Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দিল্লি সহিংসতা: যন্তর মন্তরে অরুন্ধতী রায়ের ভাষণ

(অনুবাদকের নোট: ভারতের রাজধানি নয়া দিল্লিতে সাম্প্রতিক সহিংসতায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন মোট ৪৬ জন। খোদ ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাই মনে করছেন এই সহিংসতার পেছনে আরএসএস-বিজেপি সরকারের মদদ আছে। গতকাল (১ মার্চ ২০২০) এই সহিংসতার প্রতিবাদে দিল্লির যন্তর মন্তরের সামনে জড়ো হওয়া মানুষদের উদ্দেশ্যে অরুন্ধতী রায় একটি ভাষণ দেন। আজ ভারতীয় পত্রিকা স্ক্রল.ইন-এ প্রবন্ধাকারে প্রকাশিত হয় এটি। ভাষণে অরুন্ধতী দাবি করেছেন, এই সহিংসতা আসলে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছিল না, বরং ছিল ভারতীয় মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রীয় আক্রমণ এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে সমগ্র উপমহাদেশেই। দিল্লির ঘটনাবলী সম্পর্কে বাংলাদেশে যথেষ্ট বিভ্রান্তি আছে, এমনকি কথিত সচেতন মহলেও, যা সামাজিক গণমাধ্যমে সহজেই চোখে পড়ে। এই বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে, এই বিবেচনা থেকে, বাংলাভাষী পাঠকদের জন্য ভাষণটি অনুবাদ করা হলো।)

বক্তব্য দিচ্ছেন অরুন্ধতী রায়; Image Source: National Herald India

প্রিয় বন্ধু, কমরেড, ও সহলেখকগণ,

আমরা আজকে ঠিক যেই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি, তা সেখান থেকে মাত্র একটা বাসযাত্রার দূরত্বে অবস্থিত, যেখানে চারদিন আগে একটি উচ্ছৃঙ্খল ফ্যাসিস্ট জনতা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বক্তব্যে জ্বলে উঠে, পুলিশের মদতে ও তাদের সক্রিয় সহায়তায়, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের একটি বড় অংশের সার্বক্ষণিক সমর্থনের নিশ্চয়তায়, এবং বিচারালয়গুলো তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না এই বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে – উত্তর পূর্ব দিল্লির শ্রমজীবী মানুষদের কলোনিগুলোতে মুসলমানদের ওপর একটি সশস্ত্র, মারাত্মক আক্রমণ চালিয়েছে।

এমন একটি আক্রমণ যে আসন্ন, তা জানা ছিল, তাই একরকম প্রস্তুতি ছিল লোকজনের, এবং তারা রুখে দাঁড়িয়েছিল। বাজার, দোকানপাট, ঘরবাড়ি, মসজিদ ও যানবাহনগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাস্তাঘাট জুড়ে শুধু পাথর আর পোড়া জিনিসপাতির ধ্বংসাবশেষ। হাসপাতালগুলোতে আহত আর মরণাপন্ন মানুষদের ভিড় জমেছে। মর্গগুলো মৃতদেহে ভর্তি হয়ে আছে। মৃতদের মধ্যে মুসলমান আর হিন্দু দুই সম্প্রদায়ের মানুষই আছে। আছে একজন পুলিশ অফিসার এবং ইন্টিলিজেন্স ব্যুরোর এক তরুণ স্টাফার। হ্যাঁ। দুই দিকের মানুষেরাই আতঙ্কজনক নৃশংসতার পাশাপাশি অবিশ্বাস্য সাহস আর সদয়তার প্রমাণও রেখেছে।

যা-ই হোক, এখানে তুলনা টানার প্রশ্নই আসে না। এর কিছুই এই তথ্যটিকে পাল্টে দেয় না যে, আজকের এই বেআব্রু হয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রযন্ত্রের মদতপুষ্ট লুম্পেন জনতা “জয় শ্রী রাম” শ্লোগান দিয়ে আক্রমণটা শুরু করেছিল। এইসব শ্লোগান সত্ত্বেও, এটি লোকে যাকে হিন্দু মুসলিম ‘দাঙ্গা’ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে, তেমন কিছু ছিল না। এটি ছিলো ফ্যাসিস্ট আর ফ্যাসিবিরোধীদের মধ্যে চলমান সংগ্রামের একটি বহিঃপ্রকাশ – যেখানে মুসলমানরা ফ্যাসিস্টদের ‘শত্রু’ তালিকার একেবারে শুরুতেই আছে। এটিকে ‘দাঙ্গা’, অথবা ‘বামপন্থী’ বনাম ‘ডানপন্থী’-দের, এমনকি ‘সত্য’ বনাম ‘মিথ্যা’-র লড়াই বলাটা; যেমন করছেন অনেকেই; বিপজ্জনক ও বিভ্রান্তিকর।

Image Source: Adnan Abidi/Reuters

আমরা সকলেই সেই ভিডিওগুলো দেখেছি, যেখানে পুলিশ হয় সাক্ষী গোপালের ভূমিকা পালন করেছে, আর না হয় নিজেরাই অংশ নিয়েছে অগ্নিসংযোগে। আমরা তাদেরকে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙতে দেখেছি, যেমনটি তারা (গত বছরের) ১৫ ডিসেম্বরেও করেছিল, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে ভাঙচুর চালানোর সময়। আমরা তাদেরকে আহত মুসলমান পুরুষদেরকে পেটাতে দেখেছি, যাদের একজনের ওপর আরেকজনকে ফেলে রাখা হয়েছিল, আর বাধ্য করা হচ্ছিল জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য। আমরা জানি এই তরুণদের একজন মরে গেছে। এইসব মৃত, আহত ও বিধ্বস্ত মানুষেরা; যাদের ভেতরে হিন্দু ও মুসলিম উভয়ই আছেন; সেই সরকারের শিকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি, আমাদের নির্লজ্জ ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী, যিনি আঠারো বছর আগে একটি রাজ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এর চেয়ে অনেক বড় আকারের একটি হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হবার সময় সেই রাজ্যের সর্বোচ্চ ক্ষমতার জন্য অপরিচিত কেউ ছিলেন না।

আসন্ন বছরগুলোতে এই সুনির্দিষ্ট খাণ্ডবদাহনের দেহতত্ত্ব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলবে। কিন্তু স্থানীয় খুঁটিনাটিগুলো কেবল ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজের বিষয়বস্তু হয়ে থাকবে, কারণ, সামাজিক গণমাধ্যমে উসকে দেওয়া ঘৃণাপূর্ণ গুজবের ঢেউ উঠেছে, তার ঘূর্ণাবর্তটার ছড়িয়ে যাওয়ার সূচনা ঘটেছে, এবং ইতোমধ্যেই আমরা বাতাসে আরো রক্তের ঘ্রাণ পেতে শুরু করেছি। যদিও উত্তর দিল্লীতে আর কোনো খুনোখুনি হচ্ছে না, গতকাল (২৯ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় দিল্লিতে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সেই শ্লোগানটা দিতে দেখা গেছে, যা দেওয়ার মাধ্যমেই এই আক্রমণটা শুরু হয়েছিল: “দেস কি গাদ্দারো কো, গোলি মারো সালো কো (যারা দেশের সাথে বেঈমানি করে, সেই শালাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলো।)”।

মাত্র কয়েকদিন আগে, সাবেক বিজেপি এমএলএ প্রার্থী কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন না নেওয়ার কারণে, দিল্লি উচ্চ আদালতের বিচারক জাস্টিস মুরালিধরণ দিল্লি পুলিশের ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। কপিল অতীতে নির্বাচনী প্রচারণার সময় শ্লোগানটি ব্যবহার করেছিলেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে, এই বিচারককে, পাঞ্জাব উচ্চ আদালতে তার নতুন দায়িত্ব বুঝে নেবার নির্দেশ দেওয়া হয়। কপিল মিশ্র সেই একই শ্লোগান দিতে দিতে রাজপথে ফিরে এসেছেন। এবার আর কোনো নোটিশ ছাড়াই শ্লোগানটি ব্যবহার করা যাবে। বিচারকদের নিয়ে ঠাট্টামশকরা আর খেলাধূলা তো নতুন কিছু নয়। আমরা সবাই বিচারক লয়ার কাহিনীটা জানি। আমরা হয়তো বাবু বজরঙ্গীর গল্পটি ভুলে গেছি, ২০০২ এর গুজরাতে, নারোদা পাতিয়ায় ৯৬ জন মুসলমানকে হত্যায় অংশগ্রহণের দায়ে যাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ইউটিউবে শুনুন তার বক্তব্য: সে আপনাকে বলে দেবে কীভাবে বিচারকদেরকে ‘বন্দোবস্ত’ করে ‘নরেন্দ্র ভাই’ তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছে।

নির্বাচনের আগে দিয়ে এই ধরনের হত্যাযজ্ঞের সম্মুখীন হতে আমরা শিখে গেছি – ভোটের মেরুকরণ ঘটানো আর কনস্টিটুয়েন্সি গড়ে তুলতে এক ধরনের বর্বরোচিত নির্বাচনী প্রচারাভিযানে পরিণত হয়েছে এটি। কিন্তু দিল্লি হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে নির্বাচনের কয়েকদিন পরে, বিজেপি-আরএসএস একটি অপমানজনক পরাজয় বরণ করার পরে। এটি দিল্লিকে দেওয়া একটি শাস্তি এবং একইসাথে বিহারের আসন্ন নির্বাচনগুলোর জন্য একটি ঘোষণা।

Image Source: The Economic Times

সবকিছু খুল্লামখুল্লা হচ্ছে। কপিল মিশ্র, পারভেশ ভার্মা, ইউনিয়ন মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, এবং এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি – এদের সবার উসকানিমূলক বক্তব্যই সকলের দেখার ও শোনার জন্য সহজলভ্য। কিন্তু, এ-সত্ত্বেও, সবকিছু উল্টে দেওয়া হয়েছে। দেখানোর চেষ্টা চলছে যে, সমগ্র ভারত একটি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ, প্রধানত নারী, প্রধানত মুসলমান – কিন্তু শুধু তারাই নয় – প্রতিবাদকারীদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। এই হাজার হাজার নারী নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের (সিএএ) বিরুদ্ধে ৭৫ দিন ধরে রাস্তায় রাত্রিযাপন করছেন।

সিএএ, যা অমুসলিম সংখ্যালঘুদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার দ্রুততম পথটি বাতলে দেয়, তা খোলাখুলিভাবে অসাংবিধানিক এবং খোলাখুলিভাবে মুসলমানবিরোধী। জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) সাথে সম্মিলিতভাবে, এটি যে শুধু মুসলমানদেরকেই অবৈধীকৃত, অস্থিতিশীল ও অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তাই নয়; সেই লক্ষ লক্ষ ভারতীয়র ক্ষেত্রেও তা-ই করে, যাদের দরকারি কাগজপত্র নেই – আজকে যারা “গোলি মারো সালো কো (শালাকে গুলি করে দাও)” বলে চেঁচাচ্ছে, তাদেরকে সহ।

যখনই নাগরিকত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়, প্রশ্নবিদ্ধ হয় সবকিছু – আপনার শিশুদের অধিকার, ভোটাধিকার, জমি অধিকার। হান্না আরেন্ডট যেমনটা বলেছেন, “নাগরিকত্ব আপনাকে অধিকার পাওয়ার অধিকার দেয়।” যারা মনে করেন বিষয়টি এরকম নয়, দয়া করে একটু আসামের দিকে তাকান, দেখুন সেখানে কী হয়েছে বিশ লক্ষ মানুষের সাথে – হিন্দু, মুসলমান, দলিত আর আদিবাসীদের সাথে। এখন মেঘালয় রাজ্যে স্থানীয় আদিবাসী জনগণের সাথে অনাদিবাসীদের ঝামেলা শুরু হয়েছে। শিলং-এ কারফিউ চলছে। অস্থানীয়দের জন্য রাজ্যের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এনপিআর-এনআরসি-সিএএর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, শুধু ভারতেরই নয়, বরঞ্চ পুরো উপমহাদেশের জনগণকে বিভক্ত ও অস্থিতিশীল করা। যদি তাদের আদৌ কোনো অস্তিত্ব থেকে থাকে, তাহলে ভূতের মতন এই লক্ষ লক্ষ মানুষকে, ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাদেরকে বাংলাদেশি ‘উঁইপোকা’ বলেন, ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা যাবে না, নির্বাসিতও করা যাবে না। এই ধরনের পরিভাষা ব্যবহার করে; এবং এরকম একটি উদ্ভট, দানবীয় পরিকল্পনা হাতে নিয়ে; এই সরকার আসলে সেই লক্ষ লক্ষ হিন্দুকে বিপদে ফেলছে যারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বাস করেন। এই সরকার যাদের ব্যাপারে চিন্তিত হওয়ার ভান করে, যদিও নয়া দিল্লি থেকে উৎসারিত এই গোঁড়ামির নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় যাদেরকে যন্ত্রণা পোহাতে হতে পারে।

দেখুন আমরা কোথা থেকে কোথায় এসেছি।

১৯৪৭-এ, আমরা উপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম, যার জন্য প্রায় সবাই লড়েছিল – আমাদের বর্তমান শাসকরা ছাড়া। তারপর থেকে এই সময়টা পর্যন্ত আমাদের যাত্রাপথকে চিহ্নিত করেছে সব ধরনে সামাজিক আন্দোলন, জাতিভেদ প্রথা-বিরোধী লড়াই, পুঁজিবাদ-বিরোধী লড়াই, নারীবাদী লড়াই।

১৯৬০ এর দশকে, বিপ্লবের ডাক ছিল ইনসাফের ডাক, সম্পর্দের পুনর্বণ্টন ও শাসক শ্রেণীকে উৎখাতের ডাক।

১৯৯০ এর দশক নাগাদ, লক্ষ লক্ষ লোকের নিজেদের গ্রাম ও ভিটেমাটি থেকে স্থানচ্যুতকরণের শিকার হওয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সীমিত হয়ে পড়েছিলাম আমরা, সেইসব মানুষের, একটি নতুন ভারত গড়ে তোলার জন্য যাদেরকে ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ বানানো হয়েছিল, যেই ভারতের ৬৩ জন ধনীতম ব্যক্তির হাতে ১২০ কোটি মানুষের পেছনে ব্যয় হওয়া বাৎসরিক বাজেটের চেয়েও বেশি অর্থ আছে।

এখন আমরা আমাদের নাগরিক অধিকার পাওয়ার জন্য সেইসব মানুষের কাছে মিনতি করায় সীমিত হয়ে পড়েছি, এই দেশটাকে গড়ে তোলার সাথে যাদের কোনো সম্পর্কই নেই। আর যখন আমরা করে চলেছি এই মিনতি, ঠিক তখনই আমরা দেখতে পাচ্ছি রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা সরিয়ে নিচ্ছে, পুলিশকে সাম্প্রদায়িক করে তোলা হচ্ছে, বিচার বিভাগ ধীরে ধীরে পরিত্যাগ করছে তাদের দায়ভার। যেই গণমাধ্যমের কথা ছিল আরামে থাকা মানুষদেরকে অস্বস্তিতে ফেলা আর অস্বস্তিতে থাকা মানুষদেরকে সান্ত্বনা দেওয়া, তারা ঠিক এর উল্টোটা করছে।

Image Source: AFP

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাকে অসাংবিধানিকভাবে ছেঁটে দেওয়ার আজকে ২১০তম দিন। হাজারো কাশ্মীরী, যাদের মধ্যে আছেন তিনজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীও, জেলে পঁচে মরছেন। ৭০ লক্ষ মানুষ একটি ভার্চুয়াল তথ্য ঘেরাওবন্দী দশায় বাস করছে, যা মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘনের একটি অভিনব উদাহরণ। ২৬ ফেব্রুয়ারি, দিল্লির সড়কগুলোকে দেখাচ্ছিল শ্রীনগরের সড়কগুলোর মতো। এইদিন কাশ্মীরী শিশুরা সাত মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো স্কুলে যেতে পেরেছে। কিন্তু যখন আপনার চারপাশের সমস্তকিছুর শ্বাস রোধ করা হচ্ছে, তখন স্কুলে যাওয়ার আদৌ কি কোনো মানে থাকে?

কোনো গণতন্ত্র, যা একটি সংবিধান অনুসারে চলে না এবং যার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফোঁপড়া বানিয়ে ফেলা হয়েছে, তা কেবলমাত্র একটি সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী রাষ্ট্রেই রূপান্তরিত হতে পারে। আপনি একটি সংবিধানের সমগ্রটুকুর সাথে বা এর অংশবিশেষের সাথে, একমত হতে বা দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। কিন্তু এমনভাবে ক্রিয়া করা যেন এটির কোনো অস্তিত্বই নেই, যা এই সরকার করছে, গণতন্ত্রকে বেআব্রু করে ফেলে। সম্ভবত সেটিই তাদের উদ্দেশ্য। এই হলো করোনাভাইরাসের ভারতীয় সংস্করণ। আমরা অসুস্থ।

দিগন্তরেখায় দেখা যাচ্ছে না কোনো সহায়তার চিহ্নটুকুও। কোনো ভালো-চাওয়া বিদেশি রাষ্ট্রকে। কোনো জাতিসংঘকে।

আর নির্বাচনে জিততে চায়, এমন কোনো রাজনৈতিক দলেরই একটা নৈতিক অবস্থান নেওয়ার সামর্থ্য নেই, ইচ্ছাও নেই। কারণে রন্ধ্রে রন্ধ্রে আগুন জমে আছে। পতন ঘটছে ব্যবস্থাটির।

আমাদের এমন মানুষদেরকে দরকার যারা অজনপ্রিয় হতে প্রস্তুত। যারা নিজেদেরকে বিপদে ফেলতে প্রস্তুত। যারা সত্য বলতে প্রস্তুত। সাহসী সাংবাদিকরা সেটি করতে পারে এবং করছেও। সাহসী আইনজীবীরা সেটি করতে পারে, এবং করছেও। আর শিল্পীরা – সুন্দর, প্রতিভাবান, সাহসী লেখক, কবি, গায়ক, চিত্রকর, এবং চলচ্চিত্রকাররাও সেটা করতে পারে। সেই সৌন্দর্যটুকু আছে আমাদের দিকে। সম্পূর্ণটাই।

আমাদের কাজ আছে। আছে জেতার জন্য একটি দুনিয়াও।

This article is the translation of the speech of Arundhati Roy, addressing a gathering at Jantar Mantar in Delhi, regarding Delhi violence in March 2020. 

Featured Image Source: File Photo- IANS

Related Articles