Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কালো বিড়ালের যত গল্প!

মানুষ কুসংস্কার পছন্দ করে। আর কুসংস্কার যদি কোনো প্রাণীকে নিয়ে হয় তাহলে তো কথাই নেই। ঠিক এমনই এক প্রাণী হলো কালো বিড়াল। একে নিয়ে আমাদের দেশে যেমন অনেক কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে তেমনি পৃথিবীর নানা দেশেও ঠিক এমন অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে কালো বিড়াল নিয়ে। কালো বিড়ালের সুনাম কিংবা দুর্নাম, কোনোটারই শেষ নেই। এই কালো বিড়াল সম্পর্কিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রচলিত সব গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন।

কালো বিড়াল যখন দুর্ভাগ্যের প্রতীক

পৃথিবীর বহু দেশেই কালো বিড়ালকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মানা হয়। কোনো শুভ কাজে বের হয়েছেন। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ সামনে দিয়ে একটা কালো বিড়াল রাস্তা পার হলো। এরপর অনেকেই ধরে নেন শুভ কাজটি হয়তো আর শুভ হবে না।

আমাদের মধ্যে অনেকেই কালো বিড়ালকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক মনে করেন; Source: parkinn.com

১২৩৩ সালে যখন পোপ গ্রেগরী নবম ঘোষণা দিলেন কালো বিড়াল পৃথিবীতে আসে শয়তানের দূত হিসেবে। ঠিক তখন থেকেই এই কুসংস্কারের শুরু! পোপের এই ঘোষণার পর হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ কালো বিড়াল ধরা হয় ও তাদের পুড়িয়ে মারা হয়। সবশেষে ১৪ শতকের দিকে ইউরোপের অনেক অংশেই কালো বিড়াল বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যায়। কালো বিড়ালের প্রতি সেই বিদ্বেষ আজও আমাদের মাঝে রয়ে গেছে। জরিপে দেখা গেছে, পোষার জন্য খুব কম মানুষই কালো রং এর বিড়াল বেছে নেন।

তবে প্রাচীনকালে কিন্তু কালো বিড়ালের প্রতি মানুষের এমন বিদ্বেষ ছিল না। বরং কয়েক হাজার বছর আগে কালো বিড়ালকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করা হতো। প্রাচীন গ্রীস ও মিশরীয় সভ্যতায় বিড়ালকে মানা হতো বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতীক হিসেবে। তাদের কাছে বিড়াল ছিল অতি পবিত্র একটি প্রাণী। সেই সময় কেউ বিড়াল হত্যা করলে তার মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতো।

প্রাচীন মিশরীয় দেবী রূপে কালো বিড়াল; Source: ancientegyptianfacts.com

কিন্তু বিড়ালের প্রতি এই সম্মান সহ্য হয়নি তৎকালীন ক্যাথলিক ধর্মগুরুদের। ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীরা পৌত্তালিকদের সহ্য করতে পারতো না। ফলে পৌত্তালিকদের ধর্মীয় প্রতীক বিড়ালের এই উচ্চ সম্মান যে তাদের দু’চোখের বিষ হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। ফলশ্রুতিতে পোপ গ্রেগরী কালো বিড়াল নিয়ে এরূপ একটি আজগুবি ঘোষণা দেন, যা পরবর্তীতে কালো বিড়াল বিদ্বেষে রূপ নেয় ।

কালো বিড়াল যখন জ্বিন

আফ্রিকাসহ পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলীয় অনেক অংশের মানুষ মনে করে জ্বিনেরা বিভিন্ন প্রাণী বা বস্তুর আকার নিয়ে বসবাস করে। আর আকার ধারণ করার জন্য জ্বিনদের অন্যতম প্রিয় প্রাণী হলো বিড়াল। বিশেষ করে কালো বিড়াল। কিছু কিছু মানুষ মনে করেন খারাপ জ্বিনরা কালো বিড়ালের আকার ধরে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে। তবে তারা সাধারণত মানুষকে এড়িয়ে চলতেই বেশি পছন্দ করে।

পৃথিবীর অনেক দেশে কালো বিড়ালকে জ্বিন মনে করা হয়; Source: Pinterest.com

প্রাচীন মিশরের অধিবাসীদের মধ্যেও কালো বিড়াল নিয়ে অনেকটা এমনই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। তারা মনে করতো কালো বিড়াল হলো তার মালিকের আত্মার অংশ যেটা তাকে পৃথিবীতে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য কালো বিড়ালের রূপ নিয়ে এসেছে। একে বলা হতো ‘হেমজাদ‘। তাই তারা ভাবতো কালো বিড়ালের কোনো ক্ষতি করা মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।

কালো বিড়াল যখন অতৃপ্ত আত্মা

পৃথিবীর বহু দেশে অনেক আগে থেকেই কালো বিড়ালকে অতৃপ্ত আত্মা মনে করা হতো। যারা কোনো দুর্ঘটনায় মারা যায় কিংবা যাদেরকে খুন করা হয় তাদের অতৃপ্ত আত্মাই নাকি প্রতিশোধের আশায় কালো বিড়াল হয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই আত্মারা পুনরায় মানুষ রূপ ধারণ করতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে তাদেরকে কালো বিড়াল কিংবা অন্য কোনো কালো প্রাণীর রূপ ধারণ করতে হয়। রাতের বেলা কালো বিড়াল যদি কারো পিছু নেয় তাহলে তো ধরেই নেওয়া হয় তার মৃত্যুর সময় এসে গেছে।

এছাড়াও মধ্যযুগীয় ব্রিটেনে কালো বিড়ালকে ভাবা হতো উইচ বা ডাইনিদের সহচর। তারা মনে করতো, কালো বিড়ালের মাধ্যমেই ডাইনিরা তাদের ক্ষমতা লাভ করে। কালো বিড়ালই তাদেরকে শয়তানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিত।

মধ্যযুগে বিড়ালকে ডাইনির সহচর ভাবা হতো; Source: pinimg.com

তৎকালীন সময়ে কেউ কালো বিড়াল পুষলে তাকে অন্য চোখে দেখা হতো। মনে করা হতো কালো বিড়ালের মালিক নিশ্চয়ই শয়তানের উপাসক। কারো অসুখ হলে কিংবা কেউ কোনো দুর্ঘটনার শিকার হলে সব দোষ গিয়ে পড়তো সেই কালো বিড়াল আর তার মালিকের উপর।

কালো বিড়াল ও সমুদ্রযাত্রা

জাহাজের নাবিকেরা কুসংস্কারের জন্য বরাবরই বিখ্যাত। সমুদ্রযাত্রা নিয়ে তারা নানা রকম কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। তার মধ্যে দুই-একটা কুসংস্কার কালো বিড়াল সম্পর্কে না হলে কি চলে? দূর সমুদ্রে পাড়ি দিতে হবে। সব কিছু প্রস্তুত। কিন্তু কালো বিড়াল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আটকে গেছে যাত্রা। নাবিকরা মনে করতো সমুদ্র যাত্রার আগে কোনো জিনিস জাহাজে নেওয়া হোক আর না হোক একটা কালো বিড়াল অবশ্যই নিতে হবে। তার জন্য যত টাকা খরচ হোক না কেন! তারা বিশ্বাস করতো কালো বিড়াল জাহাজকে সমুদ্রে ঝড় কিংবা যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। কেউ বিড়ালকে জাহাজ থেকে তাড়িয়ে দিলে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হতো। কারণ তাড়িয়ে দেওয়া বিড়ালের অভিশাপে ক্ষতি হতে পারে পুরো জাহাজের সবার।

জলদস্যুরা এড়িয়ে চলতো কালো বিড়ালকে; Source: ytimg.com

অন্যদিকে, জলদস্যুদের মধ্যে আবার ভিন্ন বিশ্বাস প্রচলিত ছিলো। তারা কালো বিড়ালকে খারাপ ভাগ্যের প্রতীক মনে করতো। কোনো কালো বিড়াল যদি জাহাজে উঠতে গিয়ে না উঠে ফিরে যায় তবে ধরে নেওয়া হতো জাহাজ কোনো না কোনো বিপদে পড়বে। তবে কালো বিড়াল যদি কোনো জলদস্যুকে দেখে পালিয়ে যায় তবে সেটা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে ধরা হতো।

কালো বিড়াল ও গুপ্তধন

ফ্রান্সে কালো বিড়াল নিয়ে নানা বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো কালো বিড়াল গুপ্তধনের খোঁজ জানে। যদিও বিড়ালের মাধ্যমে এই গুপ্তধন খুজে বের করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। এজন্য রয়েছে এক বিশেষ প্রক্রিয়া। প্রথমে একটি কালো বিড়াল ধরতে হবে। তারপর খুঁজে বের করতে হবে এমন এক রাস্তার মোড় যেখানে পাঁচটি রাস্তা একসাথে মিলিত হয়েছে। এরপর সেই রাস্তার মোড়ে গিয়ে ছেড়ে দিতে হবে বিড়ালটিকে। এই বিড়ালটিকে অনুসরণ করলেই সে আপনাকে লুকানো গুপ্তধনের কাছে নিয়ে যাবে।

কালো বিড়াল নাকি গুপ্তধনের খোজ জানে!; Source: theromantic.com

তাই কখনো যদি ফ্রান্সে গিয়ে দেখেন কেউ কোদাল হাতে কালো বিড়ালের পিছু পিছু ঘুরছেন তাহলে নিশ্চয় ততক্ষণে আপনি বুঝে যাবেন তিনি কিসের খোঁজ করছেন।

কালো বিড়াল যখন আবহাওয়া নির্দেশক

আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার জন্য যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর অনেক স্থানে বিড়ালকে অনুসরণ করতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে অন্য রঙের বিড়াল থেকে কালো বিড়ালকে বেশি গুরত্ব দেওয়া হয়েছে সব সময়। অনেকেই মনে করেন বিড়াল প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঁচ করতে পারে।

কালো বিড়াল মানুষের আগেই খারাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বুঝতে পারে; Source: publicdomainpictures.net

এসবের সব কিছুই কুসংস্কার নয়। এটার বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। বিড়ালের গোঁফ খুবই সংবেদনশীল। বিড়াল তার গোঁফের মাধ্যমে বাতাসের চাপের খুব সুক্ষ্ম পরিবর্তন বুঝতে পারে। বাতাসের নিম্নচাপের ফলে ঝড় বৃষ্টি হতে পারে। তাই যখনই বাতাসে নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয় তখনই কিছু কিছু বিড়ালকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখা যায়। এছাড়াও ভূমিকম্প কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের পূর্বাভাষ বিড়ালরা মানুষ কিংবা অন্য প্রাণীদের চাইতে আগে টের পায়।

যে যা-ই বলুক না কেন, কালো বিড়াল আসলে আর সব বিড়ালের মতই আদুরে ও আরাম প্রিয় একটি প্রাণী; Source: lovemeowroar-img.rbl.ms

কিন্তু প্রাচীনকালের মানুষ তো আর এই ঘটনার পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতো না। তাই তারা বিড়ালকে জাদুকরী প্রাণী মনে করতো। আজকাল বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে আমরা অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। ফলে কালো বিড়ালের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা হলেও বদলেছে। কালো বিড়াল যে আর পাঁচ দশটা অন্য রঙের বিড়ালের মতই স্বাভাবিক প্রাণী সেটা আমরা বুঝতে পেরেছি। তাই শান্ত ও আদুরে এই প্রাণীরা যাতে আর রঙের বৈষম্যের ফলে কষ্ট না পায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

ফিচার ইমেজ: 

This article is in Bangla language. It's about some myths about black cats.
For references please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: youwall.com

Related Articles