Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আয়েদ আবু আমরু: ভাইরাল হওয়া ছবির নায়ক, ফিলিস্তিনের ক্ষোভের প্রতীক

ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে একটি সুন্দর ছবি পোস্ট করার জন্য আমরা নিজেদের কয়েক ডজন ছবি তুলি। এরপর সেখান থেকে সবচেয়ে সুন্দর ছবিটি বাছাই করে নানা রকম ফিল্টার দিয়ে পোস্ট করে অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকি কখন আমাদের ফ্রেন্ডরা সেটিতে লাইক দেওয়া শুরু করবে। কিন্তু যে ছবিগুলো সারা বিশ্বব্যাপী মানুষের ‘লাইক’ অর্জন করে, যে ছবিগুলো স্থান করে নেয় লাখো মানুষের অন্তরে, সেগুলোর অধিকাংশই তোলা হয় কোনো রকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া, ঘটনাবহুল মুহূর্তের কোনো এক ক্ষুদ্র ফাঁকে। কোনো রকম ফিল্টার ছাড়াই শুধুমাত্র বিষয়বস্তুর গুরুত্বের কারণেই সেগুলো নাড়া দিতে সক্ষম হয় বিশ্ব বিবেককে। এ সপ্তাহে ভাইরাল হওয়া ফিলিস্তিনি যুবক আয়েদ আবু আমরুর ছবিটি সেরকমই একটি ছবি।

আয়েদ আবু আমরুর বসবাস ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার আল-জাইতুন নামক এলাকায়। গত মার্চ মাস থেকে গাজার অধিবাসীরা নিয়মিত ইসরায়েলের কাঁটাতারের বেড়ার সামনে প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে আসছে। ‘গ্রেট মার্চ অফ রিটার্ন’ নামে শুরু হওয়া এ প্রতিবাদ কর্মসূচীর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, সীমান্তের অপর পাশে অবস্থিত দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা নিজেদের হারানো ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার অর্জন করা। বর্তমানে গাজার অধিবাসীদের অধিকাংশেরই আদি বাসভূমি সীমান্তের অন্যপাশের এলাকাগুলোতে, যেখান থেকে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলিরা তাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করেছিল।

অন্য সবার মতোই ২০ বছর বয়সী আবু আমরুও নিয়মিত গ্রেট মার্চ অফ রিটার্নের মিছিলগুলোতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি প্রতি শুক্রবার এবং সোমবার, এবং সময় পেলে এর বাইরে অন্যান্য দিনও মিছিলে যান। গত সোমবারও অন্যান্য দিনের মতোই তিনি গাজার বেইত লাহিয়ার মিছিলে গিয়েছিলেন এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ হিসেবে সীমান্ত লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করছিলেন। জ্বলন্ত টায়ারের ঘন কালো ধোঁয়ার আড়াল থেকে উঠে আসা দুঃসাহসী আবু আমরু যখন ইসরায়েলি বুলেট এবং টিয়ার শেলের ক্যানিস্টারের ভয়কে তুচ্ছ করে সীমান্ত লক্ষ্য করে গুলতি নিক্ষেপ করছিলেন, তখনই দুর্লভ দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দী করে ফেলেন তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সির ফটোগ্রাফার মোস্তফা হাসুনা।

Source: Laleh Khalili

আবু আমরুর আশেপাশের সাংবাদিকরা সবাই ছিল বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরা। তার পেছনের অন্যান্য প্রতিবাদকারীরাও ছিল একটু আড়ালে। তাদের সবার অন্তত একটি হাত মুক্ত ছিল, যেন টিয়ার শেল বা গুলিবর্ষণ শুরু হলে সহজেই দৌড়ে আত্মরক্ষা করতে পারে। কিন্তু আবু আমরু ছিলেন সবার ব্যতিক্রম। তার এক হাতে গুলতি, আর অন্য হাতে তিনি ধরে রেখেছিলেন তার মাতৃভূমি ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা। তার শার্টবিহীন খালি গা, এক হাতে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা পতাকার দণ্ড, অন্য হাতে সর্বশক্তি দিয়ে গুলতি নিক্ষেপের প্রস্তুতি এবং তার সেই সাথে চোখেমুখের দৃপ্ত প্রত্যয় যেন সমগ্র ফিলিস্তিনবাসীর ক্ষোভেরই প্রতিফলন।

আবু আমরুর ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার পর খুব দ্রুতই তা ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু ছবির নায়ক আবু আমরু জানতেনও না যে ঐ মুহূর্তে কেউ তার ছবি তুলেছিল। এমনকি পাথর নিক্ষেপে তিনি এতই মশগুল ছিলেন, তার আশেপাশে যে কোনো ফটোগ্রাফার ছিল, সেটাও তিনি জানতেন না। তার বন্ধুরা যখন পরদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটি শেয়ার হতে দেখে সেটির লিংক তাকে পাঠিয়েছিল, তখন তিনি বেশ অবাকই হয়েছিলেন। কারণ তিনি ছবি তোলার জন্য মিছিলে যাননি, গিয়েছিলেন তার দখল হয়ে যাওয়া মাতৃভূমি ফেরত পাওয়ার লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে।

ফরাসি বিপ্লবের Liberty Leading the People চিত্রকর্ম; Source: Laleh Khalili

আবু আমরুর হাতে যে পতাকাটি ছিল, সেটি তিনি সেদিনই প্রথমবারের মতো সাথে করে মিছিলে নেননি। গ্রেট মার্চ অফ রিটার্ন আন্দোলনের শুরু থেকে প্রতিটি মিছিলেই তিনি এই পতাকাটি সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। পতাকা সাথে রাখার কারণে তার বন্ধুরা সব সময় তাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। কারণ পতাকা ছাড়া পাথর নিক্ষেপ করা আরও সহজ। কিন্তু নিয়মিত পতাকা সাথে রাখতে রাখতে তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। তার ইচ্ছে ছিল, মিছিলে গিয়ে যদি কোনোদিন তার মৃত্যুও হয়, তাহলে যেন তার মৃতদেহকে এই পতাকাটি দিয়ে জড়িয়ে রাখা হয়।

আবু আমরুর মৃত্যুর আশঙ্কা মোটেও অমূলক না। গত সাত মাস ধরে চলা নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি জনগণের এ আন্দোলনে দখলদার ইসরায়েলি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে অন্তত ২১৭ জন। আহত হয়েছে আরো প্রায় ১৮ হাজার। নিহতদের মধ্যে ছাত্র, সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী, নারী, শিশুসহ সব ধরনের মানুষই আছে। গত সোমবার, যেদিন ছবিটি তোলা হয়েছিল, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বর্ণনা অনুযায়ী শুধুমাত্র সেদিনের মিছিলেই আহত হয়েছিল অন্তত ৩২ জন

Source: YousefMunayyer

ছবিটি সোমবারে তোলা হলেও এটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয় গত বুধবারে। যাদের হাত ধরে ছবিটি প্রথম ভাইরাল হয়, তাদের মধ্যে একজন হলেন লন্ডনের SOAS ইউনিভার্সিটির প্রফেসর লালাহ খালিলি। তিনি ছবিটিকে ফরাসি বিপ্লবের স্মরণে ১৮৩০ সালে অঙ্কিত বিখ্যাত চিত্রকর্ম Liberty Leading the People এর সাথে তুলনা করেন। ঐ ছবিতে মৃত সহযোদ্ধাদেরকে পেছনে ফেলে স্বাধীনতার প্রতীক এক নারী প্রতিবন্ধক ভাঙার জন্য মানুষকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। আবু আমরুর মতোই তার এক হাতে থাকে অস্ত্র এবং অন্য হাতে ধরা থাকে তিন রং বিশিষ্ট স্বাধীনতার পতাকা।  

টুইটটিতে এ পর্যন্ত লাইক পড়েছে লক্ষাধিক এবং সেটি রিটুইট হয়েছে আরো প্রায় ৪৫ হাজার বার। আর এতে কমেন্ট পড়েছে আটশোরও বেশি। কমেন্টে অনেকেই ছবিটিকে ফরাসি চিত্রকর্মের সাথে করা লালাহ খালিলির তুলনার সাথে সহমত প্রকাশ করেছেন। মালির ফুটবল তারকা ফ্রেডেরিক কানু এটি রিটুইট করে প্রশ্ন করেছেন, “ছবিটি কি পরিচিত মনে হচ্ছে? বিশেষ করে ফরাসিদের কাছে?”

Source: Yousef Munayyer

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফিলিস্তিনি অধিকার কর্মী ইউসেফ মুনায়ের ছবিটি টুইট করে বাইবেলে বর্ণিত হযরত দাউদ (আ) এর সাথে জালুতের দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ টেনে লিখেছেন, “যখন মাইকেল অ্যাঞ্জেলো ক্যামেরা দিয়ে ডেভিডের সাথে গোলায়েথের যুদ্ধের চিত্রধারণ করে।” তার টুইটটি এ পর্যন্ত লাইক পেয়েছে ৫০ হাজারের বেশি এবং রিটুইট হয়েছে ২০ হাজারের বেশি বার। পরবর্তী একটি টুইটে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় গাজায় চলন্ত ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে পাথর ছুঁড়তে থাকা এক বালকের যে ছবিটি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল, সেটি তোলা হয়েছিল ঠিক আঠারো বছর আগের এই সপ্তাহেই।

একটি ছবি এক হাজারটি শব্দের চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে। ছবির কোনো দেশ নেই, কাল নেই, ভাষা নেই। তা বিশ্বের সকল মানুষের কাছে সঠিকভাবে বার্তা তুলে ধরতে পারে। আবু আমরু ছবি তোলার জন্য মিছিলে যাননি ঠিকই। কিন্তু এরকম একটি শক্তিশালী ছবি তাকে এবং তার মতো আরো অনেককে নিঃসন্দেহে আন্দোলনে আরো অনুপ্রেরণা যোগাবে।

This article is in Bangla. It's about the viral photo of the Palestinian resistance movement captured by Mustafa Hassouna of Andalou Agency for Getty.

For references please check the hyperlinks inside.

Featured Image: Mustafa Hassouna/ Andalou Agency/ Getty Images

Related Articles