Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত যত অদ্ভুত গল্প

যুগ যুগ ধরে মানুষ বিভিন্নভাবে পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। একেক ধর্ম বা জাতির মানুষেরা একেকভাবে পৃথিবী ও এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির কাহিনী বর্ণনা করেছে। তার কোনো কোনোটি হয়তো অনেক জনপ্রিয়। যেমন গ্রীক পুরাণ অনুসারে কেয়াস এবং অন্যান্য টাইটানদের মাধ্যমে পৃথিবী সৃষ্টির গল্প আমরা অনেকেই জানি। তবে বিশ্বের বহু দেশ ও জাতির মধ্যে পৃথিবী সৃষ্টির এমন কিছু চমকপ্রদ গল্প প্রচলিত রয়েছে যা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। এসব গল্প যেমন অদ্ভুত, তেমনি মজার। চলুন আজকে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে এমনই কয়েকটি গল্প জেনে নেওয়া যাক।

১. চীন- পূর্ব এশিয়া

বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এসেছেন, ডিম আগে নাকি মুরগী আগে? চীনের পৃথিবী সৃষ্টির গল্প বা উপকথাগুলোতে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। চীনা এই উপকথা অনুসারে, বহু বহু বছর আগে যখন স্বর্গ ও নরক একসাথে যুক্ত ছিল তখন সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একটি ডিমের মধ্যে আবদ্ধ ছিল।

চীনের উপকথা অনুসারে ডিমের মধ্যে আবদ্ধ ছিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড; Source: pinterest.com

মহাবিশ্বের সবকিছু এই ডিমের ভিতরে এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়াতো। ঘুরতে থাকা এসব বস্তুর মধ্যে জন্ম হয় ‘পানগু’ নামের এক অতিকায় ব্যক্তির। দীর্ঘ ১৮,০০০ বছর ধরে সে এই ডিমের মধ্যে ধীরে ধীরে বড় হয়। এ সময় সে ঘুমিয়ে ছিল। এরপর কোনো এক দিন ঘুম ভাঙ্গে পানগুর। ঘুম থেকে উঠে হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙ্গে সে। সেই সাথে ভেঙ্গে ফেলে ডিমের খোলস। ফলে ডিমের ভিতর আবদ্ধ থাকা মহাবিশ্ব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হালকা বস্তুগুলো উপরে উঠে গিয়ে আকাশ ও স্বর্গ তৈরি করে। আর ভারি বস্তুগুলো নিচে নেমে এসে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়।

পানগু, চীনাদের মতে যার থেকে সৃষ্টি সবকিছুর; Source: twitter.com

এ সময় পানগু তার মাথায় স্বর্গ ও পায়ের নিচে পৃথিবীকে রাখে যাতে পৃথিবী ও স্বর্গ আবার এক না হয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতিদিন আকাশ ৩ মিটার করে উপরে উঠে যায়, পৃথিবী ৩ মিটার করে পুরু হয় এবং পানগু ৩ মিটার করে লম্বা হয়। এভাবে আরো ১৮,০০০ বছর ধরে এমনটি চলতে থাকে এবং শেষে পানগু মারা যায়। এরপর পানগুর দেহ থেকে পৃথিবীর সবকিছুর সৃষ্টি হয়। তার হাত-পা থেকে চারদিক ও পাহাড়-পর্বত, রক্ত থেকে নদী, ঘাম থেকে বৃষ্টি, তার গলার স্বর থেকে বজ্র, নিঃশ্বাস থেকে বাতাস, তার দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে নানা প্রাকৃতিক উপাদানের সৃষ্টি হয়। এভাবে পৃথিবী তার সবুজ সুন্দর রূপ পায়। সমস্ত কিছুই শুরু হয় একটি ডিম থেকে। তাই চীনাদের মতে ডিমের অবস্থান শুধু মুরগী না, বরং সবার আগে!

২. কুবা সম্প্রদায়- মধ্য আফ্রিকা

মধ্য আফ্রিকার কুবা সম্প্রদায়ের মধ্যে পৃথিবী সৃষ্টি নিয়ে মজার একটি উপকথা প্রচলিত রয়েছে। তাদের মতে, পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল বমন প্রক্রিয়ায়। তাদের সৃষ্টির দেবতার নাম হলো ‘এমবম্বো’। সবকিছুর শুরুতে গোটা পৃথিবী ডুবে ছিল অন্ধকার আদিম জলে। এই অন্ধকার জলে পা ডুবিয়ে বসে ছিলেন এমবম্বো। হঠাৎ তার গা গুলিয়ে উঠলো এবং তিনি বমি করলেন। বমির ফলে তার পেট থেকে বের হয়ে এলো চন্দ্র, সূর্য ও সব তারা। বের হয়ে আসা সূর্যের তাপে ধীরে ধীরে বাষ্প হয়ে যেতে লাগলো সব জল। দেখতে দেখতে শুকনো ডাঙ্গা ভেসে উঠলো এবং ঘন বাষ্পে সৃষ্টি হলো মেঘ।

এমবম্বো; Source: deviantart.com

এরপর এমবম্বোর শরীরটা আবার কেমন যেন গুলিয়ে উঠলো। আবার বমি করলেন তিনি। এবার তার পেট থেকে বের হলো ৯টি প্রাণী ও মানুষ। এই ৯টি প্রাণী অন্যান্য নানা প্রাণীর সৃষ্টি করলো। এবার এমবম্বোর ৩ ছেলে ঠিক করলো তারাও সৃষ্টির এই কাজে হাত লাগাবে। তারা সৃষ্টি করলো পিঁপড়া, গাছপালা এবং পাখি। সবশেষে এমবম্বো কীভাবে আলো ও আগুন জ্বালাতে হয় তা মানুষকে শিখিয়ে দিলো। এরপর সবকিছু দেখে খুশি হয়ে সব কাজ থেকে অবসর নিয়ে স্বর্গে চলে গেলো এমবম্বো!

৩. চিরোকী- উত্তর আমেরিকা

সাধারণত পৃথিবী সৃষ্টির বেশিরভাগ গল্পেরই শুরু হয় কোনো দেবতা কিংবা শক্তিশালী কারো দ্বারা। কিন্তু উত্তর আমেরিকার ‘চিরোকী ইন্ডিয়ানরা’ বিশ্বাস করে সবকিছুর শুরু হয়েছিল একটি পোকা থেকে! তাদের উপকথা অনুসারে প্রাণীরা বাস করতো আকাশের এক স্বর্গীয় রাজ্যে। নিচ দিয়ে তার বয়ে চলতো এক বিশাল সমুদ্র। একবার ডায়ুনিসি (Dâyuni’sï) নামের এক পানির পোকা ঠিক করলো ডুব দিয়ে পানির নিচে কী আছে তা দেখে আসবে। যেই ভাবা সেই কাজ! পানির তলদেশে গিয়ে সে দেখলো সেখানে রয়েছে শুধু নরম কাদা। সে এই নরম কাদা নিয়ে উপরে উঠে এলো। পানির উপরে এসে সেই কাদা সবদিক দিয়ে বেড়ে পৃথিবীর রূপ নিলো।

চিরোকীদের মতে পানির এই পোকার মাধ্যমেই পৃথিবীর সৃষ্টি; Source: cgsociety.org

নতুন সৃষ্টি হওয়া এই পৃথিবী দেখে আকাশ থেকে সব পশুপাখি পৃথিবীতে বাস করতে এলো। কিন্তু তার আগে বসবাসযোগ্য করার জন্য তারা পৃথিবীতে এক বিশাল বাজপাখি পাঠালো। এই বাজপাখির পায়ের নখের আঘাতে নরম মাটির কিছু কিছু জায়গা আচড়িয়ে গেলো। ফলে তৈরি হলো পাহাড়-পর্বত। এই কাদা শুকালে সবাই আসলো পৃথিবীতে বসবাস করতে। তবে তখনো সবকিছু ছিল অন্ধকার। তাই তারা উপর থেকে সূর্যকে পৃথিবীর কাছে নিয়ে আসলো। ফলে বসবাসযোগ্য হলো পৃথিবী!

৪. আদিবাসী সম্প্রদায়- অস্ট্রেলিয়া

আমাদের মধ্যে প্রায় সকলেই সাপকে ভয় পায়। তবে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কাছে এই সাপই হলো সৃষ্টির দেবতা। তাদের উপকথা অনুসারে সবকিছুর শুরুতে পৃথিবী ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমের মধ্যে এক স্বপ্নরাজ্যে আটকিয়ে ছিল পৃথিবী। এ সময় সবকিছু ছিল শূন্য ও ঠান্ডা। ঠিক এই সময় মাটির নিচে শুধু একটি প্রাণী জেগে ছিল। আর তা হলো রংধনু সাপ। এই সাপের পেটের মধ্যে ছিল সব প্রাণী ও বিভিন্ন গোত্র। উপযুক্ত সময়ে এই সাপ উপরে উঠে আসে ও অনুর্বর পৃথিবী সৃষ্টি করে।

অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের রঙধনু সাপ; Source: artinvesta.com

এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন উপাদান তৈরি করে সে। একসময় পেট থেকে সব প্রাণীদেরকে পৃথিবীতে বের করে দেয় সাপটি এবং নজর রাখতে থাকে তাদের উপর। যারা সাপটির কথা মেনে চলে তাদেরকে সে মানুষের রূপ দেয়। আর যারা তার কথা অমান্য করে তাদেরকে সে পরিণত করে পাথরে। তবে এত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা হবে কিভাবে? তার এক উপায় বের করে সাপটি। সে প্রতিটি গোত্রের মানুষকে একেকটি নির্দিষ্ট প্রাণীর পূজা করার নির্দেশ দেয়। একেক গোত্রের পূজনীয় প্রাণীটি ওই গোত্রের মানুষেরা শিকার করতে পারবে না, কিন্তু অন্য গোত্রের মানুষেরা শিকার করতে পারবে। ফলে সবার জন্যই পরিমিত খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের মতে এভাবেই গড়ে উঠেছিল পৃথিবী।

৫. জাপান- পূর্ব এশিয়া

জাপানে প্রচলিত সৃষ্টির উপকথাগুলোর প্রধান বিষয়বস্তু হলো মিলন ও জন্ম। তাদের উপকথা অনুসারে মহাবিশ্বের শুরুতে সবকিছু আকারহীন বস্তুতে নিমজ্জিত ছিল। চারিদিকে ছিল নিস্তব্ধতা। এই অবস্থা থেকে জন্ম নেয় পদার্থ ও সময়। আর তা থেকে সৃষ্টি হয় স্বর্গ ও বিভিন্ন দেবতার।

ইজানামি ও ইজানাগী; Source: wikimedia.org

এ সময় ৫ জোড়া দেব-দেবীর জন্ম হয়। এদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ জোড় ‘ইজানামি’  ‘ইজানাগী’-কে সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচিত করা হয়। তারা একটি বর্শার সাহায্যে মহাজাগতিক বস্তু থেকে কয়েকটি দ্বীপ তৈরি করেন এবং এমনই একটি দ্বীপে মিলিত হন। এরপর ইজানামি সকল জাপানী দ্বীপ ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র দেব-দেবীর জন্ম দেন। এভাবে গড়ে ওঠে পৃথিবী!

ফিচার ইমেজ – pinterest.se

Related Articles