প্রাচীন গ্রিসের নাবিক বা জেলেরা উত্তাল সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড় বা ঢেউয়ের কবলে পড়লে করজোড়ে সমুদ্র-দেবতা পসাইডনের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করত। কারণ, গ্রিক উপকথার বিশাল জায়গাজুড়ে নিজেকে বিস্তীর্ণ জলরাশির মতো ছড়িয়ে রেখেছেন পসাইডন। পদ ও বিশিষ্টতা অনুসারে, দেবরাজ জিউসের পরই তার অবস্থান। জিউস যেভাবে স্বর্গের যাবতীয় জিনিস সামলান, হেডিস যেভাবে পাতালপুরীর ঘুটঘুটে অন্ধকারে গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছেন, তেমনি সমুদ্রের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে অথৈ জলের ঢেউ ভেঙে নিজের রাজত্ব কায়েম রাখেন পসাইডন। দেবতাদের মধ্য তিনিই প্রথম ঘোড়াকে পোষ মানিয়েছিলেন বলে তাকে ঘোড়ার দেবতা বলেও ডাকা হয়।
এছাড়াও গ্রিক পুরাণে তিনি বন্যা, খরা, ও ভূমিকম্পের দেবতা হিসেবেও সুপরিচিত। চোখধাঁধানো সুবিশাল এক রাজপ্রাসাদে তার রাজকীয় বসবাস, যা সমুদ্রের নিচে অবস্থিত। প্রাসাদের বৃহৎ এক আস্তাবলে তার সাদা রঙের ঘোড়াগুলো তামাটে খুর নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। সমুদ্র নিজের ক্রোধ প্রকাশের মাধ্যমে অশান্ত রূপ ধারণ করলে ঘোড়াগুলো নিয়ে এক সোনালি রথ প্রস্তুত করেন তিনি। মাছের মতো লেজবিশিষ্ট একজোড়া ঘোড়া তার রথ টানার দায়িত্ব পালন করে। হাওয়ার বেগে ছুটে চলা ঘোড়াগুলো দিয়ে সমুদ্রকে শান্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। ফুলে-ফেঁপে ওঠা বিশাল জলরাশি শান্ত হয়ে গেলেই জলজ প্রাণীরা রথের পেছনে খুশিতে ডগমগ হয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে।
জন্ম ও শৈশব
ক্রোনাস যখন ইউরেনাসকে নপুংসক বানানোর মাধ্যমে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ক্ষমতা ছিনিয়ে নিলেন, তখন গায়া ও ইউরেনাস কঠোর ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, ক্রোনাস একদিন নিজ সন্তানদের মাধ্যমে অনুরূপ প্রতিদান পাবেন। সন্তানেরা তার ক্ষমতা ছিনিয়ে নেবে। সেই কারণে রিয়ার সাথে ক্রোনাসের মিলনে যে সন্তান জন্ম নিত, তাদেরকে গলাধঃকরণ করতেন পিতা ক্রোনাস। রিয়ার গর্ভ থেকে পসাইডন জন্মগ্রহণ করলে রিয়া ক্রোনাসকে বলেন- তিনি এক ঘোড়ার শাবক জন্ম দিয়েছেন। পসাইডনের বদলে কচি অশ্ব-শাবক হাতে তুলে দেওয়ার সাথে সাথেই সেটাকে গিলে ফেললেন ক্রোনাস। ওদিকে রিয়া কাফিরা ও টেলখিনেসদের কাছে পসাইডনকে পাঠিয়ে দেন গোপনে বেড়ে ওঠার জন্য। এই বিশ্বাস আর্কাডিয়ানদের।
অন্যান্য পুরাণে বর্ণিত আছে, ক্রোনাস পসাইডনসহ তার সকল সন্তানদের খেয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে জিউস বমিকারক ঔষধ দিয়ে ক্রোনাসকে বমি করিয়ে পেট থেকে উদ্ধার করেন সকল সন্তানকে। ক্রোনাসের পেট থেকে বের হয়ে আসার পরেই জিউস পসাইডনকে টাইটানোম্যাকি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেন। টাইটানোম্যাকি হলো গ্রিক পুরাণের প্রথম টাইটান যুদ্ধ। ক্রোনাস এবং তার বারো ভাই-বোনকে প্রথম যুগের টাইটান বলে অভিহিত করা হয়। স্বভাবতই, তাদের সন্তান-সন্ততি হলো দ্বিতীয় যুগের টাইটান। পসাইডনের অস্ত্র ত্রিশূল তাকে উপহার দিয়েছিল সাইক্লপেরা। এই সাইক্লপরা ছিল মহাবিশ্বের প্রথম কামার, যাদের হাপরের চাপেই তৈরি দেবরাজ জিউসের বজ্র, পসাইডনের ত্রিশূল, এবং হেডিসের দুর্ভেদ্য শিরস্ত্রাণ। সহোদর জিউস এবং হেডিসকে সাথে নিয়ে বধ করা হলো টাইটানদের। যুদ্ধে জেতার পর অলিম্পিয়ানরা টাইটানদের টারটারাসে বন্দি করে রাখলেন। ক্ষমতা ভাগ করে দেওয়ার সময় পসাইডন নির্বাচিত হন সমুদ্রের অধিপতি হিসেবে।
অধিকাংশ পুরাণেই পসাইডনকে বর্ণনা করা হয়েছে কলহপ্রিয়, ঝগড়াটে, অস্থিরচিত্তের একজন দেবতা হিসেবে। তিনি অনেক জায়গাতেই প্রধান দেবতা হতে চাইতেন। এজন্য অনেক দেবতার সাথে সবসময় তার ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগেই থাকত। একবার সূর্যের আদি দেবতা হেলিয়াসের সঙ্গে তার বিবাদ শুরু হলো করিন্থ নামক এক জায়গার প্রধান দেবতার স্থানে আসীন হওয়া নিয়ে। ঝগড়ার জল গড়াতে গড়াতে এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেল যে, চলমান সেই বিবাদ মীমাংসার জন্য প্রয়োজন পড়ল এক বিচারকের। টারটারাস থেকে ডেকে আনা হলো হেকাটনখিরাস ব্রিয়ারেসকে। এই ব্রিয়ারেস টারটারাসে বন্দি টাইটানদের পাহারা দিতেন। ঝগড়ার আগুনে পানি ঢালার জন্য ব্রিয়ারেস পসাইডনকে ইসথমাস এবং হেলিয়াসকে করিন্থের ক্ষমতা ভাগ করে দেন।
এরপর পসাইডনের ঝগড়া শুরু হয় জিউসপত্নী হেরার সঙ্গে, আর্গস এলাকা নিয়ে। তবে এই ঝগড়া থামানোর জন্য একজনে কাজ হয়নি, আসতে হয়ে মোট তিনজনকে- নদীর দেবতা ইনাকাস, কেফিসোস, এবং এস্টেরিয়ন। দীর্ঘসময় ধরে চলা বিচারকার্যে রায় গেলো দেবী হেরার পক্ষে। ক্রোধে অগ্নিমূর্তির রূপ ধারণ করলেন পসাইডন। তিনি নদী দেবতাদের নদীর সব পানি শুষে নিলেন। এতেও রাগ না দমলে পরবর্তীতে তিনি আর্গসকে বন্যার পানিতে ভাসিয়ে দেন।
এরপরেও থেমে থাকেননি তিনি। জ্ঞানের দেবী অ্যাথেনার সাথে আবারও বিবাদে জড়ালেন ট্রোয়েজেন শহর নিয়ে। খবরটা দেবরাজ জিউসের কানে গিয়ে পৌঁছল। একদিকে নিজের কন্যা, অপরদিকে নিজের ভাই- উভয়কেই তুষ্ট রাখতে শহরকে দুজনের মাঝে সমানভাবে বণ্টন করে দিলেন।
তবে গ্রিক উপকথায় নগররাষ্ট্রের প্রধান হওয়া নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে উপাখ্যান, সেটাও অ্যাথেনা আর পসাইডনকে নিয়ে। গ্রিসের মাটিতে তখন সবে এক নতুন নগরীর গোড়াপত্তন হয়েছে। সেখানের রাজা হিসেবে মসনদে আসীন হলেন সেক্রোপস। এই সেক্রোপস পুরোপুরি মানুষ ছিলেন না। অর্ধেক শরীর সাপের, এবং বাকি অর্ধেক ছিল মানুষের অবয়বে গঠিত। যেন সাপ ও মানুষের মিশ্রণে এক সংকর প্রাণী। শুরুতেই শহরের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য একজন পৃষ্ঠপোষক দেবতা চাইলেন তিনি। এগিয়ে আসলেন পসাইডন এবং অ্যাথেনা। দুজনেই পৃষ্ঠপোষক হতে দারুণ উদগ্রীব। সেজন্য আবারও দুজনের মধ্যে কলহ বেধে গেলো। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলতে রাজি নয়। ঝগড়া মিটমাটের জন্য এক সমাধান বের করল সেক্রোপস। দুজন এই শহরের অধিবাসীদের বিশেষ কিছু উপহার দেবেন। যার উপহার শহরের বেশি কাজে আসবে, সে-ই হবে এই শহরের পৃষ্ঠপোষক।
প্রথমে পসাইডনের পালা। তিনি ত্রিশূল হাতে নিয়ে সজোরে মাটিতে আঘাত করলেন। মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো ঝরনা। নগরবাসীরা এই উপহারে খুব খুশি হলো। কিন্তু সবাই পরখ করে দেখল, সেই ঝরনার পানির স্বাদ লবণাক্ত।
এবার অ্যাথেনার পালা। সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে জমিতে তিনি এক বীজ বপন করে দিলেন, যা থেকে গজিয়ে উঠল এক জলপাই গাছ। এই গাছ থেকে বাতি জ্বালানোর তেল, রান্নার জন্য কাঠ, এবং বাড়ির বানানোর সরঞ্জাম পাওয়া গেলো। স্বভাবতই, অ্যাথেনার উপহারেই ঢের খুশি হলো নগরবাসী। সেক্রোপস অ্যাথেনাকেই পৃষ্ঠপোষক হিসেবে নির্বাচিত করলেন। দেবী অ্যাথেনার নামের সাথে মিল রেখে নগরীর নাম রাখা হলো অ্যাথেন্স।
পরকীয়া ও বহু ভালোবাসায় জিউসের থেকে কোনো অংশেই কম ছিলেন না তার ভাই পসাইডন। গ্রিক পুরাণের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে তার প্রেমোপাখ্যান। প্রিয়তমার তালিকায় রয়েছেন এম্ফিট্রিটে, দিমিতার, আফ্রোদিতি, মেডুসা, থিওফানেসহ বহু রমণী।
এম্ফিট্রিটে
এম্ফিট্রিটে ছিলেন একজন সমুদ্র দেবী। একদিন বোনদের সাথে নিয়ে সমুদ্রতটে হাঁটছিলেন এম্ফিট্রিটে। তার অপরূপ সৌন্দর্যে চোখ আটকে গেল পসাইডনের। তিনি বিয়ে করতে চাইলেন এম্ফিট্রিটেকে। কিন্তু সারাজীবন কুমারী থাকার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করা এম্ফিট্রিটে ইচ্ছা করেই তলিয়ে গেলেন সমুদ্রের গভীরে। সমুদ্রের বাকি উপদেবতাদের কাছে সন্দেশ পাঠালেন পসেইডন, যেভাবেই হোক এম্ফিট্রিটেকে খুঁজে বের করতে হবে। কাজটা সম্পাদন করতে পারলেন ডলফিন দেবতা ডেলফিন। এই ডলফিন দেবতা এম্ফিট্রিটেকে বিয়েতে রাজি করানোসহ বিয়ের সকল আয়োজন নিজ হাতেই সম্পাদনা করলেন। এম্ফিট্রিটে ও পসাইডনের গভীর প্রণয়ে জন্ম নিয়েছিল ট্রিটন, রোডস, ও বেন্থেসিকাইম প্রমুখ।
দিমিতার
দিমিতারের সাথে পসেইডনের প্রণায়াখ্যানটা একটু অন্যরকম। দিমিতার তখন নিজ কন্যা পার্সিফোনকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। মেয়ে হারানোর শোকে বিমর্ষ হয়ে পথে পথে দিশেহারা হয়ে ঘুরছিলেন তিনি। এমন সময় পসাইডনের দৃষ্টি যায় দিমিতারের দিকে। পসাইডন তখন কামুক ভাব নিয়ে দিমিতারের সঙ্গে মিলিত হতে চাইলেন। কিন্তু এই ভগ্নহৃদয় নিয়ে মিলনের কোনো ইচ্ছাই ছিল না দিমিতারের। তাই, ঘোটকীর রূপ ধরে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু পসাইডনও হাল ছাড়ার পাত্র নন। তিনি স্ট্যালিন ঘোড়ার রূপ নিয়ে দিমিতারের সঙ্গে প্রণয়ে মিলিত হলেন। তার গর্ভে জন্ম নিয়েছিল ডেসপোইনা এবং এরিওন নামে এক কথা বলা ঘোড়া।
মেডুসা
অনিন্দ্যসুন্দরি মেডুসা গ্রিক পুরাণে বেশ জনপ্রিয়। রোজকারের মতো একদিন সকালে প্রেমিকার খোঁজে বের হন পসাইডন। মেডুসার সৌন্দর্য আচ্ছন্ন করল তাকে। বরাবরের মতো তিনি মিলিত হতে চাইলেন মেডুসার সাথে। কিন্তু এম্ফিট্রিটের মতো মেডুসাও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি সারাজীবন কুমারী থাকবেন। তাই তিনি পসাইডনকে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। এবারও নাছোড়বান্দা পসেইডন, লাজ-লজ্জা ভুলে ক্রমাগত প্ররোচিত করে যাচ্ছিলেন মেডুসাকে। উপায়ান্তর না দেখে দেবী অ্যাথেনার মন্দিরে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা চাইলেন মেডুসা। কিন্তু পসাইডন নিজ শক্তি খাটিয়ে মন্দিরে ঢুকে ধর্ষণ করলেন মেডুসাকে। মন্দিরের মতো পবিত্র জায়গায় অপবিত্র কর্মকাণ্ডে দারুণ ক্ষুব্ধ হলেন দেবী অ্যাথেনা। কিন্তু শাস্তি দেওয়া হলো নিরপরাধ মেডুসাকে। দেবীর অভিশাপে মেডুসা পরিণত হলেন গর্গনে। মেডুসার তিন বোনকে একসাথে বলা হতো গর্গন।
মেডুসার মাথার চুলগুলো সব পরিণত হয়েছিল জীবন্ত সাপে। তার দিকে কেউ চোখে চোখ রাখলেই পাথরের মূর্তিতে পরিণত হতো সাথে সাথে। অদ্ভুত এই শাস্তির ব্যাখ্যা পুরাণের কোথাও পাওয়া যায়নি। অবশ্য পুরাণে এক কাহিনীতে এসেছে, মেডুসা অহংকার করে বলেছিলেন, তিনি অ্যাথেনার চেয়েও সুন্দরী। সেই ক্রোধের ফলাফল এই গর্গন। কারণ, দেবীরা আবার সৌন্দর্যে নিজেদের সমকক্ষ হিসেবে কাউকে পছন্দ করেন না। গ্রিক বীর পার্সিয়াসের হাতেই লিখা ছিল মেডুসার অন্তিম পরিণতি। মৃত্যুর সময় মেডুসা গর্ভে ধারণ করছিলেন পসাইডনের সন্তান। পার্সিয়াস ফেরার পথে মেডুসার মাথার এক ফোঁটা রক্ত পড়ে যায় সাগরে, আর সেখান থেকে জন্ম হয় পেগাসাসের।
পসেইডন একবার জিউসপত্নী হেরা ও অ্যাথেনাকে সঙ্গে নিয়ে নিজ ভাই জিউসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। সেই ষড়যন্ত্র গিয়ে ঠেকেছিল বিদ্রোহে। আরও অনেক দেবতাকে সাথে নিয়ে গড়ে উঠে 'অলিম্পাস বিদ্রোহ'। কিন্তু এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে জিউস হেস্টিয়া ছাড়া বাকি সবাইকে শাস্তি দেন। অ্যাপোলো এবং পসাইডনকে এক বছরের জন্য অলিম্পাসের চূড়া থেকে নির্বাসিত করে দিলেন। ফলে মর্ত্যলোকে এসে ঠাঁই নিলেন অ্যাপোলো এবং পসেইডন। পৃথিবীতে এসে জনসাধারণের মতোই কর্মসন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন দুই দেবতা। তারা কাজ পেয়ে গেলেন তৎকালীন ট্রয়ের অধীশ্বর রাজা লাওমেডনের কৃপায়। অ্যাপোলোকে নিযুক্ত করা হলো পশুসম্পদ দেখভালের জন্য, আর পসাইডন পেলেন ট্রয়ের প্রাচীর নির্মাণের কাজ।
পসাইডন একা হাতে কাজ সামলাতে পারছিলেন না বলে তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন অ্যাজাইনার মরণশীল রাজা অ্যাকাস। লাওমেডন সমুদ্র দেবতা পসাইডন এবং দেবতা অ্যাপোলোর সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেন যে, দুই দেবতা মিলে যদি ট্রয়ের দুর্ভেদ্য এক প্রাচীর নির্মাণ করে দেন, তাহলে রাজা তাদের বিপুল পারিতোষিকে তুষ্ট করবেন। কিন্তু প্রাচীর নির্মাণের পর শঠতার কালো ছায়ায় আশ্রয় নিলেন লাওমেডন। তিনি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করলেন। ফলে দারুণ ক্ষোভে ফেটে পড়লেন অ্যাপোলো এবং পসাইডন। ক্রুদ্ধ হয়ে অ্যাপোলো পুরো ট্রয়ের মাটিতে মড়ক বিস্তার করে দিলেন। ওদিকে ট্রয়ের ধ্বংস কামনা করে সমুদ্র থেকে 'ট্রোজান সিটাস' নামে বিশালাকার এক দানব পাঠালেন পসাইডন।
লাওমেডন সেই দানব বধের জন্য সৈন্য পাঠালেও আদতে কোনো লাভ হয়নি। ওই দানবের সামনে একমুহূর্তও টিকতে পারেনি লাওমেডনের ফৌজ। দানবটা একে একে নগরবাসীর বাড়িঘর, শস্য, ফসল সবকিছুই ধ্বংস করে ফেলতে লাগল। প্রজাদের জন্য কেঁদে উঠল বিশ্বাসঘাতক লাওমেডনের মন। তিনি মন্দিরে গিয়ে বিষণ্ণ মনে নিজ প্রজাদের জন্য দয়া ভিক্ষা চাইলেন। লাওমেডনের জন্য খানিক দয়া উদয় হলো দেবতাদের মনে। তাই মন্দির থেকে দৈববাণী হলো, প্রতি বছর ট্রয়ের একজন কুমারীকে ওই দানবের কাছে দিয়ে আসতে হবে, তবেই দেবতাদের সন্তুষ্টি মিলবে। এভাবে প্রতি বছর লটারি পরীক্ষার মাধ্যমে বেছে নেয়া হতো একজন কুমারীকে, এবং তাকে উৎসর্গ করে দেয়া হতো ওই সমুদ্র রাক্ষসের নিকট। তবে পসাইডনের সমুদ্রদানব পাঠানোর কাহিনী এটাই একমাত্র নয়। একবার তিনি সমুদ্রদানব পাঠিয়েছিলেন টিওক্রিয়ানদের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে হিয়েরাক্স নামে একজন পসাইডনকে সম্মান করতেন না।
এভাবে গ্রিক পুরাণের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে আছেন পসাইডন। তাকে ছাড়া গ্রিক পুরাণ একপ্রকার অসম্পূর্ণই বলা যায়।
Language: Bangla
Topic: The story of Poseidon
Reference:
2. Poseidon - Greek Mythology.
6. Why is the Olive Tree so Significant - Olive Tree Boutique Tolo.
7. Demeter - Greek Legends and Myths.
8. Amphitrite - Greek Legends and Myths.
9. Medusa - Greek Legends and Myths.
10. Laomedon - Greek Legends and Myths.
11. গ্রিক বীরদের আখ্যান - রজার ল্যান্সলিন গ্রিন, অনুবাদে: মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ ও মারুফ হোসেন, আদী প্রকাশন।
12. গ্রিক মিথলজি - আদি থেকে অন্ত - এস এম নিয়াজ মাওলা - জাগৃতি প্রকাশনী।
Feature Image : Wallpaper Access.