে। আর ডেমফন ছিলেন থেসাসের পুত্র, সে  ট্রয় থেকে থ্রিসিয়ানে এসেছিল বাণিজ্যের জন্য। রাজকন্যা ফিলিস প্রথম দর্শনেই সুদর্শন ডেমফনের প্রেমে পড়ে যান। আর সুদর্শন বুদ্ধিমান ডেমফনও অল্পদিনেই রাজার মন জয় করে নেন। ফলে রাজা ধুমধাম করে রাজকন্যা ফিলিসের সাথে ডেমফনের বিয়ে দেন এবং তাকে অর্ধেক রাজত্ব দান করেন।

থ্রিসিয়ানে এভাবে কয়েকদিন বাস করার পর ডেমফনের হঠাৎ করে তার জন্মভূমির কথা খুব মনে পড়তে থাকে। সে তখন ফিলিসের কাছে এথেন্সে যাবার অনুমতি চায়। ফিলিস প্রথমে রাজি না হলে ডেমফন দ্রুতই থ্রিসিয়ানে ফিরে আসবে এই প্রতিজ্ঞা করার পর সে তাকে এথেন্সে যাবার অনুমতি দেয়। অতঃপর ডেমফন এথেন্সের উদ্দেশে রওনা দেয় এবং ফিলিস তাদের বিয়ের বেদীতে বসে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। দিন যায়, মাস যায়, ফিলিস অপেক্ষা করতেই থাকে, কিন্তু ডেমফনের আর কোনো খবর পাওয়া যায় না। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে একসময় ভগ্ন হৃদয় নিয়ে রাজকন্যা ফিলিস তার বিয়ের বেদীতেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। ফিলিসের এই নিগুঢ় ভালোবাসা দেখে দেবতারা তাকে সেখানে একটি আমোন্ড গাছে রূপান্তর করে দেয়, যাকে বলা হয় আশার প্রতীক।

এরপর একদিন অনুতপ্ত ডেমফন তার ভুল বুঝতে পেরে ফিলিসের কাছে ফিরে আসে। কিন্তু সেখানে সে তাকে ফুল ছাড়া, পাতা ছাড়া মৃতপ্রায় একটি গাছ রূপে খুঁজে পায়। ডেমফন তখন অশ্রুসজল চোখে গাছটিকে জড়িয়ে ধরে আর সাথে সাথে গাছটি প্রাণ ফিরে পায় আর ফুল দিয়ে ভরে ওঠে। এভাবেই রাজকন্যা ফিলিস তার মৃত্যুর পরও ডেমফনকে তার ভালোবাসা প্রকাশ করে দিয়ে যায়।

অ্যানিমোন/বাতাসের ফুল 

অ্যানিমোন ফুল; Source: pinterest.com

অ্যানিমোন বা বাতাসের ফুলের গল্পটি আসলে আফ্রোদিতি আর অ্যাডোনিসের বিখ্যাত প্রেমকাহিনীর সাথে জড়িত। কথিত আছে, আফ্রোদিতি আর অ্যাডোনিস যখন একসাথে থাকতো তখন তারা প্রায়ই জঙ্গলে যেত শিকারের জন্য। সেখানে তারা হাসি, আনন্দ আর লুকোচুরি খেলায় পুরো জঙ্গলকে মাতিয়ে রাখতো। এভাবে একদিন তারা আফ্রোদিতির প্রাক্তন প্রেমিক যুদ্ধের দেবতা অ্যারিসের নজরে পড়ে। অ্যারিস অ্যাডোনিসের উপর প্রচুর ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ে এবং প্রতিশোধ নেবার জন্য সে একটি বন্য শূকরের রূপ ধরে অ্যাডোনিসকে আক্রমণ করে। অ্যাডোনিস অ্যারিসকে তার বর্শা দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, কিন্তু দেবতার সাথে মানুষের যুদ্ধে তার আর শেষরক্ষা হয় না। আফ্রোদিতি দ্রুত সেখানে ছুটে যায়, তাকে তার রাজহংসী চিহ্নিত রথে তুলে নেয়, কিন্তু ততোক্ষণে অ্যাডোনিসের আত্মা পাতালপুরীতে চলে গিয়েছে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে অ্যাডোনিসের ক্ষতে আফ্রোদিতি কিছু অমৃত ছিটিয়ে দেয়।

যখন আফ্রোদিতি তার ভালোবাসার মানুষের মৃতদেহটি জঙ্গল থেকে বাইরে নিয়ে আসছিলো, প্রতি ফোঁটা অমৃত যেখানে পড়ছিল, সেখানেই একটি করে অ্যানিমোন গাছ গজিয়ে ওঠে। বলা হয়ে থাকে, যে বাতাসে অ্যানিমোন ফুল ফুটে থাকে, সেই বাতাসই আবার এর পাপড়িগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। তাই একে বাতাসের ফুলও বলা হয়। অ্যানিমোনের যে লাল রঙের ফুলটি পাওয়া যায় তাকে অনেকে অ্যাডোনিস ফুলও বলে থাকে। বলা হয়, ওই ফুলগুলো অ্যাডোনিসের রক্ত থেকে জন্মেছিল।

গোলাপ

গোলাপ ফুল এবং পরী; Source: unsplash.com

গোলাপ নিয়ে আসলে একটা না, অনেক উপকথাই শোনা যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, একদিন ফুলের দেবী ক্লোরিস বাগানে হাঁটতে বের হয়েছিলেন, তখন তিনি সেখানে একটি পরীর মৃতদেহ খুঁজে পান এবং তাকে একটি ফুলে রূপান্তর করেন। এরপর তিনি ভালবাসার ও সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতি এবং মদের দেবতা ডাইনোসাসকে ডাকেন। আফ্রোদিতি তখন ফুলটিকে উপহারস্বরূপ তার সৌন্দর্য দেন এবং ডাইনোসাস উপহারস্বরূপ ফুলটিতে কিছু অমৃত যোগ করে দেন যা বাতাসে সুন্দর সুগন্ধ ছড়ায়। এরপর বাতাসের দেবতা জেফিরাস বাতাস দিয়ে ফুলটির উপর থেকে মেঘ সরিয়ে দেন, এবং স্বর্গ থেকে সূর্যদেবতা অ্যাপোলো  ফুলটিকে একছটা সূর্যকিরণ দেন ফুলটি ফোটার জন্য। এভাবেই বিভিন্ন দেবতাদের উপহারে পৃথিবীর বুকে প্রথম গোলাপ ফুলের জন্ম হয় আর তা ফুলের রানী হিসেবে সব ফুলের মাঝে জায়গা করে নেয়।

আইরিস

আইরিস ফুল; Source: pinterest.com

আইরিস ফুলের নামটি এসেছে গ্রিক রংধনুর দেবী আইরিসের নাম থেকে। অনেকের মতে, আইরিস ছিলো জিউস এবং তার স্ত্রী হেরার সংবাদবাহক। সে স্বর্গ থেকে রংধনুতে চড়ে পৃথিবীতে বিভিন্ন সংবাদ নিয়ে আসতো। আইরিস শব্দের অর্থটি হচ্ছে স্বর্গের চোখ। তাই আমাদের চোখের রঙিন অংশটিকে আর এই ফুলটিকে দেবী আইরিসের নামানুসারে নাম দেওয়া হয়েছে আইরিস।

ডেফনি

ডেফনি ফুল; Source: pinterest.com

ডেফনি ছিলো একজন অতি রূপবতী পরী এবং জলদেবতা পিনিয়াসের মেয়ে। সে ছিল একজন শিকারী এবং নিজেকে শিকারের দেবতা আরটেমিসের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিল। ডেফনির প্রেমে অনেকেই পাগল ছিলো, কিন্তু সে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি সে জিউসের পুত্র অ্যাপোলোকেও প্রত্যাখ্যান করে। অ্যাপোলো একদিন তাকে খুঁজতে খুঁজতে বনের মধ্যে চলে আসেন। এতে করে ডেফনি ভয় পেয়ে তার বাবার কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানায়। পিনিয়াস তখন তাকে বাঁচানোর জন্য নদীর ধারে ডেফনি বা লরেল গাছে রূপান্তর করে ফেলে।

যখন অ্যাপোলো তাকে খুঁজতে খুঁজতে নদীর ধারে আসেন, তখন পিনিয়াস তাকে জানায় যে, সে ডেফনিকে লরেল গাছে রূপান্তর করে ফেলেছে। অ্যাপোলো তখন গাছটি থেকে কিছু ডাল ভেঙ্গে নেয় এবং ডেফনির স্মরণে তার জন্য একটি মাথার মুকুট তৈরি করে। অ্যাপোলো পরবর্তীতে ডেফনিকে একটি পবিত্র গাছে রূপান্তর করে। এরপর থেকে সব বিজয়ী, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে, তাদের মাথায় ডেফনি ফুলের মুকুট পরানো হতো।  এছাড়াও তৎকালীন অলিম্পিক খেলার বিজয়ীদের মাথায়ও ডেফনি ফুলের মুকুট পরানো হতো।

অ্যাস্টার ফুল

অ্যাস্টার ফুল; Source: blogspot.com

 

বলা হয়ে থাকে, অ্যাস্টার ফুলের জন্ম হয় গ্রিক নক্ষত্রখচিত আকাশের দেবী অ্যাস্টেরিয়ার চোখের জল থেকে। সে যখন পৃথিবীর দিকে নিচে তাকাতো, তখন সে কোনো তারা দেখত না, তাই কাঁদতো। আর তার চোখের জল থেকেই অ্যাস্টার ফুলের জম্ন হয়।

সেন্টরিয়া-কর্ণ ফ্লাওয়ার

নীল সেন্টরিয়া ফুল; Source: akross.info

কথিত আছে, এই ফুলটির নামকরণ করা হয়েছে দেবতা অ্যাকিলিস, জ্যাসন, অ্যাপোলো এবং অ্যাসক্লেপিয়াসের বিজ্ঞ শিক্ষক সেন্টর কাইরনের নামানুসারে। টাইটান যুদ্ধের সময় হিরন হারকিউলিসের পক্ষ নিয়েছিল। কিন্তু হারকিউলিস ভুলবশত তার পায়ে হাইড্রার বিশ মেশানো তীর ছুড়ে মারেন এবং তিনি গুরুতর আহত হন। সেন্টর কাইরন তখন তাকে সুস্থ করার জন্য তার পায়ে সেন্টরিয়া গাছের রস লাগিয়ে দেন।

ফিচার ছবি: Pinterest

Related Articles