Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রাণীজগতের সবাই যদি মানুষের মতো বুদ্ধিমান হতো তাহলে কী ঘটতো?

একদিন সকালবেলা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পত্রিকাটা খুলতেই শিরোনামে দেখলেন নতুন এক আবিষ্কারের খবর। কিন্তু একি! আবিষ্কারক এক ডলফিন। টিভি খুলতেই চোখে পড়লো একজন মানুষ উপস্থাপকের পাশে বসে খবর পড়ছেন এক হাতি। আর অফিসে গিয়ে দেখলেন আপনার সহকর্মীর জায়গায় একটি গরু চশমা পরে বেশ গুরুগম্ভীরভাবে কাজ করছে।

না, বাস্তবে তা সম্ভব নয়। কারণ এটি একটি থট এক্সপেরিমেন্ট বা চিন্তন পরীক্ষা। কোনো প্রাণীই মানুষের মতো বুদ্ধিমান নয়। তবে কেমন হতো যদি আমাদের এই পৃথিবীর পুরো প্রাণীজগৎটাই মানুষের মতো বুদ্ধিমান হতো?

Image Source: cirm.ca.gov

কেমন হতো যদি মাদাগাস্কার, জুটোপিয়া, সিং কিংবা আইস এজের মতো জনপ্রিয় সব অ্যানিমেশন ফিল্ম বাস্তবতায় পরিণত হতো? সিনেমার সেই চরিত্রগুলোর মতো সব বুদ্ধিমান প্রাণীদের বন্ধুত্বসুলভ এক জগৎ গড়ে উঠতো মানুষের সাথেও? নাকি ফলাফল হতো ভয়ঙ্কর? প্ল্যানেট অফ দ্য এপস মুভি সিরিজের মতো মানবজাতিকে দাস বানিয়ে রাজত্ব করতে চাইতো কোনো প্রাণী? নাকি মানুষকে পেছনে ফেলে কোনো প্রাণী বসতো রাজার আসনে? আর মানুষ হতো তার প্রজা? শিকার করার নীতি নৈতিকতার বিষয়টি কেমন হতো? শেষ পর্যন্ত জয়টা কি মানুষের হতো? নাকি শিকারি প্রাণীদের অথবা অনুজীবীদের?

আমরা কি বন্ধু হয়ে থাকতে পারতাম? Image Source: Youtube

শুনতে কিম্ভুতকিমাকার আর আজগুবি মনে হলেও অদ্ভুত এই চিন্তন পরীক্ষা থেকে পৃথিবীর বিশিষ্টতম প্রভাবশালী প্রাণী হিসেবে মানুষের সম্বন্ধে হতাশাজনক কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। অদ্ভুত এই চিন্তার ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়েই আজকের এই লেখা।

বিশৃঙ্খলা? কিন্তু কেন?

আপনি হয়তো ভাবছেন এর উত্তরটা হতে পারে – পৃথিবীজুড়ে তৈরি হতো এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। কিন্তু কেন বিশৃঙ্খলা? এর উত্তর দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের আচরণগত পরিবেশ বিজ্ঞানী ইনেজ কাটহিল। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন “যা ঘটতে পারতো তার জন্য বিশৃঙ্খলা সব থেকে সহজ উত্তর।” তার মতে, বুদ্ধিমত্তা যে সবসময় ভালো ফলই বয়ে আনবে বিষয়টি ঠিক তা নয়।

ইনেজ কাটহিল; Image Source: University of Bristal

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের আরেক মনোবিজ্ঞানী রবিন ডানবার বলেন, “আমরা এক প্রজাতি অন্য প্রজাতিকে খুন করতে পারতাম। শুধু মানুষের ক্ষেত্রে তা ঘটে না কারণ, আমরা নিয়মের মধ্যে থাকি আর শান্তি বজায় রাখতে চাই।” 

প্রতিযোগিতাপূর্ণ এক মনোভাব থেকে জন্ম নিতে পারতো হিংস্র নিষ্ঠুরতা। প্রজাতি হিসেবে সেরা হবার লক্ষ্যে তাই অন্য প্রজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হতে পারতো অন্যতম স্বাভাবিক পন্থা। যেখানে একমাত্র বুদ্ধিমান আর চৌকষ প্রাণী মানুষ সেখানেই এত এত সহিংসতা, তবে এমন আরো বুদ্ধিমান প্রাণী থাকলে কি ঘটতো? রবিন ডানবারের বক্তব্যে একমত হয়ে ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট অ্যান্ড্রুজের মনোবিজ্ঞানী জোসেফ কল জানান, “আগের থেকে আমরা এখন অনেক ভালো পর্যায়ে আছি, কিন্তু পুরো বিশ্বের দিকে গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে দেখুন তো সত্যিই কি আমরা ভালো আছি?”

মানবজাতির যেখানে লম্বা এক ইতিহাস আছে নিজ প্রয়োজনে অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীদের নিশ্চিহ্ন করায় বিশাল ভূমিকা রাখার, সেখানে আরো বুদ্ধিমান প্রাণীর আবির্ভাব ঘটলে তারা ভিন্ন আচরণ করবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। শুধুই কি অন্য প্রজাতি? মানুষ নিজ প্রজাতির মধ্যেই এমন রক্তারক্তি ঘটায় যা পত্রিকাগুলোর রোজকার প্রধান শিরোনামে পরিণত হয়। তবে কি পৃথিবীজুড়ে আরো অনেকগুলো বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হওয়া লাগতো আমাদের? যেখানে মানুষের সাথে অংশ নিতো অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীরা? কাটহিলের মতামত, “মানুষ অপরিচিত বা খারাপ কিছুর প্রতি শুরুতেই নেতিবাচক আর সহিংস মনোভাব নিয়ে প্রস্তুত থাকে।”

কে পরতো জয়ের মুকুট? Image Source: iStock

কিন্তু সহিংসতা আর যুদ্ধই যদি হতো তবে কে জয়লাভ করতো? মানব রাজত্বের এই পৃথিবীতে তার স্থানে ভাগ বসাতো কে? নাকি রাজত্বটা মানুষেরই থাকতো?

শিকারি নাকি তৃণভোজী?

শুরুতেই আসা যাক দুই ধরনের প্রাণীদের কথায়- শিকারি বা মাংসাশী এবং তৃণভোজী। প্রথমেই ধরা যাক তৃণভোজীদের কথা। টিকে থাকতে সবার আগে প্রয়োজন শক্তি আর তৃণভোজীরা দিনের বড় একটা সময় কাটাতো খাবারের সন্ধানে আর ঘাস লতাপাতা খেয়ে। যে সময়টুকু তারা কাজে লাগাতে পারতো যোগাযোগে, হাতিয়ার নির্মাণে, সভ্যতা তৈরিতে কিংবা আবিষ্কারের পেছনে। যার ফলে তারা পিছিয়ে পড়তো অনেকটা। কিন্তু শিকারি প্রাণীদের এই দিক থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকতে পারে।

কিন্তু প্রশ্নটা যখন গোটা বিশ্ব শাসনের তখন হাঙ্গর, তিমি, অক্টোপাস বা ডলফিনের মতো জলজ প্রাণীদের বাদ দেয়াই লাগে। কারণ পানির নিচে থেকে তারা আর যাই হোক পুরো বিশ্বের উপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তবে পানির নিচের জগতের প্রাণীদের সাথে আধিপত্য নিয়ে ঘটতে পারে আরেক যুদ্ধ। আবার যেসব প্রাণী বিশেষ ধরনের পরিবেশ ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে না তাদেরও এই যাত্রা থেকে বাদ দেয়া যায়।

সাগরতলের রাজত্ব হতো হাঙ্গরের; Image Source: iStock

এবার শিকারি প্রাণীদের নিয়ে ভাববার পালা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আর প্রযুক্তির আধুনিকতায় বিষয়টা খুব মামুলি ব্যাপার। কিন্তু মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগের কথা কল্পনা করুন যখন বড় বড় সব শিকারি প্রাণীর হাত থেকে বাঁচার জন্য সংগ্রাম করেছে এই মানুষ। নিজ প্রয়োজনে শিকার করেছে, যদিও বড় কোনো শিকার করার সময় খুব কমই সফল হয়েছে তারা। তবে এসব শিকারি প্রাণীগুলো যদি বুদ্ধিমান হয়ে যায় তবে কি ‘জোর যার মুল্লুক তার’-এর মতো ঘটনা ঘটবে?

শিকারি প্রাণীদের তুলনায় মানুষের শারিরিক ক্ষমতা খুব কম; Image Source: iStock

তবে আমাদের বর্তমানের অত্যাধুনিক অস্ত্র আর সংখ্যা গরিষ্ঠতাই জয় এনে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ। ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের পরিবেশবিজ্ঞানী অ্যালেক্স ক্যাসেলনিক বলেন, “তাদের আমরা খুব সহজেই হারিয়ে ফেলতে পারতাম। আমরাই জয়ী হতে পারতাম খুব সহজেই।”

শিকারি প্রাণী ছাড়াও আমাদেরই খুব কাছের প্রজাতিরাও বড় ধরনের হুমকির কারণ হতে পারতো। শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং কিংবা গরিলাদের শারীরিক গঠনের অনেকটা মিল আছে মানুষের সাথে। আর সুবিধা হিসেবে তারা ব্যবহার করতে পারবে আমাদের প্রযুক্তি বা অস্ত্রগুলোও। নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কম্পিউটার। শুধু তাই নয় শারীরিক শক্তির দিক থেকেও তারা মানুষের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও তাদের এই জ্ঞান অর্জনের আগেই আমরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে সক্ষম হবো বলে মতামত দিয়েছেন জোসেফ কল। দিন শেষে জয়ের মুকুটটা মানুষের মাথাতেই আসবে বলে ধারণা করেন অধিকাংশ বিজ্ঞানী।

মানুষের সব থেকে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী; Image Source: iStock

লড়তে হতো ব্যাকটেরিয়ার সাথেও

ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার এই প্রতিযোগিতায় আরো বড় একটা অস্ত্র হলো টিকে থাকা। যে প্রজাতি যত বেশি সময় টিকে থাকতে পারবে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সেই প্রজাতির জন্য বিজয় অনেকটাই সুনিশ্চিত।

মানুষের যতটা না এই গুণটি আছে তার থেকে শতগুণ বেশি আছে ব্যাকটেরিয়া আর অন্যান্য অণুজীবগুলোর। খুব কম সময়ে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এরা যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া তো আর বুদ্ধিমান না। এককোষী এই অণুজীবগুলোর কোনো স্নায়ুকোষ নেই। তাই তাদের মানুষের মতো বুদ্ধিমান ভাবা অনেক দূরের কথা। কিন্তু তাদের রয়েছে আরেকটি আশীর্বাদ তা হলো সর্বব্যাপীতা। জোসেফ কল বলেন, “ব্যাকটেরিয়ারা ইতোমধ্যেই সবখানে ছড়িয়ে আছে, এমনকি আমাদের মাঝেও। তাদের এই অত্যাধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অনেক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তুলতে পারতো।”

Image Source: Kurzgesagt

ডানবার বলেন, “আমি অবাক হবো না, যদি খুব ক্ষুদ্র কোনো প্রাণী এই যুদ্ধে জয়লাভ করে। আমার ধারণা, আমরা ব্যাকটেরিয়া আর অন্যান্য অণুজীবগুলোর বেশ ভালো রকমের শিকার হতে পারতাম।” জোসেফ কল আরো জানান, “মানুষ খুব বিপদে পড়বে যদি তাদের বুদ্ধিমান ব্যাকটেরিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে হয়। সমস্যা হলো আপনি চাইলেই তাদের থেকে দূরে থাকতে পারবেন না। কারণ মানুষ তাদের ছাড়া টিকে থাকতে পারবে না।”

কেমন হতে পারতো শিকারের নিয়ম কানুন?

আদিম মানুষ থেকে আজকের এই আধুনিকতার ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা মানুষের শুরটা হয় শিকার দিয়েই। শিকারের উদ্দেশ্যে যখন অস্ত্র তৈরি, শিকার থেকে যখন খাদ্য আর বেঁচে থাকার রসদ, আধুনিক পৃথিবীর দিকে এগিয়ে চলা তখন কেমন হতো যদি শিকার নিষিদ্ধ হতো?

ইকোসিস্টেম; Image Source: Dreamstime

কোনো বুদ্ধিমান প্রজাতিই চাইবে না অন্য প্রজাতির প্রাণীরা তাদের ধরে ধরে খাক। আর সে জন্যই যদি সকল প্রকার শিকার নিষিদ্ধ করা হতো। তবে খাদ্য শৃঙ্খলের কী হতো? ইকোসিস্টেম বা বাস্তুসংস্থান কি ক্ষতিগ্রস্ত হতো না? তৃণভোজীদের কোনো সমস্যা এক্ষেত্রে ঘটতো না। তবে অবশ্যই মাংসাশী প্রাণীরা কেবল পানি পান করে বাঁচতো না। আর কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীও তো আর স্বেচ্ছায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না। তবে কি এই নিয়ম কেউই মেনে চলতো না? উত্তরটা না হয় আপনারাই ভাবুন। তবে উত্তর হ্যাঁ হোক বা না, উভয় ক্ষেত্রেই তা ভয়ানক এক যুদ্ধ ডেকে আনবে।

কল্পনার জগতের বাইরে বাস্তবতার চক্র

Image Source: Sky News

কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসলে একটাই উত্তর মিলে আর তা হলো প্রকৃতিটা ঠিক যেভাবে দরকার সেভাবেই সাজিয়েছেন স্রষ্টা। কাটহিল বলেন, “আমরা প্রকৃতির যে ভারসাম্য দেখি তা বজায় আছে প্রকৃতিতে শক্তির ভারসাম্যতার জন্য।” যার যতটুকু বুদ্ধিমত্তা আর শক্তি দরকার তার কেবল ততটুকুই আছে।

Image Source: Animal Blogger

তবে সব থেকে হতাশাজনক যে বিষয়টি এখানে উঠে আসে তা হলো সকল বুদ্ধিমান প্রাণীর যুদ্ধ শেষে যেই টিকে থাকুক না কেন পৃথিবীটাকে তারা নিয়ে যেতো আরো ধ্বংসের পথে ঠিক যেমনটা আমরা এখন করছি। পৃথিবীর সবথেকে বুদ্ধিমান প্রাণী হওয়ায় পৃথিবী ধ্বংসের দায়িত্বটুকু আমরা তাই সঠিকভাবেই পালন করে যাচ্ছি। এমনকি নিজ প্রজাতিকেও তাই নিশ্চিহ্ন করা আমাদের জন্য মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা কি আমাদের বুদ্ধিমত্তার সঠিক পরিচয় দিচ্ছি? কী মনে হয় আপনার?

This article is in Bangla Language. It's about what if all animals have same intelligence as human have?
References used in this article are hyperlinked inside this article. 
Featured Image: Planet of the apes / Twentieth Century Fox Film Corporation

Related Articles