Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান কে হচ্ছেন? | পর্ব ১

পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সর্বজনবিদিত, সেনাপ্রধানই পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন। স্বাধীনতার পর থেকেই উল্লেখযোগ্য একটা সময় সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা সরাসরি শাসন করেছেন পাকিস্তান। গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা আসলেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রে শেষ কথা বলেন সেনাপ্রধানই। পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছে, সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের বৈধতা তৈরি করছে পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আর্থ-সামাজিক অবস্থাও। সাংগঠনিকভাবেও অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সামরিক বাহিনী শক্তিশালী আর সুসংগঠিত। তারাই নির্ধারণ করে পররাষ্ট্র আর প্রতিরক্ষানীতি।

পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া; Image Source: The Dawn

পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর। তিন বছরের নিয়মিত দায়িত্ব শেষে জেনারেল বাজওয়া দায়িত্ব পান আরো তিন বছর সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের। সেনাপ্রধান হিসেবে ছয় বছরের দীর্ঘ দায়িত্ব শেষ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে। সেনাপ্রধানের ক্ষমতার পরিধি আর গুরুত্ব বিবেচনায় বছরখানেক ধরেই জল্পনাকল্পনা চলছে কে হচ্ছেন পরবর্তী সেনাপ্রধান সেটি নিয়ে। সম্প্রতি এই আলোচনা আরো জোরদার হয়েছে। পাকিস্তানের প্রথমসারির ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডন’ পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পদে সম্ভাব্য লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য নিবন্ধটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।

পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান কে?

শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিতে হবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, নির্ধারণ করতে হবে পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ-নেওয়াজের (পিএমএল-এন) এক সিনিয়র নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকেই প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতেই সিদ্ধান্ত নেবেন চূড়ান্ত মনোনয়নের ব্যাপারে। ইঙ্গিত দেয়া মুসলিম লীগ-নেওয়াজের (পিএমএল-এন) এই নেতা আবার মন্ত্রীসভার সদস্যও।

পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া; Image Source: The Dawn

ধারণা করা হচ্ছে, পরবর্তী সেনাপ্রধান নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তার জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এরপরই নেবেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। যদিও পার্লামেন্টে মুসলিম লীগ-নেওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রধান মিত্র পাকিস্তান পিপলস পার্টির সম্ভাবনা আছে সেনাপ্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনায় সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ না নেওয়ার।

পাকিস্তানের সংবিধানের ২৪৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধান নিয়োগ করবেন। রুলস অব বিজনেসের শিডিউল ভি-এ অনুযায়ী, সেনাবাহিনী ও সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও এর উপরের পদবীগুলোতে প্রেসিডেন্টের সাথে পরামর্শক্রমে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। সাধারণত, সেনাপ্রধান নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হলেও পাকিস্তানে এই প্রক্রিয়াটি খুব কম সময়ই লিখিত নিয়মের আলোকে হয়েছে। সেনাপ্রধান হতে হলে একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেলকে কোর কমান্ড করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর বাইরে, সেনাপ্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা কোথাও লেখা নেই। প্রথাগতভাবে, পাকিস্তানের সেনাসদর দপ্তর থেকে চার-পাঁচজন সিনিয়র লেফটেন্যান্ট জেনারেলের তালিকা পাঠায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে, সাথে পাঠায় তাদের ব্যক্তিগত জীবনবৃত্তান্ত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের জীবনবৃত্তান্ত যায় প্রধানমন্ত্রীর অফিসে, যেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধান হিসেবে একজন জেনারেলকে বেছে নেন।

তাত্ত্বিকভাবে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেনা সদর থেকে পাঠানো লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানোর আগে পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু, পাকিস্তানে সাধারণত এটি ঘটে না, এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সাধারণত সেনাপ্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় পোস্ট অফিসের ভূমিকা পালন করে।

প্রধানমন্ত্রীর অফিসে প্রার্থীদের তালিকা আসার পর সেটি মন্ত্রীসভায় আলোচিত হয়, কখনো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্রিফ পাঠানো হয়। এরপর পুরো প্রক্রিয়ার পরিসরে ছোট হয়ে আসে, প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সেনাপ্রধানের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন, সেনাপ্রধান উত্থাপন করেন নিজের মূল্যায়ন। প্রধানমন্ত্রী এই প্রক্রিয়াতে নিজের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সাথেও আলোচনা করেন।

পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া; Image Source: The Times of Islamabad

কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, চার-পাঁচজন লেফটেন্যান্ট জেনারেলের জীবনবৃত্তান্ত পাঠানো হলেও একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেলের ব্যাপারে ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুপারিশ’ পাঠানো হয়। সাবেক দুই প্রতিরক্ষাসচিব অবশ্য এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মতে, কোনো প্রার্থীর ব্যাপারে ব্যক্তিগত ইনপুট দিতে পারেন কেবল বর্তমান সেনাপ্রধান, সেটিও প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনাপর্বে। এর বাইরে, নিজের সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের ব্যাপারে সেনাপ্রধানও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো নোট দেন না।

১৯৭২ সালের পর থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন দশজন সেনাপ্রধান, তাদের মধ্যে পাঁচজনকেই নিয়োগ দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের বড় ভাই নেওয়াজ শরীফ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে নেওয়াজ শরীফ এই নিয়োগগুলো দেন। নেওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে সমালোচনা ছিল নিজের প্রার্থীদের (আপনা বান্দা) সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পাঁচজন সেনাপ্রধান নিয়োগের মধ্যে কোনোটিই তার জন্য ইতিবাচক হিসেবে কাজ করেনি।

[নোট: বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকেও নিয়োগ দিয়েছিলেন মুসলীম লীগ-নেওয়াজের নেতা, তখনকার প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ। সেসময় পাকিস্তানের সবচেয়ে সিনিয়র মিলিটারি জেনারেল যুবায়ের হায়াতকে জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দেন প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ, দুই সিনিয়র জেনারেলকে পেছনে ফেলে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন কামার জাভেদ বাজওয়াকে। কথিত আছে, কামার জাভেদ বাজওয়ার প্রো-ডেমোক্রেটিক অবস্থান আকৃষ্ট করে প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজকে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াই নির্বাচনকে প্রভাবিত করে জিতিয়ে নিয়ে আসেন তেহরিক-ই-ইনসাফকে, প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফকে ছাড়তে হয় দেশ।]

র্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকেও নিয়োগ দিয়েছিলেন মুসলীম লীগ-নেওয়াজের নেতা, তখনকার প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ; Image Source: Twitter

পূর্বের এই অভিজ্ঞতা শরীফ ভাইদের মধ্যে এই বিশ্বাসের জন্ম ঘটিয়েছে যে, তারা আসলে কখনোই সঠিক প্রার্থীকে সেনাপ্রধান হিসেবে বাছাই করতে পারবে না। মুসলিম লীগ-নেওয়াজের সিনিয়র নেতাদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, এবার পিএমএল-এন ‘আদর্শ সেনাপ্রধান’ খুঁজে বের করার চেয়ে সিনিয়রিটির উপর নির্ভর করেই সেনাপ্রধান নিয়োগ দিতে চাইবে। “তখন নিয়োগ দেওয়া সেনাপ্রধানের সাথে সবকিছু ঠিকঠাক না চললেও, আমরা অন্তত বলতে পারবো ব্যক্তিগত পছন্দের উপর ভিত্তি করে আমরা সেনাপ্রধান নিয়োগ দেইনি”- বলছিলেন মুসলীম লীগ-নেওয়াজের এক সিনিয়র নেতা। আবার, পিএমএল-এনের একটি অংশের মতে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার পছন্দের প্রার্থীকেই সেনাপ্রধান হিসেবে মনোনয়ন দেবেন।

সেনাপ্রধানের পালাবদল

চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া দায়িত্বে আসেন ২০১৬ সালে, অবসরে যাবেন এই বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে। সেনাপ্রধানের মেয়াদ তিন বছরের হলেও বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া তিন বছরের দায়িত্ব শেষে আরো তিন বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ান। ২০১৯ সালে জেনারেল বাজওয়ার সেনাপ্রধান হিসেবে মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে রাজনৈতিক ড্রামা হয়, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তিন বছরের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করলেও সুপ্রিম কোর্ট মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে আইনি পথ তৈরির আদেশ দেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পার্লামেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে সেনাপ্রধানসহ সামরিক বাহিনীর অন্যান্য প্রধানদের মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ দেয়, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের অবসরের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬৪ বছর।

বর্তমানে জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার বয়স ৬১ বছর। বয়সের দিক থেকে জেনারেল বাজওয়া আরো তিন বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ নিতে পারেন। বয়সের দিক থেকে এই ট্যাকনিক্যাল সুবিধাটি ধারণা দিচ্ছিল, বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া ছয় বছরের দায়িত্ব শেষে হয়তো আরো এক মেয়াদের জন্য সেনাপ্রধান থাকতে চাইতে পারেন। কিন্তু, সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, জেনারেল বাজওয়া এই নভেম্বরের অবসরে যেতে আগ্রহী। ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশনসও (আইএসপিআর) নিশ্চিত করেছে, সেনাপ্রধান এই নভেম্বরেই অবসরে যাচ্ছেন।

জেনারেল বাজওয়া এই নভেম্বরের অবসরে যেতে আগ্রহী; mage Source: The Times of Islamabad

তবে, এই নভেম্বরে কেবল সেনাপ্রধানের পদই খালি হচ্ছে না, খালি হচ্ছে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যানের পদও। জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল নাদিম রাজাও জেনারেল বাজওয়ার সাথে একই সময়ে অবসরে যাবেন। দুটোই ফোর স্টার জেনারেলের র‍্যাংক। একই সময়ে দুটি পদ খালি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিকল্প  থাকছে সেনাবাহিনীর শীর্ষ মহলকে কম হতাশ করে সেনাপ্রধান নিয়োগ দেওয়ার।

জেনারেল বাজওয়া আগামী নভেম্বরে যখন অবসরে যাবেন, তখন শীর্ষ ছয় লেফটেন্যান্ট জেনারেলের চারজনই থাকবেন একই ব্যাচ থেকে। সিনিয়রিটি অনেক দিক থেকেই নীতি নির্ধারণী ভূমিকা পালন করে, প্রার্থীদের দেয় টেকনিক্যাল সুবিধা আর অসুবিধাও। পিএ নাম্বার একজন অফিসারকে মিলিটারি একাডেমিতে থাকার সময়েই দেওয়া হয়। সামনের নভেম্বরে সেনাপ্রধান আর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচনের ক্ষেত্রে পিএ নাম্বার হয়তো ভূমিকা রাখবে, হয়তো রাখবে না। শীর্ষ ছয় লেফটেন্যান্ট জেনারেলের মধ্যে আরেকজন বাকিদের সিনিয়র, আরেকজন সবার জুনিয়র।

২য় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন এখানে

This article is written in Bangla about the next possible chief of army staff of Pakistan. 

All the necessary links are hyperlinked inside. 

Feature Image: The Dawn.

Related Articles