Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যে পোষা প্রাণীগুলো মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল

কুকুর, বিড়াল বা অন্য কোনো প্রাণী; যুগযুগ থেকেই মানুষ প্রাণী পুষতে পছন্দ করে। বিভিন্ন প্রয়োজনে যেমন বাড়ি পাহারা দিতে, অন্যান্য প্রাণীর উৎপাত দূর করতে বা অবসর সময়ে নির্মল আনন্দ পেতেও অনেকে বিভিন্ন প্রাণী পুষে। এই পোষা প্রাণীগুলো একসময় নিজ পরিবারেরই একটি অংশ হয়ে দাঁড়ায়। তারাও যথেষ্ট প্রভুভক্তি দেখিয়ে মনিবের মনে আলাদা জায়গা দখল করে নেয়। এমনও দেখা গিয়েছে যে তারা বিপদের সময় বা আগে থেকেই বিপদ আঁচ করে অনেক সময় মনিব ও তার পরিবারকে রক্ষা করেছে। চলুন আজ এমনই কিছু পোষা প্রাণী সম্পর্কে জানা যাক যারা তাদের মনিবদের বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলো।

বাবু

বাবু; Source: images.viralnova.com

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানে ‘টহকু’ নামে এক ভয়ংকর ভূমিকম্প এবং সুনামি হয়। সেসময় ৮৩ বছর বয়সী বৃদ্ধা টামি আকানুমা তার পোষা কুকুর ‘বাবু’র সাথে জাপানের মিয়াকো শহরেই বসবাস করতেন। সেদিন ভূমিকম্প টের পেয়ে বাবু তার মনিবকে বাইরে ঘুরতে যাবার জন্য সংকেত প্রদান করে। টামি কিছুটা অবাক হয়েছিলেন কারণ অন্যদিনের তুলনায় বাবু সেদিন অনেক আগেই বাইরে বেড়াতে যেতে চাচ্ছিলো। তবে বাবুর পীড়াপিড়ি দেখে তিনি তাকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসেন। তারা ঘর থেকে বের হওয়া মাত্র শহরের সুনামির সতর্কতা সংকেত বেজে উঠে।

বাবু এবং টামি; Source: cosplaycon.files.wordpress.com

টামি চাচ্ছিলেন তার সবকিছু গোছগাছ করে এলাকা ত্যাগ করবেন, কিন্তু বাবু তাকে শুধুই সামনে যাওয়ার জন্য টানছিল। টামি অন্য কোনো দিকে যেতে লাগলেই বাবু জোর করে তাকে পাহাড়ের দিকে যেতে সংকেত দিচ্ছিল। এভাবে একরকম জোর করেই বাবু টামির অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে নিয়ে বাসা থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরের এক পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পৌঁছায়। পাহাড়ে উঠে টামি আকানুমা পেছন ফিরে তাকিয়ে যা দেখলেন তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। ভূমিকম্পের পরপরই যে সুনামি হয়েছে তাতে তার পুরো শহর তছনছ হয়ে গিয়েছে। যেখানে তার বাড়ি থাকার কথা সেখানকারও সব কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বুঝতে পারলেন বাবু যদি তাকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে না আসতো তাহলে তিনিও সেই ধ্বংসযজ্ঞের শামিল হতেন।

ক্লাক ক্লাক

ঘটনাটি ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বরের। সেদিন সকাল ৬:১৫ মিনিটে একটি মুরগির গলার আওয়াজে ডেনিস মুরস্কা এবং তার স্ত্রী সুজান কটি’র ঘুম ভেঙে যায়। তাদের কাছে ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত লাগে। কারণ, প্রথমত এত সকালে তাদের মুরগিগুলো কোনদিন ডাকেনি এবং দ্বিতীয়ত অন্যদিনের তুলনায় সেদিন তাদের কোনো এক মুরগি অতিরিক্ত জোরে চিৎকার করছিলো। মুরগিটির এমন অদ্ভুত আচরণের কারণ বের করতে ডেনিস বিছানা থেকে উঠে বাড়ির বেজমেন্টে প্রবেশ করলেন।

ক্লাক ক্লাক; Source: img.dlyakota.ru

নিচে নেমে আসা মাত্রই তিনি দেখলেন তার গ্যারেজে আগুন লেগেছে এবং দ্রুতই সেই আগুন পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পরছে। কোনো কারণে গ্যারেজের ‘স্মোক ডিটেক্টর’টি কাজ করেনি, যার ফলে বাসার কেউই প্রথমে আগুনের ব্যাপারটি টের পায়নি। তৎক্ষণাৎ ডেনিস ঘরে দৌড়ে গিয়ে তার স্ত্রীকে জাগিয়ে দেন এবং দুজনে দ্রুত বাসা ত্যাগ করেন।

একটু পরে দমকলবাহিনী এসে বাড়ির আগুন নেভায় এবং তারা একটি মুরগিকে উদ্ধার করে। মুরগিটির নাম ক্লাক ক্লাক। তার এক পা অচল হওয়ায় সে বাসা ত্যাগ করতে পারেনি। তবে কোনভাবে আগুনের ভেতরেও সে বেঁচে গিয়েছিল। প্রথমে নিজের কোনো মুরগির ডাক মনে করলেও মুরগিটি আসলে ছিল ডেনিসের প্রতিবেশীর। অনেকদিন হলো কোনো ডিম না দেওয়ায় ক্লাক ক্লাকের মালিক মুরগিটিকে খেয়ে ফেলার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। তবে নিজেদের জীবন বাঁচানোয় ডেনিস তার প্রতিবেশীকে অনুরোধ করেন মুরগিটিকে যেন তারা হত্যা না করে।

লুলু

পেনসিলভেনিয়ার এক বয়স্ক দম্পতির ভিয়েতনামিজ শূকরের নাম হচ্ছে লুলু। লুলু আসলে তাদের মেয়ের পোষা শূকরছানা ছিল। বড় হবার পর মেয়ে তার বাবা-মায়ের কাছেই লুলুকে রেখে যায়। এই ৬৮ কেজি ওজনের বিশাল প্রাণীটি সাধারণত শুয়ে বসে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করতো। তবে সে সকলের কাছে পরিচিত ছিল তার ‘জেলি ডোনাট’ এর উপর প্রচণ্ড আসক্তির কারণে।

লুলু; Source: c.eazon.com

তবে ১৯৯৮ সালের ৪ আগস্ট লুলু তার অন্য এক অবদানের কারণে সবার কাছে বেশি পরিচিত হয়ে যায়। লুলুর মনিবের স্ত্রী জো অ্যান আল্টসম্যানের ১৮ মাস আগে একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলো। সেদিন বাড়িতে একা থাকা অবস্থায় আবার তার হার্ট অ্যাটাক হয়। তিনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করেন। কিন্তু রাস্তা থেকে বাসা দূরে হওয়ায় কারো কানে তার আওয়াজ পৌঁছায়নি। মহিলাটির কুকুর ব্যাপারটি লক্ষ্য করে। কিন্তু সে সেখানেই বসে থেকে ঘেউঘেউ করতে থাকে। শেষে লুলু তার মোটা শরীর নিয়েই বাসা থেকে বের হয় এবং রাস্তায় গিয়ে সেখানে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর লুলুকে দেখে এক পথচারী থেমে যায় এবং লুলুকে অনুসরণ করে তিনি বাসায় ঢুকে পড়েন। সেখানে জো অ্যানের এমন করুণ অবস্থা দেখে তিনি তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। ফলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। অ্যানের জীবন বাঁচাতে লুলুর এমন অসাধারণ অবদানের জন্য তাকে পরবর্তীতে একটি বিশাল বড় আকারের ডোনাট পুরষ্কার হিসেবে দেয়া হয়।

ইংকি

প্রচণ্ড অপুষ্টিতে ভোগা ইংকি নামের বিড়ালটিকে দেখে ক্রুগার পরিবার তাকে নিজেদের বাসায় আশ্রয় দেন। গ্লেন ক্রুগার বিড়ালটিকে অত্যন্ত আদর-যত্ন দিয়ে বড় করতে থাকেন, যার ফলে সে দ্রুতই তার হারানো স্বাস্থ্য ফিরে পায়। বিনিময়ে বিড়ালটি একসময় তাদের এক বিরাট উপকারে আসে।

ইংকি; Source: spcaallegany.org

একদিন রাতে গ্লেন তার সেলার ঘরে যাবার সময় সিঁড়ি থেকে নিচে পড়ে যান। পড়ে যাওয়ায় গ্লেনের হাত ভেঙে যায় এবং তার মেরুদণ্ডের হাড়ে ফাটল ধরে। সেসময় সবাই ঘুমন্ত থাকায় তার সাহায্যের আবেদনও কারো কান অব্দি পৌঁছায় নি। কিন্তু গ্লেনের ডাক ইংকি শুনতে পায়। সে কাছে আসলে গ্লেন ইংকিকে তার স্ত্রী ব্রেন্ডাকে ডাক দিতে বলে। ইংকি গ্লেনের নির্দেশ যা-ই বুঝে থাকুক না কেন সে গিয়ে ব্রেন্ডার শোবার ঘরের দরজায় জোরে জোরে আঁচর কাটতে থাকে। ব্রেন্ডার এতে ঘুম ভেঙে যায়, এবং ইংকির এমন আঁচর কাটা দেখে ভাবেন “হয়তো বিড়ালটি ঘরের বাইরে যেতে চাচ্ছে”! বিছানা থেকে উঠামাত্রই ব্রেন্ডা তার স্বামীকে সেলার ঘরের সিঁড়ির নিচে পড়ে থাকতে দেখেন। তারপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেই দুর্ঘটনার পর গ্লেন পুরোই চলাফেরায় অচল হয়ে গেলেও, ইংকির অবদানেই তিনি মৃত্যু থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন।

উইলি

উইলি হলো কলোরাডোর ডেনভারে বসবাসকারী মেগান হাওয়ার্ড নামের এক মহিলার পোষা তোতাপাখি। মেগান ছিলেন একজন বেবি-সিটার। তিনি যেখানেই যেতেন সব সময় তার তোতাপাখিটিকে নিজের কাছেই রাখতেন। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসের একদিন তিনি এক বাচ্চাকে দেখাশোনা করছিলেন। বাচ্চাটিকে খেতে দিয়ে তিনি একটু বাথরুমে যান। কিন্তু কিছুক্ষণ পর খাবার বাচ্চাটির গলায় আটকে যায়। নিঃশ্বাস আটকে আসায় বাচ্চাটির চেহারা নীল রুপ ধারণ করে। কিছু দূরে থাকা উইলি ব্যাপারটা লক্ষ্য করে এবং সে দ্রুত পাখা ঝাপটাতে ও চিৎকার করতে শুরু করে।

উইলি; Source: cdn.skim.gs

মেগান দ্রুত উইলির কাছে আসেন কী হয়েছে সেটা দেখার জন্য। তখন উইলি মেগানের দৃষ্টি বাচ্চাটির দিকে ফেরানোর জন্য বার বার “মামা বেবি, মামা বেবি” বলে চিৎকার করতে থাকে। চেহারা প্রায় নীল হয়ে যাওয়ায় মেগান দ্রুত বাচ্চাটির কাছে ছুটে যান এবং মুখের ভেতরে আটকে থাকা খাবার বের করে ফেলে দেন। ফলে বাচ্চাটি প্রাণে বেঁচে যায়। উইলির এমন অবদানের জন্য পরবর্তীতে তাকে রেড ক্রসের ‘এনিমেল লাইফসেভার এওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। উইলিই হলো প্রথম তোতাপাখি যে এই পুরষ্কারটি পেয়েছিলো।

ডি-বয়

ডি-বয়; Source: News 9

মাত্র তিনমাস আগে ওক্লাহোমা শহরে বসবাসকারী রবার্টা ট্রাউইক একটি কুকুরকে উদ্ধার করে নিজের বাসায় আশ্রয় দেন। তিনি কুকুরটির নাম দেন ডি-বয়। কিন্তু তিনি কখনোই ভাবেননি এই উদ্ধারকৃত কুকুরটিই একদিন তাদের এক বড় ধরনের বিপদ থেকে উদ্ধার করবে। ঘটনাটি ২০০৮ সালের। একদিন পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে রবার্টা নিজের শোবার ঘরে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় তাদের অজান্তেই একজন অস্ত্রধারী ব্যক্তি তাদের বাসায় প্রবেশ করে। তারপর অস্ত্র দেখিয়ে সবাইকে মেঝেতে শুয়ে পড়তে বলে।

ডি-বয়; Source: grouchypuppy.com

কিন্তু সেসময় হঠাৎ করেই পাশের ঘর থেকে ডি-বয় ছুটে বের হয়ে আসে। এসেই অস্ত্রধারী ব্যক্তিটিকে আক্রমণ করা শুরু করে। ব্যক্তিটি এমন অপ্রত্যাশিত আক্রমণের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না, যার ফলে তিনবার কুকুরটিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত ডি-বয়কে দ্রুত একটি পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তারেরা অপারেশন করে তিনটে গুলিই বের করতে সক্ষম হন। দু’বার মাথায় গুলি লাগার পরও ডি-বয় বেঁচে যায় মূলত তার মাথার শক্ত খুলির জন্য। তার সাহসিকতার জন্য পরবর্তীতে ডি-বয়কে ‘হিউমেন সোসাইটি’স পিপল’স হিরো এওয়ার্ড’ও দেয়া হয়।

ফিচার ইমেজ: youtube.com

Related Articles