Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইরান ক্যাবল (৩): ইরাকের মন্ত্রীরা সবাই যখন ইরানের পকেটে

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার গোপন ইরানি ডকুমেন্টে উপর সংবাদ মাধ্যম ইন্টারসেপ্ট পাঁচ পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনগুলোতে উঠে এসেছে ইরাকে ইরানের রহস্যময় ভূমিকার অনেক গোপন তথ্য। ইন্টারসেপ্টের এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলোর উপর ভিত্তি করেই আমাদের এই ইরান ক্যাবল সিরিজ আজ পড়ুন সিরিজের তৃতীয় পর্ব। পূর্ববর্তী পর্ব পড়ুন এখান থেকে

এখন পর্যন্ত প্রকাশিত সবগুলো পর্ব: ১ম পর্ব | ২য় পর্ব৩য় পর্ব৪র্থ পর্ব

২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের শেষের দিকে যখন জঙ্গি সংগঠন আইএস ইরাকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয়, তখন আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমেরিকা পুনরায় ইরাকে সৈন্য এবং অস্ত্রশস্ত্র পাঠাতে শুরু করে। একই সময় ইরানও আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল। আইএস যখন ইরাকের পশ্চিম এবং উত্তরের এলাকাগুলো দখল করে নিচ্ছিল, তখন ইরাকি যুবকদের অনেকে দলে দলে মরুভূমি এবং জলাভূমি পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে উপস্থিত হচ্ছিল ইরানে, সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য।

ইন্টারসেপ্টের ওয়েবসাইটে লিক হওয়া ডকুমেন্টগুলো নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন; Image Source: https://theintercept.com/

সে সময় আমেরিকা এবং ইরান, উভয় দেশের সরকারের কিছু কিছু কর্মকর্তা বিশ্বাস করতেন, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের উচিত তাদের সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে একত্রে কাজ করা। কিন্তু ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলো থেকে দেখা যায়, ইরান শুরুর দিকে ইরাকে ক্রমবর্ধমান আমেরিকান উপস্থিতিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছিল। আমেরিকানদের নতুন করে ইরাকে আসাকে তারা নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, আইএসের বিরুদ্ধে আমেরিকার উপস্থিতি ছিল বাস্তবে ইরানের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করার জন্য তাদের একটা অজুহাত।

ফাঁস হওয়া একটা ডকুমেন্ট অনুযায়ী এক ইরানি কর্মকর্তা সে সময় লিখেছিলেন, “ইরাকের আকাশে যেটা ঘটছে, সেটা হচ্ছে কোয়ালিশনের বিশাল আকারের কার্যক্রম। এই কার্যক্রম যে ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরানের স্বার্থের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, সেটা আমাদেরকে গুরুত্বের সাথে বিবচনা করতে হবে।”

আইএসের উত্থান একইসাথে ওবামা প্রশাসন এবং ইরাকের রাজনৈতিক শ্রেণির একটা বড় অংশের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছিল। বারাক ওবামা বিশ্বাস করতেন, ইরাকের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নূরি কামাল আল-মালিকির ড্রাকোনিয়ান নীতি এবং ইরাকের সুন্নিদের উপর তার দমন-নিপীড়ন আইএসের উত্থানে সহযোগিতা করেছিল। ফলে তিনি নতুন করে আমেরিকান সামরিক সহায়তা প্রদানের প্রধান শর্ত হিসেবে মালিকিকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য করেন।

২০১৪ সালের ১৩ই আগস্ট ইরাকের ফেরদৌস স্কয়ারে প্রধানমন্ত্রী নূরি আল-মালিকির ছবি হাতে ইরাকিরা; Image Source: Anadolu Agency/Getty Images; Allan Tannenbaum/Getty Images

মালিকি ছিলেন ইরানের প্রিয়পাত্র। আশির দশক থেকেই তিনি ইরানে নির্বাসনে বসবাস করছিলেন। সে সময় থেকেই ইরানের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। মালিকির পর যিনি প্রধানমন্ত্রী হন, ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত হায়দার আল-আবাদি, তাকে অপেক্ষাকৃত কম সাম্প্রদায়িক এবং পশ্চিমাদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। নতুন এই প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে ইরাকে নিযুক্ত ইরানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হাসান দানায়েফার সন্দিহান ছিলেন। তার ব্যাপারে আলোচনার জন্য তিনি বাগদাদের গ্রিন জোনে অবস্থিত ইরানি দূতাবাসে সিনিয়র স্টাফদের এক গোপন বৈঠকের আয়োজন করেন।

ফাঁস হওয়া একটা রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, মিটিং যত এগোতে থাকে, আবাদির ব্যাপারে ইরানিদের সন্দেহ তত দূরীভূত হতে থাকে। উপস্থিত বিভিন্ন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য থেকে আবাদি যে ব্রিটিশ বা আমেরিকানদের প্রার্থী, এই ধারণা নাকচ হয়ে যায়। উল্টো ইরানিরা দেখতে পায়, আবাদির মন্ত্রীসভার অনেক মন্ত্রীই তাদের নিজেদের লোক।

রিপোর্ট অনুযায়ী ইরানি রাষ্ট্রদূত দানায়েফার এক এক করে ইরাকি মন্ত্রীদের নাম পড়ে যেতে থাকেন, এবং তাদের সাথে ইরানের সম্পর্ক বর্ণনা করতে থাকেন।

২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে বারাক ওবামার সাথে ইরাকের নতুন প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি; Image Source: Anadolu Agency/Getty Images; Allan Tannenbaum/Getty Images

ইবরাহিম আল-জাফারি, যিনি এর আগে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, এবং ২০১৪ সালে যিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আব্দুল মাহদির মতোই তার সাথেও ইরানের “বিশেষ সম্পর্ক” আছে বলে মন্তব্য করা হয়। পরবর্তীতে ইন্টারসেপ্টের সাথে এক সাক্ষাৎকারে জাফারিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরানের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি দাবি করেন, তিনি সব সময়ই ইরাকের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই কাজ করেছিলেন।

রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরাও ইরানের প্রতি অনুগত ছিল। যোগাযোগ, মানবাধিকার এবং পৌরসভাবিষয়ক মন্ত্রীদের সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়েছে, “তারা আমাদের লোক এবং আমাদের সাথে তারা একই তালে অবস্থান করছে।” এই তিন মন্ত্রীই ছিলেন বদর অর্গানাইজেশনের সদস্য, যে সংগঠনটি আশির দশকে সাদ্দামের বিরুদ্ধে ইরান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক এবং সামরিক সংগঠন।

পরিবেশমন্ত্রী সম্পর্কে বলা হয়েছে, “যদিও তিনি সুন্নি, কিন্তু তিনি আমাদের সাথেই কাজ করছেন।” সে সময় যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন বায়ান জাবের, যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে শিয়া ডেথ স্কোয়াডের সদস্যরা শতশত বন্দীকে ড্রিল মেশিন দিয়ে টর্চার করে এবং সারি বেঁধে গুলি করে হত্যা করেছিল। তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন ইরানের “খুবই ঘনিষ্ঠ”। শিক্ষামন্ত্রী সম্পর্কে বলা হয়েছে, “তার ব্যাপারে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।”

ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টের একটি অংশ ও তার অনুবাদ; Image Source: https://theintercept.com/

ইরাকি রাজনীতিতে ইরানের প্রভাব সবচেয়ে পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে ২০১৪ সালের একটি ডকুমেন্ট থেকে। সে সময় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ছিল চরম পর্যায়ে, ইরাকের এক তৃতীয়াংশ ছিল আইএসের দখলে, আর আমেরিকান সৈন্যরাও সে সময় নতুন করে ইরাকে প্রবেশ করছিল। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত কুদস ফোর্সের কমান্ডার, মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানি একদিন উপস্থিত হন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী বায়ান জাবেরের অফিসে। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন জাবেরের কাছ থেকে ইরাকের আকাশে ইরানি প্লেনের অবাধ প্রবেশাধিকার চাইতে, যেন সিরিয়াতে আমেরিকাসমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ইরান বাশার আল-আসাদের বাহিনীর জন্য প্লেনে করে অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে পারে।

যে গোয়েন্দা কর্মকর্তা রিপোর্টটি পাঠিয়েছেন, তিনি দাবি করেন জাবের তাকে বলেছেন, সোলায়মানির এই অনুরোধ তাকে আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে চলা দীর্ঘ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝখানে ফেলে দিয়েছিল। কারণ ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই ইরাকি কর্মকর্তাদের উপর চাপ প্রদান করে আসছিল যেন তারা তাদের আকাশসীমা দিয়ে ইরানি বিমান চলাচলের অনুমতি না দেয়। কিন্তু ইরাকের যোগাযোগমন্ত্রীর পক্ষে  সোলায়মানির মুখের উপর তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব ছিল না। বায়ান জাবের তার দুই হাত তার চোখের উপর স্থাপন করেন, এবং সম্মতিসূচক ইরাকি অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, “আমার চোখের উপর! আপনি যা চান!” সন্তুষ্ট সোলায়মানি উঠে এসে জাবেরের কপালে চুম্বন করেন।

ইন্টারসেপ্টের সাথে সাক্ষাৎকারে পরবর্তীতে জাবের সোলায়মানির সাথে তার মিটিংয়ের কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি দাবি করেন, প্লেনগুলো কোনো অস্ত্র বা সামরিক সাহায্য বহন করার জন্য ছিল না, বরং সেগুলো ছিল ইরান থেকে সিরিয়াতে মানবিক সাহায্য পাঠানোর জন্য এবং সিরিয়া থেকে ইরানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া যাত্রীদেরকে বহন করার জন্য।

ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টের একটি অংশ ও তার অনুবাদ; Image Source: https://theintercept.com/

ইরাকি কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের সাথে তখনও আমেরিকানদের সুসম্পর্ক ছিল, ইরান তাদেরকে হাত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। তাদের পেছনে সার্বক্ষণিকভাবে ইরান গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে যেতে থাকে। একাধিক রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, আমেরিকান কূটনীতিকরা ইরাকি কর্মকর্তাদের সাথে গোপনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছে, কিন্তু সেই কর্মকর্তাদের বিশ্বস্ত সহকারীদের মাধ্যমে বৈঠকের সকল তথ্য ইরানের কাছে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

নতুন ইরাকি সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর, ২০১৪ সালের শেষ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইরাকে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টুয়ার্ট জোনস একাধিকবার ইরাকি পার্লামেন্টের স্পিকার সালিম আল-জাবুরির সাথে সাক্ষাৎ করেন। জাবুরি ছিলেন সুন্নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইরানের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সবার জানা ছিল। কিন্তু ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলো থেকে দেখা যায়, ইরান তারপরেও তার পেছনে গুপ্তচর নিয়োগ করে রেখেছিল। তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের মধ্যে একজন, যাকে ফাইলগুলোতে “সোর্স ১৩৪৮৩২” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ছিলেন ইরানি গোয়েন্দাসংস্থার একজন এজেন্ট।

“আমি প্রতিদিনই তার অফিসে উপস্থিত হচ্ছি এবং আমেরিকানদের সাথে তার যোগাযোগের উপর সতর্ক নজর রাখছি।” সোর্স ১৩৪৮৩২ তার ইরানি হ্যান্ডলারের কাছে রিপোর্ট করেছিলেন। তিনি ইরানিদেরকে জাবুরির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলারও পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন ইরাকে নতুন এক শ্রেণির সুন্নি নেতা তৈরি গড়ে তোলার আমেরিকান প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া যায়।

অন্য এক রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, ইরাকি কুর্দিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেচেরবান বারজানি ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে উচ্চপদস্থ আমেরিকান ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সাথে এবং ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু মিটিং শেষ করেই তিনি সোজা গিয়ে ইরানি কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন এবং তাদের কাছে মিটিংয়ে আলোচিত সকল তথ্য ফাঁস করে দেন। বারজানি অবশ্য এক মুখপাত্রের মাধ্যমে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টের একটি অংশ ও তার অনুবাদ; Image Source: https://theintercept.com/

ইরাকি গোয়েন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য ইরান বিভিন্ন সময় অর্থনৈতিক স্বার্থেও ব্যবহার করেছে। জাবুরির উপদেষ্টা, যিনি ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্সের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছিলেন, তার কাছ থেকে আসা আরেকটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত ইরাকের আক্কাস গ্যাস ফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহী ছিল।

রিপোর্টে ইন্টেলিজেন্স মিনিস্ট্রির ঐ কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করেন, আমেরিকানরা হয়তো শেষপর্যন্ত ঐ গ্যাসক্ষেত্র থেকে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করার চেষ্টা করতে পারে, যেটি রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের একচেটিয়া বাজার। তেহরানে পাঠানো তার ঐ রিপোর্টে তিনি পরামর্শ দেন, “উপরোক্ত তথ্য রাশিয়া এবং সিরিয়ার সাথে বিনিময় করা যেতে পারে।”

ইরান যদিও শুরুর দিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির আনুগত্য নিয়ে সন্দিহান ছিল, কিন্তু তার দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাস পরেই ইরাক থেকে ইরানে পাঠানো একটি রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, তিনি ইরানি গোয়েন্দাসংস্থার সাথে গোপন সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে রাজি হয়েছিলেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আবাদি তার অফিসে বুরুজারদি নামে ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্সের এক কর্মকর্তার সাথে রুদ্ধদ্বার গোপন বৈঠক করেছিলেন, যে বৈঠকে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত ছিল না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কোনো সেক্রেটারিও না।

রিপোর্ট অনুযায়ী, মিটিংয়ে বুরুজারদি ইরাকের রাজনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়, ইরাকের শিয়া-সুন্নি বিভাজন সম্পর্কে আলাপ তুলেছিলেন এই ব্যাপারে আবাদির মনোভাব বোঝার জন্য। তিনি বলেছিলেন, “ইরাকের সুন্নিরা আজ সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। তারা তাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। তাদের অবস্থা হয়েছে যাযাবরদের মতো। তাদের শহরগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের সামনে আছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। অন্যদিকে শিয়ারা তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছে।”

বুরুজারদি আরো বলেন, ইরাকের শিয়ারা এই মুহূর্তে “ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে” অবস্থান করছে। তিনি মন্তব্য করেন, ইরাকি সরকার এবং ইরান “এই পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।”

রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি বুরুজারদির বক্তব্যের সাথে “সম্পূর্ণ ঐক্যমত্য” প্রকাশ করেছিলেন।

আবাদি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মূল প্রতিবেদ: জেমস রাইজেন, টিম আরাঙ্গো, ফারনাজ ফাসিহি, মুর্তজা হাসান, রোনেন বার্গম্যান

প্রকাশের তারিখ: ‌১৮ নভেম্বর, ২০১৯

আগামী পর্বে থাকছে ইরাকের সুন্নিদের উপর ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানির অনুগত বাহিনীর নির্মম প্রতিশোধমূলক আচরণ এবং সোলায়মানির বিরুদ্ধে মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্সের কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন।

এখন পর্যন্ত প্রকাশিত সবগুলো পর্ব: ১ম পর্ব | ২য় পর্ব৩য় পর্ব৪র্থ পর্ব

বিশ্বের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/

This article is in Bangla language. It's based on the series called "The Iran Cables", published by The Intercept and The New York Times.

Featured Image:  Iranian Presidency/Anadolu Agency via Getty Images

Related Articles