Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ছোট্ট যে প্রাণীগুলো নিমেষেই মেরে ফেলতে পারে আপনাকে

আকারে তারা খুবই ছোট। কাউকে কাউকে তো খালি চোখে ঠিকমতো দেখাও যায় না। কেউবা আবার রঙ বদলে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে চট করে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কিন্তু আপনি তো আর তা পারেন না। একবার যদি এই ছোট্ট প্রাণীগুলো আপনাকে শত্রু ভেবে বসে তাহলেই সর্বনাশ। চিন্তা-ভাবনার জগতে ঢোকার মতো যথেষ্ট সময় তারা আপনাকে দেবে না। ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যেই পৃথিবী থেকে নিজের শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করার ক্ষমতা রাখা এই ভয়ংকর প্রাণীগুলো আসলে কারা? চলুন তাহলে জেনে আসা যাক তাদের পরিচয়।

ডেথস্টকার স্করপিওন

ডেথস্টকার স্করপিওন; Source: arthtouchnews.com

আমাদের মধ্যে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য মানুষকে ভালো স্টক (অনুসরণ) করতে পারে। এখন আমরা যে প্রাণীটি সম্পর্কে জানবো তার কাজও স্টক করা, তবে সে স্টক করে মৃত্যুকে! স্করপিওন প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর এই প্রাণীটির রয়েছে মারাত্মক বিষাক্ত একটি হুল। একজন পূর্ণবয়স্ক শক্তসমর্থ মানুষের প্রাণবায়ু কেড়ে নেয়ার জন্য এই হুলের একটি ঠিকঠাক খোঁচাই যথেষ্ট। ডেথস্টকার যদি ঠিকমতো হুল ফোটাতে না পারে তাহলে মৃত্যুর সম্ভাবনা না থাকলেও বেশ কয়েকদিন হাসপাতালের বিছানাকে সঙ্গী বানাতে হবে এটুকু গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়।

এই ছোট দানবটির ব্যাপারে একটি ভালো খবর, একটি খারাপ খবর এবং তারচেয়েও ভালো আরেকটি খবর রয়েছে। প্রথম ভালো খবরটি হলো ডেথস্টকার স্করপিওনের বিষের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়েছে। খারাপ খবরটি হলো এই প্রতিষেধক সব জায়গায় পাওয়া যায় না, কেননা এফডিএ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তা স্বীকৃত নয়। এবার সবচেয়ে ভালো খবরটি দেয়ার পালা। উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য ছাড়া আর কোথাও এই স্করপিওন দেখতে পাওয়া যায় না। কাজেই বাংলাদেশে বসে এদের নিয়ে ভয় পাওয়ার বা চিন্তা করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। তবে যারা ঐসব দেশে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, স্করপিওনের কথা তাদের মাথায় রাখা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় এক ছোবলেই ছবি হয়ে যাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা অনিবার্য!

কোন স্নেইল বা শঙ্কু শামুক

শঙ্কু শামুক; Source: internapcdn.net

একটা শামুক আর কতোই বা ভয়ংকর হতে পারে, তার উপর তার নাম আবার শঙ্কু! এটাই ভাবছেন তো? একটা শামুক যে ধীরগতির একদম বিপরীতে ঝপাৎ করে মৃত্যুকে ডেকে আনতে পারে তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই শামুকটি। শঙ্কু শামুককে তাই ‘ধীর গতির মৃত্যু ফাঁদ’ বলে অভিহিত করেন অনেকে। এটার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পৃথিবীর প্রায় সব দেশের পানিতেই তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। বাচ্চা শঙ্কু শামুকের হুলের ঘায়ে আপনার হয়তো মৌমাছির কথা মনে পড়ে যেতে পারে, ওটাকে আসলে পাত্তা দেয়ারও কিছু নেই। কিন্তু শঙ্কু যদি হয় পরিণত, তবে সে সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কুর চেয়েও মারাত্মক আর পাগলাটে।

একটি বড় শঙ্কু শামুকের হুলের আঘাতে কুপোকাত হতে বাধ্য যেকোনো আকৃতির দশাসই মানুষও। কোনাস জিওগ্রাফাস বা পরিণত এই শামুককে বিজ্ঞানীরা আদর করে ‘সিগারেট শামুক’ বলে ডেকে থাকেন। কারণ হিসেবে বলা হয়, শঙ্কুর কামড় খাওয়ার পর মৃত্যু হতে যতক্ষণ সময় লাগে, ততক্ষণে একটি সিগারেট টানতে টানতে ফিল্টার পর্যন্ত পৌঁছানো যায় সর্বোচ্চ। এত দ্রুত এই বিষ কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন এখনো। তবে ভাবতে ভাবতে তারা বাকিদের জন্য সতর্কবাণী পাঠিয়ে দিয়েছেন ঠিকই- পানিতে নামার আগে সাবধান হে অভিযাত্রী! তোমার জন্য হয়তো ওঁত পেতে বসে আছে কোনো এক সিগারেট শঙ্কু!

স্টোন ফিশ বা পাথুরে মাছ

স্টোন ফিশ; Source: localdivethailand.com

সিনেনসিয়া, যা পাথুরে মাছ বা স্টোন ফিশ হিসেবেই বেশি পরিচিত, দেখতে খুবই অসুন্দর। কথায় বলে, শুধু মা-ই তার বদখৎ চেহারা বাচ্চাকে ভালবাসতে পারে, এটিও আসলে সেই রকমই একটি প্রাণী। তবে তার চেহারা নিয়ে যদি কেউ মজা করতে আসে তো তাকে একহাত দেখে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রকৃতিই তাকে দিয়ে দিয়েছে।

স্টোন ফিশের পুরো পিঠজুড়ে রয়েছে স্পাইক বা কাঁটা, যে কাঁটা আবার শক্তিশালী নিউরোটক্সিনে ভরপুর। কেউ যদি ভুল করেও তার গায়ে পাড়া দেয় তাহলে কেল্লাফতে। মানে কারো গায়ে কাঁটা ফোটানোর আগে এক মুহূর্তও ভাবে না স্টোন ফিশ। আর তার গায়ে পা লাগাটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা, কেননা তারা দেখতে একেবারেই পাথরের মতো আর থাকেও পাথরের গা ঘেঁষে। কাজেই আপনার একটি ভুল পদক্ষেপ আপনাকে সোজা পাঠিয়ে দিতে পারে পরপারে।

পয়জন ডার্ট ফ্রগ

পয়জন ডার্ট ফ্রগ; Source: nationalgeographic.com

চিড়িয়াখানায় যারা রঙ-বেরঙের সব প্রাণী দেখতে যান, তারা পয়জন ডার্ট নামক এই রঙিন ব্যাঙের রূপ দেখে মুগ্ধ হতে বাধ্য। এতো সুন্দর একটি ব্যাঙ দেখে কারো ব্যাঙের মুখে চুমু খাওয়ার সেই ‘দ্য ফ্রগ প্রিন্স’ গল্পের কথাও মনে পড়ে যেতে পারে। বাস্তব জীবনে এই ব্যাঙের প্রজাতি থেকে প্রজাতিতে বিষের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তবে ফিলোবেটস টেরিবিলিস, খাঁটি বাংলা ভাষায় যাকে আমরা সোনালি বিষের ব্যাঙ বলতে পারি, ভয়ংকর রকমের বিষধর একটি প্রাণী। সোনালি এই ব্যাঙটিকে রীতিমতো বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর প্রাণী হিসেবেও আখ্যা দেন কতিপয় বিজ্ঞানী। কেউ ছুঁলেই এ ব্যাঙগুলো ভয় পেয়ে যায় এবং তখন সে সামনের ব্যক্তিকে শত্রু ভেবে আক্রমণ করে বসে। একটি পয়জন ডার্ট ব্যাঙের শরীরে যে বিষ থাকে, তা পূর্ণবয়স্ক ২০ জন মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে।

বক্স জেলিফিশ

বক্স জেলিফিশ; Source: pinimg.com

জেলিফিশের কামড় খাওয়া কারো কাছে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে সে নিশ্চয়ই বলবে যে (যদি সে কথা বলার মতো অবস্থায় থাকে) তা খুব একটা সুখকর নয়। বেশিরভাগ সময়েই জেলিফিশ খুব একটা আক্রমণাত্মক নয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত কেউ যদি জেলিফিশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও মারাত্মক জাত বক্স জেলিফিশের সামনে এসে পড়ে তাহলে আর রক্ষা নেই।

অস্ট্রেলিয়ায় যে বক্স জেলিফিশ পাওয়া যায় তার আকৃতি মানুষের একটি নখের সমান। আপনি টেরই পাবেন না কখন সে আপনার সামনে চলে আসবে। প্রথমে যখন সে হুল ফোটাবে তখন একটি মশার কামড় খাওয়ার মতোই অনুভূতি হবে আপনার। মুহূর্তের মাঝেই শত্রুকে ধরাশায়ী করে ফেলার ক্ষমতা রাখে সেই সামান্য একটি কামড়। বক্স জেলিফিশের ভেনোম ইরুকান্দজি সিনড্রোমের উদ্রেক করে অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হয় তার হার্ট অ্যাটাক হতে যাচ্ছে, পেশীগুলো কোনো কাজ করছে না। আর সমুদ্রের গভীরে এই অবস্থায় একজন মানুষ আদৌ বেঁচে থাকতে পারে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং স্পাইডার

ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং স্পাইডার; Source: pinimg.com

মাকড়সার জগতে সবচেয়ে কুখ্যাত ব্ল্যাক উইডো স্পাইডার। খুব বেশি বিষাক্ত না হয়েও দুর্ধর্ষ চেহারার জন্য জনমনে বেশ ভালোই ভীতির সঞ্চার করেছে বিধবা এই মাকড়সাটি। তবে এই বেচারাকে হারিয়ে দিয়ে সবচেয়ে ভেনোমাস বা বিষাক্ত মাকড়সা হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম লিখিয়ে নিয়েছে ব্রাজিলের ভ্রাম্যমাণ মাকড়সা বা ‘ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং স্পাইডার’। মারমুখী এই মাকড়সাটি অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীদের আক্রমণের সাধারণ নিয়মটিকে থোড়াই কেয়ার করে। মানে কেউ যদি তাকে ভয় না-ও দেখায় তারপরও সে তাকে তাড়া করে বসে। ‘আমার হুল আছে, আমি যাকে খুশি তাকে হুল ফোটাবো, তাতে তোমার কি?’- এই নীতি মেনে চলা মারাত্মক এই মাকড়সাটির কাছ থেকে শত হাত দূরত্ব বজায় রাখতে বলেছেন বিজ্ঞানীরা।

ব্লু রিং অক্টোপাস

ব্লু রিং অক্টোপাস; Source: ferrebeekeeper.com

ব্লু রিং অক্টোপাসের মতো ‘কিউট’ একটা প্রাণীকে ভালো না বেসে উপায় নেই। নিয়ন ব্লু রঙের জ্বলজ্বলে এই প্রাণীটির রয়েছে আটটি ছোট ছোট শুঁড়। হঠাৎ দেখলে মনে হয় ছোট একটা বাচ্চা আটটা হাত দিয়ে ড্রাম বাজাচ্ছে। ভাবতেই খুব ভালো লাগছে, তাই না? অবশ্য এই হাতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিষ এক মিনিটের মধ্যে ২৬ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে অক্কা পাইয়ে দিতে সক্ষম। এটা জানার পর আর এই প্রাণীটিকে কিউট লাগার কথা না। ব্লু রিং অক্টোপাসকে এক কথায় ‘ডেথ মেশিন’ বলা হয়। এই অক্টোপাসের আক্রমণ একেবারেই ব্যথামুক্ত। কেননা এর বিষ সায়ানাইডের চেয়ে ১,২০০ গুণ বেশি শক্তিশালী যার প্রভাবে পুরো শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্তের মতো অসাড় হয়ে পড়ে। যার কারণে ভিক্টিম চোখের সামনে দেখতে পান তার সাথে ঠিক কী কী ঘটছে, কিন্তু অনুভব করতে পারেন না কিছুই।

ফিচার ইমেজঃ pinimg.com

Related Articles