Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষানীতিতে ট্রাম্পকালীন বদল

সামরিক আর অর্থনৈতিক দিক থেকে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেন ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে, আগের বছরে নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে। নির্বাচনের আগে সবগুলো জনমত জরিপ আর বিশ্লেষণে হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে থাকলেও ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে জিতে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প, সুযোগ পান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে প্রবেশের। রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময় আলোচনায় ছিলেন বেফাঁস কথাবার্তা বলে, সমালোচিত ছিলেন বিতর্কিত কাজকর্ম করেও।

প্রেসিডেন্সির দুই বছর পূর্তির সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাপ্রুভাল রেটিং ছিল এ শতাব্দীর যেকোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে কম, মাত্র ৩৭ শতাংশ। ডেমোক্রেটদের কাছে তার অ্যাপ্রুভাল রেটিং ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। একই সময়ে, অর্থাৎ প্রেসিডেন্সির দু বছরে বারাক ওবামার অ্যাপ্রুভাল রেটিং ছিল ৫০ শতাংশ। প্রশাসনেও খুব বেশি স্থিতিশীলতার পরিচয় দেননি ট্রাম্প, প্রতিনিয়ত করেছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। দু’ বছরের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের নিজের মনোনীত ৬৫ ভাগ সিনিয়র কর্মকর্তাকে বদলি বা বরখাস্ত করেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতিও ছিল হতাশাজনক। এরমধ্যে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণকে কেন্দ্র করে ফেডারেল বাজেট আটকে দেন তিনি। ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৫ দিন বন্ধ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অফিসগুলো।

ডোনাল্ড ট্রাম্প; Image Source: WBUR

মানবজাতির সামনে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ আসবে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই, ঘটতে পারে পারমাণবিক যুদ্ধের মতো বিপর্যয়কর ঘটনাও। কিন্তু, এই বিপর্যয়গুলোর চেয়েও বড় আরেকটি বিপর্যয় ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে পৃথিবীতে, মানুষের সামনে আবির্ভূত হচ্ছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে। সেটি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিপর্যয়। ইকোলজিক্যাল সিস্টেমের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য যখন প্রয়োজন ছিল বৈশ্বিক উদ্যোগের, বৈশ্বিক সমন্বয়ের, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে, একে আখ্যায়িত করেছেন ‘বিজ্ঞানীদের মিথ্যা প্রলাপ’ হিসেবে।

চার বছর পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প লড়ছেন পুনঃনির্বাচনের জন্য, ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের বিপক্ষে। এখন পর্যন্ত পিছিয়ে আছেন প্রায় সব জনমত জরিপে, হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সুইং স্টেটগুলোর ইলেকটোরাল কলেজ ভোটও।
সামরিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে কেমন ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছর? ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সাফল্যের ক্ষেত্রগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় সামরিক এবং প্রতিরক্ষা খাতকে। গত চার বছরের প্রেসিডেন্সিতে যুদ্ধবাজ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের মতো নতুন কোনো যুদ্ধে জড়াননি ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রতিরক্ষা নীতিতে রেখে যাচ্ছেন পরিবর্তনের ছাপ।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বাহিনী

প্রাচীনকালে একটা সময় যুদ্ধ হয়েছে সামনা-সামনি, ঢাল-তলোয়ারের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে, যোদ্ধাদের অস্ত্রাগারে যুক্ত হয়েছে তীর-ধনুক, বর্শার মতো অস্ত্র। মধ্যযুগে এসে যুদ্ধে যুক্ত হয় কামান, যুক্ত হয় বারুদ আর গোলা। আধুনিক যুগে এসে হাজারগুণ বেড়েছে অস্ত্রের বৈচিত্র্য, বেড়েছে অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতাও। আধুনিক যুগের যুদ্ধে এমনই এক প্রযুক্তি, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস)। জিপিএস ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয় মিসাইল আক্রমণের সতর্কবার্তা পেতে, ব্যবহার করা হয় নেভিগেশনের কাজে, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ আর গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেও।

এই জিপিএস সিস্টেম আবার পুরোপুরি নির্ভরশীল স্যাটেলাইটের উপর, যেগুলো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। ফলে, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে, ভূমিতে যুদ্ধ করতে কিংবা আক্রমণ প্রতিহত করতে হলে নির্ভর করতে হয় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইটগুলোর উপর।

মহাকাশের নিরাপত্তার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার ধারণাটি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত থাকায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৯ সালের শেষদিকে তৈরি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ষষ্ঠ বাহিনী, যেটি পরিচিত পায় মহাকাশ বাহিনী নামে।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বাহিনী; Image Source: The Washington Post

এ বাহিনীর কাজ মহাকাশে যুদ্ধ করা নয়, আপাতদৃষ্টিতে সেটি হবার সম্ভাবনাও খুব একটা নেই। বৈশ্বিক সামরিক শক্তি হিসেবে পুনরুত্থান হচ্ছ্র রাশিয়ার, উত্থান ঘটছে চীনের, যারা যেকোনো সময় আক্রমণ করতে পারে মহাকাশে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনা, সম্পদ। ফলে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৈরী এ বাহিনী কাজ করবে মহাকাশে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনা আর সম্পদের নিরাপত্তা দিতে, সুরক্ষা নিশ্চিত করবে স্যাটেলাইটসহ মহাকাশের যুক্তরাষ্ট্রের মিশনগুলো তদারক করার জন্য নিয়োজিত ভূমিতে থাকা স্থাপনাগুলোকে। 

যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষা, প্রতিপক্ষের আগ্রাসন নির্মূলের লক্ষ্যে তৈরি হওয়া এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেনারেল ডব্লিউ রেমন্ড, যিনি এর আগে নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ কমান্ডকে, নেতৃত্ব দিয়েছেন বিমান বাহিনীর মহাকাশ কমান্ডকেও।

ন্যাটোতে মিত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতি ভাগ হয়ে যায় দু’ভাগে, এক পক্ষের নেতৃত্বে থাকে যুক্তরাষ্ট্র, আরেক পক্ষের নেতৃত্বে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ক্ষমতা, মর্যাদা আর পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণের অন্তহীন চেষ্টায় দু’ পক্ষের মধ্যে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধের, যার প্রভাব পড়ে শিল্প, অর্থনীতি, সামরিক সাফল্য থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে। এ সময়ে, একক নিরাপত্তার ধারণার জায়গা দখল করে নেয় সমষ্টিগত নিরাপত্তার ধারণা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের নিয়ে তৈরি করে ন্যাটো জোট, সোভিয়েত ইউনিয়ন তার মিত্রদের নিয়ে তৈরি করে ওয়ারশ জোট।

অর্ধ শতাব্দী ধরে চলা স্নায়ুযুদ্ধে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো উপভোগ করেছে সমষ্টিগত নিরাপত্তার সুবিধা, উপভোগ করেছে সমষ্টিগত স্বার্থের বলয়। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েতের পতনের পর এই জোটের ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দেয় শঙ্কা, আলোচনায় আসে এই জোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টদের নেতৃত্বে নতুনরূপে আবির্ভূত হয় ন্যাটো, চলা শুরু করে নতুন বাস্তবতাকে সামনে রেখে, টিকে যায় জোটের সাংগঠনিক কাঠামো।

ন্যাটো নেতৃবৃন্দের সাথে ট্রাম্প; Image Source: BBC

ন্যাটোতে সদস্য দেশগুলোর উপর বাধ্যবাধকতা আছে, দেশগুলোর জিডিপির ২ শতাংশ ন্যাটোর বাজেটে যুক্ত করার। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এ নিয়ম মানে মাত্র ছয়টি দেশ, জোটের খরচের সিংহভাগই বহন করতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। 

‘আমেরিকা ফার্স্ট’ ধারণাকে আঁকড়ে ধরে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পলিসিতে পরিবর্তন এনেছেন, নিশ্চিত করেছে ন্যাটোতে সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ। ইতোমধ্যেই সবগুলো দেশ এই নিয়ম মানার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে, প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের। এতে চাপ কমবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেটের উপর, চাপ কমবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বাজেটের উপরও। বাড়বে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয়, বাড়বে একক স্বার্থে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রবণতাও।

পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকায়ন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে ব্যবহারের আর ব্যবহৃত হয়নি পারমাণবিক বোমা। তবুও, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে অনেক রাষ্ট্রই চেষ্টা চালাচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির, পরাশক্তি দেশগুলোও বাড়িয়েছে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা। পরাশক্তিগুলোর নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কারণেও বেড়েছে পারমাণবিক অস্ত্র মজুদের সংখ্যা, উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রযুক্তি। তৈরি হয়েছে সাগর থেকে নিক্ষেপ করার মতো নিউক্লিয়ার মিসাইল, মিসাইল নিক্ষেপ করা যায় ভূমি থেকে, আছে প্রচলিত পদ্ধতিতে বহন করে নিয়ে নিক্ষেপের মতো নিউক্লিয়ার বোমাও।

এরই মধ্যে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে উত্থান ঘটেছে ভারত-পাকিস্তানের, উত্থান ঘটছে ইরান-উত্তর কোরিয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত শত্রু দেশগুলোর। উত্তর কোরিয়ার সাথে দীর্ঘদিন বাকযুদ্ধে লিপ্ত থেকে এক পৃষ্ঠার শান্তিচুক্তি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যেটি ব্যর্থ হয়েছে উত্তর কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে। এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল কাশেম সোলাইমানি, যিনি পরিচিত ছিলেন আয়াতুল্লাহ খোমানির ডানহাত হিসেবে। তাই ইরান এখনো বলছে সম্মানজনক প্রতিশোধের কথা। ফলে, যেকোনো সময় ইরান আক্রমণ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে, উত্তর কোরিয়া আক্রমণ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদে। আবার, গত দশকে বিশ্বব্যাপী নতুন করে সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটেছে, অদূর ভবিষ্যতে যাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র চলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, কিন্তু হুমকি সবসময়ই আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র ; Image Source: The Washington Post

যুক্তরাষ্ট্রকে তাই সবসময়ই পারমাণবিক হামলা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখার ব্যাপারে ভাবতে হয়েছে, ভাবতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পত্তি ও স্বার্থের ব্যাপারেও। ট্রাম্প স্নায়ুযুদ্ধের আমলে তৈরি হওয়া পারমাণবিক অস্ত্রগুলোকে নতুন পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে প্রতিস্থাপন করার কাজ শুরু করেছেন, রাশিয়ার সাথে করা আইএনএফ চুক্তি থেকে বেরিয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন মধ্যম মানের পারমাণবিক মিসাইল তৈরিরও। তার সময়ে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে সৈন্য প্রত্যাহার

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির একটি বড় অংশ নির্ভরশীল যুদ্ধ-অর্থনীতির উপর। বৈশ্বিকভাবে বিভিন্ন পক্ষে কিংবা আঞ্চলিক পক্ষগুলোর মধ্যে সংঘাত শুরু হলে, সে সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হয়, লাভবান হয় পরোক্ষভাবেও। তাই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সবসময়ই বিশ্বের কোনো না কোনো প্রান্তে যুদ্ধ প্রয়োজন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অধিকাংশ প্রেসিডেন্টই মুখে শুনিয়েছেন মানবতার বাণী, অনেকে পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। কিন্তু, কোনো প্রেসিডেন্টই বেরিয়ে আসতে পারেননি এই যুদ্ধ-অর্থনীতি থেকে, ব্যর্থ হয়েছে বারাক ওবামার চেষ্টাও। ফলে, বিভিন্ন সময়ে সংঘাতকে জিইয়ে রাখে আমেরিকান কূটনীতিকেরা, কখনো তৈরি করে সংঘাত। এভাবেই চক্র চলতে থাকে। বিশ্বব্যাপী প্রায় আটশো সামরিক স্টেশন আছে যুক্তরাষ্ট্রের।

বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে আমেরিকান সৈন্যরা; Image Source: Axios 

এদিক থেকে ব্যতিক্রম ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর জড়াননি একটি যুদ্ধেও। বরং সৈন্য প্রত্যাহার করেছেন ইরাক থেকে, ন্যাটোর সদস্যদের আপত্তিসত্ত্বেও সৈন্য প্রত্যাহার করেছেন সিরিয়া থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে সৈন্য প্রত্যাহার করা শুরু করেছেন আফগানিস্তান থেকেও, শুরু করেছেন আফগানিস্তানের নাগরিকদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া।

সামরিক বাজেট বৃদ্ধি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভাব ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের, ক্ষমতা আর প্রভাবের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে অপর পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন দুই দেশ একে অপরকে চেষ্টা করেছে ছাড়িয়ে যেতে, চেষ্টা করেছে বিভিন্ন ফ্রন্টে একে অপরকে হারাতে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রকে বিপুল ব্যয় করতে হয়েছে সামরিক খাতে, বিপুল সামরিক ব্যয় করেছে সোভিয়েত ইউনিয়নও। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ধীরে ধীরে সামরিক ব্যয় কমা শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, কমে নিরাপত্তা ব্যয়ও।
এরমধ্যে বিভিন্ন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ফ্রন্টে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে, তখন বেড়েছে সামরিক ব্যয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে এসে দেখা গেছে একটি ভিন্নমুখী ধারা। যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে গুটিয়ে নিয়েছে নিজেদের, জড়ায়নি নতুন কোনো যুদ্ধে।

এর মধ্যেও ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রমাগত বাড়িয়েছেন সামরিক ব্যয়, আমেরিকান স্বার্থ আর সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বললেই পাঠকদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী চিত্র, যারা যুদ্ধ করতে পারে বিশ্বের যেকোনো ফ্রন্টে, অস্ত্র আর প্রযুক্তির ব্যবহারে হারিয়ে দিতে পারে যেকোন শত্রুকে। মার্কিন বিমানগুলো বোমা ফেলতে পারবে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে, গুঁড়িয়ে দিতে পারবে যেকোনো স্থাপনা। পুরো চিত্রটাই সঠিক, কিন্তু এর পেছনেও কিছু অগোছালো চিত্র আছে।

মার্কিন বিমান বাহিনীর অর্ধেকের বেশি বিমানের বয়স ২৫ বছরের বেশি, কয়েক শত বিমানের সার্ভিস লাইফ পেরিয়েছে অর্ধশতাব্দী। ২০১২ সালে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানগুলোর নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘার হানার ক্ষমতা ছিল ৭৭.৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে এসে তা হয়েছে ৬৯.৯। মেরিন ফোর্স সাম্প্রতিক সময়ে জানিয়েছে, তাদের কাছে থাকা ফাইটার জেট আর কমব্যাট কপ্টারের তুলনায় কম পাইলট আছে। এ বাস্তবতায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সামরিক বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিতে হয়েছে, বাড়াতে হয়েছে বাজেট। ওবামার ছয়শো বিলিয়নের সামরিক বাজেটকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিয়ে গেছেন প্রায় সাড়ে সাতশো বিলিয়নে।

ট্রাম্প বাড়াচ্ছেন সামরিক ব্যয়; Image Source: The New York Times

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বাজেট বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে নতুন নতুন যুদ্ধজাহাজ, বিমান বাহিনীতে যুক্ত হবে নতুন নতুন ফাইটার জেট আর টেকটিক্যাল অস্ত্রভান্ডার। সৈন্যদের পাওয়া সম্ভব হবে আধুনিক প্রশিক্ষণ, বাড়বে তাদের দক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বরাবরের মতো মোকাবেলা করতে পারবে যেকোনো বৈশ্বিক হুমকি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর লেখা বই কিনতে লিংকে ভিজিট করুন এখানে

This article is written about the foreign policy of Donald Trump, during his presidency. 

Necessary references have been hyperlinked inside the article.

Featured Image: Newsweek.        

Related Articles