Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিখ্যাত মানুষগুলোর ভূত কোথায় থাকে?

মৃত্যু খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। মানুষ জন্ম নেবে, বেড়ে উঠবে এবং একদিন মৃত্যু হবে। সাধারণ মানুষ কিংবা বিখ্যাত, যা-ই হোক না কেন সবার ক্ষেত্রেই কথাটি সত্যি। বিখ্যাতরা তাদের মৃত্যুর পরও কাজের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকেন আমাদের সবার মাঝে। তবে আজ কথা বলবো এমন সব তারকা এবং বিখ্যাত মানুষদের নিয়ে যারা মৃত্যুর পরও এই পৃথিবীতে কেবল কাজে নয়, রয়ে গেছেন আত্মা কিংবা ভূত হিসেবেও! এখন আপনি তাদের ভূত বলবেন নাকি আত্মা, সত্যি বলে মানবেন নাকি বাজে কথা- সেটা একান্তই আপনার বিষয়!

মেরিলিন মনরো

মেরিলিন মনরোর ভূত এখনও আছে পৃথিবীতে; Source: Parade

লাস্যময়ী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর নাম শোনেননি এমন মানুষ খুব কম আছেন। রূপে অনন্যা বলতে যা বোঝায়, মেরিলিন মনরো এক কথায় তা-ই ছিলেন। তার জীবনটাও ছিল ঘটনাবহুল। নানা রকম টানাপোড়ন আর রকমারি গল্পে মোড়া তার তারকা জীবন। আর তাই হয়তো মৃত্যুর এতদিন পরও এই অভিনেত্রীকে হৃদয়ে ধারণ করেন হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগীরা।

তবে মজার ব্যাপার হলো, মেরিলিন মনরো মারা গেলেও, তিনি কিন্তু আমাদের ছেড়ে একেবারে চলে যাননি। হলিউডের রুজভেল্ট হোটেল, সাধারণত হলিউডের সব তারকাই একবার হলেও এই হোটেলে পা রেখেছেন। তবে অনেকের ধারণা মেরিলিন এখানো সেই হোটেলে রয়ে গেছেন, তার মৃত্যুর পরেও। রুজভেল্ট হোটেলের আয়নায় তাকে দেখা গিয়েছে বেশ কয়েকবার বলে জনশ্রুতি আছে। এছাড়াও হোটেলের ১২০০ নম্বর স্যুইটে হোটেল কর্মচারীরাও দেখেছেন এই সোনালী চুলো অভিনেত্রীকে। নিজের পুরনো ক্যাডিলাক আর ওয়েস্টসাইড মেমোরিয়াল সিমেট্রিতেও কয়েকবার দেখা দিয়েছেন মেরিলিন। উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে মারা যান মেরিলিন মনরো।

আব্রাহাম লিংকন

আব্রাহাম লিংকন এবং হোয়াইট হাউজ; Source: YouTube

আব্রাহাম লিংকন ঠিক সেখানেই আছেন যেখানে সবসময় থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। বলছিলাম আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের কর্মস্থল হোয়াইট হাউজের কথা। আব্রাহাম লিংকন মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। তবু এখনও তার আত্মাকে হোয়াইট হাউজের অলি-গলিতে ঘুরতে দেখা যায়। মজার ব্যাপার হলো, কেবল লিংকন একা নন, আরো অনেক প্রেসিডেন্টকেই নাকি ভূত হয়ে ঘুরতে দেখা যায় হোয়াইট হাউজে। তবে লিংকন যেন একটু বেশিই যাতায়াত করেন এখানে। হোয়াইট হাউজের অতিথি, কর্মচারী থেকে শুরু করে সব রকমের মানুষই কোনো না কোনো এক সময় মুখোমুখি হয়েছেন লিংকনের ভূতের!

লিংকনের ভূতের দর্শনার্থীরা মৃত প্রেসিডেন্টকে দেখে ঠিক কেমন অনুভব করেছিলেন সেটা বলা যায় না। তবে স্যার উইনস্টন চার্চিল বেচারা একেবারেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। নিজের এই অভিজ্ঞতা নিয়ে চার্চিল জানান, তখন তিনি মাত্র গোসল শেষ করেছেন। মুখে একটি চুরুট। পরনে কিছু নেই। আর ঠিক সেই সময়েই আব্রাহাম লিংকনের ভূত তার সামনে এসে দাঁড়ায়। এরপর থেকে আর কখনো লিংকনের শোবার ঘরে থাকতে রাজী হননি চার্চিল।

জন লেনন

একাধারে গায়ক, গীতিকার এবং বিখ্যাত বিটলস ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা জন লেনন যেমন সবার কাছে অনেক বেশি পরিচিত, তেমনি তার ভূতও সবার কাছে পরিচিত। জন লেননের বাড়ি, দ্য ডাকোটা, এমনিতেও দেখতে খুব একটা সুবিধাজনক নয়। বাইরে থেকে দেখলে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বাড়ির ভৌতিকতা পুরোদমে শুরু হয় জন লেননের মৃত্যুর পর।

দ্য ডাকোটার সামনে স্ত্রীকে নিয়ে জন লেনন; Source: FeelNumb.com

মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যান নামক এক ঘাতকের গুলিতে মারা যান লেনন। আর তারপর থেকে তাকে ভূত হিসেবে বাড়িটিতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। কখনো নির্মাণ কর্মী, কখনো পথচারী, আবার কখনো লেননের স্ত্রী ইয়োকো ওনো লেননের ভূতের দেখা পেয়েছেন এমন আরো অনেকেই। এখনো সবার কাছে বেশ ভৌতিক হয়ে আছে দ্য ডাকোটা বাড়িটি।

মার্ক টোয়েন

মার্ক টোয়েন কোনো নির্দিষ্ট বাড়িতে বেশিদিন অবস্থান করেননি। এক অভিশপ্ত বাড়ির ভেতরে অন্যান্য আত্মাদের মতো এক বছর সময় কাটিয়েছেন। বলছিলাম ‘দ্য হাউজ অব ডেথ’ এর কথা। ১৪ ওয়েস্ট, ১০ স্ট্রিটের বাড়িটি নিউ ইয়র্কে অবস্থিত। সেখানে প্রায় ২০টিরও বেশি আত্মাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। তবে তাদের মধ্যে সবচাইতে পরিচিত ভূতটি ছিল হাকেলবেরী ফিন আর টম সয়্যারের জনক মার্ক টোয়েনের।

১৯০০-০১ সাল পর্যন্ত এই বাড়িতেই থাকে মার্ক টোয়েনের ভূত। এর মধ্যে কয়েকবার বাড়ির অন্যান্য বাসিন্দাদের সাথে দেখা হয় তার। যদিও সিঁড়িতে নিজেকে অন্য নামে পরিচয় দিয়েছিলেন টোয়েন বাড়ির আরেক বাসিন্দাকে। ১৯৩০ সালেও একবার তাকে দেখা যায় বাড়িতে আসতে। কে জানে, এখনও হয়তো সেখানেই আছেন তিনি।

এলভিস প্রিসলী

১৯৭৭ সালের কথা। রক এন্ড রোলের অঘোষিত রাজাকে তাড়াহুড়ো করে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। কিন্তু তাতে শেষরক্ষা হলো না। মারা গেলেন এলভিস প্রিসলী। বেঁচে থাকতে নানা রকম রহস্যের খোঁজ দিয়ে গিয়েছিলেন এই গায়ক। ভিনগ্রহবাসী থেকে শুরু করে আরো নানা ব্যাপারে তার মতামতগুলো ছিলো সমালোচিত। কিন্তু তার মৃত্যুতে রহস্য যেন আরো গাঢ় হয়ে ওঠে।

গ্রেসল্যান্ডের এই শিল্পীকে মানুষ তার সর্বশেষ অবস্থান করা বাড়িতে দেখতে শুরু করলো। প্রায় সময়েই সিঁড়ির পাশের জানালায় বসে থাকতে দেখা যেত। মানুষ এক রকম অভ্যস্তই হয়ে পড়েছিলো এলভিস প্রিসলীর ভূতকে গ্রেসল্যান্ডের বাড়ি আর তার কবরের পাশে দেখতে। তবে ঘটনা বেশ প্যাঁচালো হয়ে ওঠে ১৯৮০ সালের ২০ ডিসেম্বর। সেদিন ৫ জন লোক তরুণ এলভিস প্রিসলীর মুখোমুখি হন। তাদের সবার কাছেই আর্মি জ্যাকেট পরা এলভিস গ্রেসল্যান্ড পর্যন্ত লিফট চান। আর সবাই তাকে গাড়িতে লিফটও দেন!

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন

জীবন্ত হয়ে নাচার গুজব আছে বেঞ্জামিনের এই মূর্তির; Source: ivycoach.com

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন জীবনে কী করেননি? জীবদ্দশায় লেখক, আবিষ্কারক, রাজনীতিবিদ সব দিকেই কাজ করেছেন, মৃত্যু এসেছে। তবে তাতেও থেমে থাকেননি বেঞ্জামিন। মৃত্যুর পর পালন করেছেন ভূতের ভূমিকাও!

ফ্রাঙ্কলিন ১৭৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তারপর ফিলাডেলফিয়ায় বার বার তার ভূতকে দেখতে পাওয়া যায়। ১৮৮৪ সালে আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির গ্রন্থাগারের সামনে এক ঝাড়ুদারের সাথে দেখা হয় তার। অবশ্য শুধু যে ভূত হয়ে মানুষের সাথে দেখা করেছেন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন তা কিন্তু নয়। সোসাইটির বিল্ডিঙয়ের সামনে স্থাপিত ফ্রাঙ্কলিনের মূর্তিটিকেও মাঝেমাঝেই জীবন্ত হতে দেখা যায় বলে দাবি করেছেন অনেকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জীবন পেলে মূর্তিটি রাস্তায় নাচতে আরম্ভ করে!

হ্যারি হুডিনি

জাদুকর হ্যারি হুডিনি ছিলেন জাদুকরের চাইতেও অনেক বেশি কিছু। যুগে যুগে তাই অনেক জাদুকর এসেছেন, চলেও গেছেন। কিন্তু হ্যারি হুডিনির মতো একজনকে পৃথিবী এখনও পায়নি। তবে হ্যারি হুডিনি কিন্তু একেবারে চলে যাননি! ঠিক ধরেছেন। আরো অনেকের মতো ভূতের তালিকায় আছে হ্যারি হুডিনির নামও।

জাদু দেখাচ্ছেন জাদুকর হ্যারি হুডিনি; Source: wildabouthoudini.com

১৯২৬ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যু হয় হ্যারি হুডিনির। স্ত্রী বীসকে অসম্ভব ভালোবাসতেন হ্যারি। মৃত্যুর আগে তাই স্ত্রীকে বলে গিয়েছিলেন তিনি, “সম্ভব হলে, আমি কবর থেকে তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবো”। হ্যারির কথা বিশ্বাস করেছিলেন বীস। প্রতি রবিবার অন্ধকার ঘরে বসে হ্যারির জন্য অপেক্ষা করতেন তিনি। না, হ্যারি কখনো আসেননি। একসময় হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দেন বীস। আর ঠিক তক্ষুণি প্রচন্ড জোরে বজ্রপাত হয়। অসম্ভব বাতাসের তোড়ের মাঝেও হ্যারিকে যেন দেখতে পেয়েছিলেন বীস। তবে সেই শেষবার। এরপর বীস হ্যারিকে কখনো দেখতে পাননি। তাতে কী? একবার তো দেখেছিলেন বীস নিজের মৃত ভালোবাসাকে? তাতে তৃপ্ত ছিলেন তিনি। এটুকুতে অবশ্য মন ভরেনি অন্যদের। হ্যারির ভক্তরা এখনো ৩১ ডিসেম্বর অপেক্ষা করে থাকেন। এই হয়তো হ্যারি আবার দেখা দিল!

ফিচার ইমেজ- Bangladeshism Footprint

Related Articles