Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নর্স সৃষ্টিতত্ত্ব: বিশ্ববৃক্ষ এবং নয়টি জগত

যদি বলা হয়, এই পৃথিবী একটা বিশাল গাছের ডালে অবস্থিত, আর গাছের বিভিন্ন ডালে আছে এমন আরও আটটি বিশ্ব, বিশ্বাস করবেন কি? গাছের ডালে ছড়িয়ে থাকা নয়টি জগতের ধারণা আধুনিক যুগে যতই আজগুবি লাগুক, আদি নর্স পুরান কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই।

“I know an ash,
It is called Yggdrasil,
A high, holy tree,
Splashed and coated with white clay.
From it come the dews
That fall in the valleys.
It will always stand
Green over Urd’s well.”

                            – The Sibyl’s Prophecy, 19

নর্স কাব্য ‘এডা’ অনুসারে, ইগদ্রাসিল নামের এই চিরসবুজ অ্যাশ গাছটি সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র। এর তিনটি শেকড়, যার প্রথমটি অ্যাসিরদের জগত অ্যাজগার্ডে, দ্বিতীয়টি মানুষের জগত মিডগার্ডে আর তৃতীয়টি মৃতদের জগত হেলহেইমে। শেকড়ের নিচে রয়েছে মিমিরের প্রস্রবণ, যার পানি পানকারী লাভ করে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি। তিন ভাগ্যের দেবী নর্নেরা এই গাছের দেখভাল করেন। তারা নিজেদের কূয়ার পানি গাছে দেন এবং কূয়ার পাড়ের মাটি দিয়ে শিকড় লেপে দেন, যাতে গাছটি ক্ষয় না হয়ে যায়। এখানেই আছে হারগেলমির , যা নয়টি জগতের অনেক নদ-নদীর উৎস।

শিল্পীর কল্পনাতে ইগদ্রাসিল এবং নয়টি জগত, Source: Twitter
শিল্পীর তুলিতে ইগদ্রাসিল ও নয়টি জগত; Source: Twitter

চারটি হরিণ- দাইন, দ্বালিন, দুনের এবং দুরাথ্রর ইগদ্রাসিলের শাখা-প্রশাখা জুড়ে দৌড়ে বেড়ায়, যারা মূলত চারদিকের বাতাসের রূপক। একদম উপরের শাখায় আছে একটি ঈগল, যার ডানা ঝাপ্টানো থেকেই নয়টি জগতে ঝড় হয়। ঈগলের দুই চোখের মাঝে থাকে চিল ভারফলনির। নিদহগ নামের সরীসৃপ আরও অনেক সরীসৃপের সাথে গাছের শিকড় খেয়ে চলেছে। বলা হয়ে থাকে, নিদহগ হেলহেইমে আগত মৃতদের দেখ থেকে রক্ত শুষে নেয়। ঈগল আর নিদহগ একে অপরকে  ঘৃণা করে। রাটাটস্ক নামের কাঠবিড়ালী গাছের শিকড় থেকে শিখরে দুজনের মাঝে অপমানসূচক মন্তব্য আদান প্রদান করে এই শত্রুতাকে জিইয়ে রাখে। ইগদ্রাসিলের শাখা-প্রশাখাগুলো ছড়িয়ে আছে নর্স পুরাণে বর্ণিত নয়টি জগতে।

অ্যাজগার্ড: অ্যাসিরদের জগত

অ্যাসিরদের জগত অ্যাজগার্ড; Source: Fandom-Wiki

অ্যাজগার্ড শব্দটি আদি নর্স অ্যাজ, গড এবং গারর থেকে এসেছে, যার ইন্দো-ইউরোপীয়ান মূল অর্থ হয় দানব বা দেব এবং ঘের অর্থাৎ বাগান, যার মানে দাঁড়ায় ‘দেবতাদের বাগান’। অ্যাজগার্ডে প্রবেশের একমাত্র পথ রংধনু সেতু বাইফ্রস্ট। জগতটি বারোটিরও বেশি ভাগে বিভক্ত, যেখানে প্রত্যেক অ্যাসির (যোদ্ধা দেবতা) এর স্বর্ণ বা রৌপ্যনির্মিত প্রাসাদ আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাসাদটি ভালহালা, সর্বপিতা ওডিনের বাসস্থান।

বীরের ন্যায় মৃত্যুবরণ করা সাহসী যোদ্ধাদের স্থান হয় ভালহালাতে, যেখানে তারা অনন্তকাল ধরে প্রস্তুতি নিতে থাকে র‍্যাগনারকের। অ্যাজগার্ডের কেন্দ্রে আছে সমতল স্থান ইদাভল, যেখানে অ্যাসিরদের গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেবতারা গ্ল্যাডসহেম এবং দেবীরা ভিনগলফ নামক হলে একত্রিত হয়। এছাড়াও ইগদ্রাসিলের শিকড়ের নিচে অবস্থিত নর্নদের কূয়া উর্দেও অ্যাসিররা প্রতিদিন মিলিত হয় এবং সবার ভাগ্য নিয়ে আলোচনা করে।

ভানাহেইম: ভানিরদের জগত

শিল্পীর কল্পনায় রহস্যময় ভানাহেইম, Source: Pinterest

নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ভানিরদের (প্রাচুর্য, প্রকৃতি আর জ্ঞানের দেবতা) জগত ভানাহেইম। ভানিরেরা জাদুবিদ্যায় পারদর্শী। তাদের আছে ভবিষ্যৎ বর্ণনা করার ক্ষমতাও। ভানাহেইমের প্রকৃত অবস্থান বা এটি ঠিক দেখতে কেমন তা কেউ জানে না। সম্মানজনকভাবে মৃত বীরদের একটা অংশ এই ভানাহেইমে ফোকভাগনারেফ্রেয়ার আনুগত্যে অবস্থান করে এবং রাগনারকের প্রস্তুতি নেয়।  

মিডগার্ড: মানুষের জগত

মিডগার্ডেই আমাদের বসবাস; Source: Flickr

ইগদ্রাসিলের মধ্যভাগে দেবতারা মানুষের বসবাসের জন্য মিডগার্ড সৃষ্টি করেন। দানব ইমিরকে হত্যার পর তার দেহ দিয়ে তৈরি করা হয় এ জগত, ইমিরের চোখের পাপড়ি দিয়ে তৈরি হয় এর দেয়াল, যা একে দানবদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। বরফের রাজ্য নিফলহেইম আর আগুনের রাজ্য মাসপেলহেইমের মাঝখানে অবস্থিত মিডগার্ডের সবদিক ঘিরে রয়েছে সমুদ্র। বিরাটকায় সরীসৃপ জরমুনগাড সমুদ্রের তলদেশে থেকে পুরো মিডগার্ডকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। নয়টি জগতের ভিতর এটিই একমাত্র জগত যা মানুষের কাছে পুরোপুরি দৃশ্যমান। মিডগার্ড বাইফ্রস্ট সেতুর মাধ্যমে অ্যাজগার্ডের সাথে সংযুক্ত। বলা হয়ে থাকে, র‍্যাগনারকের সময় মিডগার্ড ধ্বংস হয়ে যাবে।

আলফহেইম: এলফদের জগত

আলফহেইম যেন সত্যিই ‘আলোয় ভূবন ভরা’; Source: Fandom-Wiki

ইগদ্রাসিলের সর্বোচ্চ শাখায় অ্যাজগার্ড আর ভানাহেইমের সাথেই অবস্থিত আলোর এলফদের বাসস্থান আলফহেইম। ভানির দেবতা ফ্রে আলফহেইমের রক্ষক। এলফরা একধরনের উপদেবতা, যারা অত্যন্ত সুদর্শন, জাদুবিদ্যায় পারদর্শী। এরা এদের জ্ঞান এবং জাদুবিদ্যার মাধ্যমে মানুষের উপকার অথব ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে। আদি নর্স সংস্কৃতিতে এদের শিল্প ও সঙ্গীতের অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখা যায়।

নিদাভেলির বা ভার্টালফহেইম: বামনদের জগত

মাটির নিচে বামনদের রাজ্য নিদাভেলির; Souce: Fandom-Wiki

ভার্টালফহেইম শব্দটির অর্থ অন্ধকার প্রান্তর। বামন, মতান্তরে অন্ধকারের এলফদের বাসস্থান নিদাভেলির বা ভার্টালফহেইম। বামনেরা মূলত পাথরের নিচে বা গুহায় বসবাস করে। মৃত দানব ইমিরের মাংসখেকো কীট থেকে বামনদের জন্ম বলে কথিত আছে। ধারণা করা হয়, সূর্যের আলো গায়ে লাগলে এরা পাথরে পরিণত হয় বলে এরা ভূগর্ভে বাস করে। বামনেরা সুনিপুণ কারিগর। হৃদমার নিদাভেলিরের রাজা। বিভিন্ন সময়ে অ্যাসির এবং ভানিরেরা বামনদের কাছ থেকে বিভিন্ন দ্রব্য উপঢৌকন হিসেবে গ্রহণ করেছে।  

নিফলহেইম: বরফ এবং কুয়াশার জগত

শীতল কুয়াশার জগত নিফলহেইম; Source: Twitter

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তলদেশে থাকা কুয়াশায় ঘেরা অন্ধকার নিফলহেইম আদিম জগতগুলোর একটি। নিফলহেইম আদি গহ্বর গিনুনগাগাপের উত্তর অংশে অবস্থিত। আদি তিন কূপের প্রথমটি, ভারগেলমির নিফলহেইমে অবস্থিত, যার থেকে নর্স পুরাণে বর্ণিত এগারোটি নদীর উৎপত্তি হয়েছে। বিশাল সরীসৃপ নিদহগ এই কূপ পাহারা দেয়। এখানেই সে হেলহেইমের মৃতদের দেহ থেকে রক্ত শুষে নেয় এবং ইগদ্রাসিলের শিকড় চর্বন করতে থাকে। বরফের নদী এলিভাগার নিফলহেইমের শুরু থেকেই ছিল। এর পানি ছড়িয়ে গিনুনগাগাপের কিছু অংশে জমাট বেঁধে বরফে পরিণত হয়। বলা হয়ে থাকে, এই কারণেই মিডগার্ডের উত্তর অংশ অত্যাধিক ঠান্ডা।

ইয়োটুনহেইম: দানবদের জগত

ইয়োটুনহেইমে উটগার্ড-লোকির দুর্গ; Source: Fandom-Wiki

দানব বা ইয়োটুনের বাসস্থান ইয়োটুনহেইমের অপর নাম উটগার্ড, যার অর্থ দেয়ালের বাইরে। এরা অ্যাসিরদের শত্রু। ইয়োটুনহেইম মূলত পাথর, মরুভূমি ও বনভূমি দিয়ে পরিপূর্ণ এবং সমুদ্রের বরফে ঢাকা শীতল উপকূলে অবস্থিত। কোনো উর্বর জমি না থাকার কারণে ইয়োটুনেরা খাদ্যের জন্য সমুদ্র থেকে আহৃত মাছ এবং বনভূমির জীবজন্তুর উপর নির্ভরশীল। আইভিং নদীর দ্বারা ইয়োটুনহেইম আর অ্যাজগার্ড পৃথক করা, যা কখনই জমে বরফ হয় না। ইগদ্রাসিলের মিডগার্ডের শিকড়ের ঠিক নিচে ইয়োটুনহেইমে মিমিরের জ্ঞানের কূপটি অবস্থিত। তুষার আর তুষার শলাকা খোদাই করে তৈরি উটগার্ডের দুর্গ এত বিশাল যে, এর চূড়া দেখা অসম্ভব। ইয়োটুনহেইমের রাজা উটগার্ড-লোকি এই দুর্গে বাস করে।

মাসপেলহেইম: আগুনের জগত

আগুন আর লাভা দিয়ে তৈরি মাসপেলহেইম; Source: Twitter

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত মাসপেল আদিমতম জগতগুলোর মাঝে একটি। মাসপেল একটি জ্বলন্ত জগত, যেখানে আছে কেবল আগুন, ধোঁয়া, কালি, লাভা আর উত্তাপ। নয়টি জগতের ভেতর এটি প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল, যা পরে নিফলহেইমের সাথে মিশে দানব ইমিরের জন্ম দেয়। আগুনের দানবের বাসস্থান মাসপেলের রাজা সার্ট । র‍্যাগনারকের দিন সার্ট ইগদ্রাসিলে আগুন ধরিয়ে দেবে, যার ফলে নয়টি জগত ধ্বংস হয়ে যাবে।

হেলহেইম: মৃতদের জগত

অন্ধকার বিষাদময় হেলহেইম; Source: Fandom-Wiki

মর্যাদাহীন মৃত, চোর, খুনী এবং যারা ভালহালা বা ফোকসভাগনারে যাওয়ার মতো যথেষ্ট সাহসী নয়, তাদের মৃত্যুর পরে ঠাই হয় হেলহেইমে। লোকির কন্যা হেলা এই জগতের রক্ষক। হেলহেইম বিষাদময় শীতল এলাকা। যারা এখানে পৌঁছায় তারা আর কোনোদিন আনন্দ অনুভব করতে পারে না। র‍্যাগনারকের দিন এরা হেলার নেতৃত্বে অ্যাসির আর ভানিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করবে, আর সেদিনই হবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শেষ দিন।

Featured Image: Pinterest

Related Articles