ডাইনোসরদের কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?

ডাইনোসর নিয়ে নির্মিত সিনেমা অনেকেই দেখে থাকবে। সেসব দেখতে অনেকেরই ভালো লাগে। দেখতে দেখতে হয়তো ভাবনা আসে, এত প্রভাবশালী প্রাণীগুষ্ঠি, এদের প্রায় সকলেই এখন বিলুপ্ত। এককালে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছে কিন্তু এদের কাউকে আমরা দেখতে পাই না। কেমন হতো যদি নিজ চোখে সেসব ডাইনোসর দেখা যেত!

ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে আজ থেকে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে। তাহলে ডাইনোসরদের দেখা সম্ভব হবে না? কোনো উপায়ে কি ডাইনোসরদের আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা যাবে না? বিজ্ঞান কী বলে?

বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কোনো প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার পদ্ধতি হচ্ছে ক্লোনিং। এছাড়াও রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমেও ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। ক্লোনিং করতে হলে অবশ্যই ডাইনোসরের ডিএনএ লাগবে। সম্পূর্ণ ডিএনএ পাওয়া গেলে বিজ্ঞানীরা সেই প্রাণীকে নতুন করে ফিরিয়ে আনতে পারবেন। কিন্তু ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া ডাইনোসরেদের ডিএনএ কি আদৌ পাওয়া সম্ভব? হয়তো সম্ভব, নয়তো না। ডিএনএ পাওয়া গেলে আবারো হয়তো পৃথিবীর বুকে দেখা যাবে ডাইনোসরদের। না পাওয়া গেলে তো আর সম্ভব না।

জুরাসিক পার্ক সিনেমা অনেকেই দেখেছে। এ সিনেমায় দেখা যায়, অ্যাম্বার পাথরে কয়েক কোটি বছর আগে আটকে যাওয়া একটি মশা খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। মশাটি কোনো এক ডাইনোসরের রক্ত খেয়েছিল। আর সেই মশা থেকে বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের ডিএনএ সংগ্রহ করেন। এরপর সেই ডিএনএ থেকে জন্ম দেন নতুন ডাইনোসরের। সিনেমার মতো করে বাস্তবে কি এরকম মশা, মাছি বা অন্যান্য প্রাণী থেকে ডাইনোসরের রক্ত/ডিএনএ পাওয়া সম্ভব? 

গাছ থেকে নিঃসৃত অ্যাম্বারে আটকে থাকতে পারে মশার মমি; Image Source: Dietmar Down Under/Flickr 

অ্যাম্বার হচ্ছে বিশেষ গাছ নিঃসৃত আঠালো পদার্থ। এই আঠালো পদার্থে কোনো ছোট পতঙ্গ বা প্রাণী আটকে গেলে সময়ের বিবর্তনে সেটি মমিতে পরিণত হয়। ফলে তার দেহে যদি রক্ত অবশিষ্ট থাকে তাহলে সেই রক্তে ডাইনোসরের ডিএনএ ভালো থাকলেও থাকতে পারে। অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা যদি এই সময়ে এসে প্রাচীন যুগের সেই অ্যাম্বার খুঁজে পান আর তাতে যদি কোনো ডাইনোসরের ডিএনএবাহী প্রাণী বা পতঙ্গ পাওয়া যায় তাহলে ডাইনোসর অধ্যায়ের এক নতুন দিক উন্মোচিত হতেও পারে।

শুধু অ্যাম্বারই শেষ ভরসা নয়। ডাইসোরদের ফসিল বা কোনো হাড়ের খোঁজ পেলেও তাতে মিলতে পারে ডিএনএ। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রচীন প্রাণীর হাড় থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে ডাইনোসরদের বসবাস ছিলো আজ থেকে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে। এত আগের প্রাণীর অক্ষত হাড় খুঁজে পাওয়া কষ্টকরই বটে। 

তবে আশার কথা হলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিজ্ঞানীই দাবি করেছেন ডাইনোসরের হাড় পাওয়ার কথা। যদি হাড় পাওয়াও যায় তাতে কি ডিএনএ মিলবে? কোটি কোটি বছর আগের মৃত কোনো প্রাণীর হাড়ে ডিএনএ’র খোঁজ পাওয়া আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই।

সম্পূর্ণ ডিএনএ পাওয়া গেলে ডাইনোসর যুগের এক নতুন অধ্যায় সূচিত হতে পারে; Image credit Creations Shutterstock.com

৬৬ মিলিয়ন আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ডাইনোসররা। তাহলে এত বছর পর তাদের হাড় বা ফসিল পাওয়া গেলেও তাতে ডিএনএ অক্ষত থাকবে তো? বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো প্রাণীর ডিএনএ সেই জীবের মৃত্যুর পর মুহূর্ত থেকেই ক্ষয় হতে শুরু করে। কারণ বিভিন্ন এনজাইম (যেমন: মাটির জীবাণু, দেহের কোষ, অন্ত্রের কোষ) ডিএনএ’র ক্ষয় করে। একই কাজ করে আল্ট্রাভায়োলেট বিকিরণ। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশবিজ্ঞান এবং বিবর্তন জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বেথ শাপিরো বলেন, অক্সিজেন এবং পানি রাসায়নিকভাবে ডিএনএ’র প্রান্তগুলো ভেঙে দিয়ে এর পরিবর্তন ঘটাতে পারে। অ্যানজাইমগুলো ডিএনএকে ছোট ছোট টুকরায় ভাঙতেই থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না কিছু অবশিষ্ট থাকে।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন যে ডিএনএ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তার বয়স ৭ লক্ষ বছর। কানাডার যুকন শহরের একটি হিমায়িত সোনার ক্ষেত্রে পাওয়া ঘোড়ার ফসিল থেকে এই ডিএনএ পাওয়া গিয়েছিল। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন ৮ লক্ষ বছর আগের মানুষের দাঁত থেকে তারা জিনোম সিকোয়েন্স করতে পেরেছেন।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, সাধারণত কোনো ডিএনএ ১ মিলিয়ন থেকে ৫/৬ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। তাহলে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া ডাইনোসরদের ডিএনএ কি আর টিকে নেই? নিশ্চিত করে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি কোনো বিজ্ঞানী। তারা এখনও সন্দিহান যে, ডিএনএ কতদিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। কারণ গরম আবহাওয়ায় ডিএনএ খুব তারাতারি নষ্ট হয়। আবার ঠান্ডা আবহাওয়ায় বহু বছর টিকে থাকতে পারে। তাহলে ডাইনোসরদের ডিএনএ যদি উপযুক্ত পরিবেশ এবং আবহাওয়া পায় তাহলে বর্তমান সময় পর্যন্ত টিকে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজ্ঞানীরা যদি ডাইনোসরের হাড়ে থাকা ডিএনএ নিয়ে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নেন তবুও এটা বলা সম্ভব হবে না যে সে প্রাণীটি স্বভাবের দিক থেকে ডাইনোসর ছিল কি না। ৭ লক্ষ বছর আগের ঘোড়ার হাড় থেকে ডিএনএ’র যে খন্ডাংশ পাওয়া গিয়েছিল তা ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। তবে আধুনিক ঘোড়ার জিনোমের সাথে সে জিনোমের মিল পাওয়ায় বুঝা যায় যে সে ডিএনএটি ঘোড়ার উৎস থেকেই এসেছে।

অন্যদিকে দেখতে গেলে, ডাইনোসরদের জীবিত আত্মীয়রা হচ্ছে পাখি। ডাইনোসরদের অনেক গ্রুপ রয়েছে। দ্বিপদ, মাংশাসী টাইরানোসরাস রেক্স এবং ভেলোসিরাপ্টর ডাইনোসরদের থেকে বিবর্তিত হয়ে পাখিগুলো বিকশিত হয়েছে। ডাইনোসরদের অন্যান্য গ্রুপ যেমন- হ্যাড্রোসরাস (ডাক-বিল্ড ডাইনোসর), সিরাটোপসিয়ান (ট্রাইরাসেরাটোপস), স্টিগোসোর এবং অ্যাঙ্কিলোসোরদের কোনো জীবিত আত্মীয় নেই। তারপরও যদি ডাইনোসরের কোনো ডিএনএ এই সময়ে পাওয়া যায় তা হবে খুব ভগ্ন এবং বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

Hypacrosaurus stebingeri ডাইনোসরের ফসিল; Image Source: auctionzip.com

সাম্প্রতিক সময়ে একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন তারা ডাইনোসরের ফসিল পেয়েছেন যেটি খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল। ন্যাশনাল সায়েন্স রিভিউতে প্রকাশিত তাদের নিবন্ধ থেকে জানা যায়, তারা মূলত ৭৫ মিলিয়ন বছর আগের তৃণভোজী Hypacrosaurus stebingeri ডাইনোসরের খুলির হাড় পেয়েছেন। তারা মনে করছেন এই ফসিলে হয়তো ডাইনোসরের ডিএনএ পাওয়া যাবে।

নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মলিকুলার জীবাশ্ববিদ মেরি সোয়াইটজার জানান, তিনি সম্ভবত ডাইনোসরের হাড়ে ডিএনএ’র সন্ধান পেয়েছেন। তবে এখনো তিনি সেটার জিনোম সিকোয়েন্স করেননি। ফলে সেটি ডাইনোসরের কিনা বা তার বৈশিষ্ট্যই বা কেমন তা এখনো জানা যায়নি। ৬৬ মিলিয়ন বছর পরে এসে ডাইনোসরের ডিএনএ’র সন্ধান মিললে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ এখনো ডাইনোসরের ডিএনএ পাওয়া সম্ভব।

ডাইনোসর ক্লোনিং

তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, গবেষকরা ডাইনোসরের ডিএনএ’র সম্পূর্ণ সিকোয়েন্স পেয়ে গেছেন। এর মানে হলো গবেষকদের কাছে সম্পূর্ণ জিনোমটাই (প্রাণীর ডিএনএ’র সম্পূর্ণ সেট) আছে। আর এতে জাঙ্ক ডিএনএ এবং ভাইরাল ডিএনএ দুটোই থাকবে। ভাইরাল ডিএনএ যদি উদ্ভিদ এবং প্রাণীর দেহে আক্রমণ করে বসে তাহলে সেটি একটি বড় সমস্যা তৈরি করবে।

দৈত্যাকার ডাইনোসরের পুণঃনির্মিত কাল্পনিক রূপ; Image Source: scitechdaily.com

আধুনিক যুগে অনেক প্রাণীকেই ক্লোন করে জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ডাইনোসরের সঠিক ডিএনএ পাওয়া গেলে সেটিকে জন্ম দিতে সক্ষম হতেও পারেন বিজ্ঞানীরা। জিনোম পেয়ে গেলে তা থেকে ডাইনোসর ক্লোন করতে হলে বিজ্ঞানীদের দরকার পড়বে একটি হোস্ট জীবের। এক্ষেত্রে সঠিক হোস্ট হতে পারে পাখি। কারণ সকল পাখিই ডাইনোসরদের থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। এছাড়া ব্যাঙ, পায়রা এবং কুমিরের মতো সরীসৃপের কথাও ভেবে রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এগুলো এখন কেবলই চিন্তা। কারণ এখনো ডিএনএ পাওয়া যায়নি। তার মানে এই মুহুর্তে দাড়িয়ে ক্লোনিংয়ের কথা ভাবাও যাচ্ছে না যেহেতু ডিএনএ নেই। ডিএনএ পাওয়া গেলেই ক্লোনিংয়ের পরবর্তী ধাপগুলোতে যেতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করেতেই হবে।

রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং

যদি কোনোভাবেই ডাইনোসরের ডিএনএ না পাওয়া যায় তাহলে কি ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনার পথ বন্ধ হয়ে যাবে? না, আরেকটি পথ অবশ্য আছে। সেটি রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রাণীর ক্ষেত্রে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীবিত কোনো প্রাণীর ডিএনএ ধরে অতীতের দিকে যেতে হবে। ৬৬ মিলিয়ন বছর অতীত পর্যন্ত যেতে পারলে সেই প্রাণীকে ডাইনোসরে রূপ দেওয়া সম্ভব হবে।

কিন্তু বাস্তবে তার কাজ কতটুকু এগিয়েছে? ২০১৫ সালে বিজ্ঞানী জ্যাক হর্নার এবং তার দল ঘোষণা দেন যে, তারা পাখির ঠোঁটকে ডাইনোসরের মুখের মতো রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন। এটি হচ্ছে অনেকগুলো মডিফিকেশনের মধ্যে মাত্র একটা মডিফিকেশন। এভাবে নানা পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা মুরগিকে ডাইনোসরে রূপ দিতে পারবেন। এটিকে বলা হচ্ছে ‘চিকেনোসরাস’। আর এ পদ্ধতিতে যে চিকেন জন্ম নেবে তাকে বলা হবে ডাইনো-চিকেন

রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে চিকেন থেকে ডাইনোসর; Image Source: sciencevibe.com

মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটির জীবাশ্মবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জ্যক হর্নার জানান, তারা প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ করে ফেলেছেন। তবে এ পদ্ধতিতে যে চিকেন জন্ম হবে সেটি শুধুমাত্র ডাইনোসরের মতো দেখতে হবে। ডাইনোসরের মতো বৈশিষ্ট্য নাও থাকতে পারে তাতে।

জীবিত কোনো প্রাণীকে মডিফিকেশন করতে করতে ডাইনোসরের চেহারা প্রদান করা গেলেও তা দেখতে হয়তো কিছুটা ডাইনোসরের মতো হবে। কিন্তু তার আচরণ, বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভ্যাস কিংবা হিংস্রতা কোনোটাই ডাইনোসরের মতো নাও হতে পারে।

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের মেরুদণ্ডী প্রাণীর জীবাশ্মবিদ সুসি মেইডমেন্ট বলেন, অ্যাম্বারের মধ্যে আমরা ডাইনোসর যুগের মশা বা মাছি পেতেই পারি। কিন্তু যখন অ্যাম্বারের মধ্যে কোনো কিছু আটকে যায় তখন সেটি শুধু ওই পোকার খোসা সংরক্ষণ করতে পারে। তার নরম টিস্যু সংরক্ষণ করতে পারে না। ফলে অ্যাম্বারের মধ্যে কোনো মশা বা মাছি পাওয়া গেলেও তা থেকে রক্ত পাওয়া সম্ভব নয়। আর রক্ত না পেলে ডিএনএ ও পাওয়া যাবে না, ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনা যাবে না।

ডাইনোসর; Image Source: enriquelopezgarre/Pixabay

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ নর্দাম্পটনের প্রজননবিদ্যা বিশেষজ্ঞ জামাল নাসির ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনার ধারণা এবং সম্ভাবনাকে ইতিবাচকভাবেই দেখেন। তার মতে বিবর্তন কখনো স্থির নয় এবং এটি পরিকল্পনা মাফিকও ঘটে না। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। বিবর্তন অনির্ধারিত এবং এটি যে সবসময় সামনের দিকে এগুবে এমনটিও নয়। এর একাধিক দিক থাকতে পারে। বিবর্তনের পেছনের দিকে হেটে ডাইনোসর সদৃশ কোনো প্রাণীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

তবে তিনি মনে করেন, ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনা গেলেও তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হবে। এমন কোনো ভাইরাল মহামারি যদি আসে যেটি আমাদের জিনোম, শরীরবিদ্যা, আচরণকে ব্যাহত করবে এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে হয়তো ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনা এবং বাঁচিয়ে রাখার মতো পরিবেশ তৈরি হলে হতেও পারে।

তবে সুসি দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, বিশেষ অর্থে বিবর্তনের বিভিন্ন দিক নাও থাকতে পারে। আমাদের জানা মতে, একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কোনো প্রাণী নতুন করে আর সামনে আসেনি। উদাহরণস্বরূপ: ইকথিয়াসোরাস ছিল সামুদ্রিক প্রাণী যার লম্বা বিন্দুযুক্ত নাক-মুখ এবং ডলফিনের মতো দেহ ও লেজ ছিল। আজকের দিনে ডলফিনও ইকথিয়াসোরাসের মতো একই পরিবেশে থাকে। তাই বলে ডলফিনকে আমরা ইকথিয়াসোরাস বলতে পারি না। কারণ ডলফিন এবং ইকথিয়াসোরাসের শারীরিক বৈশিষ্ট্য এক নয়।

পাখিদের আদি বংশধর ডইনোসর; Image Source: Davide Bonadonna

তিনি আরো বলেন, ডাইনোসররা এখনো আমাদের সাথেই আছে। ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে তবে সেটি উড়তে না পারা ডাইনোসর। পাখিরা হচ্ছে বিলুপ্ত না হওয়া ডাইনোসর। মাংশাসী ডাইনোসরদের থেকে বিবর্তিত হয়ে পাখিরা আজকের অবস্থানে এসেছে। তারা এখনো টিকে আছে। এমনকি নতুন প্রজাতির পাখিদেরও দেখতে পাচ্ছি। এই নতুন পাখিরা হচ্ছে নতুন প্রজাতির ডাইনোসর।

ডিএনএ থেকে ডাইনোসর জন্ম দেওয়া গেলেও ওই প্রাণীর বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছুই করতে হবে। ধরে নিলাম যেকোনো ডিএনএ’র মাধ্যমে হোস্ট জীব থেকে ডাইনোসরের জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সেই ডাইনোসরটি হতে পারে অর্ধেক পাখি, অর্ধেক ডাইনোসর। কিংবা পুরোটাই যদি ডাইনোসর হয় তাহলে তাকে বাঁচিয়ে রাখাও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ

কারণ ৬৬ মিলিয়ন বছর আগের আবহাওয়া, পরিবেশ আর এখনকার আবহাওয়ার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। তখন ডাইনোসররা যা খেতো এখন তা প্রদান করা বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। ফলে ক্লোন করে ডাইনোসর জন্ম দেওয়া গেলে তাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। যেমন: ২০০৯ সালে ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে ‘Pyrenean ibex’ নামক বিলুপ্ত প্রজাতির একটি প্রাণীর জন্ম দেয়া সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৭ মিনিটের মাথায় প্রাণীটি মৃত্যুবরণ করে।

৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরের জিন এবং প্রোটিন ভিন্ন পরিবেশে টিকে ছিল। তখন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, অক্সিজেনের মাত্রা ভিন্ন রকম ছিল। তাপমাত্রা ভিন্ন রকম ছিল। তার উপর প্রাণীটির হজমের এনজাইমগুলো আধুনিক প্রাণী বা উদ্ভিদের উপর কাজ করতে নাও পারে।

দৈত্যাকার প্রাণীগুলো এখন শুধুই অতীত; Image Source: David Mark/Pixabay
ডাইনোসরের প্রতিকৃতি দেখছেন দর্শনার্থীরা; Image Source: wyrk.com

সোয়াইটজার বলেন, আমাদের বিনোদনের জন্য যদি আমরা একটি ডাইনোসরকে ফিরিয়ে আনি তবে সেটি নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত হবে। জেনেটিক বৈচিত্র্যসহ একটি টেকসই ডাইনোসর কলোনি বানাতে হলে অন্তত পাঁচ হাজার ডাইনোসরকে ক্লোন করে জন্ম দিতে হবে। কিন্তু পাঁচ হাজার ডাইনোসর ক্লোন করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আবার পাঁচ হাজার ডাইনোসর জন্ম দেওয়া গেলেও তাদের কোথায় রাখা হবে, কেমন পরিবেশে রাখা হবে তাও কিন্তু ভাবতে হবে।

এতসব সমস্যার আগে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো ডাইনোসরের ডিএনএ পাওয়া যেটির সন্ধান এখনো মেলেনি।

This article is in Bengali language. It's about the possibility of bringing the dinosaur back. Scientists are trying to find their dna and to give them rebirth. This article will discuss the possibility of DNA cloning of dinosaur.

Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © David Mark/Pixabay

Related Articles