Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গ্রাম্পি ক্যাট ও লিল বাব: যাদের বিচিত্র মুখভঙ্গি এনে দিয়েছে তারকাখ্যাতি

বিছানার চাদরটা পাল্টানো হচ্ছে, আগের চাদর তুলে রেখে নতুন চাদর মেলে ধরেছেন আর কে যেন সপাৎ করে তার নিচে পৌঁছে গেলো! ব্যাস, কাজকর্ম স্থগিত করে রাখুন কিছুটা সময়। যে ঢুকেছে চাদরের নিচে, এতো জলদি সে বের হচ্ছে না। হতাশ হলেন? সে কিন্তু আপনাকে এত দ্রুত হতাশ করে ক্ষান্ত দেবে না!

ল্যাপটপ নিয়ে সিনেমা দেখতে বসেছেন। আয়েশি ঢঙে কেউ একজন আপনার ল্যাপটপের উপর এসে ধপাস করে শুয়ে পড়লো! আরে বাবা, সিনেমা কি তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ? সে তো সিনেমার চেয়েও দারুণ দেখতে, আপনি বরং তাকে দেখুন। তাকে সময় দিন। আপনার সিনেমা দেখার সে নিকুচি করেছে!

সাত সকালে আজ কাজ নেই কোনো। অ্যালার্মের বালাই নেই। আজ তো লম্বা ঘুম হবে! এহেন দিবাস্বপ্ন দেখার আগে তার অনুমতি নেয়া হয়েছে কি? সে যে আপনার জীবন্ত অ্যালার্ম ঘড়ি, সে খেয়াল আছে? সকালে অযথাই ঘুমুতে দেবে আপনাকে? চেঁচিয়ে, আদর করে, গুঁতো মেরে কিংবা আপনার গায়ের উপর পায়চারী করে সে আপনার ঘুম ভাঙাবে রোজ যেমন ভাঙায়।

কখনো সে তার খাবারের থালায় মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। কখনো হারিয়ে গিয়ে আপনাকে অস্থির করে দিয়ে আলমারির উপর বসে বসে তামাশা দেখছে আর তারপর নেমে এসে এমন ভাব করছে, যেন কিচ্ছু হয়নি! আপনার আদর ও মনোযোগ কেড়ে না নেয়া অবধি শান্তি নেই তার। সারাদিন জ্বালাতন যেমন করবে, আপনাকে শান্তিও দেবে অনেক তার এই দুষ্টু-মিষ্টি কাজকর্মের মাধ্যমে।

এমন মায়াকাড়া চেহারা দেখে একে ভালো না বেসে থাকা যায়? Source: BBC.com

এরকম বিপত্তি ও ভালোবাসা উদ্রেককারী প্রাণী নিয়ে যাদের বাস, তারা তো নিশ্চয় বুঝে গেছেন কাদের কথা হচ্ছিলো। আর যারা এসব পরিস্থিতির সাথে পরিচিত নন, তাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিড়ালের কথা বলা হয়েছে এতক্ষণ। কথায় যে কিনা বাঘের মাসী। এই গল্প বাঘের কিছু মাসী এবং মামাকে নিয়েই, যারা নানা কারণে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিশ্বজুড়ে। বিখ্যাত ইন্টারনেট ক্যাট তারা একেকজন। রোজ ইন্টারনেটে বিভিন্ন জায়গায় তাদের দেখা যায়, তাদের নানা রকম গল্প পাওয়া যায়। মজাদার সব ভিডিওর মাধ্যমে যারা মানবজাতির কিছুটা সময় নিশ্চিতভাবেই ভালো কাটতে সাহায্য করে। ধারাবাহিক আয়োজনের প্রথম পর্বে আজ বলা হবে তেমনই জনপ্রিয় দুটি বিড়ালের কথা। একটি বিড়াল ভারী গোমড়ামুখো, তো আরেক বিড়ালের মুখ দেখে মনে হবে সে আপনাকে সর্বক্ষণ ভেঙচি কাটছে। এই বিড়ালদের জীবন কোনো অংশে গল্পের চেয়ে কম নয়!

গোমড়া মুখের গ্রাম্পি ক্যাট

শুরুতেই এক রাগান্বিত বিড়ালের গল্প হোক। নাম তার টারডার সস, জনপ্রিয়তা আকাশ্চুম্বী। এই মেয়ে বিড়ালটি স্বভাবে কিন্তু রাগী নয় মোটেও! তার মুখখানা সৃষ্টিকর্তা এমনিভাবেই গড়েছেন যে দেখে লাগবে সে জগতের তাবৎ বিষয় নিয়ে হতাশ, বিরক্ত ও ব্যাপক ক্রুদ্ধ! অথচ বিড়ালটির এই গোমড়ামুখো রূপই তাকে রীতিমত তারকা বানিয়ে দিয়েছে। এই তারকা বিড়ালের জন্ম ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল। অর্থাৎ তার বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। সে এখন আর ছোট্ট বিড়ালছানা নেই, অনেকটা পরিণত। টারডারের জন্ম তার বর্তমান ঘরেই হয়েছিলো, অর্থাৎ সে পথ কিংবা কোনো আশ্রয়কেন্দ্র, অথবা অন্য কোনো ঘর থেকে আসেনি। মিশ্র প্রজাতির টারডার কিছু শারীরিক ত্রুটি নিয়েই জন্মেছে বলে তাকে দেখতে এমন লাগে।  তার পেছনের পা দুটিও খানিক ভিন্ন রকম, যে কারণে প্রায়ই টারডারকে অদ্ভুতভাবে বসে থাকতে দেখা যায়।

গোমড়ামুখো টারডার সস! Source: NY Daily News

ইন্টারনেট তোলপাড় করা সব মিমের আইডিয়া এই এক বিড়ালের মুখভঙ্গি থেকে নেয়া হয়। ভাবা যায়? কেননা টারডারের ব্যাপক হতাশ চেহারা মিলে যায় বহু মানুষের জীবনের হতাশাজনক অবস্থার সাথে! আপনি পড়ালেখা নিয়ে বিরক্ত? আপনি আপনার বন্ধুকে খাবারের ভাগ দিতে চাচ্ছেন না? আপনি ঘুমাতে চাচ্ছেন, কিংবা তা-ও চাচ্ছেন না? আপনার অফিসের বস আপনাকে কাজের চাপ দিয়েই চলেছে এবং আপনি তাকে চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দিতে চান? আজকে ছুটির দিন এবং সেটা নিয়ে আপনি আরো বেশি বিরক্ত? অন্যের প্রেম দেখে দেখে আপনার নিজের জীবন বিস্বাদ ঠেকে? খুঁজে নিন আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী গ্রাম্পি ক্যাটের মিম! আপনার সকল রাগ ও দুঃখের মুহূর্তে আপনার মনের ভাব সে প্রকাশ করছে নিজের ছবির মাধ্যমে। অবশ্য, এই সকল কর্মকান্ড সম্পর্কে টারডার সস অবগত আছে কিনা তা জানা যায়নি!

দেখছেন তো, কেমন বদ চিন্তা এই গ্রাম্পি ক্যাটের মাথায়! Source: Know Your Meme

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় বসবাসকারী  টাবাথা বুন্দেসেন এই তারকা বিড়ালের মানুষ অভিভাবক। মানুষদের মতে, বিড়ালসমাজে যাদের তারা হুম্যান বলে থাকে! তো গ্রাম্পি ক্যাটের হুম্যান টাবাথা এরকম দারুণ একটি বিড়ালের অভিভাবক হতে পেরে যারপরনাই খুশি। তিনি কখনো ভাবেননি টারডার সস এতটা তারকাখ্যাতি লাভ করতে পারে! ২০১২ সালে টাবাথার ভাই টারডারের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার পরেই টারডার ও টাবাথার জীবন আমূল বদলে যায়। দুনিয়াজোড়া মানুষের আগ্রহ ও ভালোবাসা টারডার সসকে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে টেনে আনতে থাকে। টারডারের বিপুল সংখ্যক ভক্ত রয়েছে যারা অপেক্ষায় থাকে এই বিড়ালের নতুন ছবি, ভিডিও কিংবা টিভি শো দেখতে। বইও আছে তার, ‘গ্রাম্পি ক্যাট: অ্যা গ্রাম্পি বুক’ তেমনই একটি বই। বলা বাহুল্য, সাধারণ মানুষ কল্পনাও করবে না হয়তো তেমন একটা অঙ্ক এর মধ্যেই আয় করে নিয়েছে বিখ্যাত এই বিড়াল। হুম্যান টাবাথার ঘরে আনন্দের সাথে অর্থযোগ নিয়েই আগমন টারডার সসের। গ্রাম্পি ক্যাটের নামে টি-শার্ট, ক্রিসমাস কার্ড, মগ এ সমস্ত জিনিস বিক্রি হচ্ছে প্রচুর এবং আয়ের টাকা থেকে একটা অংশ দান করা হয় প্রাণীকল্যাণের কাজে। গ্রাম্পি ক্যাটের আছে নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল, তার নিয়মিত খবরাখবর পেতে চোখ রাখা লাগে সেগুলোতে।

টাবাথা বুন্দেসেনের কোলে হতাশ চেহারায় টারডার সস দ্য গ্রাম্পি ক্যাট! Source: Times Square Gossip

টারডারের একটি ভাই আছে পোকি নামের, বরং সাদাকালো পোকিই খানিক গোমড়া স্বভাবের বলে টাবাথা জানিয়েছেন। বেচারা টারডার সস দেখতেই যা বদরাগী, আসলে সে মোটেও তেমন নয়! বরং টারডার সস বেশ আদুরে এবং খোশমেজাজের বিড়াল। ভীষণ শান্ত স্বভাবের টারডার আদর পেতে এবং বেড়াতে ভালোবাসে, কোলে থাকতেও আপত্তি নেই। পর্দার পিছনে লুকিয়ে পড়া তার প্রিয় কাজ। মাঝরাতে যখন টাবাথা গভীর ঘুমের দেশে, টারডার তখন খেলার মেজাজে থাকে। শুরুতেই তো বলা হয়েছে, বিড়াল মানেই বিপত্তি উদ্রেককারী! টারডারের সাথে ঘুরে বেড়িয়ে, তার এই তারকাখ্যাতি উপভোগ করে এবং সামলিয়ে দিব্যি হাসিখুশি দিন কাটাচ্ছেন টাবাথা বুন্দেসেন।

জিভ দেখানো লিল বাব

ভীষণ মিষ্টি চেহারার একটি বিড়াল আছে, যার জিভখানা সবসময় বের হয়ে আছে, দেখলে মনে হবে যেন হাসছে। নাম তার লিল বাব, বা লিটল বাব। ছোট্ট বাবও ইন্টারনেটের কল্যাণে খ্যাতি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে। এই তারকা বিড়ালও জাতিতে মেয়ে। অর্থাৎ বাঘের আরেক মাসীর গল্পই হতে যাচ্ছে এখন।

আপনাকে ভেঙচি কাটছে না, তার জিভটা যে মুখের ভেতর জায়গাই পায় না! Source: YouTube

লিল বাব একটি উদ্ধারকৃত বিড়াল, যাকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো ২০১১ সালের জুন মাসে ইন্ডিয়ানার ব্লুমিংটনে। তখন সে একদম ছোট্ট বিড়ালছানাটি, ভাই-বোনদের সাথে ছিলো বাব। এখন তার বয়স পেরিয়েছে ছয়, অর্থাৎ আর ছোট্ট বিড়ালছানা নয় সে। অথচ তাকে অভিহিত করা হয় ‘পারমা-কিটেন’ নামে, যার মানে হলো পার্মানেন্ট কিটেন অর্থাৎ চিরস্থায়ী বিড়ালছানা! তাকে দেখতে যে আজীবন বাচ্চার মতই লাগবে। কেননা এই বিড়ালটিও জন্মেছে বিশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে, যে জন্য তার নিচের চোয়াল অতিরিক্ত ছোট এবং সে তার জিভটা মুখের ভেতর রাখতে পারে না। বাবের মুখে কোনো দাঁতের উপস্থিতিও নেই! হাড়ের সমস্যা অস্টিওপেট্রোসিস নিয়েও এসেছে সে। শুনলেই মনের মধ্যে একটা দুঃখবোধ চলে আসে।

এই বিশেষ শারীরিক অবস্থা লিল বাবকেও অনন্য করে তুলেছে গ্রাম্পি ক্যাটের মতো এবং তার খ্যাতিও আকাশছোঁয়া। লিল বাবের অভিভাবক হুম্যানের নাম মাইক ব্রাইডেভস্কি। সোশ্যাল সাইটে মাইক নিজেই প্রথম পোস্ট করেন বাবের ছবি, যা বাবকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। ইউটিউব ভিডিওতে ভিউর সংখ্যা বাড়তেই থাকে এই বিড়ালছানার, এখনো সে ধারা অব্যাহত। টিভি শোতেও দেখা যায় এই জিভ দেখানো বিড়ালের হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিতি।

মাইকের কোলে তার আদুরে বিড়াল লিল বাব; Source: PerPETually Speaking

লিল বাবকে দত্তক নেয়া মাইক ব্রাইডেভস্কি অর্থনৈতিকভাবে দুরবস্থায় ছিলেন। এতোটাই বাজে অবস্থা হয়েছিলো মাইকের যে দিন দিন সঙ্কটে আর দেনাদারীর বোঝা নিয়ে হতাশায় ভেঙে পড়েছিলেন। মাইকের সেই চরম বিপদের অবস্থা থেকে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া চরিত্রের নাম আন্দাজ করে ফেলেছেন নিশ্চয়? লিল বাব, দ্য অ্যামেজিং ক্যাট!

বাবের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়, যেটাকে পরবর্তীতে কাজে লাগাতে মাইক কোনো ভুল করেননি। বাবের আয়ের পরিমাণ তখনই যা ছিলো তাতে মাইকের দেনা শোধ তো হয়ই, আদরের বিড়ালটির ছবি তোলার জন্য মাইক একটি ক্যামেরাও কিনে ফেলেন। সাথে কেনা হয় একটি ল্যাপটপ, বাবের নতুন নতুন ছবি তার ভক্তদের কাছে পৌঁছুতে।

‘লিল বাব’স লিল বুক: দ্য একস্ট্রাঅর্ডিনারি লাইফ অফ দ্য মোস্ট অ্যামেজিং ক্যাট অন দ্য প্ল্যানেট’, লিল বাবকে নিয়ে লেখা বই এটি। তার নামেও আছে টি-শার্ট, মগ, ব্যাগ এবং আরো অনেক কিছু যেগুলো বাবের বিপুল আয়ের উৎস। লিল বাবের আরো যেটা আছে তা হলো একটি বিশাল হৃদয়! প্রানীকল্যাণের কাজে লিল বাবের আয় থেকে দান করা হয় বেশ বড়সড় অঙ্কের অর্থ। বাবের নামেও আছে মিম, কিন্তু বলাই বাহুল্য যে বাবের সেসব মিমও তার হাসিখুশি ভাবের প্রকাশ ঘটায়। সে মোটেও হতাশ নয়, জীবনকে খুব ভালোবাসে আর সবাইকে সেই বার্তাই দিয়ে যায় এসকল ছবির মাধ্যমে।

বাব যেন সবসময়ই হাসছে! Source: One Green Planet

একেবারেই বিপরীত ভাবমূর্তির এই দুই বিড়ালের গল্প দিয়েই আজকে আমাদের গল্প ফুরলো। আরেকদিন নিয়ে আসবো টারডার সস আর লিল বাবের মত জনপ্রিয় আরো কিছু আদুরে বিড়ালের এমন সব গল্প। তবে এই গল্পের শেষে আপনি এখন কিন্তু জানেন, গ্রাম্পি ক্যাট মোটেও গোমড়া স্বভাবের নয় এবং লিল বাব আসলেই অনেক মানুষকে জীবনের প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচার প্রেরণা যোগানো এক বিস্ময় বিড়াল।

ফিচার ইমেজ- The Daily Dot

Related Articles