Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফিডলার অন দ্য রুফ: একটি ছোট গল্পের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ইতিহাস

শোলোম আলেইখেম উনিশ শতকের সোভিয়েত রাশিয়ার একজন জনপ্রিয় লেখক ও নাট্যকার। ইহুদী সাহিত্যে তার প্রভাব ছিল সর্বজনবিদিত। তার অসাধারণ এক ছোট গল্প ‘তেভিয়ে দ্য ডেইরিম্যান’ এর জন্য সারা বিশ্বের সাহিত্যবোদ্ধাদের মাঝে তিনি অমর হয়ে রয়েছেন। এই গল্প ১৮৯৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। নাট্যকার আর্নল্ড পার্ল গল্পটির প্রথম নাট্যরূপ দেন, ‘তেভিয়ে অ্যান্ড হিজ ডটার্স’ নামে নাটকটি পরিচিতি পায়। ১৯১৯ সালে নাট্যকার এবং নির্দেশক মরিস শাওয়ার্টজ নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ করেন।

জনপ্রিয় লেখক ও নাট্যকার শোলোম আলেইখেম; Image Source: ashkenaz.ca

উনিশ শতকের শেষের দিকে রাশিয়ার এক ইহুদী অধ্যুষিত গ্রাম আনাতেভকাকে কেন্দ্র করে গল্পের পটভূমি রচিত হয়েছে। তেভিয়ে নামের একজন পশুপালক এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তেভিয়ের জীবন আর তার পরিবারের নানা ঘটনা নিয়ে গল্পটি আবর্তিত হয়েছে। স্ত্রী গোলডা ও তাদের পাঁচ মেয়েকে নিয়ে তেভিয়ের সংসার। সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও পরিবার এবং সন্তানদের প্রতি তেভিয়ের ভালবাসার কোনো কমতি ছিল না। পশুপালন এবং গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চলতো। দারিদ্র্যের মাঝে থেকেও তেভিয়ে এক সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতেন। প্রতিনিয়ত ভাবতেন, কীভাবে মেয়েদের জন্য এক সুখী স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের ব্যবস্থা করবেন।

তেভিয়ে অ্যান্ড হিজ ডটার্স গল্পের প্রচ্ছদ; Image Source: bookdepository.com

বিবাহযোগ্য বড় মেয়ে তজেইতেলের জন্য তেভিয়ে গ্রামের এক স্বচ্ছল পরিবারের পাত্রকে পছন্দ করে রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন, সেই ছেলের সাথে বিয়ে হলে মেয়ে সুখী হবে। বিয়ে যখন প্রায় পাকাপাকি, তখন ঘটলো অন্য এক ঘটনা। তজেইতেল বাবার অমতে গ্রামের এক গরিব দর্জিকে ভালোবেসে বিয়ে করে ফেলেন। তজেইতেলের বিয়ের ঘটনা প্রথম আঘাত নিয়ে আসে পরিবারের ওপর। কিন্তু গল্প এখানেই থেমে থাকে না। মেজো মেয়ে হোডেলও বিয়ে করে বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে, এক বিপ্লবীকে। বিপ্লবের কারণে হোডেলকে শেষ পর্যন্ত তার বিপ্লবী স্বামীর সাথে সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে যেতে হয়। সেজো মেয়ে শাভা বিয়ে করে ধর্মের বাইরে গিয়ে একজন অ-ইহুদীকে। এভাবে একটির পর একটি আঘাতে ভাঙতে থাকে পরিবারের বাঁধন। তেভিয়ের সযত্নে লালিত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

তেভিয়ে অ্যান্ড হিজ ডটার্স গল্পের প্রধান চরিত্র তেভিয়ে; Image Source: theatermania.com

একটির পর একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তেভিয়ের জীবনকে একদম এলোমেলো করে দেয়। এরপরই নিয়তির শেষ আঘাতের মতো নেমে আসে জারের নিয়ন্ত্রণাধীন কসাক-বাহিনীর আক্রমণ। শাসকের রক্তপিপাসা মেটানোর জন্য গোটা আনাতেভকা গ্রাম তছনছ হয়ে যায়। শত শত ইহুদী অধিবাসীর ক্ষেত-খামার জ্বালিয়ে দেয়া হয়। নির্বিচারে ইহুদি নিধনে মেতে ওঠে কসাক বাহিনী।

এর পরের ঘটনা বড়ই মর্মান্তিক। তেভিয়ে তখন বিধ্বস্ত মানুষ, জীবন যার কাছ থেকে মূল্য নিয়েছে অনেক। একদিকে নিজের পরিবারে অশান্তি, অন্যদিকে বিপুল আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে তেভিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে দেখতে থাকে চারপাশে ঘটে চলা ধ্বংসযজ্ঞ। কিন্তু না, এই অপরিসীম হতাশার মধ্যেও শেষ হয় না কাহিনীর। ধ্বংসস্তুপের মধ্যেই বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন দেখে সে। অবশিষ্ট যা ছিল, তা-ই সম্বল করে তেভিয়ে আনাতেভকা ছেড়ে আমেরিকা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। স্ত্রী ও পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন শেষ মুহূর্তেও তাকে ছাড়ে না। এই আশাবাদ নিয়েই গল্পের ইতি ঘটে। 

সবকিছু হারিয়েও বিধ্বস্ত তেভিয়ে স্বপ্ন দেখে আবার নতুন করে বাঁচার; Image Source: azpm.org

শুরুর দিকে মঞ্চনাটক হিসেবে গল্পটি তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। পরবর্তীকালে জেরি রক, শেলডন হারনিক ও জোসেফ স্টাইনের মতো নাট্যকারদের এক মিলিত প্রয়াসে নাটকটির খোলনলচে বদলে ফেলা হয়। এসব স্বনামধন্য ব্যক্তির মিলিত পরিকল্পনায় নাটকটিকে গীতিনাট্যে রূপান্তর করা হয়। নতুনভাবে নির্মিত নাটকটিতে নাট্যরূপ দেন জোসেফ স্টাইন, নাটকে যেসব গান ব্যবহার করা হয় তার কথা লেখেন শেলডন হারনিক আর পুরো নাটক ও গানের সঙ্গীতায়োজনে ছিলেন জেরি রক। এবার নাটকটির নতুন নাম দেয়া হয় ‘ফিডলার অন দ্য রুফ’। প্রযোজক হ্যারল্ড প্রিন্সের সহায়তায় এবং জেরোম রবিন্সের পরিচালনায় জনপ্রিয় ব্রডওয়ের মঞ্চে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়। 

একসময়ের জনপ্রিয় নাট্যকার জোসেফ স্টাইন; Image Source: The Guardian

নাচ আর গানে জমজমাট এক মিউজিক্যাল নাটক ফিডলার অন দ্য রুফ। একটি চলচ্চিত্রকে হিট করাতে গেলে যেসব বিনোদনের উপকরণ সচরাচর রাখা হয়, ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ হওয়া ফিডলার অন দ্য রুফ যেন চলচ্চিত্রেরই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। অসহনীয় দারিদ্র্য ও নির্যাতন এবং প্রতিকূল সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও একজন মানুষের নিজের ঐতিহ্যকে আঁকড়ে থাকার মরণপণ সংগ্রামের কাহিনী নিয়ে যে এমন কিছু আদৌ তৈরি করা যেতে পারে, তা এর আগে কেউ ভাবতেই পারেনি। ব্রডওয়ের এই মিউজিক্যাল থিয়েটার সে সময়ের সব নাটকের জনপ্রিয়তাকে পেছনে ফেলে দেয়। সে সময় মঞ্চ নাটকের ইতিহাসে এই ছোট গল্প বেশ আলোড়ন তুলেছিল।

ব্রডওয়ে থিয়েটারের মঞ্চসজ্জা; Image Source: aftermidnightbroadway.com

১৯৬৪ সালে ফিডলার অন দ্য রুফ যখন প্রথম মঞ্চস্থ হয়, তখন তার সাফল্যকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখেছিলেন। কিন্তু সব সমালোচনা ও বিতর্ককে নস্যাৎ করে একটানা সাত বছর ন’মাস ধরে চললো নাটকটি, ব্রডওয়ের মুকুটে যুক্ত হলো জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বর্ণময় পালকটি। ‘ফিডলার অন দ্য রুফ’ নাটকটিতে ছিল বেশ কয়েকটি অবিস্মরণীয় গান, যা গোটা ছয়ের দশকে আমেরিকানদের মুখে মুখে ফিরতো। ‘ইফ আই ওয়্যার আ রিচ ম্যান’, ‘সানরাইজ, সানসেট’, ‘ম্যাচমেকার ম্যাচমেকার’, ‘আনাতেভকা’ ইত্যাদি গানের কথা ও সুরের মধ্যে পরতে পরতে মিশে ছিল গভীর জীবনবোধ ও ভালবাসা, বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস ও স্পর্ধা।

ব্রডওয়ের মঞ্চে সাড়া জাগানো এক নাটক ‘ফিডলার অন দ্য রুফ’; Image Source: wbur.org

ব্রডওয়ের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিশ্ব জুড়ে। এমন একটা সময় ছিল ব্রডওয়ের ’মিউজিক্যাল’ যে শহরেরই মঞ্চে প্রদর্শিত হয়েছে, শহরের মানুষ সেই প্রদর্শনী দেখার জন্য বাঁধ ভাঙার মতো ভিড় করেছে। জরুরি নানা কাজ ফেলে সব বয়সের মানুষ টিকিটের জন্য লাইন দিতে ছুটেছে। ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ নাটকগুলোর এমনই জনপ্রিয়তা ছিল যে, তাদের একটির পর একটি ‘প্রোডাকশন’ বাজারে হিট, একেবারে যাকে বলে ‘ব্লকবাস্টার’।

‘ফিডলার অন দ্য রুফ’ চলচ্চিত্রের পরিচালক নরমান জিউইসন; Image Source: wikimedia commons

১৯৭১ সালে ‘ফিডলার অন দ্য রুফ’ নাটকটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেয়া হয়। মঞ্চের বিপুল সাফল্যই নাটকটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দিতে প্রযোজককে উৎসাহিত করেছিল, তা বলাই বাহুল্য। তবে চলচ্চিত্রের জন্য আবার নতুন করে চিত্রনাট্য লেখা হয়। নাট্যকার জোসেফ স্টাইনের উপর এই চিত্রনাট্য লেখার গুরুদায়িত্ব পড়ে। 

‘ফিডলার অন দ্য রুফ’ চলচ্চিত্রের পোস্টার; Image Source: impawards.com

যুগোস্লাভিয়ার জাগ্রেবের নিকটবর্তী এক গ্রামে শুটিং হয়। উনিশ শতকের রাশিয়াকে বাস্তবসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্য চেহারায় দর্শকের কাছে উপস্থাপন করার জন্য অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছিল খামার ও পশুশালার সেট। ছবিতে কল্পকাহিনীর মেজাজ নিয়ে আসার জন্য রঙের ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়েছিল। এই দায়িত্বটি নিয়েছিলেন বিখ্যাত চিত্রকর মার্ক শাগাল। নরমান জিউইসনের অনবদ্য পরিচালনায় চলচ্চিত্রটি সাড়া বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা পায়। লেখক শোলোম আলেইখেমের ছোট গল্প ‘তেভিয়ে দ্য ডেইরিম্যান’ এর এই পথ চলা সাহিত্য এবং বিনোদন জগতে রূপকথার যে ইতিহাস তৈরি করেছিল, তা সত্যিই ঈর্ষণীয়।

This article is in Bengali language. This is story about A play named ‘Fiddler on the Roof’ is based on ‘Tevye and his Daughters’ (or ‘Tevye the Dairyman’), a series of stories by Sholem Aleichem. All the sources are hyperlinked inside the article.

Featured Image: jewishjournal.org

Related Articles