Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অদ্ভুত সব গাছের কথা

আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে কত ধরনের গাছই না দেখি। কোনো গাছ ফুল দেয়, কোনোটা ফল, আবার কোনোটা শুধুই প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধন করে। আমরা যেমন দেশীয় আম, জাম, কাঁঠাল দেখতে অভ্যস্ত, তেমনি রডোডেনড্রন, ক্রিসমাস ট্রি, স্প্রুস ইত্যাদি বিদেশি গাছগুলো সম্পর্কেও আমরা কম-বেশি জানি।

কিন্তু দিভি দিভি, বাওবাব- এদের কি আমরা ভালো করে চিনি? কেউ বারো মাসই বাঁকা, কেউ গিট পাকানো, কারও আবার পেটের মধ্যে টানেল। পৃথিবীজুড়ে এ ধরনের অদ্ভুত সব গাছের সন্ধান পাওয়া যায়, যাদের আকৃতি, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অন্য সব গাছ থেকে ভিন্ন। তেমনি কিছু গাছ সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করবো আমরা।

দিভি দিভি, আরুবা

দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরে অবস্থিত আরুবাতে এই গাছগুলো বেশি দেখা যোয়। ওখানকার স্থানীয় ভাষায় এদের বলা হয়ে থাকে ‘ওয়াটাপানা’। আরুবা, বোনাইরে এবং কুরাকো দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ এই দিভি দিভি গাছ। এই দ্বীপাঞ্চলে আসা পর্যটকদের টি-শার্ট, টুপি, নানা উপহার সামগ্রীতে এই গাছের ছবি হরহামেশাই দেখতে পাওয়া যায়। 

দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরের আরুবা অঞ্চলে দেখা যায় দিভি দিভি গাছ; Image source: Fine Art America

গাছগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই গাছগুলো সবসময় দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হেলে থাকে। কিন্তু ওরা ওরকম একদিকে বেঁকে থাকে কেন? জানা যায়, উত্তর-পূর্ব দিক থেকে এসব দ্বীপে প্রতিনিয়ত তীব্র বাতাস বয়। সে কারণে ঐ বায়ুর ধাক্কা খেতে খেতে এই গাছগুলো এমন বাঁকা হতে থাকে। কিন্তু বাঁকা বলে ওরা মোটেও বেঁটে নয়? এই গাছগুলো প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

দ্য সানল্যান্ড বাওবাব, দক্ষিণ আফ্রিকা

এই গাছটির আবাসস্থল দক্ষিণ আফ্রিকার মোডজাদাসক্লুফ অঞ্চলে। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাওবাব বৃক্ষ। এর বয়স প্রায় ১৭০০ বছর। ১৫৪ ফুট লম্বা এই গাছের মাঝখানে গভীর ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে, আর এটি তৈরি হতে সময় লেগেছে প্রায় ১০০ বছর। গাছটির পেটের মধ্যে এতটা ফাঁকা জায়গা আছে যে, সেখানে একসময় একটা বার তৈরি করে ফেলা হয়েছিল। এই বারে প্রায় ৬০ জন লোক একসাথে বসার ব্যবস্থা ছিল। তবে ২০১৬ সালের এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই গাছের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। গাছের অনেক বড় শাখা-প্রশাখা ভেঙে পড়ে। ফলে বারটি বন্ধ করে দিতে হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার মোডজাদাসক্লুফ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ বাওবাব গাছ এই সানল্যান্ড বাওবাব ট্রি; Image source: travelever.com

টেট্রামেলেস নুডিফ্লোরাস, কম্বোডিয়া

বিশ্বের মানুষের কাছে গাছটি সিল্ক কটন ট্রি হিসেবে বেশি পরিচিত। বহু প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী এই গাছ। কম্বোডিয়ার সিয়েম রিপ প্রদেশের প্রাচীন অ্যাংকর নগরীর এক অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন প্রোম মন্দিরকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বেড়ে উঠেছে এই ৭০ ফুট উচ্চতার গাছটি। গাছটির শরীর থেকে বের হয়ে আসা বিশাল শিকড়গুলো মন্দিরে গাঁ বেয়ে মন্দির প্রাঙ্গনের প্রায় ৩৫ ফুট জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। গাছটির মোটা শিকড়গুলো এমনভাবে মন্দিরকে জড়িয়ে রেখেছে যে, দেখে মনে হবে কোনো অভিশপ্ত প্রাণী মন্দিরটিকে গিলে নিচ্ছে।

প্রোম মন্দিরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা সিল্ক কটন ট্রি; Image source: allthatsinteresting.com

ফ্লোটিং ট্রি, ওরেগন

ওরেগনের ক্রেটার লেকের প্রধান আকর্ষণ ৩০ ফুট উচ্চতার একটি ফ্লোটিং ট্রি। এই লেকের সবচেয়ে পুরনো সদস্য হিসেবে গাছটিকে ‘ওল্ড ম্যান অফ দ্য লেক’ও বলা হয়। গাছটির শুধুমাত্র চার ফুটের মতো অংশ জলের উপরে দেখতে পাওয়া যায়। গাছের জলের তলার অংশে মসেরা বাসা বেঁধেছে। লেকের জল পরিষ্কার বলে সেই অংশটুকুও স্পষ্ট দেখা যায়।

ওরেগনের ক্রেটার লেকে বেড়ে ওঠা ফ্লোটিং ট্রি; Image source: sciencealert.com

গাছটির বয়স প্রায় এক হাজার বছরেরও বেশি। ১৮৯৬ সালে ভূতাত্ত্বিক জোসেফ ডিলার প্রথম গাছটির সন্ধান দেন। এই বিজ্ঞানী গাছটি নিয়ে বহু বছর ধরে গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণায় তিনি দেখেন, প্রতি তিন মাসে গাছটি ৬২.১ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে। এদিকে গাছটিকে যখন লেক থেকে তুলে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তখন কিন্তু গাছটি একটুও সরেনি।

বাওবাব প্রিজন ট্রি, অস্ট্রেলিয়া

গাছটি রয়েছে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ডার্বি শহরে। গাছটি লম্বায় প্রায় ১২ মিটার, আর এর মাঝখানে প্রায় ৫ মিটার ব্যাসের ফাঁকা জায়গা আছে। কিংবদন্তী রয়েছে, ১৮৯০ সালে অপরাধীদের এই গাছের কোটরে বন্দি করে রাখা হতো। সেই থেকে এই গাছের নাম হয়ে যায় ‘প্রিজন ট্রি’। তবে এখন আর সেখানে বন্দিদের আটকে রাখা হয় না। এখন গাছটি ট্যুরিস্টদের জন্য সংরক্ষণ করা রয়েছে।

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ডার্বি শহরে অবস্থিত বাওব প্রিজন ট্রি; Image source: mentalfloss.com

সার্কাস ট্রি, ক্যালিফোর্নিয়া

১৯৪৭ সালে একজন সুইডিশ-আমেরিকান কৃষক এক্সেল আর্লেন্ডসন পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য তার রোপনকৃত গাছগুলোর বিভিন্ন আকৃতি দিতে শুরু করেন। জীবিত গাছের ওপর নানা রকম শিল্পকর্ম নির্মাণে তিনি দক্ষ ছিলেন এবং এ নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতেন। যখন তিনি তার ৬০-৭০টি জীবিত গাছে এমন শিল্পকর্ম তৈরিতে সক্ষম হলেন, তখন তিনি সেসব গাছগুলোকে নিজের খামার থেকে তুলে এনে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তাক্রুজ অঞ্চলে রোপন করেন এবং তার সেসব শিল্পকর্ম দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। আর্লেন্ডসন তার এই গাছের নামকরণ করেন ‘সার্কাস ট্রি’ নামে।

এক্সেল আর্লেন্ডসনের হাতের নান্দনিক শিল্পমন্ডিত গাছগুলো সার্কাস ট্রি হিসেবে খ্যাত; Image source: mentalfloss.com

তার এই শিল্পকর্ম সেসময় লাইফ ম্যাগাজিন এবং ‘রিপ্লি’স বিলিভ ইট অর নট’ এ জায়গা করে নিয়েছিল। ফলে দূর-দুরান্ত থেকে তার এই শিল্পকর্ম দেখতে পর্যটকদের আগমন ঘটতে থাকে। আর্লেন্ডসন অনেকের কাছে এই গাছ বিক্রি করাও শুরু করেন। কিন্তু ১৯৬৪ সালে হঠাৎই তিনি মারা গেলে তার এই শিল্পকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। তিনি কীভাবে জীবিত গাছের ওপর তার এই শিল্পকর্মটি করতেন তা জানিয়ে যাননি। জীবিত গাছের ওপর তার সেই সব শিল্পকর্ম আজও ক্যালিফোর্নিয়ার গেলোরি থিম পার্কের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে রয়ে গেছে।

বর্মিজ ট্রি, কানাডা

লিম্বার পাইন প্রজাতির এই গাছটি রয়েছে কানাডার দক্ষিণ-পশ্চিম আলবার্টায় ক্রাউনেস্ট হাইওয়ের ধারে। এই গাছ ১৯৭৮ সালে মারা গিয়েছে। ৪০ বছরের কাছাকাছি হতে চললো, তারপরও একইভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাছটি। শোনা যায়, গাছটি যখন মারা যায়, তখন তার বয়স ছিল প্রায় ৭৫০ বছর। অনেকে একে ভৌতিক গাছও বলে থাকেন। রাতের বেলা হাইওয়ের পাশে পাতাহীন এরকম একটি গাছকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে কারই বা ভয় করবে না?

কানাডার দক্ষিণ-পশ্চিম আলবার্টায় ক্রাউনেস্ট হাইওয়ের ধারে মরেও নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছে বর্মিজ ট্রি; Image source: atlasobscura.com

বটল ট্রি, নামিবিয়া

এই ধরনের গাছ সাধারণত নামিবিয়ার সেমি ডেজার্ট অঞ্চলে জন্মাতে দেখা যায়। এই গাছে কোনো পাতা জন্মায় না, সবই কাঁটা! আর একেকটা কাঁটা প্রায় ৩০ সে.মি. লম্বা। এই গাছ থেকে একধরনের জলীয় ল্যাটেক্স বের হয়, যা খুব বিষাক্ত। স্থানীয় লোকেরা এই আঠা সংগ্রহ করে রাখে এবং কোনো শিকার ধরার সময় তীরের মুখে সেই আঠা লাগিয়ে তারা শিকার করে।

নামিবিয়ার সেমি ডেজার্ট অঞ্চলে জন্মাতে দেখা যায় বটল ট্রি নামক গাছটি; Image source: wofford.edu

দ্য ট্যুলে ট্রি, মেক্সিকো

মেক্সিকোর ওয়াহাকা রাজ্যের সান্তা মারিয়া দেল ট্যুলে শহরের এক গির্জার সামনে এই গাছটি রয়েছে। গাছটি প্রায় ১৫০০ বছরের পুরনো। এটি ৩৫.৪ মিটার দীর্ঘ এবং এর ব্যাস ১১.৬২ মিটার। বিশ্বের সবচেয়ে স্থূলকায় কান্ডের অধিকারী এই গাছ। গাছটির কান্ড এতটাই বিস্তৃত যে গাছটি একাধিক গাছের সমষ্টি বলে অনেকেই ভাবতেন। তবে বিজ্ঞানীরা পরবর্তীকালে পরীক্ষা করে দেখেন যে, এটি শুধু একটি গাছই। একক গাছ থেকে গঠিত একাধিক কান্ডের সমষ্টি এই ট্যুলে ট্রি।

মেক্সিকোর ওয়াহাকা রাজ্যের সান্তা মারিয়া দেল ট্যুলে শহরে অবস্থিত দ্য ট্যুলে ট্রি; Image source: horsebackmexico.com

এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে বিল্ডিং ইটিং ট্রি। এই গাছগুলো বাড়ির উপরে গজিয়ে বাড়ির মধ্যে শিকড় ছড়িয়ে দেয়। স্কয়্যার নট ট্রির ডাল দুটো দেখতে গিঁট পাকানো। এরকম কত যে বিচিত্র দেখতে গাছ পৃথিবীতে রয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।

ফিচার ইমেজ- visitmexico.com

Related Articles