Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মা পাখি ও তার শাবকদের কথা

এই পৃথিবীতে সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা চিরন্তন, শাশ্বত। একটি মানবশিশু জন্ম নেয়ার পর তার মা যেমন তার সদ্যোজাত সন্তানের খাওয়ানো থেকে শুরু করে লালন-পালনের সবরকম ব্যবস্থা করে থাকেন, ঠিক তেমনি বিভিন্ন প্রাণীকূল ও পক্ষীকূলও তার ব্যতিক্রম নয়। মা পাখিদের তার শাবকদের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য, নিরাপত্তার জন্য তাদের আগ্রাসী মনোভাব সেই চিরন্তন সত্যকেই বার বার প্রমাণ করে।

এই বিশ্বে প্রায় ৯,০০০ এর বেশি প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এবং ডিম উৎপাদনের মাধ্যমে তারা তাদের প্রজাতির বিস্তার করে চলছে। বাসা-বাড়ির ছিদ্র গলি পথ বা সুরঙ্গ থেকে শুরু করে গাছের মগডালে- সব জায়গাতেই পাখিদের অবাধে বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ে নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য অনুসারে। অনুকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে পাখি তার নিজের সুবিধা মতো বাসা তৈরি করে সেখানে ডিম পাড়ে এবং নিজের দেহের তাপে অর্থাৎ, তা দিয়ে ডিম ফোটানোর ব্যবস্থা করে থাকে। ডিম থেকে যখন বাচ্চা ফুটে বেরিয়ে আসে, তখন মা পাখির দায়িত্ব পড়ে তার বাচ্চাদের লালন-পালন থেক শুরু করে বাচ্চার খাদ্যের ব্যবস্থার।

তবে এক্ষেত্রে কিছু কিছু পাখি ব্যতিক্রমী ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন: কোকিল, বউ-কথা-কও পাখির মতো কয়েক প্রজাতির পাখিদেরকে নিজেদের বাসা তৈরি করতে খুব একটা দেখা যায় না। আর তাই নিজেরা বাসা তৈরি না করে কাক বা অন্য পাখিদের বাসায় তারা ডিম পাড়ে। আর অপেক্ষা করতে থাকে কখন তাদের ডিমগুলোতে বাচ্চা ফুটে বেরিয়ে আসবে। এজন্য তারা ঐসব পাখির আশেপাশে আস্তানা গাড়ে এবং প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করতে থাকে যেন তাদের ডিমগুলো এবং বাচ্চাদের কোনো ক্ষতি না হয়।

নিজেরা বাসা তৈরি না করে কাক বা অন্য পাখিদের বাসায় ডিম পাড়ে বউ কথা কও; Source: Flickr

বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বাচ্চাদের সাধারণত ‘অ্যালট্রিকাল’ এবং ‘প্রিকোসিয়াল’- এই দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ে থাকে। ‘অ্যালট্রিকাল’ শ্রেণীর পাখির বাচ্চারা দুর্বল প্রকৃতির হয়ে থাকে। জন্মাবার পরপরই এই শ্রেণীর বাচ্চাদের শরীরে পালক থাকে না, থাকে শুধু ছাল-চামড়া। একেবারে অসহায়, দুর্বল, চোখেও দেখতে পায় না, হাঁটতে পারে না। এরা শুধু মুখে হাঁ করতে পারে। মা পাখিরা ঠোঁটের সাহায্যে তাদের এসব বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে থাকে। হেরন, বাজপাখি, পেঁচা এবং কোনো কোনো সামুদ্রিক পাখি এই শ্রেণীর অন্তর্গত।

আর এক শ্রেণীর পাখির বাচ্চাদের বলা হয় ‘প্রিকোসিয়াল’। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে হাঁস ও মুরগির ছানা। এদের গা পালকে ঢাকা থাকে, এদের চোখ দুটো উজ্জ্বল; এরা মায়ের পিছু পিছু দৌড়তেও পারে এবং ঠোঁট দিয়ে খাবার খুঁটে নিতে পারে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, প্রিকোসিয়াল শ্রেণীর পাখির বাচ্চাদেরই শৈশব বেশিদিন স্থায়ী হয় এবং অ্যালট্রিকাল শ্রেণীর পাখির বাচ্চারা ওদের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি বড় হয়ে ওঠে। আবার এই দুই শ্রেণীর বাচ্চাদের প্রজাতিভেদেও নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়।

মুুরগী ও তার ছানা; Source: pinterest

বাচ্চা সং বার্ডের জন্মের সময় গায়ের পালক থাকে না এবং এরা খুবই দুর্বল থাকে, কিন্তু দ্রুত বড় হতে থাকে। বাচ্চা ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে, তখন মা সং বার্ড তার সন্তানের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য ঘণ্টায় ৪-১২ বার পর্যন্ত খাইয়ে দিয়ে থাকে। এ সময় মা সং বার্ড প্রোটিন সমৃদ্ধ পোকামাকড় শিকার করে নিয়ে আসে তার বাচ্চাদের জন্য।

মা সং বার্ড ও তার শাবক; Source: tuku.cn

ইউরোপিয়ান কাক্কুর শাবকদের জন্মের সময় ওজন থাকে মাত্র চার থেকে ছয় গ্রাম, তিন সপ্তাহ পরে তার ওজন বেড়ে দাঁড়ায় পঞ্চাশ গ্রাম। দেহ গঠনের সময় এই পাখির প্রধান খাদ্যই হয় প্রোটিন। অবশ্য পুরোপুরি বড় হয়ে গেলে এরা এই খাদ্যাভাস বদলে ফেলে ফল ও শস্যবীজ খেতে শুরু করে। এসব বাচ্চা এত তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার মূল কারণ বাবা ও মা ইউরোপিয়ান কাক্কু তাদের শাবকদের অনবরত খাইয়ে চলে।

ইউরোপিয়ান কাক্কু ও তার শাবক; Source: nationalgeographic.com

কোনো কোনো পাখি তার বাচ্চাদের খাওয়াবার জন্য দিনে ৮৪৫ চক্কর লাগায়, কোনো কোনো পাখি বাচ্চাদের খাওয়াবার জন্য ৯০০ বারও ওড়াওড়ি করে। অন্যদিকে আবার ইগল পাখি মাত্র দু-তিনবার চক্কর কাটে সারাদিনে। ওরা এটুকু সময়েই যে শিকার নিয়ে আসে, তা বাচ্চাদের পেট ভরার পক্ষে যথেষ্ট। বাচ্চাদের খাবার এবং সুরক্ষার জন্য মা ইগলের পাশাপাশি পুরুষ ইগলও সমান ভূমিকা পালন করে থাকে। যখন মা ইগল খাবার সংগ্রহ করতে যায়, তখন বাচ্চাদের দেখাশোনার দায়িত্ব বাবাটির উপর বর্তায়।

মা ইগল ও তার সন্তান; Source: nicolasdory.com

কোনো কোনো পাখির বাচ্চাকে দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে মা পাখিকে খাবার সংগ্রহ করে খাবার খাওয়াতে হয়। তারা জন্মাবার নয় দিন পরেই বাসা ছেড়ে উড়তে শেখে। পাখি অ্যালবাট্রস সমু্দ্রতীরের পাখি হলেও বাচ্চা দেওয়ার জন্য সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় তাদের পছন্দ। জন্মাবার তিন থেকে দশমাস পরেই প্রজাতিভেদে বাচ্চা আলবাট্রস প্রথমবার সমুদ্রের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে শেখে। ওরা ঠিকমতো উড়তে এবং বেঁচে থাকতে পারবে কিনা, তা এই প্রথমবার ওড়ার কয়েকমাসের মধ্যেই নির্ধারিত হয়ে যায়। জন্মাবার প্রথম বছরে অ্যালবাট্রস শাবকদের মৃত্যুর হার খুব বেশি।

পাখি অ্যালবাট্রস ও তার শাবক; Source: 1freewallpapers.com

বেশিরভাগ পাখিই বাসায় ঠোঁটে করে পোকামাকড় এনে বাচ্চাদের খাওয়ায়। কিন্তু সামুদ্রিক কোনো কোনো পাখি আবার খাবার গিলে ফেলে বেশ খানিকটা হজম করে নেয়, তারপর সেটা উগরে দিয়ে পাখিদের খাওয়ায়। এর ফলে পাখিরা বেশি খাবার বহন করে বাসায় নিয়ে যেতে পারে এবং সেইসাথে বাচ্চারাও খানিকটা পরিপাক করা খাবার খেতে পায়। এতে তাদের খাবার হজম করার পক্ষে সুবিধে হয়।

বাচ্চাদের সামনে খাবার ফেলে রাখে মা সি-গাল  ; Source: AnimalWhoop

সি-গাল এবং সারসরা আবার খাবার নিয়ে এসে বাচ্চাদের সামনে ফেলে দেয়। বাচ্চারা সেই খাবার খেয়ে নেয়। খাবার খাওয়ানো ছাড়াও মা পাখিরা বাচ্চাদের উড়তে উৎসাহ দেয় এবং খাদ্য সংগ্রহের কলাকৌশল শেখায়। এছাড়া পাখিরা তাদের শাবকদের রক্ষা করবার জন্য সবরকম চেষ্টাই করে। সি-গাল পাখির শাবকেরা প্রায় তিনমাস পর্যন্ত তাদের বাবা-মায়ের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকে।

মা সারস  ও তার বাচ্চাকে খাবার খুঁজে নেয়ার কৌশল শেখাচ্ছে; Source: wikimedia commons

কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, যে বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে থাকে সেসব শাবকেরা কিন্তু তাদের বাবা-মাকে মোটেই চিনতে পারে না। সেজন্যই একটি হাঁসের বাচ্চা অনায়াসেই কোনো শস্যক্ষেতে চড়ে বেড়ানো মুরগির বাচ্চার সাথে মিশে যেতে পারে। যেসব বাচ্চা জন্ম থেকেই সাবলম্বী, তাদের নিয়েই মা-বাবাকে একটু মুশকিলে পড়তে হয়। মুরগির বাচ্চা সব কিছুই খুঁটে নিতে থাকে মাটি থেকে। সেজন্য তাকে কী খেতে হবে, কী-কী খেতে হবে না তা শেখানোর দায়িত্ব পড়ে মায়েদের। অনেক সময় ছড়িয়ে থাকা খাবার সংগ্রহের কলাকৌশল শেখানোয় ব্যস্ত থাকতে হয় মা-বাবাদের। এভাবে পাখির বাচ্চারা তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকেই খাদ্য সংগ্রহের কৌশল আয়ত্ত করতে শেখে।

মা হাঁস ও তার হাঁসের ছানা; Source: hubpages.com

তবে দায়িত্বশীলতার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী পাখি পরিবারদের মধ্যে অ্যারিবিয়ন বাবলারসদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই পাখিরা সাধারণত গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করে। আর তাই পরিবারে কোনো শাবকের জন্ম হলে তাকে খাওয়া থেকে তার দেখাশোনার দায়িত্বটি পরিবারের সকলে মিলে করে থাকে, যা সত্যিই বিস্ময়কর।

ফিচার ইমেজ: pinterest.com

Related Articles