Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানুষ কেন অন্যান্য প্রাণীর মত আচরণ করে না

মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মাঝে শ্রেষ্ঠ কে? এই প্রশ্নোত্তরে আপনি মুহূর্তকাল না ভেবে বলবেন, অবশ্যই মানুষ। বর্তমানে মানুষকে আমরা বুদ্ধিবৃত্তি ও অন্যান্য গুণসম্পন্ন হিসেবে যেভাবে দেখে থাকি, আদিমকালে অর্থাৎ যে যুগে মানুষ গুহায় বাস করত সে সময়ের দৃশ্যপটটা কিন্তু এরকম ছিল না। গাছের লতাপাতা দিয়ে লজ্জা নিবারণ করত তারা আর আহার হিসেবে গ্রহণ করত ফলমূল ও আগুনে ঝলসানো মাছ বা মাংসের টুকরো। উন্নতধারার জীবনযাপন সে সময়ে কল্পনাতীত ছিল। সময়ের সাথে সাথে কিছু কিছু গুণ বা বৈশিষ্ট্যে ক্রমাগত শান দেয়ার ফলে নিজেদেরকে একটা অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে মানুষ। মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর পার্থক্য শুধুমাত্র চার পা-দু’পায়ের নয়, বরং মূল পার্থক্য কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার কারণে। আর এই বৈশিষ্ট্যকে পুঁজি করেই আদিমকালের গুহায় বসবাসকারী মানুষ আজ উড়োজাহাজে করে চষে বেড়াচ্ছে পুরো দুনিয়া, নিত্যনতুন আবিষ্কারে কাঁপিয়ে তুলছেন পুরো পৃথিবী।

মানুষ ও ক্যাঙ্গারু উভয়ের সামনে যদি আপনি একটি বই রেখে দেন, তাহলে মানুষ খুব যত্ন সহকারে, আগ্রহ ভরে বইটি তুলে নিবে এবং ক্যাঙ্গারু তার প্রাণীসুলভ আচরণ থেকে হয়তো নির্লিপ্ততা দেখাবে আর না হলে পা দিয়ে খোঁচাখুঁচি করতে থাকবে। দুজনেই দু’পা বিশিষ্ট হলেও জ্ঞান-গরিমা ও বিবেকবোধের কারণে দুজনের প্রতিক্রিয়া দু’রকম।

আরেকটি কল্পনার আশ্রয় নেয়া যাক। আপনাকে ও একটি হরিণকে একটি বিশাল বাড়িতে রেখে দেয়া হলো, যেখানে খাবারদাবার ও ঘুমানোর জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে। আপনি কিন্তু দিব্যি খেয়ে দেয়ে, নাক ডেকে ঘুমিয়ে দিনের পর দিন পার করে দিতে পারবেন এখানে। কিন্তু হরিণের ক্ষেত্রে কী ঘটবে? সে তার বরাবরের মতো পেয়ে আসা পরিবেশ না পেয়ে দিনের পর দিন না খেয়ে একসময় হয়ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।

মানুষের সাথে অন্যান্য প্রাণীর ভিন্নতার জন্য দায়ী কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাক।

বুদ্ধিমত্তা

প্রথমেই বলি বুদ্ধিমত্তার কথা। মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখে থাকে এবং শেখার চেষ্টা করে থাকে। পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সময় এবং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ কোনো পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রাণীদের ক্ষেত্রে কোনো পরিস্থিতি এভাবে বোঝা সম্ভবপর নয়। তাদের মস্তিষ্কে উৎপন্ন হওয়া ইতিবাচক ও নেতিবাচক উদ্দীপনার ভিত্তিতে তারা তাদের আচরণ প্রদর্শন করে থাকে।

একদিন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হয়ত অসতর্কতার কারণে ম্যানহোলে পড়ে গেছেন। এরপর আপনি যতবারই ঐ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবেন, পূর্বের পড়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে আপনি সতর্ক হয়ে যাবেন এবং যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করবেন। একটি বিড়াল যদি ঐ একই পথ দিয়ে যায়, তার ক্ষেত্রে এভাবে করে সতর্কতা অবলম্বন করা সর্বদা সম্ভবপর নয়।

আত্মসচেতনতা

প্রত্যেকটি মানুষের আত্মপরিচয়ের পাশাপাশি সে সর্বদা আত্মোন্নয়নের চেষ্টা করে থাকে। এক্ষেত্রে সে কখনো দার্শনিক, সমালোচক বা প্রশংসাকারী হিসেবে নিজেকে বিচার করে থাকে। প্রাণীদের ক্ষেত্রে এমন কোনো বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি দেখা যায় না।

জীবনের অর্থ

Source: onlymessages.com

মানুষের জন্ম ও বেঁচে থাকার অর্থ মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে পৃথক করে। বোধশক্তি হওয়ার পর থেকে প্রতিটা মানুষ বেঁচে থাকার অর্থ বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে যেতে থাকে। প্রাণীদের কাছে তাদের বেঁচে থাকা বা মারা যাওয়ার আলাদা করে কোনো তাৎপর্য নেই।

সময়ের মূল্য

Source: credits.ru

প্রাণীদের সময়জ্ঞান থাকে না। ওরা কোনো তৃতীয় বস্তুর সাথে সময়ের সমন্বয় সাধন করে কোনো কার্য সমাধান করতে পারে না। অপরদিকে, মানুষের কাছে সময়ের মূল্য অপরিসীম।

সুন্দরের পূজারী

বলা হয়ে থাকে, মানুষ সুন্দরের পূজারী। সুন্দর কিছু মানুষের মনকে পুলকিত করে এবং মানুষ সুন্দরকে মূল্যায়ন করতে পারে। হতে পারে তা সকালের সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য অথবা বাগানে ফুটে থাকা রাশি রাশি ফুলের সৌন্দর্য।

ধরুণ, আপনি একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে গিয়েছেন যেখানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নানা ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। এই ছবিগুলো আপনার মনে এক ধরনের শিহরণ তৈরি করবে এবং ক্ষণিকের জন্য হলেও আপনি হারিয়ে যাবেন সেই ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ময়দানে। এই একই জায়গায় আপনি যদি একটি কুকুরকে সাথে করে নিয়ে যান, তাহলে তার ক্ষেত্রে অনুভূতিটা কেমন হবে?! প্রাণীটির মনে হয়ত আশেপাশের মানুষের ভিড় সম্পর্কিত কোনো একটা অনুভূতি তৈরি হবে মাত্র, এর বেশী কিছু নয়।

পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা

মানুষ যেকোনো পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখে। প্রাণীরা সব পরিবেশে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে না।

বাংলাদেশে বসবাসকারী একজন মানুষ রাশিয়ার মতো শীতল একটি দেশে গিয়ে বসবাস করতে পারে, মানিয়ে নিতে পারে ঐ দেশের পরিবেশের সাথে। কিন্তু আপনি যদি একটি মেরু অঞ্চলের ভালুককে ক্রান্তীয় ঘন বর্ষণের এলাকায় এনে রাখেন, তাহলে সে খুব বেশিদিন বাঁচবে না।

শব্দ সংযোগ বা যোগাযোগ

Source: news.mit.edu

মানুষ ভাষার মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে এবং পৃথিবীতে অসংখ্য ভাষা রয়েছে। সরল বা জটিল বাক্য প্রয়োগে মানুষ কথা বলা বা লিখে থাকে। সে নির্দিষ্ট কোনো ভাষা শিখে জন্মগ্রহণ করে না, বরং দেশ ও সংস্কৃতি অনুযায়ী বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সে ভাষা শিখতে থাকে। অপরদিকে প্রাণীরা তাদের মাঝে বিভিন্ন শব্দ ও আকার ইঙ্গিতে তাদের ভাব প্রকাশ করে থাকে এবং যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। কোনো বিশদ ঘটনা বোঝানো তাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়।

আপনার সন্তানকে হয়ত কোনো অপহরণকারী তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আপনি তাৎক্ষণিক পুলিশ বা অন্যদের কাছে ঘটনার বর্ণনা জানিয়ে সাহায্য চাইতে পারেন। কোনদিকে নিয়ে গিয়েছে, কীভাবে নিয়ে গিয়েছে, তারা কী পোশাক পরেছিল, কয়জন ছিল– এসব বিস্তারিত আপনি জানাতে পারবেন। কোনো প্রাণীর পক্ষে এমন বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া সম্ভব নয়। হয়ত কোনো শিকারি কোনো হরিণ শাবককে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে মা হরিণটি বিশেষ সংকেত দিয়ে অন্যান্য হরিণদের বিপদের সংবাদ দিতে পারে। কিন্তু এর বেশী কিছু জানাতে অক্ষম প্রাণীকুল।

নৈতিকতার অনুভূতি

Source: conflictresearchgroupintl.com

কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক এটা উপলব্ধি করার মতো বোধশক্তি একমাত্র মানুষের রয়েছে। মানুষ তার বিবেকবোধ দিয়ে ভুল আর ঠিকের বিচার করে এবং সেইরূপ কাজ করে থাকে। প্রাণীদের ভুল-শুদ্ধ বিচার করার কোনো ক্ষমতা নেই।

ছোটবেলায় আমরা অনেকেই চাষী আর সাপের গল্প পড়েছি। যেখানে রাস্তায় শীতে প্রায় মৃতপ্রায় সাপটিকে বুকে তুলে নিয়েছিলেন এক গরীব চাষী। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তিনি তার সাথেই সাপটিকে রেখে দেন। কিছুদিনের মধ্যেই সাপটি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে তার জীবন রক্ষাকারী সেই চাষীকে বিষাক্ত ছোবলের মাধ্যমে মেরে ফেলে।

ভালবাসা

Source: servingjoy.com

মানুষের ভালবাসার অনুভূতি সম্পর্কে আর না-ই বা বললাম। প্রাণীরা বংশবৃদ্ধির জন্য একে অন্যের সাথে শারীরিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। কিন্তু সেখানে কোনো প্রণয়, ভাবের আদান-প্রদান, ভালো লাগা বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মতো বিষয়গুলো থাকে না।

ধর্মচর্চা

Source: clgonline.org

পৃথিবীর যে প্রান্তে যে ধর্মাবলম্বীই হোক না কেনো, প্রতিটি মানুষ ইহকালের সাফল্য ও পরকালের কথা ভেবে ধর্মচর্চা করে থাকে। প্রাণীকুলের মধ্যে তা নেই।

মৃত্যু সম্পর্কে অবগত থাকা

Source: lampumerah.id

প্রতিটি মানুষই তার জীবদ্দশায় মৃত্যু সম্পর্কে অবগত থাকে। তাই তার বেঁচে থাকার দিনগুলোতে সে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে এবং মৃত্যুর পর মানুষের মৃতদেহের সৎকার করা হয়। এই বিষয়গুলো প্রাণীদের মাঝে অনুপস্থিত।

ফিচার ইমেজ: npr.org

Related Articles