Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় কয়েকটি বাগান

বাগানের সৌন্দর্য যেকোনো মানুষকেই মোহিত করে। কোনো সুন্দর বাগানে ঘুরতে গিয়ে তার অপার ঐশ্বর্য দেখে অনেক সময় মনে হয় যেন কোনো শিল্পী তার ক্যানভাসে একের পর এক ছবি এঁকে চলেছেন। বাগানে ফুটে থাকা বিচিত্র রঙের ফুল-পাতার সমারোহ আর তার সাথে বাগান তৈরির শৈল্পিক ভাবনায় মুগ্ধ হননি এমন মানুষ সত্যিই দুর্লভ। 

পৃথিবীতে কত ধরনের যে বাগান আছে তা ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয়। কোনো বাগানে আছে ২০ হাজার অর্কিড, কোনো বাগানে আছে ২৫০ বছরেরও বেশি বয়সী বট গাছ, আবার কোনো বাগানে আছে ৮০ বছরের পুরনো বুড়ো আঙুলের সমান উচ্চতার বনসাই। 

এসব বাগানের পেছনে বহু মানুষের চিন্তা-ভাবনা, আবেগ এবং শ্রম জড়িয়ে রয়েছে, যা আজ ইতিহাসের সাক্ষী। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত এমনই কয়েকটি ঐতিহাসিক ও শিল্পমন্ডিত বাগানের সন্ধান দেবো আজ আপনাদের।

সিজিরিয়া গার্ডেন, শ্রীলঙ্কা

সিজিরিয়া গার্ডেন শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলোর মাঝে অন্যতম। শ্রীলঙ্কার উত্তর মাতুল জেলার ডাম্বুলা শহরের কাছেই এই ঐতিহাসিক বাগানটি অবস্থিত। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পাওয়া এই বাগানটি প্রাচীন নগর পরিকল্পনার এক অন্যতম নির্দশন হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

সিজিরিয়া পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক বাগান সিজিরিয়া গার্ডেন; Image Source: peoplestravels.com

সিজিরিয়া পাহাড়কে কেন্দ্র করে এ বিশাল বাগানটি গড়ে উঠছে। এই এলাকাটি একসময় ছিল রাজা কাশ্যপের রাজধানী। বাগানটি বিশ্বের প্রাচীন বাগানগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাহাড়ের একদিকে এক বিশাল ল্যান্ডস্কেপ, তার সাথে বহমান পানির স্রোতধারা, পাথুরে পাহাড় আর বাগান মিলে পুরো এলাকা জুড়ে এক নৈসর্গিক দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। একসময় এই এলাকায় অনেকগুলো বৌদ্ধ মঠ ছিল। কোলাহল এড়িয়ে একটু নিরিবিলি প্রশান্তির জন্য সিজিরিয়া গার্ডেন একটি আদর্শ স্থান।

সিজিরিয়া গার্ডেনের একটি দর্শনীয় স্থান ওয়াটার গার্ডেন; Image Source: matthewwilliamsellis.photoshelter.com

গার্ডেন অব ভার্সাই, ফ্রান্স

বিশ্বের প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক বাগানগুলোর মধ্যে অন্যতম ফ্রান্সের ‘গার্ডেন অব ভার্সাই’। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ২০ কি.মি. দূরে দক্ষিণ-পশ্চিম ভার্সাই শহরের ভার্সাই রাজপ্রাসাদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এই অসাধারণ বাগান। এটি ৮০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। 

 ভার্সাই রাজপ্রাসাদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ফ্রান্সের ঐতিহাসিক বাগান ‘গার্ডেন অব ভার্সাই’; Image Source: YouTube

১৬৬১ সালে চতুর্দশ লুইয়ের নির্দেশে ডিজাইনার অ্যান্ড্রে লে নোট্রের পরিকল্পনায় এই বাগানের কাজ শুরু হয়। পরে ১৬৬৪ সাল থেকে ১৬৮৩ সাল পর্যন্ত চার্লেস লি ব্রুন বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নানা ভাস্কর্য, ফোয়ারা সংযোজন করেন। বর্তমানে বাগানটিতে ৩৭২টি ভাস্কর্য, ৫৫টি ঝর্ণা, ছয়শো ফোয়ারা এবং ১.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৬২ মিটার প্রশস্ত খাল বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে।

বাগানের মর্মর প্রতিকৃতিগুলো ইতিহাসকে প্রতিনিয়ত নাড়া দিয়ে যায়; Image Source: fascinatewithzea.com

প্রতিটি ঝর্ণার নকশার সাথে জড়িয়ে রয়েছে কোনো না কোনো ফরাসি পৌরাণিক কাহিনীর চরিত্র। সারি সারি নির্দিষ্ট গাছের ফাঁকে ফাঁকে চলার জন্য নুড়ি বিছানো পথ রয়েছে। এই নুড়ি বিছানো পথ আর লেকের পাশ দিয়ে হেঁটে চলা প্রেমিক যুগলের কাছে এক রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি করে। শীতকালে যখন পুরো বাগানটি ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়, তখন তা এক স্বর্গীয় রূপ ধারণ করে। বর্তমানে বাগানটিতে দুই লক্ষের অধিক গাছ রয়েছে। প্রতিবছর দুই লক্ষের ওপর ফুলের গাছ লাগানো হয়। ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কো বাগানটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

শীতকালে বাগানটি ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়, যা দেখে মনে হবে স্বর্গের কোনো বাগান; Image Source: fascinatewithzea.com

মনেট গার্ডেন, ফ্রান্স

মনেট গার্ডেন ফ্রান্সের আরও একটি বিখ্যাত বাগান। চিত্রশিল্পী মনেটের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বাগানটি গড়ে ওঠে। প্রতি বছর পাঁচ লক্ষের মতো পর্যটক এই বাগানের রূপ বৈচিত্র্য দেখার জন্য এই বাগানে উপস্থিত হন। বাগানটি দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশে মনেট হাউজের পাশের খালি জায়গা নিয়ে তৈরি হওয়া ক্লস নরম্যান্ড স্থল উদ্ভিদের বাগান, অপর অংশে জলজ বাগান বা ওয়াটার গার্ডেন, যার চারপাশে জাপানি শিল্পকলার নানা সৃষ্টিশীল কারুকাজ দৃশ্যমান।

চিত্রশিল্পী মনেটের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় মনেট গার্ডেনটি গড়ে ওঠে; Image Source: wikimedia commons

বাগানের প্রথম অংশে প্রায় এক হেক্টর জায়গা জুড়ে নানা রঙের ও জাতের ফুলের গাছ, যেমন- টিউলিপ, অরিয়েন্টাল পপি, আইরিশ ইত্যাদি ফুল সাজানো রয়েছে। জলজ বাগানে রয়েছে ওয়াটার লিলি আর নানা রকমের জলজ ফুলের সমারোহ। ওয়াটার গার্ডেন অংশে মনেটের একটি বিখ্যাত চিত্রকর্মের আদলে জাপানী ব্রিজের রেপ্লিকা নির্মাণ করা হয়েছে।    

আকর্ষণীয় ওয়াটার গার্ডেন; Image Source: chamellephotography.com

বাটচার্ট গার্ডেন, কানাডা

পৃথিবীর আরও একটি প্রাচীন এবং অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর বাগানের তালিকায় রয়েছে বাটচার্ট গার্ডেন। ১৯০৪ সালে বাগানটি স্থাপিত হয়। দর্শনীয় এই বাগানটি কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের রাজধানী ভিক্টোরিয়ার কাছে ব্রেন্টউড বে’র ভ্যানকুভার দ্বীপে অবস্থিত। প্রতি বছর এক মিলিয়নের অধিক লোক বাগানটি ভ্রমণ করতে আসেন। প্রায় ৫৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বাগানটিতে প্রায় তিন লক্ষের অধিক ফুল গাছ রয়েছে। 

কানাডার প্রাচীন ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এক বাগান বাটচার্ট গার্ডেন; Image Source: YouTube

বছরের বিভিন্ন ঋতুতে নানা বর্ণের ফুল ফোটায় বাগানটি নতুন নতুন রূপে নিজেকে প্রতিনিয়ত আলোকিত করে তোলে। বছরের বিভিন্ন সময়ে তার আলাদা আলাদা রূপ পরিলক্ষিত হয়। আর বসন্তকালে বাগানটি হয়ে ওঠে একখণ্ড স্বর্গ। এ সময়ে যেন ফলের বন্যা বয়ে যায় সারা বাগান জুড়ে। মনে হবে যেন কোনো ‍ফুলের স্রোতে ভেসে চলেছেন। বাগান পরিকল্পনায় নান্দনিকতার ছাপও স্পষ্ট। ফুলের গাছের পাশ দিয়ে নুড়ি বিছানো হেঁটে চলা পথ। বাগানের কোনো কোনো জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে নানা সৃষ্টিকর্ম, যা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

লোগান, স্কটল্যান্ড

স্কটল্যান্ডের একটি বিখ্যাত বাগানের নাম ‘লোগান বোটানিক্যাল গার্ডেন’। স্কটল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় পোর্ট লোগানের কাছে গ্যালোওয়েয়ের রিন্সে অবস্থিত এই বোটানিকাল বাগান। বাগানে ঢুকে প্রথমেই চোখে পড়বে পাম গাছের সারি। এই পাম গাছগুলো প্রধানত চীন দেশে জন্মায়। তারপর ‘ফার্ন’ গাছের সারি পেরিয়ে যাওয়ার পরেই চোখে পড়বে বিরল প্রজাতির কিছু ফুল ও ফলের গাছ, যেমন- নীল রঙের ‘ক্লিমেটিস ম্যাক্রোপিটোলা’, সমুদ্র সবুজ রঙের ‘লোনিসেরা’, ব্যাঙ্কসিয়ান গোলাপ আর কাঁকড়ার দাঁড়ার মতো অসংখ্য ‘ক্লায়েনথাস পানিসিয়াস’ ফুল।

ইংল্যান্ডের এক দর্শনীয় বাগানের নাম লোগান; Image Source: Gardenvisit.com

ক্লাইমেট্রন, মিসৌরি বোটানিক্যাল গার্ডেন, সেইন্ট লুইস

স্বপ্ন দেখতে ভালবাসতেন ড. ফ্রুটস ওয়েন্ট। তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি নেমে পড়েন একটি বাগান নির্মাণে। মোটেই সাধারণ বাগান নয়। আলাদা ধরনের, একেবারে অন্যরকম। গাছপালা সবসময় বেড়ে ওঠে তাদের নিজস্ব পরিবেশে। প্রাণীদের যেমন ভিন্ন পরিবেশে পোষ মানিয়ে রাখা যায়, গাছের ক্ষেত্রে তা সবসময় হয় না, যদি না তারা ঠিক তাদের নিজস্ব জায়গার মতো আবহাওয়া পায়। যদি তা না পায় তাহলে তারা নিঃশব্দে মরে যায়। কিন্তু যদি এমন একটা বাগান তৈরি করা যায়, যেখানে কৃত্রিম আবহাওয়া সৃষ্টি করে ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুতে এবং আলাদা পরিবেশে বেড়ে ওঠা গাছপালা এক জায়গায় রাখা যাবে, তাহলে? এই অদ্ভুত বাগান তৈরি করার কথাই মনে মনে দীর্ঘদিন ধরে ভাবছিলেন ড. ওয়েন্ট। গ্রিন হাউজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওয়েন্ট নেমে পড়েন তার বাগান তৈরিতে।

সেইন্ট লুইসের ক্লাইমেট্রন মিসৌরি বোটানিক্যাল গার্ডেন; Image Source: missouribotanicalgarden.org

সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো একদিন। ১৯৬০ সালে তৈরি হলো বাগান। মিসৌরির সেন্ট লুইসে। চারদিক ঘেরা এই বাগানের নাম ‘ক্লাইমেট্রন’। মাথার ওপর ছাদ। নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠতে লাগলো নানা প্রজাতির গাছপালা। বাগানটি ৭০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এবং ২৪,০০০ বর্গ ফুট জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এখানে প্রায় ১৪০০ প্রজাতির ওপর প্রায় তিন হাজারের মতো গাছ আছে। আমাজনের জঙ্গলের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার গাছ যেমন আছে, তেমনই বাদ যায়নি হাওয়াইয়ের ঠান্ডা সামুদ্রিক পরিবেশের গাছও।

ভারতবর্ষের শুকনো আবহাওয়ার গাছ যেমন এখানে অত্যন্ত যত্নে লাগানো হয়েছে, তেমনই দরদ আর ভালবাসা দিয়ে লাগানো হয়েছে জাভা পর্বতমালার মাঝামাঝি জায়গার গাছপালাও। ফলে নানা ধরনের গাছপালা ঠাঁই পেলো এই বাগানটিতে। বাগানের ভেতরের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার আধুনিক সব ব্যবস্থা রাখা আছে। যান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে দরকার মতো ভেতরের হাওয়া বের করে দেয়া এবং বাইরের হাওয়া ভেতরে টেনে নিয়ে আসার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে গাছের বেড়ে উঠতে কোনো সমস্যা হয় না।

মাউন্ট স্টুয়ার্ট, আয়ারল্যান্ড

৭৯ একর জায়গা জুড়ে আয়ারল্যান্ডে গড়ে ওঠে মাউন্ট স্টুয়ার্ট বাগানটি। বাগানটি স্থাপিত হয় ১৯২০ সালে। ব্যবসায়ী হেনরি শ’য়ের আর্থিক সহযোগিতায় এই বাগানটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

উত্তর আয়ারল্যান্ডের মাউন্ট স্টুয়ার্ট গার্ডেন; Image Source: discovernorthernireland.com

এখানে আছে ২০ ফুট লম্বা ‘সিনোথাস আরবোরাস’ প্রজাতির একটি গাছ, যেটা সারা বসন্তকালে সুন্দর গন্ধে ভরিয়ে রাখে চারদিক। এছাড়া রয়েছে ‘চিলিয়ান’ গাছ। অসংখ্য হলদে এবং সাদা রঙের ‘ব্যাঙ্কসিয়ান’ গোলাপ ফুল দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে। সাদা রঙের ‘ম্যান্ডেভিলা সুয়াভিয়োলেন্স’ এর হালকা গন্ধ সকলের মন মাতিয়ে দেয়।

ফিচার ইমেজ- canadatravelspecialists.com

Related Articles