Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের কিছু প্রাণঘাতী উদ্ভিদ

কিছু কিছু গাছপালা, গুল্ম, চারাগাছ, ছোটখাট উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলোকে দেখে মনে হয় একদমই নিরীহ। এমনকি অনেক সুন্দর সুন্দর ফুল সম্বলিত এবং মিষ্টি ফলের গাছও রয়েছে যেগুলোকে প্রথম দেখায় কেউই ভাববে না এসব বিষাক্ত। কিন্তু এ ধরনের গাছ এবং গাছের ফুল, ফল, মূল ইত্যাদি থেকেই তৈরি হয় পৃথিবীর যত প্রাণঘাতী বিষ। আসুন আজ এসব উদ্ভিদ সম্পর্কে জানা যাক।

৮) ধুতুরা

আমাদের বেশ পরিচিত একটি নাম এবং ফুল হলো ধুতুরা। আশেপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল এবং রাস্তার পাশে অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখা যায় এই ফুলটিকে। ফুলকে সাধারণত সৌন্দর্যের প্রতীক ভাবা হলেও এই ফুলটিকে মানুষ প্রায় এড়িয়েই চলে। কারণ এটি যে বিষাক্ত তা সকলেই জানে। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রেও ধুতুরার অনেক ব্যবহার রয়েছে। ধুতুরার বীজ থেকে চেতনানাশক ঔষধও তৈরি হয়।

ধুতুরা ফুল; Source: flowers.cveti-sadi.ru

ধুতুরার বৈজ্ঞানিক নাম হলো Dutura metel। এই গাছের প্রায় প্রত্যেকটা অংশই বিষাক্ত। এতে রয়েছে Tropane alkaloids নামক বিষাক্ত উপাদান। ধুতুরার রস মানুষের মস্তিষ্কে বেশ প্রভাব ফেলে। অধিক পরিমাণে ব্যবহারে দৃষ্টিশক্তি আবছা হয়ে যাওয়া এবং লোপ পাওয়া, বমিবমি ভাব, স্মৃতিলোপ হয়। সেই সাথে ধুতুরার বিষক্রিয়ায় পশুপাখি এবং মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। তাই অনেক দেশেই ধুতুরার উৎপাদন, বিপনন এবং বহনে রয়েছে আইনি নিষেধাজ্ঞা।

৭) জলজ হেমলক

এই উদ্ভিদটিকে বলা হয় উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বিষাক্ত উদ্ভিদ। যুগ যুগ ধরে জলজ হেমলক উদ্ভিদটিকে ব্যবহার করে বিষাক্ত হেমলক বিষ তৈরি করা হয়, যা মূলত ব্যবহার করা হয় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে। বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসের মৃত্যুও হয়েছিলো এই হেমলক বিষ পান করার মাধ্যমে।

হেমলক ফুল; Source: townnews.com

এই উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম হলো Cicuta maculata, যা গাজরজাতীয় উদ্ভিদ পরিবারে শ্রেণিভুক্ত। বেশ বড়সড় আকারের ফুল হয় গাছটিতে। এটিকে প্রায়ই অনেক মানুষ গাজর জাতীয় ফলের গাছ এবং বিশেষ করে শাকের গাছ ভেবে চিনতে ভুল করে থাকে। আর ভুল করে যদি কেউ এটিকে খেয়ে ফেলে তাহলে তার পরিণাম হয় অতীব ভয়াবহ। কারণ জলজ হেমলকে, বিশেষ করে এটির মূলে রয়েছে মারাত্মক কিকোটক্সিন, যা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই এর মারাত্মক প্রভাব পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যন্ত্রণাদায়ক খিঁচুনি, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং মৃত্যু হচ্ছে এটির সচরাচর পরিণতি। যারা এই উদ্ভিদ খাওয়ার পরও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান, তাদের মধ্যে স্থায়ীভাবে স্মৃতিলোপ এবং শারীরিক কম্পন লক্ষ্য করা যায়।

৬) প্রাণঘাতী নাইটশেড

একটি কিংবদন্তি থেকে পাওয়া যায়, ম্যাকবেথের সৈন্যদল ডেনসের আক্রমণকারী সৈন্যদের একটি মিষ্টি ফল থেকে তৈরি ওয়াইন খাইয়ে হত্যা করেছিলো। সেই মিষ্টি ফলের উদ্ভিদটিই হলো এই প্রাণঘাতী নাইটশেড। এই উদ্ভিদটিতে রয়েছে ছোটছোট জামের মত দেখতে মিষ্টি ফল, যা বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়দেরকেও আকৃষ্ট করে। দক্ষিণ ও মধ্য ইউরেশিয়ার বন এবং পরিত্যক্ত এলাকায় এই ধূসর সবুজ রঙের পাতা এবং ঝকমকে জামজাতীয় ফল সম্বলিত গাছটির দেখা পাওয়া যায়।

নাইটশেডের জামের মতো ফল; Source: awesomestories.com

এই উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম হলো Atropa belladonna। নাইটশেডের কাণ্ড, পাতা, ফল এবং মূলে রয়েছে রয়েছে এট্রোপিন এবং স্কোপোলামাইন, যা দেহের অনৈচ্ছিক পেশী যেমন হৃৎপিণ্ডে পক্ষাঘাতের সৃষ্টি করে। এমনকি শুধু এই উদ্ভিদটিকে স্পর্শ করলে বা দেহের কোনো অংশ উদ্ভিদটির সংস্পর্শে আসলেও শরীরে জ্বালাতন করে।

৫) সাদা স্নেকরুট

এই উদ্ভিদটিকে দেখতে পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকাতে। এতে বেশ সুন্দর সাদা ফুল হয়। কিন্তু এই ফুলগুলোতেই থাকে একপ্রকার বিষাক্ত অ্যালকোহল, যার নাম ট্রিমাটল। দেখতে বেশ নিরীহ প্রজাতির এই স্নেকরুট উদ্ভিদটিই আব্রাহাম লিংকনের মা ন্যান্সি হ্যাংকসের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তবে তিনি অন্যদের মতো সরাসরি উদ্ভিদটির ফুল খাওয়ার ফলে মারা যান নি। তিনি শুধু একটি গাভির দুধ পান করেছিলেন। যে গাভীটি ঘটনাক্রমে এই স্নেকরুট উদ্ভিদটি খেয়েছিলো। ফলে এটির দুধও বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিলো। উদ্ভিদটি এতটাই বিষাক্ত যে এটি যে প্রাণী খাবে তার মাংসও বিষাক্ত হয়ে পড়বে।

স্নেকরুট; Source: flickr.com

স্নেকরুটের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Ageratina altissima। এই মারাত্মক উদ্ভিদ খাওয়ার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ প্রথমে ক্ষুধামন্দা হয়। তারপর বমি বমি ভাব, শারীরিক দুর্বলতা, উদরীরোগ, জিভ লাল হয়ে যাওয়া, রক্তে এসিডিটি এবং সবশেষে মৃত্যু হয়। তবে বর্তমানে কৃষকদেরকে এই উদ্ভিদ সম্পর্কে সচেতন করে দেওয়া হয়েছে। তাই তারা বেশ সতর্কতার সাথে তাদের পালিত পশুদের বনে চারণ করছেন।

৪) ক্যাস্টর বিন

শোভাবর্ধক হিসেবে বেশ পরিচিত ক্যাস্টর বিন হলো আফ্রিকার একটি অন্যতম আকর্ষণীয় উদ্ভিদ। তবে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এটি দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে উদ্ভিদটি রেড়িগাছ নামে পরিচিত। এটির প্রক্রিয়াজাত বীজই হচ্ছে ক্যাস্টর অয়েলের মূল উৎস। কিন্তু এই বীজগুলোতেই থাকে বিষাক্ত রাইসিন, যা অল্প পরিমাণে গ্রহণ করলেও পরিণাম হবে মারাত্মক। মাত্র দুটি বীজই যথেষ্ট একটি বাচ্চাকে মেরে ফেলতে। বড়দের ক্ষেত্রে ৮টির মতো লাগে।

ক্যাস্টর বিন; Source: wagwalking.com

ক্যাস্টর বিনের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Ricinus communis। রাইসিন দেহের রক্তকণিকার আমিষের সংশ্লেষণ দমন করে ফেলে। ফলে তীব্র বমি, ডায়রিয়া, সিজার এমনকি মৃত্যুও ঘটে। ১৯৭৮ সালে ক্যাস্টর বিনের এই বিষ ব্যবহার করা হয়েছিল জর্জি মার্কভ নামের এক সাংবাদিককে গুপ্তহত্যা করতে, যিনি বুলগেরীয় সরকারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। তবে সাধারণত বাচ্চারা এবং পোষা প্রাণীরা না বুঝে ক্যাস্টর বিন খাওয়ার ফলেই মূলত বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

৩) রোজারি পি

রোজারি পি আরেকটি নামেও বেশ পরিচিত, জেকুইরিটি বিনস। বাংলাদেশেও এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন রতি, রত্তি, গুঞ্জা, চূড়ামণি, কুঁচ, কইচ গোটা ইত্যাদি। নামের দিক দিয়ে বেশ রাজকীয় এবং নিরীহ মনে হলেও এই উদ্ভিদে রয়েছে বিষাক্ত এব্রিন, যা রাইবোজোম দমন করে থাকে। রোজারি পিকে মূলত দেখতে পাওয়া যায় গ্রীষ্মপ্রধান এলাকাগুলোতে। মাঝে মাঝে এটিকে বিভিন্ন অলংকার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

রোজারি পি; Source: wikimedia.org

রোজারি পি’র বৈজ্ঞানিক নাম হলো Abrus precarious। এটির বীজ অক্ষত থাকা অবস্থায় মোটেও ক্ষতিকর নয়। কিন্তু যখনই বীজটি ভাঙা হয় বা ফেটে যায় এবং চিবোনো হয়, তখনই এটি হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী বিষ। মাত্র ৩ মাইক্রোগ্রাম এব্রিনই যথেষ্ট একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে। আর একটি রোজারি পি’র বীজে ৩ মাইক্রোগ্রামের বেশি এব্রিন থাকে। প্রচলিত আছে অনেক অলংকার নির্মাতারা এই বীজটি নিয়ে কাজ করার সময় ঘটনাক্রমে আঙুলে খোঁচা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন; অনেকে মারাও গিয়েছেন। রাইসিনের মতো এব্রিনও রক্তে আমিষের সঞ্চালনে বাধা প্রদান করে এবং মাত্র চারদিনে যেকোনো অঙ্গ নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।

২) অলিন্ডার

অলিন্ডার দেখতে অত্যন্ত চমৎকার একটি উদ্ভিদ। এটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর ফুলগুলো। বিভিন্ন প্রতিষেধক এবং অলংকার হিসেবে ব্যবহার করা হলেও অলিন্ডার উদ্ভিদের আগাগোড়া পুরোটাই বিষাক্ত। কারণ এতে রয়েছে অলেন্ড্রিন এবং নেরিয়াইন নামক বিষাক্ত কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড।

অলিন্ডার; Source: wikimedia.org

অলিন্ডারের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Nerium oleander। কোনোভাবে এটি খাওয়া হলে তা বমি, ডায়রিয়া, অস্থির নাড়ির স্পন্দন, সিজার, কোমা এবং মৃত্যু ঘটায়। উদ্ভিদটির পাতা এবং রসের সংস্পর্শে আসলেও শরীর জ্বালাপোড়া করে। এমনকি অনেক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শুধু মৌমাছিজাত মধু পান করে, যে মৌমাছিগুলো ঘটনাক্রমে এই অলিন্ডার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেছিলো! তবে অলিন্ডার বিষ থেকে মৃত্যুর ঘটনা খুব কম। কারণ উদ্ভিদটি বেশ তিক্ত। তাই কেউই ভুলেও উদ্ভিদটি শাকসবজি ভেবে ব্যবহার করেন না।

১) তামাক

এক নম্বরে তামাকের নাম দেখে কারোরই অবাক হবার কথা নয়। কারণ আমরা সকলেই জানি তামাকের ক্ষতিকর দিকের কথা। তামাকই হলো বিশ্বে সবচাইতে বেশি জন্মানো উদ্ভিদ, যা মূলত কোনো খাবারের শ্রেণীতে পড়ে না। উদ্ভিদটির প্রায় সবখানেই, বিশেষ করে এটির পাতায় রয়েছে বিষাক্ত অ্যালকালয়েডস নিকোটিন এবং অ্যানাবেসিন, যা সরাসরি গ্রহণ করলে পরিণাম হবে মারাত্মক। যদিও একে হৃদপিন্ডের জন্য একটি বিষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তবুও তামাকের নিকোটিনকে বিশ্বব্যাপী চিত্তপ্রভাবকারী, আসক্তিকর এবং নেশাকর হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

তামাক পাতা; Source: outcastdistribution.weebly.com

তামাকের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Nicotiana tabacum। শুধু তামাকের জন্যেই প্রতিবছর বিশ্বে ৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যাচ্ছে। মানুষ এর ক্ষতিকর দিক জানা সত্ত্বেও গ্রহণ করে যাচ্ছে। এজন্য তামাককেই বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণঘাতী উদ্ভিদ।

ফিচার ইমেজ: toptenz.net

Related Articles