Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান কে হচ্ছেন? | পর্ব ২

[১ম পর্ব পড়ুন]

পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সর্বজনবিদিত, সেনাপ্রধানই পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন। স্বাধীনতার পর থেকেই উল্লেখযোগ্য একটা সময় সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা সরাসরি শাসন করেছেন পাকিস্তান, গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা আসলেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রে শেষ কথা বলেন সেনাপ্রধানই। পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছে, সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের বৈধতা তৈরি করছে পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আর্থ-সামাজিক অবস্থাও। সাংগঠনিকভাবেও অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সামরিক বাহিনী শক্তিশালী আর সুসংগঠিত, সামরিক বাহিনীই নির্ধারণ করে পররাষ্ট্র আর প্রতিরক্ষানীতি।

পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর, তিন বছরের নিয়মিত দায়িত্ব শেষে জেনারেল বাজওয়া দায়িত্ব পান আরো তিন বছর সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের। সেনাপ্রধান হিসেবে ছয় বছরের দীর্ঘ দায়িত্ব শেষ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে। সেনাপ্রধানের ক্ষমতার পরিধি আর গুরুত্ব বিবেচনায় বছরখানেক ধরেই জল্পনা কল্পনা চলছে কে হচ্ছে পরবর্তী সেনাপ্রধান, সেটি নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে এই আলোচনা আরো জোরদার হয়েছে, পাকিস্তানের প্রথমসারির ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডন’ পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পদে সম্ভাব্য লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য নিবন্ধটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহ

আগামী নভেম্বরে যখন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান আর সেনাপ্রধান নিয়োগ দেওয়া হবে, তখন কর্মরত লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের মধ্যে আসিম মুনির সবচেয়ে সিনিয়র প্রার্থী হিসেবে থাকবেন। যদিও থ্রি-স্টার জেনারেল হিসেবে সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহকে প্রমোশন দেওয়া হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে, তিনি থ্রি-স্টার র‍্যাংকে দায়িত্ব নেন দুই মাস পরে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে। ফলে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহের মেয়াদ শেষ হবে নভেম্বরের ২৭ তারিখ, যেদিন বর্তমান জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান আর সেনাপ্রধান অবসরে যাবেন।

দুই পদেই ফোর-স্টার জেনারেল হিসেবে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, সেটি নির্ধারিত হবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের বেশ আগেই। দুই পদের জন্য সম্ভাব্য চার-পাঁচজন লেফটেন্যান্ট জেনারেলের মধ্যে সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত জেনারেল বাজওয়াই নেবেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহ একজন ডেকোরেটেড মিলিটারি অফিসার, কিন্তু কৌশলগত কারণে ফোর-স্টার জেনারেলের দৌড়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনির থাকবেন ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবেই।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহ সামরিক বাহিনীতে প্রবেশ করেন মংলায় অবস্থিত অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলের (ওটিএস) প্রোগ্রামের মাধ্যমে, কমিশন পান ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টে। বর্তমান সেনাপ্রধানের সাথে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনিরের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো। জেনারেল বাজওয়া যখন এক্স কোরের কমান্ডার ছিলেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুনির তার কমান্ডে কাজ করেছেন একজন ব্রিগেডিয়ার হিসেবে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের শুরুতে জেনারেল মুনির দায়িত্ব নেন মিলিটারি ইনটেলিজেন্সের ডিজি হিসেবে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে তিনি দায়িত্ব পান আইএসআই-এর ডিজি হিসেবে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহ; Image Source: The Express Tribune.

যদিও, আইএসআই প্রধানদের মধ্যে তার মেয়াদ ছিল ক্ষণস্থায়ী, আট মাস পরেই লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুনিরকে সরিয়ে আইএসআই-এর চিফ করা হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইয়াজ হামিদকে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আগ্রহে হয় এই বদলি। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুনিরকে বদলি করা হয় গুজরানওয়ালার কোর কমান্ডার হিসেবে। দুই বছর যেখানে দায়িত্ব পালনের পর লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহ বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন সেনাসদরে কোয়াটার মাস্টার জেনারেল হিসেবে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহির সামসাদ মির্জা

বর্তমানে দুই ফোর-স্টার পদের দৌড়ে থাকা একই ব্যাচের চার লেফটেন্যান্ট জেনারেলের মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মির্জা সবচেয়ে সিনিয়র। বিদায়ী জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল নাদিম রাজার মতো লেফটেন্যান্ট জেনারেল মির্জাও উঠে এসেছেন সিন্ধ রেজিমেন্ট থেকে। সামরিক বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মির্জার আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার রয়েছে, দক্ষতা দেখিয়েছেন গত সাত বছরে শীর্ষ পদগুলোতে দায়িত্ব পালনকালে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মির্জা নজর কাড়েন ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে, জেনারেল রাহিল শরীফের অধীনে দুই বছর ছিলেন ডিজিএমও হিসেবে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জা; Image Source: DHA Karachi.

ডিজিএমও হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জা জেনারেল রাহিল শরীফের কোর টিমের সদস্য ছিলেন, সুপারভাইজ করেছেন তেহরিক-ই-তালেবান আর উত্তর ওয়াজিরিস্থানের মিলিট্যান্টদের বিরুদ্ধে সামরিক অপারেশনগুলোয়। এর পাশাপাশি, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জা কোয়াড্রিলেটেরাল কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (কিউসিজি) এর অংশ ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র, আফগানিস্তান, চীন আর পাকিস্তানের এই সংলাপ কাঠামোতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জা প্রতিনিধিত্ব করেছেন পাকিস্তানকে। এর বাইরে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জা সদস্য ছিলেন সারতাজ আজিজের নেতৃত্বাধীন কমিটির, যেটি গিলগিট-বালতিস্তানে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে প্রমোশনের পর সামসাদ মির্জাকে নিয়োগ দেওয়া হয় চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে। এর মাধ্যমে তিনি পরিণত হন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সেনাপ্রধানের পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর সেনা কর্মকর্তায়। এই পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে, ভূমিকা রাখেন পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণেও। ২০২১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি যখন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কৌশলগত আলোচনায় বসেন, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জা।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জা; Image Source: The Dawn.

২০২১ সালের অক্টোবরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জাকে রাওয়ালপিন্ডির কোর কমান্ডার হিসেবে পোস্টিং দেওয়া হয়। এই পোস্টিং এর মাধ্যমে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জা একদিকে অপারেশনাল অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ পাচ্ছেন, পাশাপাশি সেনাপ্রধান পদের জন্য তাকে যোগ্যও করে তুলছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সেনাপ্রধান হতে হলে কোর কমান্ড করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।

একটি সামরিক সূত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জার সম্পর্কে মতামত দেওয়ার সময় বলেন, চিফ অব আর্মি স্টাফ আর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান পদের জন্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামসাদ মির্জা ফ্রন্টরানার।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আযহার আব্বাস

সেনাপ্রধানের দৌড়ে থাকা প্রার্থীদের মধ্যে ভারতের ব্যাপারে সবচেয়ে অভিজ্ঞ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্বাস, বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে। সিজিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তিনি একদিকে যেমন মিলিটারি অপারেশনগুলোর ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে পারছেন, সুযোগ পাচ্ছেন ইন্টেলিজেন্স কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করারও। চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্বাস কমান্ড করেছেন এক্স কোরকে, যে দায়িত্ব পালনে তিনি উপভোগ করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার পূর্ণ সমর্থন আর বিশ্বাস। রাওয়ালপিন্ডিভিত্তিক এক্স কোর রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এর মূল দায়িত্ব কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। এক্স কোরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে লাইন অব কন্ট্রোলে ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে সমঝোতা হয়, পরবর্তীতে যেটি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্বাসের নেতৃত্বে পালিতও হয়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্বাস; Image Source: The Dawn.

এর পূর্বে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্বাস কোয়েটার ইনফ্যান্ট্রি স্কুলের কমান্ড্যান্ট ছিলেন, ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফের ব্যক্তিগত স্টাফ অফিসার। জেনারেল শরীফের স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্বাস উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত হন। এর মাধ্যমে তিনি একদিকে যেমন পাকিস্তান মুসলীম লীগ-নেওয়াজ এর রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলেন, তেমনই যোগাযোগ গড়ে ওঠে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের সাথেও। জেনারেল রাহিল শরীফের স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্বাসের পোস্টিং হয় ১২তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনে। মুরেভিত্তিক এই ডিভিশন আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা ইস্যুগুলো দেখাশোনা করে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল নোমান মেহমুদ

বেলুচ রেজিমেন্ট থেকে উঠে আসা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মেহমুদ বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তার অভিজ্ঞতা আছে কোয়েটার কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজের ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করার, উত্তর ওয়াজিরিস্থানে কমান্ড করেছেন ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনকেও। সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মেহমুদের পোস্টিং হয় আইএসআইতে, যেখানে তিনি দায়িত্ব পালন করেন অ্যানালাইসিস উইংয়ের ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে। আইএসআইতে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি জাতীয় নিরাপত্তার লেন্স থেকে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আইএসআইতে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলেন, গড়ে তোলেন আইএসআই-এর প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগও।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মেহমুদ; Image Source: The Dawn.

২০১৯ সালে থ্রি-স্টার জেনারেল হিসেবে প্রমোশন পাওয়ার পর লেফট্যানেন্ট জেনারেল মেহমুদকে সেনাসদর দফতরে কমিউনিকেশন এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজির ইন্সপেক্টর জেনারেল হিসেবে পোস্টিং করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই তাকে পোস্টিং করা হয় এক্সআই কোরের কমান্ড্যান্ট হিসেবে। এক্সআই কোরের কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব পালন করেছেন, সীমান্তবেড়া নির্মাণের কাজ চলমান রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময়েও।

২০২১ সালের নভেম্বরে লেফট্যানেন্ট জেনারেল মেহমুদ কোরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইয়াজ হামিদকে। Image Source: ISPR.

২০২১ সালের নভেম্বরে লেফট্যানেন্ট জেনারেল মেহমুদ এক্সআই কোরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইয়াজ হামিদকে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইয়াজ হামিদ

লেফট্যানেন্ট জেনারেল মেহমুদের মতো লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদও উঠে এসেছেন বেলুচ রেজিমেন্ট থেকে। সেনাপ্রধানের দৌড়ে থাকা প্রার্থীদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে আলোচিত এবং সমালোচিত প্রার্থী। জেনারেল বাজওয়া আর লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদের পরিচয় অনেক আগে থেকেই। জেনারেল বাজওয়া যখন এক্স কোরের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন, জেনারেল বাজওয়ার চিফ অব স্টাফ ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ; Image Source: The Dawn.

জেনারেল বাজওয়া যখন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ তখন ছিলেন একজন টু-স্টার জেনারেল, সিন্ধের এক ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই বাজওয়া হামিদকে পোস্টিং দেন আইএসআই-এর কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের ডিজি হিসেবে। আইএসআই-এর কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে জেনারেল হামিদের দায়িত্ব ছিল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক ইস্যুগুলোর তত্ত্বাবধান করা।

২০১৯ সালের এপ্রিলে থ্রি-স্টার জেনারেল হিসেবে প্রমোশন পান ফাইয়াজ হামিদ, তাকে পোস্টিং করা হয় সেনাসদরে অ্যাডজ্যুটেন্ট জেনারেল হিসেবে। দুই মাস পরে, অনেকটা আকস্মিকভাবে তাকে আইএসআই-এর ডিজি হিসেবে পোস্টিং দেওয়া হয়। আইএসআই-এর ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করেন। প্রথাগত পররাষ্ট্রনীতির ইস্যু আর জাতীয় নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার পাশাপাশি শাসনতান্ত্রিক সংস্কারে ভূমিকা রাখেন, ভূমিকা রাখেন পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পুনরায় গতিশীল করার চেষ্টায়।

আইএসআই-এর ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালনের শেষদিকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদকে বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে আসে এই ছবি; Image Source: Twitter.

আইএসআই-এর ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালনের শেষদিকে তিনি দ্বন্দ্বের বিষয় হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আর সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার। জেনারেল বাজওয়া চাচ্ছিলেন তাকে পেশোয়ারের কর্পসে বদলি করতে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান চাচ্ছিলেন আইএসআই-এর ডিজি হিসেবে রেখে দিতে। ২০২১ সালের নভেম্বরে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী আর সেনাপ্রধানের মধ্যে রাজনৈতিক ড্রামায় বিজয় হয় সেনাপ্রধানের, লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদকে বদলি করা হয় পেশোয়ার কোরে। পেশোয়ার কোরে তিনি দায়িত্ব পালন করেন এক বছরেরও কম সময়, তাকে ২০২২ সালের আগস্টে বদলি করা হয় বাহাওয়ালপুর কোরে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান মুসলিম লীগ-নেওয়াজের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদকে সেনাপ্রধানের পদে বিবেচনারও সম্ভাবনা কম। তিনি আইএসআই-এর ডিজি হিসেবে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন, জেনারেল বাজওয়ার সাথেও তার সম্পর্ক আগের মতো নেই।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আমির

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আর্টিলারি রেজিমেন্ট থেকে উঠে এসেছেন, বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন গুজরানওয়ালার এক্সএক্সএক্স কোরকে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমিরকে সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মনে করা হয়, দায়িত্ব পালন করেছেন সেনাসদরের অ্যাডজ্যুট্যান্ট জেনারেল হিসেবেও। মেজর জেনারেল হিসেবে মোহাম্মদ আমির নেতৃত্ব দিয়েছেন লাহোরের ১০ম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনকে, দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির; Image Source: The Dawn.

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির সেনাপ্রধানের দফতরের স্টাফ ডিউটিজের ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, অর্জন করেছেন সেনাসদর আর কমান্ড পজিশনের অভিজ্ঞতা। এর পূর্বে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির দায়িত্ব পলন করেছেন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সামরিক সচিব হিসেবে, ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত।

This article is written in Bangla about the next possible chief of army staff of Pakistan. 

All the necessary links are hyperlinked inside. 

Feature Image: The Dawn.

Related Articles