Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ওসিরিস: পাতালদেবতা আর তার মৃত্যুহীন ট্র্যাজেডি

“মৃত্যুর পরে কী হয়?” যেহেতু মানুষ মাত্রই অস্তিত্ব সচেতন; আর ধর্মের কাজই অস্তিত্বের গভীরতম তাৎপর্য অনুসন্ধান। সেহেতু প্রতিটি ধর্মই প্রশ্নটি নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছে। প্রাচীন মিশরে সেই চিন্তার প্রাবল্য অনুধাবন করা যায় স্বতন্ত্র এক দেবতার আখ্যানে। মৃত্যু পরবর্তী জীবনের দেবতা ওসিরিসের উত্থান খ্রিষ্টপূর্ব ২৬০০ অব্দের দিকে। প্রায় তিন হাজার বছরেও তার আধিপত্য এবং অবস্থান ম্লান হয়নি।

মিশরীয় সংস্কৃতির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিতি লাভ করেছে বোধ হয় মমি। অথচ মমিতে পরিণত হওয়া খোদ ওসিরিসের নিজস্ব অভিজ্ঞতা। দেবতা হিসাবে সে-ই সিদ্ধান্ত দেয়; কে পুনরুত্থিত হবে আর কে হবে না। কে শাস্তি পাবে, কে পাবে না। দুনিয়ায় বেঁচে থাকা তার সময়গুলো ছিলো অন্য সবার চেয়ে একটু বেশি নাটুকে।

ওসিরিস

প্রাচীন মিশরীয় নামের বেশিরভাগই ইংরেজিতে এসেছে কপটিক থেকে। তা-ও আবার সরাসরি না। গ্রীক এবং ল্যাটিন ঘুরে। এই দীর্ঘ যাত্রায় মূল শব্দ আর তাৎপর্য কতটা অক্ষত আছে; তা সহজেই অনুমেয়। ৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কপটিক ভাষার উন্নতি সাধিত হয়। তার আগে মিশরীয় লেখ্য ভাষায় কোনো প্রকার স্বরবর্ণের ব্যবহার ছিল না। কিছু বর্ণের চরিত্র কাছাকাছি হলেও প্রকৃতিগতভাবে ধোঁয়াশাপূর্ণ।  

ওসিরিসের এক হাতে হুক আর অন্য হাতে চাবুক; Image Source: dreamstime.com

মিশরীয় লিপি থেকে ভিন্ন একটা নাম পাওয়া যায় ওসিরিসের নির্দেশক। অনুচ্চারণযোগ্য সেই শব্দের বর্ণরূপ- জসজরট। নামের সাথে যুক্ত থেকেছে মহামহিম অভিধা। ওসিরিসকে চিত্রিত করা হয় আতেফ মাথায় মমিকৃত রাজা হিসাবে। আতেফ বিশেষ ধরনের মুকুট, যেখানে হাদেতের সাথে দুটি উটপাখির পাখা এবং দুটি শিং মিলিত হয়েছে। মিশরীয় পুরাণে আতেফ যেন তার একচ্ছত্র চিহ্ন।

ওসিরিসের শরীরের খুব কম অংশই উন্মুক্ত। গায়ের রঙ সবুজ কিংবা কালো। সময়ের ব্যবধানে অবক্ষয় কিংবা ম্লান হয়ে যাবার ছাপ স্পষ্ট। ওসিরিসের সবচেয়ে বড় ভূমিকা জীবন এবং মৃত্যুর চক্র ঘুর্ণনে। হাতে শোভা পায় একটা হুক এবং চাবুক। হুকটা রাজত্ব আর চাবুকটা বিচার ক্ষমতার প্রতীক। পাতালের দেবতা হবার আগে ওসিরিস দুনিয়ার শাসনকার্য তদারক করতেন।

জন্ম ও পরিবার

আটুম-রা থেকে অনেকটা পার্থেনোজেনেসিসের মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় বাতাসের দেবতা শু এবং আর্দ্রতার দেবী তেফনুত। পরবর্তীতে শু এবং তেফনুতের ঘরে জন্ম নেয় আকাশের দেবী নুত এবং জমিনের দেবতা গেব। আপাতদৃষ্টে ভাই-বোনের বিয়ে বিব্রতকর মনে হলেও প্রাচীন মিশরে রাজকীয় রক্তের বিশুদ্ধতার জন্যই এরূপ বিয়ে আপত্তিকর ছিল না।

নুত ও গেবের প্রথম সন্তান ওসিরিস; Image Source: arthosiris.wordpress.com

নুত এবং গেবের প্রথম সন্তান ওসিরিস। অন্য ভাই-বোন আইসিস, সেত এবং নেফথিস। জন্মের সময় ওসিরিস বিশেষ মুকুট আতেফ পরিধান অবস্থাতেই পৃথিবীতে আসে। রা-এর সিদ্ধান্ত আর উত্তরাধিকারের নিদর্শন আতেফ। তার জন্মের আগে পেমিলেস নামক জনৈক ব্যক্তি থিবিসের মন্দিরে থাকাবস্থায় দৈববাণী শুনতে পান। প্রচারের আদেশ পান মহান রাজা ওসিরিসের জন্মকথা। সেই সম্মানেই রাজার পড়াশোনার দায়িত্ব পান পেমিলেস।  

ওসিরিসের নিজেরও ছেলে-মেয়ে ছিলে। সবথেকে বিখ্যাত সূর্যদেবতা হোরাস। পরবর্তীতে যে রা-এর উত্তরাধিকারী হয়। প্রাচীনকালে হোরাস এবং রা একত্রিত শক্তি হিসাবে রা-হোরাখতি নামে উপাসিত হতো। অন্যান্য সন্তানদের মধ্যে বাবি এবং সপদেত প্রভাবশালী। প্রথমজন মানুষখেকো এক পৌরাণিক বেবুন। দ্বিতীয়জন আকাশের লুব্ধক নক্ষত্রের ব্যক্তিরূপ।

ওসিরিসের রাজত্ব

ওসিরিসকে নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় আলোচনাটা করেছেন গ্রিক পণ্ডিত প্লুটার্ক এবং ডিওডোরাস। প্লুটার্কের জীবনকাল ৪৬ থেকে ১২০ খ্রিষ্টাব্দ। অন্যদিকে ডিউডোরাস বেঁচেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ববর্তী প্রথম শতকে। কম করে হলেও ততদিনে ওসিরিসের উপাস্য হয়ে ওঠার বয়স আড়াই হাজার বছর হয়ে গেছে। ২৬৬০-২০৬৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের নিদর্শন হিসাবে আবিষ্কার করা হয়েছে পিরামিড টেক্সট। সেখানেই এসেছে ওসিরিসের মৃত্যুর পর ধারাবাহিকভাবে আইসিস ও নেপথিসের খোঁজাখুঁজি প্রসঙ্গ। আছে ওসিরিসকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা কিংবা হত্যা করে পানিতে ভাসিয়ে দেয়ার পৃথক আলোচনা। প্যাপিরাস সল্ট থেকে পাওয়া যায় মমীকরণের ধারণা।

অর্থাৎ মিশরীয় পুরাণের মধ্যে ওসিরিসের আখ্যান সবথেকে সম্পূর্ণ ও সহজলভ্য। সকল উৎস অনুসারেই, ওসিরিস একজন প্রজাদরদী এবং সফল শাসক ছিল। সেই সময় অব্দি মিশরে প্রচলিত ছিল বর্বরতা এবং নরমাংস ভক্ষণের রীতি। ওসিরিস তাকে রদ করে গম, বার্লি, আঙুর, শরাবের প্রচলন ঘটাল।

যাযাবর আর নরমাংস খাওয়া মানুষকে সভ্য করে তুলে রাজা ওসিরিস; Image Source: stltoday.com

অসভ্য অবস্থা থেকে মিশরকে কেবল সভ্য করেই স্থির হলো না ওসিরিস। শিখিয়ে দিল কৃষি আর তামার ব্যবহার। সাম্রাজ্যের সুষ্ঠু শাসনের জন্য সুদূর ভারত অব্দি ভ্রমণ করতো নিয়মিত। তারপরেও দয়ার শরীর বললে ভুল হবে। যারাই কাজে বাধা দিয়েছে; তারাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে দুনিয়ার মাটি থেকে। থ্রেসের অসভ্য রাজাই তার স্পষ্ট প্রমাণ। প্রশাসক, নির্মাতা এবং কৃষি বিশেষজ্ঞদের বাহিনী প্রস্তুত করে ওসিরিস রওনা দেয় আরো দক্ষিণে ইথিওপিয়ার দিকে। তার অবর্তমানে আইসিসকে দেয়া হলো দায়িত্ব।

ষড়যন্ত্র এবং হত্যা

ওসিরিসের চলে যাওয়ার পর থেকে আইসিস কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই মিশরের রাজকার্য চালাচ্ছিল। সুখে থাকতে ভূতে কিলায় বলে একটা প্রবাদ বেশ প্রচলিত। রাজ্যের কয়েকজন অমাত্য এই সহজ অবস্থা মেনে নিতে পারেনি। অন্য দিকে ওসিরিসের ছোট ভাই সেত বহু আগে থেকেই নিদ্রাহীন রাত পার করছে একটা মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায়- কীভাবে ভাইকে হত্যা করা যায়?

জোরেশোরে তদবির চালালো সেত। ইথিওপিয়ার রানীসহ মোট ৭২ জন ষড়যন্ত্রকারী ঐক্যবদ্ধ হলো ওসিরিসের হত্যার পরিকল্পনায়। গোপনে মাপ নেয়া হলো শরীরের। ঠিক সেই মাপে প্রস্তুত হলো সুসজ্জিত সিন্দুক। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সবাইকে দাওয়াত করা হলো। সিন্দুকটা রাখা হলো সামনেই। বলা হলো, যার শরীরের মাপের সাথে মিলে যাবে; সিন্দুকের মালিকানা হবে তারই।

ওসিরিস বোঝেনি যে সেত তাকে হত্যার জন্যই দাওয়াত সাজিয়েছে; Image Source: livewithoutdeadtime.wordpress.com 

অতিথিরা এক এক করে বাক্সে শুয়ে দেখে হতাশ হলেন। অবশেষে ওসিরিসের পালা। বেচারা শোয়া মাত্রই দেখা গেল মাপে মিলে গেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো। ওসিরিস ভেতরে থাকা অবস্থাতেই ঢাকনাটা বন্ধ করে দিলো। নিশ্চিত হতে আটকে দেয়া হলো গলিত সীসা দিয়ে। দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করলো ওসিরিস। ষড়যন্ত্রকারীরা নীলনদের স্রোতের মধ্যে ভাসিয়ে দিলো সিন্দুকটাকে।

আইসিসের অভিযাত্রা

ওসিরিসকে যখন হত্যা করা হলো; আইসিস তখন থিবিসের নিকটে এক গ্রামে। দুর্ঘটনা আঁচ করতে পেরে দ্রুত রওয়ানা দিলো স্বামীর খোঁজে। সবিস্তার শুনে বিরহে ছটফট করতে লাগলো আইসিস। কিন্তু ভেঙে পড়লো না। স্বামীর শরীর খুঁজতে পাড়ি জমালো দেশের পর দেশ।

বহু মাস কেটে গেছে। ক্লান্ত আইসিস নীলনদের তীর ধরে হাঁটছিল। কতিপয় ছেলে-মেয়ে খেলছে পাশেই। তারাই জানালো, একটা সিন্দুক ভেসে গেছে স্রোত বেয়ে। আরো এগিয়ে যেতে যেতে বিবলোসে আবিষ্কার করলো সিন্দুকের থামার দাগ। দ্রুত পার্শ্ববর্তী জায়গায় তল্লাশী শুরু হলো। আসলে বিবলোসের তীরে থেমে যাবার পর সিন্দুককে ঘিরে একটা বিশাল গাছ গড়ে উঠেছিল। স্থানীয় রাজা মালকান্দার এবং রানী এথেনাইস সেই বড় গাছের বহু প্রশংসা শুনে দেখতে এলেন। প্রশংসা মিথ্যা না। ওদিকে প্রাসাদেরও নির্মাণ কাজ চলছে। যে-ই ভাবা; সেই কাজ। যুৎসই অংশ দেখে কেটে নেয়া হলো রাজপ্রাসাদের খাম বানানোর জন্য। হায়; তার সাথে কেটে চলে গেলো ওসিরিসের কিছু অংশ।

আইসিস সেই গাছের কাছে এসে আরেক দফা মর্মাহত হয়ে বসে পড়ে। ঘটনাক্রমে পাশেই গোসল করছিল রানীর দাসীরা। অপরিচিত নারীর সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে কথা বলতে গেল। যতই বলছে; ততই দেবী আইসিসের মাধ্যমে তাদের মধ্যে খুশবু ছড়িয়ে পড়েছে। ঘরে ফিরে যাবার পর রানীর নাকে সেই সুগন্ধ পৌঁছাতে দেরি হলো না। কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলেন রহস্য। বিস্তারিত তুলে ধরলো দাসীরা। শুনে রানী নিজে গেলেন অপরিচিতার কাছে। নিজের অসুস্থ সন্তানের দেখাশোনার ভার দিতে চাইলেন। আইসিস আপত্তি জানালো না; শুধু দিলো একটা গোপন শর্ত। যা-ই হোক, দীর্ঘদিন সেবিকা হিসাবে থাকার পর একদিন নিজের দেবী পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপরেও কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তাই আইসিস পূর্ব শর্ত মতে খামে সমাধিস্থ ওসিরিসের দেহটা চায়। রানীও নারাজি হলেন না।

ব্যথাতুরা আইসিসের অভিযাত্রা অনেক দেবতাদেরও ছাপিয়ে যায়; Image Source: ancient-origins.net 

অবশেষে ওসিরিসকে নিয়ে ফিরতে পারলো আইসিস। নানা কায়দা কসরত করে অল্প মুহূর্তের জন্য জাগানো গেলো মৃত স্বামীকে। ঠিক সেই সময়ের মিলনেই হোরাস গর্ভে আসে। অতঃপর আইসিস, আনুবিস, নেপথিস এবং থত মিলে ওসিরিসের দেহকে মমি করে রাখলো।  

মৃত্যুর পরেও স্বস্তি নেই। সেত ঠিকই ওসিরিসের মৃতদেহ খুঁজে এনে চৌদ্দ টুকরো করে। ফেলে দেয় নীলনদে। আরো একবারের জন্য আইসিসকে বের হতে হলো অভিযানে। তেরোটা টুকরো পাওয়া গেলেও একটা হারিয়ে গেছে চিরতরে। কুমিরে খেয়ে ফেলেছিল টুকরাটা। সেতের এই বার বার সীমালঙ্ঘনে চিন্তিত আইসিস। ওসিরিসের শরীরের প্রত্যেক টুকরো দিয়ে মোমের সাহায্যে তৈরি করলো ১৩টা ওসিরিস-মূর্তি। রেখে দেয়া হলো তেরোটি পৃথক স্থানে। প্রত্যেক স্থানই আলাদাভাবে ওসিরিসের সত্যিকার সমাধি বলে পরিচিত হলো। 

ওসিরিসের আর দুনিয়ায় থাকা হয়ে ওঠেনি। তার বদলে ‍দোয়াত বা মিশরীয় পুরাণে পাতালের অধিপতিতে পরিণত হলেন। অধিপতি মৃত্যু পরবর্তী নতুন জীবনের।

মৃত্যুর পরে বিচারক

মিশরীয় পুরাণ মতে মানব অস্তিত্ব দুটি আলাদা অস্তিত্বের সমাবেশ। আধ্যাত্মিক অস্তিত্বকে ‘বা’ এবং শারীরিক অস্তিত্বকে ‘কা’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হতো। মোটা দাগে তাদের আত্মা ও দেহ বলে সংজ্ঞায়ন করা যেতে পারে। মানুষের মৃত্যু হওয়ার মানে ‘কা’ কে ছেড়ে ‘বা’ এর চলে যাওয়া। বা এর গন্তব্য মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ওসিরিসের কাছে। কিন্তু সকল আত্মা তার কাছে পৌঁছাতে পারবে না। দুনিয়ার জীবনে মাতের আনুগত্য করা জরুরি। মাত হলো প্রাকৃতিক আইন, সামাজিক ভারসম্য এবং ন্যায়বিচার। ধার্মিক বলতে মাতের অনুগামীদেরকেই বোঝানো হতো।

প্রতিটি আত্মাকে মুখোমুখি হতে হবে ওসিরিসের বিচারের; Image Source: ancient.eu

যারা সৎকাজে পূর্ণ জীবনযাপন করবে কিংবা মমি করার সময় কাপড়ে মন্ত্র লিখে দেয়া হবে; কেবল তারাই মহাবিচারকে উতরে যেতে পারবে। তাদের আত্মা পুনরায় ফিরে আসতে পারবে শরীরে। কিন্তু যারা মিথ্যাচার করেছে জীবনের প্রতি, থেকেছে মাতের বিরুদ্ধে কিংবা অসৎ কাজে লিপ্ত; তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে আমিতের মাধ্যমে। কুমিরের মাথা, সিংহের শরীর এবং জলহস্তীর পশ্চাৎভাগ নিয়ে গঠিত অদ্ভুত প্রাণী আমিত সেই পাপাত্মাগুলোকে উচিৎ শাস্তি দেবে। সাথে থাকবে সাজা দানের উদ্দেশ্যে ওসিরিসের নিয়োজিত বাহিনী।

অবশেষ

জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে প্রত্যেক জাতির। মিশরীয়রাও এর বাইরে না। নব্বইয়ের দশক থেকে পুত্র সন্তানদের ওসিরিস নাম রাখার হিড়িক পড়ে যায়। বর্তমানে তার দাপট আরো বেশি। মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীন মিশর ছিলো সংযোগের মতো। এজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম, সমাজ, জীবনযাত্রা নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকা পুরাণে আলো ফেলতে কমতি নেই তোড়জোরের।

ওসিরিসের মাধ্যমেই সভ্যতার শুরু। কৃষি, নির্মাণ যন্ত্রপাতি এবং সামাজিক সহাবস্থানের স্থপতি সে। আদিম যাযাবর জীবন কমে প্রথম কৃষিতে থিতু হলো; তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যখনই হোক, ওসিরিস ছিলো সেই শিকার সমাজ ও কৃষি সমাজের মধ্যবিন্দু। তারচে’ গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু মনে হয় অন্য কোথাও। কৃষি সমাজ ও সভ্যতার উন্মেষ যে পরকাল বিষয়ক চিন্তার উন্নয়নে শক্ত পাটাতন দিয়েছে; তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ওসিরিস। সভ্যতার সূচনাকারী সম্রাট এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের দেবতা।

Related Articles