Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর ৮টি সাপের ইতিবৃত্ত

সাপ, নিরীহ একটি প্রাণী, কিন্তু একই সাথে ভয়াবহ। এদের তীক্ষ্ণ সংবেদনশীলতা, উগ্রতা, দ্রুততা আর বিষাক্ততার জন্যে নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক প্রাণীগুলোর তালিকায় একে রাখতেই হবে। তবে সব সাপ আবার সমান বিপদজনক নয়। বিষের কার্যক্ষমতার উপর ভিত্তি করে এদের ভয়াবহতায় আছে কম-বেশি। বিভিন্ন বিষধর সাপের কামড়ে প্রতি বছরই সমগ্র বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষ মারা যায় শুধু সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে। কিছু সাপের বিষ আবার এতোটাই ভয়াবহ যে চিকিৎসা নেবার মতো সময় পাবার আগেই মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আজ আমরা জানবো বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর ও ভয়াবহ ৮টি সাপের কথা।

বেচলার’স সি স্নেক

বেচলার’স সি স্নেক : ghadinews.com

বেচলার’স সি স্নেক একটি সামুদ্রিক সাপ। অন্যান্য সামুদ্রিক সাপের মতোই এদের সাঁতার কাটার জন্যে পেডেলের মতো লেজ আছে। এরা ফুসফুস দিয়ে শ্বাস নেয়। শিকার অথবা ঘুমের প্রয়োজনে এরা ৭/৮ ঘন্টা অবধি শ্বাস চেপে পানির নিচে কাটাতে পারে। কিন্তু শ্বাস নেবার জন্যে এদের পানির উপরে ভেসে উঠতে হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ বলা যায় একে এদের। এর মাত্র দুই মিলিগ্রাম বিষ ১০০০ মানুষ মারার মতো ক্ষমতা রাখে। তবে এদের কামড়ের চারভাগের একভাগেই মানুষ মারার মতো যথেষ্ট পরিমাণ বিষ থাকে।

যদিও এরা স্বভাবে নিরীহ, কিন্তু সমুদ্রে বিচরণকারী জেলেদের জন্যে এরা সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। প্রায়ই এরা জেলেদের জালে ধরা পড়ে আর তখই হয় বিপদ। যদিও এদের কামড়ে ব্যাথা হয় না, কিন্তু কামড়ের সাথে নিউরোটক্সিন শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে মানুষ তার অনুভূতি হারাতে থাকে। নিউরোটক্সিন হলো স্নায়ুতন্ত্রকে অবশকারী বিষ। এভাবেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আর উত্তর অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রে এদের দেখা মেলে।

ইনল্যান্ড তাইপান

ইনল্যান্ড তাইপান : pinterest.com

বিষধর সাপদের গডফাদার বলা যায় এদের। এরা ‘ওয়েস্টার্ণ তাইপান’, ‘ছোট আঁশওয়ালা সাপ’ এবং ‘হিংস্র সাপ’ নামেও পরিচিত। আবাসভূমি অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসিরা এদের ডাকে ‘ড্যান্ডারাবিলা’। এদের বিষের ১১ মিলিগ্রাম ১০০ জন মানুষ হত্যা করতে যথেষ্ট। পরিণত বয়সের একজন মানুষ মারতে সক্ষম যেকোনো সাপের তুলনায় এরা দশগুণ বেশি বিষধর। এদের কামড়ের ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু নিশ্চিত।

এরা খুবই দ্রুতগামী। অতিশয় দ্রুততা ও সূক্ষ্মতার সাথে এরা এরা শিকারকে আঘাত করতে পারে। অনেক সময় একই লক্ষ্যবস্তুকে এরা বারবার আঘাত করে। এ থেকেই বোঝা যায় এদের হিংস্রতা। তবে সাধারণ সাপের মতোই এরা শান্ত ও মুখচোরা ধরনের। এরা ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চায়। তবে উত্ত্যক্ত বোধ করলে বা পালাবার পথ খুঁজে না পেলে ভয়ানক হয়ে ওঠে।

ব্ল্যাক মাম্বা

ব্ল্যাক মাম্বা : twitter.com

আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে খুঁজে পাওয়া ব্ল্যাক মাম্বা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী স্থল সাপ। এরা ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগে চলতে পারে। এরা অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক এবং খুব দ্রুততার সাথে আক্রমণ করতে পারে। লক্ষ্যবস্তুকে একটানা ১২ বার পর্যন্তও এরা আঘাত করতে পারে। এদের সাধারণ একটা কামড় এরা ১০-২৫ জন মানুষ হত্যা করতে পারে। একেকটি কামড়ে এরা ১০০-১২০ মিলিগ্রাম বিষ শিকারের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়।

এদের বিষ অতি দ্রুত কাজ করা নিউরোটক্সিন। ব্ল্যাক মাম্বার ০.২৫% বিষ মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করলেই মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির মুখমন্ডলের পেশীতে তীব্র খিঁচুনি অনুভূত হয়। এছাড়া উচ্চ তাপমাত্রা, দৃষ্টিবিভ্রম, মাংসপেশীর উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো ও নাক ও মুখ দিয়ে ফেনা ওঠা আক্রান্ত হবার প্রাথমিক লক্ষণ। দ্রুত চিকিৎসা না দিলে বিষ রেচনতন্ত্র ও হৃৎপিণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র পেট ব্যাথা ও বমির সাথে সাথে আক্রান্ত ব্যক্তি ক্রমশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

টাইগার স্নেক

টাইগার স্নেক : nanozine.org

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, উপকূলীয় দ্বীপসমূহ ও তাসমানিয়ায় বাস করা এই সাপের বিষ অতি ক্ষমতাধর। ৩০ মিনিটের মধ্যে এদের বিষে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত এদের বিষে মানুষের মৃত্যুর হার ছিল ৭০%। আক্রান্ত হবার লক্ষণের মধ্যে আছে পায়ে ও গলায় ব্যাথা, খিঁচুনি, অসাড়ভাব এবং ঘাম হওয়া। ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং ব্যক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। উষ্ণ রাতে সাধারণত এরা শিকারে বেশি সক্রিয় হয়। আক্রমণের সম্মুখীন হলে এরা দেহ প্রসারিত করে ফনা তুলে ফেলে। এরা ২ মিটার অবধি লম্বা হতে পারে। দেহে বাঘের মতো সোনালী হলুদ ডোরা থাকায় এদের টাইগার স্নেক নামে ডাকা হয়।

র‍্যাটল সাপ

র‍্যাটল স্নেক : satujam.com

সবচেয়ে বিষধর সাপদের তালিকায় আমেরিকান একটি সাপেরই নাম আছে, র‍্যাটল সাপ। আমেরিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম কানাডা ও মধ্য আর্জেন্টিনায় এদের দেখা মেলে। আমেরিকার টেক্সাস ও আরিজোয়ানায় এদের বেশি পাওয়া যায়। উন্মুক্ত, পাথুরে জায়গায় এদের বসবাস বেশি। পাথুরে পরিবেশ এদের প্রতিরক্ষায় সাহায্য করে এবং শিকারের প্রাচুর্য প্রদান করে। এদের লেজের অগ্রভাগে যে ঝনঝন করা অংশটি আছে, সেটির কারণেই এদের নাম র‍্যাটল।

এরা পিট ভাইপার সর্প পরিবারেরই একটি অংশ। র‍্যাটল সাপের চোখে অধিক পরিমাণ রড কোষ থাকায় অন্ধকারে এরা ভালো দেখতে পারে। তবে এরা পুরদস্তুর নিশাচর নয়। দিনের আলোয় এরা আরও তীব্র দৃষ্টির অধিকারী। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় তরুণ র‍্যাটলরা বেশি বিপদজনক। এদের বিষ হেমোটক্সিক, অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধাতে সক্ষম। বিষ শরীরে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্ত জমাট বেঁধে যায়, টিস্যু ও অঙ্গ একে একে নিষ্ক্রিয় হতে থাকে। দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত না করলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অবধারিত। ঠিক সময়ে প্রতিষেধক শরীরে প্রবেশ করালে মৃত্যুহার ৪% পর্যন্ত নেমে আসে।

ভাইপার

ভাইপার : d2s.vn

বিষধর সাপের তালিকায় ভাইপার অতি পরিচিত একটি নাম। সমগ্র বিশ্বজুড়েই এদের পাওয়া যায়, তবে বিশেষ করে ভারত, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের দেখা মেলে বেশি। ভাইপাররা রগচটা স্বভাবের। এরা নিশাচর এবং সাধারণত বৃষ্টির পর ভেজা পরিবেশে বেশি সক্রিয়। ভাইপারের বিষ হেমোটক্সিক। হেমোটক্সিক বিষ নিউরোটক্সিক বিষের তুলনায় বেশি সময় নেয় শিকারকে কাবু করতে।

ভাইপারের উপরের মাড়িতে দু’টি অপেক্ষাকৃত বড় আকারের বিষদাঁত থাকে, যাদের কাজই হলো বিষ শিকারের দেহে প্রবেশ নিশ্চিত করা। এদের কামড়ের প্রাথমিক যে লক্ষণসমূহ দেখা যায়, তার মধ্যে আছে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া এবং রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন নেমে যাওয়া, বমি এবং চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া। এছাড়া কামড়ের স্থানে ফোস্কা পড়ে যাওয়া সাধারণ ব্যাপার। চেহারার ফুলে ওঠা অংশের রঙ পরিবর্তিত হয়ে যায়। লোহিত রক্ত কণিকা ও লসিকা মাংসপেশীর টিস্যু ভেদ করে ঢুকে পড়ে। রক্তে বিষক্রিয়াজনিত কারণে কিংবা শ্বসনতন্ত্র ও হৃদযন্ত্র অকেজো হয়ে ১৪ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্রির মৃত্যু ঘটে।

অ্যাডার

অ্যাডার : newsqrio.com

অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ গিনি এই সাপের আবাসস্থল। সাক্ষাৎ যমদূতের মতো ভয়ানক দর্শন এই সাপের প্রধান খাদ্য অন্যান্য সাপ। এর খাদ্য তালিকায় আমাদের তালিকার অন্যান্য বিষধর সাপগুলোও আছে। এরা দেখতে অনেকটা ভাইপারের মতোই, ছোট্ট দেহ ও তিনকোণা মাথা।

অ্যাডারের কামড় পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক কামড়গুলোর মধ্যে একটি, কারণ এদের বিষ নিউরোটক্সিক। অর্থাৎ বিষ ক্রিয়া করে সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রে। দংশিত ব্যক্তির দেহ ৬ ঘন্টার মধ্যে পুরোপুরি অবশ হয়ে যায় এবং শ্বসনতন্ত্র অকেজো হয়ে ব্যক্তি মারা যায়। অ্যাডার এক কামড়ে ৪০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম বিষ শিকারের দেহে প্রবেশ করাতে পারে। অ্যাডার খুব দ্রুত শিকারে আঘাত করার ক্ষমতা রাখে। এরা দেহ প্রসারিত করে ০.১৩ সেকেন্ডের মধ্যে শিকারের দেহে আঘাত করে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। অ্যাডারের দংশনে মৃত্যুর হার ৫০%। তবে এদের বিষের প্রতিষেধক খুব কার্যকরী। ঠিক সময়ে চিকিৎসা দিতে পারলে আক্রান্ত মানুষটি বেঁচে যেতে পারে।

কিং কোবরা

কিং কোবরা : cityhanground.com

ভারতীয় কিং কোবরার নামের সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। বাংলাদেশ, ভারত, ভূটান, চীন, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, এক কথায় সমগ্র এশিয়া জুড়েই এদের বিস্তৃতি। এরা পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা দেহের অধিকারী বিষধর সাপ। এরা ১৮.৮ ফুট অবধি লম্বা হতে পারে। ওজনে এরা ১২ কেজির উপরেও হতে পারে।

অন্যান্য কোবরার থেকে কিং কোবরা কিঞ্চিৎ আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এরা খন্ডিত জিভের সাহায্যে কেমিক্যাল ইনফরমেশন গ্রহণ করে ও শিকারের জন্য সিগন্যাল এদের স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরিত হয়। ১০০ মিটার দূর থেকেও এরা শিকারের নড়াচড়া টের পায়। যেকোনো নড়াচড়ার প্রতি এরা অতি দ্রুত সংবেদনশীল। উত্যক্ত করা হলে কিং কোবরা রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। তখন এরা শরীরের এক তৃতীয়াংশ মাটি থেকে উপরে তুলে ফেলে এবং ফনা তুলে হিসহিস শব্দ করতে থাকে। এই অবস্থাতেই এরা শিকারের দিকে ধেয়ে যেতে পারে।

এক আঘাতে কিং কোবরা কয়েকবার দংশন করতে পারে। এদের বিষ নিউরোটক্সিক। বিষ ক্রিয়া করতে শুরু করলে ঘুম ঘুম ভাব হয়, আস্তে আস্তে শরীর অবশ হয়ে আসে। ধীরে ধীরে ব্যক্তি কোমায় চলে যায়। এরপর শ্বসনতন্ত্র ও হৃদপেশী অকেজো হয়ে ব্যক্তি মারা যায়। এদের কামড়ে মৃত্যুর হার ২৮%। সময়মতো চিকিৎসা পেলে আক্রান্ত মানুষটি বেঁচে যেতে পারে। উপমহাদেশের লোককথায় কিং কোবরা নিয়ে অনেক রুপকথা প্রচলিত আছে।

বিপদজনক হলেও অন্যান্য প্রানীদের মতোই সাপ আমাদের পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য প্রানীবৈচিত্রের একটি অংশ। প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা জুড়ে সর্প সম্প্রদায় বিদ্যমান। তাই একইসাথে এদের সংরক্ষণ ও এদের থেকে সাবধানতা অবলম্বন দুটোই সমান জরুরী।

তথ্যসূত্র

১) listverse.com/2011/03/30/top-10-most-venomous-snakes/

২) wisetoast.com/top-10-most-poisonous-snakes-on-earth/

৩) reptilesmagazine.com/Snakes/Wild-Snakes/ The-Worlds-Deadliest-Snakes/

৪) en.wikipedia.org/wiki/Inland_taipan

৫) en.wikipedia.org/wiki/Hydrophis_belcheri

৬) en.wikipedia.org/wiki/Tiger_snake

৭) wikipedia.org/wiki/Rattlesnake

৮) en.wikipedia.org/wiki/King_cobra

Related Articles