মানবসভ্যতার শুরু থেকেই সম্পদের সীমাবদ্ধতা ছিল, সম্পদ আর সুবিধা অর্জনের চেষ্টায় মানুষের ছিল নিরন্তর প্রচেষ্টা। সম্পদ আর সুবিধা অর্জনের চেষ্টায় শক্তিশালী মানুষ অধিকার হরণ করেছে দুর্বল মানুষের, দুর্বল মানুষকে বঞ্চিত করেছে সামষ্টিক সুবিধাগুলো থেকে। মানবসভ্যতা হাজার হাজার বছর পথ পাড়ি দিয়েছে, কিন্তু মানবচরিত্রের এই আদিমতম দিকটি এখনও মানুষে মানুষে সম্পর্ক নির্ধারণ করে, সম্পর্ক নির্ধারণ করে রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের।
ইউক্রেনে কেন আক্রমণ করেছে রাশিয়া?
ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার নিরাপত্তা সংকট ছিলো, রাশিয়ার অর্থনীতির সাথে ইউক্রেনের রাজনৈতিক অবস্থান গভীরভাবে যুক্ত, ইউক্রেনের অবস্থান প্রভাবিত করে ন্যাটোকে মোকাবেলায় রাশিয়ার স্ট্র্যাটিজিকেও। পরাশক্তি হিসেবে রাশিয়া প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে চেয়েছে, বজায় রাখতে চেয়েছে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। ইউক্রেনে ২০১৩ সালের গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো রাশিয়ার এই আকাঙ্ক্ষাগুলোর পক্ষে ছিল না, ইউক্রেন রাশিয়ার প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে যুক্ত হতে চাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয়ে।
তবে, নিরাপত্তার সংকট ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের বৈধতা তৈরি করে না, বৈধতা তৈরি করে না মানুষ হত্যার। বরং, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের মূল কারণ, পুকুরের বড় মাছ হিসেবে ছোট মাছকে খেয়ে ফেলার মানুষের আদিমতম প্রবণতা। এই প্রবণতা থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনকে প্রকৃত রাষ্ট্রের হিসেবে স্বীকার করতে চান না, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করেন না।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে, সময়। গত কয়েক মাস ধরেই রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনের অ্যাপ্রুভাল রেটিং নিচের দিকে নামছে, বাড়ছে পুতিনের শাসনের ব্যাপারে নাগরিকদের অসন্তোষ। রাশিয়ার মতো অলিগার্ক রাষ্ট্রে এই ধরনের সমস্যা সমাধানের সহজ সুযোগ নেই, কারণ কতিপয়কে সুবিধা পাইয়ে দিতেই রাশিয়াতে রাষ্ট্রকাঠামো পরিচালিত হয়। পুতিন অর্থনৈতিক সংকট আর মুদ্রাস্ফীতিকে আড়াল করতে যুদ্ধকে বেছে নিলেন, কারণ যুদ্ধবিরোধী মতামত নির্মূলের ব্যাপারে জনমত তৈরি করে, জনগণকে শাসকের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হতে বাধ্য করে।
যেকোনো জায়গায় রেজিম পরিবর্তনের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে আলোচনা, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মাধ্যমে রেজিম পরিবর্তনের ঘটনা বেশি ঘটেছে, পাল্লা দিয়ে কমেছে আন্দোলন সংঘাতের দিকে মোড় নিলে সেখান থেকে রেজিম পরিবর্তনের সম্ভাবনা। ইউক্রেনে রাশিয়ার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় জেলেনস্কি সরকারের পতন ঘটিয়ে নিজেদের অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা করা, তবে পুতিনের উচিত ছিল সেটি রাজনৈতিকভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে করা। শান্তিপূর্ণ উপায়কে বাদ দিয়ে পুতিন যুদ্ধকে পছন্দ করার অর্থ- যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি ও তার অলিগার্কদের স্বার্থ রক্ষা হবে।
ইউক্রেনের দিক থেকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির রাজনৈতিক অপরিপক্কতাও এই যুদ্ধের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউক্রেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের চাওয়া, রাশিয়ার প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে এসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপার সম্ভাবনার সাথে যুক্ত হতে, ন্যাটোর নিরাপত্তা বলয়ের অংশ হতে। কিন্তু, যেভাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সংঘাতকে ত্বরান্বিত করেছেন, সংঘাতের সম্ভাবনাকে উসকে দিয়েছেন, সেজন্য যুদ্ধের দায় তার উপরও যায়। পুতিনের বয়স সত্তোর পেরিয়েছে, এই দশকেই সম্ভবত তার শাসনের অবসান ঘটবে। রাশিয়ার মতো অলিগার্ক রাষ্ট্রে সাধারণত পুতিনের মতো শাসকদের শাসনের সমাপ্তির পর রাজনৈতিক সংকট চলে অলিগার্কদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে। অর্থাৎ, তাত্ত্বিকভাবেই রাশিয়াতে একটি অস্থিতিশীল সময় আসার কথা। ন্যাটো ও ইইউ এর সসদ্য হওয়ার জন্য ইউক্রেন সেই সময়টি ব্যবহার করতে পারত।
যুদ্ধে পুতিনের দায়
ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণের মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি, স্বল্প সময়ের মধ্যে আসেনি রাশিয়ার বিজয়, পরিবর্তন ঘটেনি কিয়েভে জেলেনস্কি সরকারের। বরং, দক্ষিণ ইউক্রেনে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকলেও, উত্তর ইউক্রেনে ক্রমাগত প্রতি-আক্রমণের মুখে পড়ছে রাশিয়ান বাহিনী। রাশিয়ার উপর সমন্বিত অর্থনৈতিক অবরোধ এসেছে পশ্চিমা দুনিয়ার দিক থেকে, ইউক্রেনে প্রতিদিন বাড়ছে রাশিয়ান নিহত হওয়া সৈন্যের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। পশ্চিমা বিশ্ব থেকেও প্রতিনিয়ত আসছে অস্ত্রের চালান। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামোর মতো বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই, বরং বিপর্যয়কর পরাজয়ের সাক্ষী হতে হবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে।
যুদ্ধ সাধারণত একক ব্যক্তির সিদ্ধান্তে হয় না, নিশ্চিতভাবেই রাশিয়াতেও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও একাই যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেননি। কিন্তু, ক্রিমিয়া দখলের সকল কৃতিত্ব জাতীয়তাবাদী রুশরা যেমন পুতিনকে দিয়েছে, ইউক্রেনে ব্যর্থ অভিযান বা অনুপ্রবেশের দায়ও পড়বে পুতিনের ঘাড়ে। ইউক্রেন যুদ্ধকে দেখা হচ্ছে পুতিনের উচ্চাশার প্রতিফলন হিসেবে, ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যর্থতার দায় পড়ছে পুতিনের ভুল পূর্বানুমান আর কৌশলগত দুর্বলতার উপর।
রাশিয়ানদের কাছ থেকে পুতিন শাসনের বৈধতা উপভোগ করেছেন তার কর্তৃত্ববাদী আর শক্তিশালী শাসনের মডেলের দ্বারা, পুতিনের শাসনের বৈধতা উৎপাদনে ভূমিকা রেখেছে রুশ চার্চগুলোও। ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যর্থতা পুতিনকে দুর্বল হিসেবে প্রমাণ করছে, রাশিয়ান চার্চগুলো থেকেও ইউক্রেনে যুদ্ধের ব্যাপারে নিরঙ্কুশ সমর্থন পুতিন পাচ্ছেন না।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার উপর কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরো করেছে, রাতারাতি কমে গেছে রাশিয়ান মুদ্রা রুবলের দাম। অর্থনৈতিক অবরোধের প্রভাব সব জায়গাতেই পড়বে, ইতোমধ্যেই বিপর্যস্ত রাশিয়ান অর্থনীতি আরো সংকুচিত হয়ে দুর্বিষহ করে তুলবে রাশিয়ানদের জীবন।
এর মধ্যেও, রাশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে পুতিন পতনের জন্য বাধ্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু, যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে পুতিনকে উৎখাতের সম্ভাবনার চেয়ে যুদ্ধ শুরুর পর পুতিনের পতনের সম্ভাবনা বেশি, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাই পুতিনের পতনের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। বরং, পুতিনের পতনের সম্ভাবনা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় পুতিনের পতনের সম্ভাব্য উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে পুতিনের পতনের পর শাসনতন্ত্রে সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে।
সামরিক অভ্যুত্থান
রাশিয়ার মতো কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোতে একজন শাসকের পতনের সবচেয়ে সম্ভাব্য উপায় হচ্ছে- সামরিক অভ্যুত্থান। ইউক্রেন আক্রমণের শুরু থেকেই রাশিয়ান জেনারেলরা কৌশলগত ভুল করছেন, যুদ্ধের পরিকল্পনা খালি চোখেই ভুল মনে হয়েছে, যুদ্ধে নিহত হচ্ছে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সংখ্যক রাশিয়ান সৈন্য। বেপরোয়া পুতিন জেনারেলদের পাঠাচ্ছেন যুদ্ধক্ষেত্রে, যাদের মধ্যে ইতোমধ্যেই চারজন জেনারেল নিহত হয়েছেন ইউক্রেনের সৈন্যদের হাতে। যুদ্ধে ব্যর্থতার দায় প্রাথমিকভাবে পুতিন সামরিক বাহিনীর উপরই চাপাতে চাচ্ছেন, ইতোমধ্যেই কয়েকজন জেনারেলকে বরখাস্ত করেছেন, শাস্তি দিয়েছেন বিভিন্ন র্যাংকের কমিশনড অফিসারদের।
রাশিয়ান সামরিক বাহিনী অনেকগুলো কারণেই পুতিনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে।
প্রথমত, সামরিক অভ্যুত্থানগুলো সংঘাতের সময়েই বেশি ঘটে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন বেশি ঘটে ব্যর্থ সামরিক অভিযানের পরই। ফলে, তাত্ত্বিকভাবে রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর সামনে নতুন একটি পথ উন্মুক্ত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর মধ্যে নিরঙ্কুশ ঐক্যমত ছিল না, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর আসছে আমলাতন্ত্রের এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার। যুদ্ধের ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের খুঁজতে গিয়ে পুতিনের সাথে সামরিক বাহিনীর সিনিয়র জেনারেলদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, বিভিন্ন র্যাংকের অফিসারদের মধ্যে ঘটাচ্ছে ভয়ের বিস্তার। অজ্ঞতা থেকে ভয়ের জন্ম হয়, ভয় থেকে মুক্তির জন্য মানুষ স্বাভাবিকভাবে তখন প্রতিক্রিয়া করে। রাশিয়াতে এই কারণেই ঘটতে পারে সামরিক অভ্যুত্থান।
তবে, সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার সম্ভাবনা যুদ্ধ শুরু আগের চেয়ে বেশি হলেও, বাস্তবিকভাবে ক্রেমলিনে সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা বেশ কম।
প্রথমত, সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার জন্য যেসব মৌলিক নিয়ামক প্রয়োজন, তার অনেক কিছুই রাশিয়াতে নেই। রাশিয়া নিম্ন আয়ের কোনো দেশ না, রাশিয়াতে সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেনি, সংঘাত উৎপাদনে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা বিভক্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির সমর্থন সামরিক বাহিনী পেলেও সেটির নিশ্চয়তা নেই।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়াতে পুতিনের অধীনে কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স অত্যন্ত শক্তিশালী কাঠামো হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে আছে কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্সের সাথে যুক্ত অফিসারেরা। এ ধরনের কাঠামোতে সামরিক বাহিনীর মধ্যে পরিবর্তনকামী অফিসারদের মধ্যে সমন্বয় খুবই কঠিন হয়ে যায়। পাশাপাশি, রাশিয়ার ভূগোলও সামরিক বাহিনীর সমন্বিত অভ্যুত্থানের পক্ষে না।
গণঅভ্যুত্থান
যুদ্ধের বিপুল ব্যয়ভার বহন করতে হবে রাশিয়ার করদাতাদের, যুদ্ধকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আরোপ করা অর্থনৈতিক অবরোধেরও মূল শিকার হবে সাধারণ নাগরিকেরাই। মহামারির মধ্যে ইতোমধ্যেই বিপর্যস্ত রাশিয়ান অর্থনীতিতে আরো নতুন বোঝা চাপলো যুদ্ধের মাধ্যমে। এরকম একটি সময় বিপ্লবের জন্য আদর্শ সময়।
রাশিয়াতে ১৯১৭ সালে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব হয়েছে, ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা গণতন্ত্রীদের সরিয়ে অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে কমিউনিস্টরা। কমিউনিস্টদের কঠোর কর্তৃত্ববাদী শাসনকে পেছনে ফেলে নব্বইয়ের দশকে গণতান্ত্রিক কাঠামো আসে রাশিয়াতে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নিয়মিত ঘটনা থাকলেও, পুতিনের বিরুদ্ধে একটি গণঅভ্যুত্থান হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
প্রথমত, আরব বসন্তের পর থেকেই নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেন ভ্লাদিমির পুতিন, রাশিয়াতে আরব বসন্তের মতো সম্ভাব্য বিপ্লব প্রতিরোধে গত এক দশক ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছেন পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে যখন রাশিয়ানরা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ করতে পারে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো স্বল্প সময়ের মধ্যে সেই বিক্ষোভ দমন করেছে।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে উদার গণতন্ত্রের ধারণা বিকাশ লাভ করেনি, বিকাশ লাভ করেনি রাজনৈতিক স্বাধীনতার ধারণাও। সাংস্কৃতিকভাবেই, রাশিয়ানরা কঠোর কর্তৃত্ববাদী এক সংস্কৃতির মধ্যে থেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী পার করছে, শাসকের ভুলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুযোগ রাশিয়াতে সংকুচিত।
তৃতীয়ত, গণঅভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গণমাধ্যম। রাষ্ট্রকাঠামো বিচারিক কাঠামো যেমন অপরিহার্য একটি উপাদান, সেটি সামাজিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করুক বা না করুক, গণঅভ্যুত্থানের ক্ষেত্রেও গণমাধ্যম এমনই একটি উপাদান। রাশিয়াতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেক আগে থেকেই সংকুচিত, রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলো কেবল ক্রেমলিন কর্তৃক অনুমোদিত খবরগুলোই প্রচার করতে পারে। ভিন্নমত রাশিয়াতে কঠোরভাবে দমন করা হয়, একাডেমিক স্বাধীনতাও রাশিয়াতে অত্যন্ত সীমিত।
চতুর্থত, চেনোওয়েথসের গবেষণা অনুযায়ী, যেকোনো আন্দোলন সফল করতে মোট জনসংখ্যার ৩.৫ শতাংশ নাগরিকের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হয়। রাশিয়াতে কিছুদিন পর পরই পুতিনবিরোধী আন্দোলন হয়, যুদ্ধের মধ্যেও পুতিনবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু, কোনোভাবেই এই আন্দোলনগুলো ৩.৫ শতাংশ মানুষকে আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে পারেনি, যুক্ত করতে পারার সম্ভাবনাও নেই।
রাশিয়ান অলিগার্কদের ভূমিকা
বিলিয়নিয়ারদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, গুড বিলিয়নিয়ার ও ব্যাড বিলিয়নিয়ার। গুড বিলিয়নিয়াররা বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করেন, ব্যাড বিলিয়নিয়াররা রাষ্ট্রীয় সুবিধা আর সম্পদ কাজে লাগিয়ে বিলিয়নিয়ার হন। রাশিয়া ব্যাড বিলিয়নিয়ারদের দেশ। সেখানকার শাসনতন্ত্র পরিচালিত হয় কতিপয় স্বার্থগোষ্ঠীর সুবিধাকে বিবেচনায় রেখে, রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে তারাই রাখে মুখ্য ভূমিকা।
ইউক্রেনে যুদ্ধের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে এই বিলিয়নিয়ারদের কেউ সুবিধাভোগী হচ্ছেন না, অর্থনৈতিক অবরোধ আর বাণিজ্যিক স্থবিরতার জন্য মূলত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এই বিলিয়নিয়াররাই। অর্থনৈতিক স্থবিরতা থেকে উত্তরণ ঘটাতে এই অলিগার্করা পাশ্চাত্যের সাথে সমঝোতায় আসতে পারে, সমঝোতার অংশ হিসেবে রাশিয়ার রাষ্ট্রকাঠামো পুতিনকে সরিয়ে নিয়ে আসতে পারে নতুন কাউকে। অলিগার্করা ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে পারে, তৈরি করতে পারে গণআন্দোলন।
তবে, রাশিয়াতে যারা বর্তমান অলিগার্ক, তারা প্রত্যেকেই পুতিনের ঘনিষ্ঠ, পুতিনের দীর্ঘদিনের মিত্র। নতুন শাসক আসলে অলিগার্কদের এই বৃত্ত ভাঙার ভয় থেকে বিদ্যমান এস্টাবলিশমেন্ট পুতিনকে রেখে দেওয়ার পক্ষেও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সব মিলিয়ে, যুদ্ধে রাশিয়ার সফলতা আসুক বা না আসুক, পুতিনের পতনের সম্ভাবনা কম।
This article is written in Bangla, about the probabilities of Putin's collapse as the consequence of the Ukraine invasion.
All the necessary articles are hyperlinked inside.
Feature Image: Vox.