Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এলিফ্যান্ট বার্ড: বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম পাখি

বর্তমান পৃথিবীতে টিকে থাকা পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ পাখিটির নাম হচ্ছে উটপাখি। পুরুষ উটপাখি প্রায় ৯ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। তবে একসময় উটপাখির চেয়েও অধিক উঁচু পাখির অস্তিত্ব ছিল! ধারণা করা হয়, সেটি ১৬৪৯ সালে বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিলুপ্ত পাখিটির নাম হচ্ছে এলিফ্যান্ট বার্ড। বিলুপ্ত হলেও বর্তমানে প্রাপ্ত হাড়ের নমুনা ও সংরক্ষিত ডিম থেকে ধারণা করা হয়, পাখিটির অবয়ব দেখতে উটপাখির মতোই ছিল। আজকের লেখায় জানাবো বিলুপ্ত হওয়া বৃহত্তম পাখি এলিফ্যান্ট বার্ড সম্পর্কে।

শিল্পীর আঁকা এলিফ্যান্ট বার্ড © Brian Choo/NY Times

সাধারণত উড়তে অক্ষম পাখিদের রেটিট গ্রুপভুক্ত করা হয়। উটপাখি, এমু, রিয়া ইত্যাদি রেটিট গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত পাখি। এই পাখিগুলো সাধারণত বৃহদাকার হয়ে থাকে। তবে এদের বিলুপ্ত হওয়া পূর্বপুরুষ এলিফ্যান্ট বার্ড ও মোয়া আরও বড় ছিল। যা-ই হোক, উড়তে অক্ষম সকল পাখিই বৃহদাকার হবে এমন নয়। উড়তে অক্ষম সবচেয়ে ছোট পাখিটি হচ্ছে কিউই। নিউজিল্যান্ডের জাতীয় পাখিটি আকারে গৃহপালিত মুরগির সমান হতে পারে।

ছোট্ট কিউই বিশালাকার এলিফ্যান্ট বার্ডের পূর্বপুরুষ; Source: doc.govt.nz

উচ্চতা ও দৈহিক ওজনের দিক থেকে প্রকাণ্ড হওয়ায় পাখিটিকে ১৮৫১ সালে জিওফ্রয় সেন্ট হিলাইয়ার এলিফ্যান্ট বার্ড নামকরণ করেছেন। তবে পাখিটি মোটেও হাতির মতো বৃহদাকার ছিল না। হাতির মতো বৃহদাকার না হলেও এলিফ্যান্ট বার্ড ১০ ফুট উচ্চতা ও প্রায় ৪৫৫ কিলোগ্রাম ওজন পর্যন্ত হতো। Aepyornithidae গোত্রের পাখিটি ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ মাদাগাস্কারের বিচরণ করতো। মাদাগাস্কার হলো আফ্রিকার র্পূব উপকূলীয় দেশ। Aepyornis maximus  হচ্ছে এলিফ্যান্ট বার্ডের বৈজ্ঞানিক নাম।

উড়তে অক্ষম এলিফ্যান্ট বার্ডের শক্তিশালী গলা, পা এবং নখ ছিল। এদের শরীরে শক্ত ছোট চুলের ন্যায় পালক থাকতো, যা দেখতে এমু পাখির পালকের ন্যায়। পাখিটির ঠোঁট অনেকটা স্ফীত মাথার বর্শার মতো দেখাতো। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বিলুপ্ত হওয়ার পূর্বে ৬০ মিলিয়ন বছর মাদাগাস্কার দ্বীপে রাজত্ব করেছিল এলিফ্যান্ট বার্ড।

বৃহত্তম ডিমের সাথে মুরগির ডিমের তুলনা করুন; Source: brucemuseum.org

এলিফ্যান্ট বার্ডই শুধু আকারে বৃহৎ নয়, এদের ডিমও এ পর্যন্ত প্রাপ্ত সকল পাখির ডিমের চেয়ে বৃহৎ আকারের। এলিফ্যান্ট বার্ডের ডিম ১৩ ইঞ্চি পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। এর ডিমে তরল পদার্থের পরিমাণ ছিল ৭.৫ লিটার, যা ১২০ জন লোকের খাবারের জন্য অমলেট তৈরির উপযোগী ছিল। সাধারণত এই আকার মুরগির ডিমের চেয়ে ১৬০ গুণ বেশি! এই পাখির ডিমই হচ্ছে প্রাণীজগতের বৃহত্তম একক কোষ।

ভাঙ্গা খোসা জোড়া লাগানো অবস্থায় উদ্ধার; Source: madamagazine.com

এলিফ্যান্ট বার্ডের ডিম কিন্তু মোটেও সহজলভ্য ও সস্তা নয়। সারা বিশ্বে এলিফ্যান্ট বার্ডের প্রায় এক ডজন ডিমের ফসিল পাওয়া যেতে পারে। এই এক ডজনের মধ্যে একটি ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটিতে, দুটি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের জাদুঘরে এবং বৃহৎ ৭টি ডিমের ফসিল রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় মেরুদণ্ডী প্রাণীবিদ্যার ফাউন্ডেশনে। ২০১৩ সালে ক্রিস্টি একটি ফসিল সংগ্রহ করে এক লক্ষ ডলারে বিক্রি করেছিলেন! এখনও মাদাগাস্কার দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর ভাঙ্গা ডিমের খোলস পাওয়া যায়। মাদাগাস্কারারে কিছু চতুর অধিবাসী ভাঙ্গা খোসাগুলো একত্রে আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে ভ্রমণকারীদের কাছে বিক্রি করে। তবে মাদাগাস্কার ভ্রমণে গিয়ে ডিম কেনার শখ পরিহার করাই উত্তম। কারণ ভাঙ্গা খোলসও দর্শনার্থীদের নিয়ে আসতে দেয়া হয় না।

কিউই পাখির কঙ্কালেরে সাথে এলিফ্যান্ট বার্ডের ডিম © Paul Scofield & Kyle Davis

অনেক বছর ধরে বিশ্বাস করা হতো এলিফ্যান্ট বার্ড নিউজিল্যান্ডে প্রাপ্ত বিশালাকার পাখি মোয়া’র সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এই ধারণার উদ্ভব হয়েছিল মূলত মোয়া পাখির আকারও বিশাল হওয়ায়। মোয়া পাখি বিলুপ্ত হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীতে। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন ভিন্ন ও অবিশ্বাস্য তথ্য! তারা বলছেন- এলিফ্যান্ট বার্ডের সাথে নিউজিল্যান্ডের পাখি কিউই এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন বহুযুগ আগে মাদাগাস্কারে কিউই পাখির আবাস ছিল। সেখান থেকেই বিবর্তিত হয়ে প্রকাণ্ড এলিফ্যান্ট বার্ডের উৎপত্তি হয়েছিল। অর্থাৎ কিউই পাখিই ছিল এলিফ্যান্ট বার্ডের পূর্বপুরুষ

বৃহদাকার হওয়ায় পাখিটিকে মাংসাশী ও হিংস্র ভাবলে ভুল হবে। কারণ অন্যান্য উড়তে অক্ষম পাখির সাথে তুলনা করে প্রমাণ পাওয়া যায় এই পাখি নিচু গাছপালায় ঝুলে থাকা ফলমূল খেয়ে জীবনধারণ করতো। যদিও এলিফ্যান্ট বার্ড বলতে Aepyornis maximus কেই বোঝানো হয়, তথাপি এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। এলিফ্যান্ট বার্ডের Aepyornis গণ ছাড়াও Mullerornis নামের আরেকটি গণ রয়েছে।

বিখ্যাত ভ্রমণকারী মার্কো পোলো; Source: biography.com

এলিফ্যান্ট বার্ডের কথা মধ্যযুগে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল। ইতালির বিখ্যাত ভ্রমণকারী মার্কো পোলো ১২৯৮ সালে এলিফ্যান্ট বার্ড দেখার কথা বলেছিলেন। তবে অনেক বিদ্বানের মতে, পোলো হয়তো রুপকথায় উল্লিখিত বিরাটকায় পাখি রুখ বা রকপাখির কথা বলেছিলেন। তবে পোলো মাদাগাস্কারের দক্ষিণাঞ্চল থেকে একটি পালক নিয়ে এসেছিলেন যেটি প্রায় ৭ ফুট লম্বা ও ৬ ইঞ্চি পরিধি বিশিষ্ট ছিল। যে পালকের কারণে তার সময়কালে তিনি ব্যাপক প্রশংসিতও হয়েছিলেন। তবে অনেকে হাসাহাসিও করেছিলেন। সে সময় এলিফ্যান্ট বার্ড দেখার বিষয়টিকে অনেকেই গাঁজাখুরি গল্প বলে আখ্যায়িত করেছিল।

মাদাগাস্কার দ্বীপ; Source: travel2madagascar.com

তবে মার্কো পোলোর কথা বর্তমানে সত্য পরিণত হয় যখন মাদাগাস্কারের স্থানীয় এক লোক নেশাজাতীয় তরল দ্রব্য রাম কেনার জন্য মরিশাসে যায়। তার হাতে যে পাত্রটি ছিল সেটি ছিল একটি ডিমের খোসা। ডিমের খোসাটি উটপাখির ডিমের চেয়ে প্রায় ৮ গুণ বড় ছিল! সে সময় স্থানীয় লোকেরা জানতো মাদাগাস্কারের ঝোঁপঝাড়ে এই ডিম পাওয়া যায় ও কালেভদ্রে প্রকাণ্ড এক পাখিরও দেখা মেলে। তবে এই কথাও পূর্বে বিশ্বাস করা হতো না। কিন্তু ১৮৫১ সালে মাদাগাস্কারের ভূমি থেকে প্রাপ্ত একটি বিশাল ডিম প্যারিসের জাদুঘরে আনার পর মানুষজন বিশ্বাস করে। এছাড়াও বর্তমানে বিশ্বাসও করা হয় যে, পোলো যে পাখির কথা বলেছিলেন সেটিই এলিফ্যান্ট বার্ড ছিল। যদিও এ পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রকাণ্ড ডিম ইউরোপের জাদুঘর ও ভাঙ্গা হাড় ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখানো হয় তথাপি পাখিটি এখনও বেঁচে আছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারছেন না। স্থানীয় লোকেরা দাবী করেন, ঘন জঙ্গলে আজও বিশালাকার পাখি ঘুরে বেড়ায় ও খুবই কদাচিৎ দেখা যায়।

যদিও অধিকাংশরই মতে, ১৬৪৯ সালে এলিফ্যান্ট বার্ড বিলুপ্ত হয়েছিল তথাপি ফ্রান্সের নাগরিক ইস্টিয়ান দি ফ্লাকর্ট ১৬৫৮ সালে দক্ষিণ মাদাগাস্কারে উটপাখির মতো অতিকায় এলিফ্যান্ট বার্ড দেখার দাবী করেন।

এলিফ্যান্ট বার্ডের ডিমের খোসা; Source: whatsupscience.com

এলিফ্যান্ট বার্ড একসময় মাদাগাস্কার দ্বীপে রাজত্ব করলেও সেখানে মানুষ পৌঁছানোর পর থেকেই দ্রুত বিলুপ্ত হতে থাকে। প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্বে মাদাগাস্কারে মানুষ বসতি স্থাপন করতে থাকে। মানুষ খাওয়ার জন্য পাখির ডিম সংগ্রহ করতে থাকে। ডিমের খোসায় মানুষের হাতে ভাঙ্গার দাগ থেকে এই ধারণা করা হয়। তখন মাংসের জন্য পাখিগুলোকে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়াও মানুষ যখন সেখানে যায় সাথে কিছু পশুপাখি নিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো থেকে হয়তো এমন কোনো রোগ বিস্তার লাভ করেছিল যার ফলে এলিফ্যান্ট বার্ডের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়াও জলবায়ুর পরিবর্তনকেও এলিফ্যান্ট বার্ডের বিলুপ্তির জন্য দায়ী করা হয়।

এলিফ্যান্ট বার্ডের কঙ্কাল; Source: youtube

বর্তমানে এলিফ্যান্ট বার্ডের অনেক হাড় প্যারিসের ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি’ জাদুঘরে পাওয়া যায়। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাদুঘরে ডিমের খোলস, পুনর্গঠিত কঙ্কাল, হাড় ইত্যাদি পাওয়া যায়। এতকিছু পাওয়া গেলেও এখনও এই পাখিটি সম্পর্কে গবেষকদের অনেক কিছুই জানার বাকি রয়েছে।

ফিচার ইমেজ – prehistoric-fauna.com

Related Articles