Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হাউজ অফ কার্ডস: কূটকৌশলের রাজনীতি নিয়ে টিভি সিরিজ

যারা নতুন কোনো টিভি সিরিজ শুরু করার কথা ভাবছেন, অথচ সংশয়ে আছেন কোনটা দিয়ে শুরু করবেন, তাদের জন্য আজকের এই টিভি সিরিজ রিভিউ।

হাউজ অফ কার্ডস; source: IMDB

নেটফ্লিক্স এর প্রযোজনায় বহুল জনপ্রিয় পলিটিকাল ড্রামা সিরিজ ‘হাউজ অফ কার্ডস’ ইতোমধ্যেই বিশাল একটি ভক্ত শ্রেণী তৈরি করে ফেলেছে। স্বয়ং বারাক ওবামা এবং বিল ক্লিনটন এই সিরিজের নিয়মিত দর্শক বলে জানা গেছে। টিভি সিরিজ বলা হলেও ‘হাউজ অফ কার্ডস’ কিন্তু কোনো টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হয় না। মূলত নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবাররা ইন্টারনেটে স্ট্রিমিং করে দেখে থাকেন ‘হাউজ অফ কার্ডস’।

মাইকেল ডবস ছিলেন একজন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ। তিনি মারগারেট থ্যাচারের প্রশাসনে চিফ অফ স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মূল পেশা রাজনীতির পাশাপাশি তিনি তার সাহিত্য প্রতিভার ঝলক দেখান ‘হাউজ অফ কার্ডস’ নামের বই লিখে। ১৯৯০ সালে বিবিসি সেই বই অবলম্বনে একটি টিভি সিরিজ বানায়। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে নেটফ্লিক্স ২০১৩ সালে সিরিজটি রিমেক করে। দুটো সিরিজের নামই ‘হাউজ অফ কার্ডস’।

নেটফ্লিক্সের ‘হাউজ অফ কার্ডস’ টিভি সিরিজের স্রষ্টা বিল উইলিমন। সিরিজের প্রথম দুটি পর্ব পরিচালনা করেছেন নন্দিত চিত্রপরিচালক ডেভিড ফিঞ্চার। ‘ফাইট ক্লাব’ আর ‘সেভেন’ নির্মাণ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ফিঞ্চার, হাউজ অফ কার্ডস দেখা শুরু করলে তার অন্য কাজগুলোর মতোই বিমোহিত হবেন দর্শকরা।  প্রতি সিজনে ১৩টি করে পর্ব রয়েছে, ২০১৭ সালে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটির পঞ্চম সিজন। গোল্ডেন গ্লোব আর এমি এ্যাওয়ার্ড রয়েছে হাউজ অফ কার্ডসের পুরস্কারের ঝুলিতে। সিরিজটির আইএমডিবি রেটিং ৯.০। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, দর্শক বা সমালোচক- দুই শ্রেণীকেই খুশি করতে পেরেছে ব্যয়বহুল এই সিরিজ।

সিরিজের প্লট

হাউজ অফ কার্ডসের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে ওয়াশিংটন নিবাসী এক দম্পতিকে ঘিরে। ফ্রান্সিস আন্ডারউড একজন ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান, ধুরন্ধর রাজনীতিক হিসেবে তার বেশ কুখ্যাতি আছে সারা ওয়াশিংটন ডিসি জুড়ে। তার স্ত্রী ক্লেয়ার আন্ডারউড সরাসরি রাজনীতির মঞ্চে না থাকলেও পর্দার পেছনে স্বামীর প্রেষণা হিসেবে কাজ করেন। ক্লেয়ার একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, পরবর্তীতে যা ফ্রান্সিসের ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। সদ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফ্রান্সিসের দল বিজয়ী হয়। হোয়াইট হাউজে অভিষিক্ত হন সে দলের প্রার্থী গ্যারেট ওয়াকার। ওয়াকারের বিজয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ফ্রান্সিস নানা স্বপ্নের জাল বোনেন। নির্বাচনের আগে ফ্রান্সিসকে কথা দেয়া হয়েছিল ‘সেক্রেটারি অফ স্টেট’ এর পদটা তাকেই দেয়া হবে।

প্রেসিডেন্ট ওয়াকার ওভাল অফিসে কাজ শুরু করলে অবশ্য দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ফ্রান্সিসকে নানা ভণিতা করে তার প্রাপ্য পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট যখন মুখোমুখি বসে সুকৌশলে তাকে বোঝান যে, সেক্রেটারি অফ স্টেট পদের জন্য সে এখনো প্রস্তুত নয়, হাসিমুখে প্রেসিডেন্টের কথা মেনে নেয়া ছাড়া ফ্রান্সিসের সামনে আর কোনো পথ ছিল না। নিজ দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে প্রেসিডেন্টের সাথে করমর্দন করে কক্ষ ত্যাগ করেন ফ্রান্সিস। প্রতারিত, ক্রোধোন্মত্ত কংগ্রেসম্যান তখনই প্রতিজ্ঞা করেন, এই দুধের মাছিদের তিনি একহাত দেখে নেবেন!

ফ্রান্সিস আর ক্লেয়ার; source: Pinterest

প্রথম সিজনে দর্শকরা ফ্রান্সিস আর ক্লেয়ার দম্পতির কুটিল বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাবেন। আকাঙ্ক্ষিত সেক্রেটারি অফ স্টেটের পদ না পেয়ে ফ্রান্সিস একদমই দমে যাননি। দ্বিগুণ উদ্যমে তিনি তার নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করেন। পথের কাঁটা সরিয়ে কীভাবে নিজের রাস্তা প্রশস্ত করতে হয়, সে ব্যাপারে ফ্রান্সিসের জুড়ি নেই। অসম্ভব স্বার্থপর আর চক্রান্তকারী এই চরিত্রের ধারালো ব্যক্তিত্বে ঘায়েল হতে বাধ্য হবেন যেকোনো দর্শক। গ্যারেট ওয়াকার আর তার কেবিনেটের সকল কর্মীর সাথে বিচিত্র সম্পর্ক গড়ে তোলেন ফ্রান্সিস। প্রতিপক্ষকে সময়ের প্রয়োজনে বন্ধু বানাতে পারেন তিনি, আবার প্রিয়পাত্রকে মুহূর্তেই ছুঁড়ে ফেলে দেন আস্তাকুড়ে। এমনই প্রহেলিকাময় হৃদয়হীন মানুষ ফ্রান্সিস আন্ডারউড।

প্রহেলিকাময় হৃদয়হীন মানুষ ফ্রান্সিস আন্ডারউড; source: Pinterest

চরিত্র পরিচিতি

ফ্রান্সিস আন্ডারউড

ফ্রান্সিস সম্পর্কে তো এতক্ষণ জানা হলো। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন কেভিন স্পেসি। দুটি অস্কার বগলদাবা করা এই অসাধারণ অভিনেতার দুর্দান্ত অভিনয়শৈলীতে মুগ্ধ হতে বাধ্য দর্শক। সেলুলয়েডের পর্দায় ‘আমেরিকান বিউটি’, ‘দ্য ইউজুয়াল সাসপেক্টস’, ‘এল এ কনফিডেনশিয়াল’ এর মতো কালজয়ী সিনেমায় অভিনয় করা এই শক্তিমান অভিনেতা আপনাকে ‘হাইজ অফ কার্ডস’ দেখতে বাধ্য করবে!

ফ্রান্সিস আন্ডারউড চরিত্রে কেভিন স্পেসি; source: PlayBuzz

ক্লেয়ার আন্ডারউড

ফ্রান্সিস আন্ডারউডের স্ত্রী ক্লেয়ার এর চরিত্রটি রুপায়ন করেছেন রবিন রাইট। যারা ‘ফরেস্ট গাম্প’ দেখেছেন, তারা প্রৌড়া রবিনকে দেখে আরো মুগ্ধ হবেন। ফ্রান্সিসের যোগ্য সহযোগী আর প্রেয়সী- দুটো বিশেষণই এই চরিত্রের জন্য যুতসই। বব কাট চুলের ক্লেয়ার শান্ত, ঠাণ্ডা মাথার এক মাস্টারমাইন্ড। স্বামীর রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ক্লেয়ারের অবদান অপরিসীম।

ক্লেয়ার আন্ডারউড চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন রবিন রাইট; source: IMDB

ডগ স্ট্যাম্পার

ফ্রান্সিস আন্ডারউডের ব্যক্তিগত সহকারি ডগ স্ট্যাম্পারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাইকেল কেলি। ডগ স্ট্যাম্পার ফ্রান্সিসের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষগুলোর একজন। তার গোপন অনেক কাজের সাক্ষী এই ব্যক্তি। ডগের সহযোগিতায় ফ্রান্সিস একের পর এক ঘায়েল করেন তার প্রতিপক্ষদের।

ডগ স্ট্যাম্পার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাইকেল কেলি; source: Salon.com

জোয়ি বার্নস

দ্য ওয়াশিংটন হেরাল্ডের তরুণী সাংবাদিক জোয়ি বার্নসের কাজ হোয়াইট হাউজ সংক্রান্ত খবর কভার করা। ঘটনা পরিক্রমায় তার সাথে দেখা হয় ফ্রান্সিস আন্ডারউডের। পরবর্তীতে দুজন জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির জটিল মারপ্যাঁচে। দুজনের সম্পর্কের রসায়ন দর্শকদের সাসপেন্সের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন কেট মারা।

জোয়ি বার্নস চরিত্রে অভিনয় করেছেন কেট মারা; source: NextShark

এডওয়ার্ড মিচাম

সাবেক পুলিশ অফিসার এডওয়ার্ড মিচাম ফ্রান্সিসের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। এই লোকটিও ফ্রান্সিসের অত্যন্ত বিশ্বস্ত। তিনি দেশের যে প্রান্তেই যান না কেন, মিচাম তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে। সানগ্লাস আর কালো স্যুট পড়া এডওয়ার্ড মিচাম চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাথান ড্যারো।

এডওয়ার্ড মিচাম চরিত্রে নাথান ড্যারো; source: DigitalSpy

গ্যারেট ওয়াকার

সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্যারেট ওয়াকারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাইকেল গিল। যারা ‘মিস্টার রোবট’ দেখেছেন, তারা এই ভদ্রলোককে চিনবেন। প্রেসিডেন্ট ওয়াকার ফ্রান্সিস আন্ডারউডকে বিশ্বাস করেন, আর এটিই তার বড় ভুল। ওয়াকারের সরল মানসিকতাকে পুঁজি করে চাটুকার ফ্রান্সিস বুনে চলেন তার ষড়যন্ত্রের জাল।

প্রেসিডেন্ট গ্যারেট ওয়াকারের ভূমিকায় মাইকেল গিল; source: House of Cards Wiki

রেমি ড্যান্টন

রেমি ড্যান্টন ফ্রান্সিসের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি, আট বছর একসাথে কাজ করেছে তারা। প্রথম সিজনের দ্বিতীয় পর্বে দুজনের আবার দেখা হয়। রেমি ড্যান্টন মোটেও বিশ্বাস করার মতো লোক না, তবে ফ্রান্সিস ঠিকই সতর্কতার সাথে একত্রে কাজ করে যান। রেমি ড্যান্টনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ বছর অস্কারজয়ী মাহারশালা আলী।

রেমি ড্যান্টন চরিত্রে মাহারশালা আলী; source: The Gate

লিন্ডা ভ্যাসকেজ

লিন্ডা ভ্যাসকেজ প্রেসিডেন্ট ওয়াকারের চিফ অফ স্টাফের দায়িত্ব পালন করেন। মানুষ হিসেবে খারাপ না, তবে ফ্রান্সিসের বন্ধু হতে পারেননি তিনি। কিউবান অভিনেত্রী সাকিনা জাফরি এই চরিত্র রুপায়ন করেছেন।

লিন্ডা ভ্যাসকেজ চরিত্রে সাকিনা জাফরি; source: Indiewire.com

হাউজ অফ কার্ডস এর দ্বিতীয় সিজনের প্রিমিয়ারের আগের দিন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক মজার কাণ্ড করে বসেন। নিজের অফিশিয়াল টুইটার একাউন্ট থেকে তিনি টুইট করেন, “Tomorrow House of Cards, no spoilers please”! মার্কিন রাজনীতি নিয়ে কাল্পনিক একটি সিরিজ আসল প্রেসিডেন্টেরও মন জয় করে ফেলেছে!

বারাক ওবামার টুইট; source: People

আর দেরি কেন, এখনই শুরু করুন ‘হাউজ অফ কার্ডস’। হ্যাপি ওয়াচিং!

ফিচার ইমেজ- SUWalls

Related Articles