Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তাপমাত্রার প্রভাবে লিঙ্গ নির্ধারিত হয় যে প্রাণীগুলোর!

মানুষসহ অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্ত্রী-পুরুষ লিঙ্গ নির্ধারিত হয় ক্রোমোসোম এর ভিত্তিতে। মানবদেহে ক্রোমোসোম থাকে ২৩ জোড়া। এর মধ্যে এক জোড়া ক্রোমোসোমকে বলা হয় সেক্স ক্রোমোসোম। সাধারণত Y-ক্রোমোসোমের দ্বারা পুরুষ বা ছেলে এবং X-ক্রোমোসোম দ্বারা স্ত্রী বা মেয়ে সন্তান নির্ধারিত হয়। সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে হবে এটি নিষেকের সময়েই নির্ধারিত হয়ে যায়।

মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ; © The McGraw-Hill Companies, inc./slideplayer.com

ক্রোমোসোমের ভিত্তিতে সাপ, টিকটিকিরও স্ত্রী-পুরুষ লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। তবে ব্যতিক্রম দেখা যায় কিছু প্রজাতির কচ্ছপ ও সকল ধরনের কুমির প্রজাতির মতো সরীসৃপ প্রাণীর ক্ষেত্রে। সাধারণত এদের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় ডিম ফোটানোর সময়কার তাপমাত্রার উপর! একে বলা হয় Temperature Dependent Sex Determination (TSD)। আজকের লেখায় তাপমাত্রার প্রভাবে কয়েকটি প্রাণীর লিঙ্গ নির্ধারিত হওয়ার বিষয় ও লিঙ্গ নির্ধারণে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

কুমির

কুমির সাধারণত উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ায় পাওয়া যায়। এদের স্বাদু ও লবণাক্ত উভয় প্রকার পানিতেই পাওয়া যায়। কুমির মাত্র ৮-১০ বছর বয়সে প্রজননের জন্য উপযোগী হয়। সাধারণত জুলাই অথবা আগস্ট মাস এদের প্রজননের উত্তম সময়। এদের স্ত্রী-পুরুষ সাধারণত জলের তলে মিলন করে। মিলনের সময় স্ত্রী-পুরুষ কুমির কয়েকদিন পর্যন্ত একইসাথে অবস্থান করে। সে সময়ে তারা বেশ কয়েকবার মিলিত হয় ও ডিমের নিষেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

কুমিরের প্রজনন; Source: livescience.com

সাধারণত মিলনের পর ডিম পাড়ার জন্য স্ত্রী কুমির প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত গর্ত করে। সেখানে সে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ১০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিমগুলোর মধ্য থেকে শতকরা মাত্র ২০ ভাগ ফুটে বাচ্চা হয়। তন্মধ্যে শতকরা মাত্র ২ ভাগ বাচ্চা বেঁচে থেকে পূর্ণবয়স্ক হয়।

ডিম পাড়ার পর স্ত্রী কুমিরটি গর্তের প্রবেশমুখের পাশে লুকিয়ে থেকে ডিমগুলো পাহারা দেয়, যাতে কোনো শিকারী পশুপাখী ডিমগুলো নষ্ট করতে না পারে।

ডিম থেকে বের হচ্ছে কুমিরের বাচ্চা; Source: nationalgeographic.com

ডিমগুলো পরিবেশের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে মাত্র ৮০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফোটে। স্ত্রী কুমির অনেক সময় ডিম মুখেও রাখে এবং ডিমের খোলস ভেঙ্গে বাচ্চা বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে। বাচ্চার ক্ষেত্রে যত্নশীলতার দিক থেকে অল্প কিছু সরীসৃপের মাঝে কুমির অন্যতম।

কুমিরের অনেক অদ্ভুত বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে তাপমাত্রার প্রভাবে বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারিত হওয়া! স্ত্রী-পুরুষ লিঙ্গের বাচ্চা হওয়ার জন্য তাদের নির্দিষ্ট কোনো ক্রোমোসোম নেই। সাধারণত ডিম ফোটানোর সময় পরিবেশের তাপমাত্রা ৩১.৭˚ সেলসিয়াস এর নিচে হলে বাচ্চাগুলো হবে স্ত্রী লিঙ্গের। অপরদিকে ৩১.৭˚-৩৪.৫˚ সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় ফোটা বাচ্চাগুলো পুরুষ লিঙ্গের অধিকারী হয়। আবার তাপমাত্রা ৩৪.৫˚ সেলসিয়াসের অধিক হলে স্ত্রী লিঙ্গের বাচ্চা জন্মায়।

লিওপার্ড গেকো

লিওপার্ড গেকো বা তক্ষক একধরনের গিরগিটি জাতীয় প্রাণী। Eublepharis macularius হচ্ছে প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম। স্ত্রী তক্ষক ৪৫ গ্রাম ওজন না হওয়া পর্যন্ত প্রজনন উপযোগী হয় না। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন পেতে ও প্রজননক্ষম হতে তক্ষকের ৯ থেকে ১০ মাস  সময় লাগে। মিলনের ১৬ থেকে ২২ দিন পর স্ত্রী তক্ষক ১-২টি ডিম পাড়ে। এরা ২০ বছরের আয়ুষ্কালে মাত্র ৮০ থেকে ১০০টি ডিম পাড়ে।

লিওপার্ড গেকোর মিলন; Source: leopardgeckos.co.za

কুমিরের মতো লিওপার্ড গেকো বা তক্ষকের স্ত্রী ও পুরুষ লিঙ্গ নির্ধারিত হয় তাপমাত্রার উপর। গবেষণায় জানা যায়, ডিম ফোটানোর তাপমাত্রা ২৬˚ সেলসিয়াস হলে প্রায় ১০০ ভাগ বাচ্চাই স্ত্রী লিঙ্গের অধিকারী হয়। অপরদিকে, ৩০˚ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শতকরা ৭০ ভাগ এবং ৩৪˚ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ বাচ্চা স্ত্রী লিঙ্গের অধিকারী হবে। তবে ৩২.৫˚ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ তক্ষক পুরুষ লিঙ্গধারী হয়ে জন্মায়।

সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপ

সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপ দেখতে অন্যান্য সাধারণ কচ্ছপের মতই। Chelonia mydas হচ্ছে এর বৈজ্ঞানিক নাম। সাধারণত কচ্ছপের মতো দেখতে হলেও এদের পায়ের পরিবর্তে ফ্লিপার বা পাখনা থাকে। এই কচ্ছপ প্রায় ১০০ বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে আছে।

সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপ; Source: endlessocean.wikia.com

সামুদ্রিক কচ্ছপের ৭টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়। সারাবিশ্বেই এদের দেখা মেলে। এরা মাংসাশী প্রাণী; চিংড়ি, সমুদ্র-শৈবাল, কাঁকড়া, জেলিফিস, শামুক, স্পঞ্জ ইত্যাদি খেয়ে এরা জীবনধারণ করে।

সামুদ্রিক কচ্ছপ একাকী বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। প্রজননের জন্য এরা সৈকতে ফিরে আসে। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের মাধ্যমে এরা ২,২৫৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাদের জন্মস্থানে প্রজননের জন্য চলে যেতে পারে!

বালির গর্তে কচ্ছপের ডিম; Source: wildcumberland.org

দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে সমুদ্রতীরের বালিতে মা কচ্ছপ গর্ত করে ৭০-১৯০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। ডিম পাড়ার পর সেগুলো বালি দিয়ে ঢেকে রাখে। বালির তাপমাত্রায় বাচ্চাগুলো ফোটার পর দ্রুত সমুদ্রে নেমে যায়। ফলে সারাজীবন এই বাচ্চা কচ্ছপ তাদের বাবা-মায়ের দেখা না-ও পেতে পারে!

কচ্ছপের বাচ্চা ফুটছে; Source: kuredu.com

কচ্ছপের বাচ্চা স্ত্রী লিঙ্গের নাকি পুরুষ লিঙ্গের হবে এটি নির্ভর করে বালির তাপমাত্রার উপর। যদি বালির তাপমাত্রা ৩০˚ সেলসিয়াস এর নিচে হয় তবে অধিকাংশ বাচ্চা পুরুষ লিঙ্গ নিয়ে জন্মাবে। অপরদিকে তাপমাত্রা ৩০˚ সেলসিয়াস এর অধিক হলে অধিকাংশ বাচ্চা স্ত্রী লিঙ্গের হবে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বা তাপমাত্রার পরিবর্তন আলোচিত প্রাণীগুলোর বিলুপ্তিকে ত্বরান্বিত করবে। যদি তাপমাত্রার প্রভাবে সব একই লিঙ্গের প্রাণীর জন্ম হয়, তবে একসময় প্রজননবিহীন অবস্থায় প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হতে পারে! ৮ জানুয়ারী ‘কারেন্ট বায়োলজি’তে সামুদ্রিক কচ্ছপের উপর প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এমনই তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের শতকরা ৯৯.৮ ভাগ কচ্ছপ জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে স্ত্রী লিঙ্গ নিয়ে জন্মেছে! অপরদিকে যেখানকার পরিবেশ কিছুটা শীতল সেখানকার শতকরা ৬৫ ভাগ কচ্ছপ স্ত্রী লিঙ্গধারী হয়েছে।

কচ্ছপ ডিম ফোটানোর জন্য কিছুটা উষ্ণ বালিময় স্থান নির্বাচন করে। ফলে তাদের শতকরা ৫০ ভাগ পুরুষ ও ৫০ ভাগ স্ত্রী লিঙ্গের বাচ্চা জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে। তবে এক্ষেত্রেও স্ত্রী লিঙ্গের বাচ্চার সংখ্যা কিছুটা বেশিই হয়।

সীতাকুণ্ড উপকূলে ভেসে আসা মৃত কচ্ছপ; dainikpurbokone.net

জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে বরফ গলে কচ্ছপের জন্মস্থান নিমজ্জিত হলেও তাদের বিলুপ্তি বা সংখ্যা কমে যেতে পারে। কারণ কচ্ছপ পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের মাধ্যমে তার জন্মস্থানেই ফিরে যায়। এরপর সেই স্থানটিকেই প্রজনন ও ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে নির্বাচন করে। নিমজ্জিত হলে কচ্ছপ সেই স্থানটি খুঁজে পায় না। ফলে ডিম পাড়ার পূর্বে অনেক কচ্ছপকে মরে সমুদ্রতীরে ভেসে আসতে দেখা যায়।

জানকুইলাল সমুদ্রতট ©Larry Graziano

সুতরাং বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপ প্রজাতি ও সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষার জন্য দ্রুত জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলার কথা ভাবতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি ও উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায়, কোস্টারিকার জানকুইলাল সমুদ্রতীরের মতো ব্যবস্থা নেয়া লাগতে পারে। সেখানে বিজ্ঞানীরা কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করেন। এরপর সংগৃহীত ডিম সমুদ্রতীরের একটি নির্দিষ্ট শীতল তাপমাত্রার স্থান ও নির্দিষ্ট গভীরতায় রেখে দেন। বাচ্চা ফুটে বের হয়ে সমুদ্রে যাওয়া পর্যন্ত শিকারী, পশুপাখী ও পর্যটকদের থেকে রক্ষা করার জন্য যথাযথভাবে নজর রাখেন তারা। এ ব্যবস্থাগুলো নিশ্চয়ই সহজসাধ্য নয়! সুতরাং জলবায়ু রক্ষায় করণীয় কী ভাবুন এখনই।

ফিচার ইমেজ – nationalgeographic.com

Related Articles