Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মারিয়ানা ট্রেঞ্চে সন্ধান পাওয়া কিছু নতুন প্রাণী

প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এখন পর্যন্ত জরিপকৃত পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর স্থান। এর গভীরতম অংশটি চ্যালেঞ্জার ডিপ নামে পরিচিত। মারিয়ানা খাতের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত এই অংশটির গভীরতা প্রায় ১১,০০০ মিটার বা ৩৬,০০০ ফুট। 

এ অংশে বায়ুচাপ ভূপৃষ্ঠের তুলনায় প্রায় ১,০০০ গুণ বেশি। এখানে সূর্যের আলো কখনও পৌঁছায় না। তাই জলের তাপমাত্রা থাকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। আপাতদৃষ্টিতে এত বেশি চাপ সহ্য করে এত গভীরে কোনো প্রাণীর বসবাস প্রায় অসম্ভব হলেও এখানে লাখ লাখ টন পানির চাপ সহ্য করে রয়েছে বেশ কিছু প্রাণীর বসবাস। 

বিগত কয়েক দশক ধরে চলা বেশ কিছু অনুসন্ধানে মারিয়ানা ট্রেঞ্চে বেশ কিছু নতুন এবং আজব প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে। বিস্ময়কর এ পরিবেশে বাস করা প্রাণীগুলোও বিস্ময়কর। কারণ, এ চরমভাবাপন্ন পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার জন্য এদের কিছু বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাগরের গভীরে অভিযোজিত হওয়ায় ডাঙায় তোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই এরা মারা যায়। চলুন, জেনে নেয়া যাক এই প্রাণীদের সম্পর্কে। 

বায়োলুমিনেসেন্ট জেলিফিশ

বায়োলুমিনেসেন্ট জেলিফিশ; Image Source : Interesting Engineering

মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে থাকা আলো তৈরিতে সক্ষম বায়োলুমিনেসেন্ট জেলিফিশের অস্তিত্ব সম্পর্কে অল্প কিছুদিন আগেই জানা গেছে। বিজ্ঞানীরা ২০১৬ সালে এর সন্ধান পান। সাগরের প্রায় ৪,০০০ মিটার গভীরে অন্ধকার রাজ্যের বাতি হয়ে বিচরণ করে এটি। বায়োলুমিনেসেন্ট জেলিফিশ মূলত একটি শিকারি প্রাণী। আলো জ্বেলে এবং লম্বা লম্বা পায়ের সাহায্যে প্রাণীটি এর শিকার ধরে। এর মাথার লাল অংশটি খাবার হজমে সহায়তা করে। ধারণা করা হয়, মাথার উজ্জ্বল এবং হলুদ অংশটি প্রাণীটি প্রজননের জন্য। 

অ্যাকর্ন ওয়ার্মস

অ্যাকর্ন ওয়ার্মস; Image Source : Wikiwand

২০১৬ সালের ৩০ জুন মারিয়ানা ট্রাঞ্চ মেরিন ন্যাশনাল মনুমেন্ট অঞ্চলের এক অনুসন্ধান চলাকালে এই অদ্ভুত প্রাণীর দেখা মেলে। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১১১ প্রজাতির অ্যাকর্ন ওয়ার্মসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিন্তু মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে পাওয়া উজ্জ্বল রঙের এই প্রাণীটির গঠন এবং আকৃতি এর অন্যান্য প্রজাতির থেকে শুধু আলাদাই নয়, দারুণ বিস্ময়কর। এই প্রজাতির অ্যাকর্ন ওয়ার্মস দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৫০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এদের শরীরে অনেকটা পাখার মতো অঙ্গ রয়েছে যে কারণে প্রাণীটি জলে সাঁতার কাটার সাথে সাথে ভেসে থাকতেও সক্ষম।

হার্মিট কাঁকড়া

হার্মিট কাঁকড়া; Image Source: NOAA Ocean Explorer

এই কাঁকড়াকে প্রথমে দেখে এর অন্যান্য প্রজাতি থেকে ভিন্ন মনে হয় না। কিন্তু খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, এর গঠন এবং চলাফেরা অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের পাগুলো তুলনামূলক লম্বা। 

অন্যান্য কাঁকড়ার মতো এরা সচরাচর ছয় পায়ে চলাফেরা করে না, চারটি পা ব্যবহার করে। নিজের সুরক্ষার জন্য হার্মিট কাঁকড়ারা সাধারণত অন্যান্য মৃত প্রাণীর খোলস বয়ে নিয়ে চলে। কিন্তু মারিয়ানার গভীরে থাকা এই কাঁকড়া অনেকটা ফুলের মতো দেখতে একধরনের প্রবাল কীট নিজের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করে। এটি বয়ে নিতে এরা অপর দুই পা ব্যবহার করে। 

জায়ান্ট অ্যাম্ফিপড

জায়ান্ট অ্যাম্ফিপড; Image Source : telegraph.co.uk

শুরুতে অনেকে জায়ান্ট অ্যাম্ফিপডকে চিংড়ির সাথে গুলিয়ে ফেলে। কিন্তু চিংড়ির সাথে এই জলজ প্রাণীর কোনো যোগসূত্র নেই। প্রাণীগুলো সমুদ্রের যত গভীরে বাস করে, সেই অনুপাতে এগুলোর আকার তত বড় হয়। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে বাস করা জায়ান্ট অ্যাম্ফিপড আকারে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কিন্তু অগভীর জলে বাস করা অ্যাম্ফিপডেরা আকারে সাধারণত ১ সেন্টিমিটারের বেশি হয় না।

জায়ান্ট গ্রেনেডিয়ার

জায়ান্ট গ্রেনেডিয়ার; Image Source : Top5

মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে থাকা জায়ান্ট গ্রেনেডিয়ার মাছটি দেখতে বেশ অদ্ভুতুড়ে। সারা বিশ্বের সমুদ্রগুলোতে এর সন্ধান পাওয়া যায়। অনেক দেশে মাছগুলো খাওয়া হয়। এ মাছ ১.৫ মিটারেরও বেশি লম্বা হতে পারে। যেকোনো জীবিত বা মৃত মাছ এরা খেয়ে থাকে। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে থাকা জায়ান্ট গ্রেনেডিয়ারের শরীরে বিশেষ ধরনের উপাদান থাকে, যার কারণে শরীর তীব্র আঁশটে গন্ধে ভরপুর। এ উপাদানের কারণেই মাছগুলো সাগরের গভীরের অধিক চাপ সহ্য করে বেঁচে থাকতে পারে।

শিকারী টিউনিকেট

শিকারী টিউনিকেট; Image Source : Norbert Wu Productions

প্রথম দর্শনে প্রাণীটিকে সাগরে জন্মানো কোনো জলজ উদ্ভিদ ভেবে ভুল হতে পারে। সাগরের তলদেশে এরা অনেকটা উদ্ভিদের মতো আটকে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ প্রাণীটি রীতিমতো মাংসাশী। শিকারী টিউনিকেট ঘোস্টফিশ নামেও পরিচিত। কোনো ছোট প্রাণী, যেমন- প্ল্যাঙ্কটন এর মুখের কাছ দিয়ে যাবার সময় এটি দ্রুত মুখ বন্ধ করে ফেলে এবং সাথে সাথে শিকার হজম করা শুরু করে দেয়। হজমের পর এরা পরবর্তী শিকারের অপেক্ষায় থাকে।

স্নেইল ফিশ

স্নেইল ফিশ; Image Source : washington.edu

সারা বিশ্বের সাগরের জলের বিভিন্ন গভীরতায় এই মাছটি দেখতে পাওয়া যায়। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গবেষকদের ক্যামেরায় নতুন তিন প্রজাতির স্নেইল ফিশ ধরা পড়েছে। গবেষকরা টিস্যু কাঠামো এবং ডিএনএ বিশ্লেষণ ও থ্রি-ডি স্ক্যানিং করে স্নেইল ফিশের নতুন প্রজাতি প্রাপ্তির কথা জানিয়েছেন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি মারিয়ানা ট্রেঞ্চের সবচেয়ে গভীরে প্রাপ্ত প্রাণী। এত গভীরে মাছটি যে লাখ লাখ টন চাপ সহ্য করে, তা ১,৬০০ হাতির ওজনের সমান। 

সাগরের ২১,০০০ ফুট বা ৮,০০০ মিটারের গভীরে বসবাসকারী এই মাছের ত্বক খুব স্বচ্ছ প্রকৃতির। শরীর আঁশবিহীন। শরীরের সর্বাধিক শক্ত অংশ দাঁত এবং কানের ভেতরের হাড়। এগুলোর সাহায্যে এরা দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো এদের সমুদ্রের গভীরে বসবাস করতে সাহায্য করে।

পিং পং ট্রি স্পঞ্জ

পিং পং ট্রি স্পঞ্জ ; Image Source : ScienceInfo.net

একটি বইকে এর আবরণ দেখে বিচার করতে নেই। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে প্রাপ্ত এই প্রাণীর নামটি শুনে হাসি পেতে পারে, তবে পিং পং ট্রি স্পঞ্জ আসলে নীরব শিকারী এবং মাংসাশী। দেখতে অনেকটা পাতলা, ডাটা জাতীয় এই প্রাণীটির বাহ্যিক চেহারার কারণেই এর এমন নামকরণ করা হয়েছে। 

পিং পং ট্রি স্পঞ্জ আক্ষরিক অর্থেই গাছের মতো দেখতে পিং পং উৎপাদন করে, যা প্রকৃতপক্ষে এর শিকার ধরার ফাঁদ। পিং পংগুলো ছোট হুক-জাতীয় অতিরিক্ত অংশের সাথে যুক্ত থাকে। কোনো প্রাণী যখন এই পিং পং-এর সংস্পর্শে আসে, তখন এতে আটকা পড়ে যায় এবং স্পঞ্জ আস্তে আস্তে শিকারকে গ্রাস করে।

Related Articles