Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লোগান: সুপারহিরো সিনেমার অন্যতম সেরা সৃষ্টি

বর্তমানে সুপারহিরো সিনেমা সম্পর্কে আমাদের সবারই কমবেশি ধারণা আছে। এক্ষেত্রে কোন সুপারহিরো সিনেমা সবচেয়ে সেরা? এই প্রশ্নের উত্তরে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। তবে বেশিরভাগ মানুষের মতেই বিশ্বের সেরা সুপারহিরো মুভি হলো ‘দ্য ডার্ক নাইট’, আবার অনেকেই মনে করেন ক্রিস্টোফার রিভের ‘সুপারম্যান’ বা স্যাম রাইমির ‘স্পাইডারম্যান’ কিংবা ‘দ্য অ্যাভেঞ্জারস’ সেরা সুপারহিরো সিনেমা। এমনকি এই বিষয়ে সাম্প্রতিক জোকার মুভি নিয়েও চলছিল আলোচনা। আর এ সকল কথাবার্তায় যে সিনেমাটি প্রায়ই কিছুটা আড়ালে থেকে যায় সেটিই জেমস ম্যানগোল্ডেলোগান

জেমস ‘লোগান’ হাওলেট বা কোডনেম উলভারিন হিসেবে হিউ জ্যাকম্যান আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। যেখানে নামিদামি অভিনেতারা চরিত্রটি উপেক্ষা করেছিল, সেই চরিত্র নিয়েই প্রায় দুই দশক পার করে দেন জ্যাকম্যান এবং অবশেষে লোগানের মাধ্যমে ভক্তদের একপ্রকার কাঁদিয়েই চরিত্রকে বিদায় জানান।

লোগান মুভির পোস্টার  © 20th Century Studios 

একটা সময় ছিল যখন সুপারহিরো সিনেমা মানেই ছিল ব্যটম্যান কিংবা সুপারম্যানের মতো সুপারহিরোর চলচ্চিত্র, কারণ তখন একাধিক সুপারহিরো নিয়ে কাস্ট তৈরি করে সিনেমা পরিচালনায় প্রোযোজক সংস্থাগুলো আগ্রহী ছিল না। কিন্তু এই চিন্তাধারায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে ২০০০ সালের এক্স-ম্যান সিনেমার মাধ্যমে, কোনো প্রকার অরিজিন স্টোরি ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয় সিনেমাটি, এবং বলতে গেলে সুপারহিরো সিনেমার ধারাকেই পুনরুজ্জীবিত করে তোলে এক্স ম্যান ফ্র্যাঞ্চাইজের প্রথম সিনেমা। আর এর মাধ্যমেই সিনেজগতে দর্শকেরা প্রথম পরিচিত হন কমিকসের মিউট্যান্টদের সাথে।

স্যার ইয়্যান ম্যাককেলেনের ম্যাগনিটো কিংবা প্যাট্রিক স্টুয়ার্টের প্রফেসর এক্স ছাড়াও যার প্রতি দর্শকেরা বেশি আকৃষ্ট হন তিনিই হলেন হিউ জ্যাকম্যান বা উলভারিন। সেই থেকে এক্স-ম্যান সিনেমা মানেই যেন উলভারিনের প্রতি দর্শকদের আলাদা উত্তেজনা। ছোটবেলায় আমরা অনেকেই হাতে চামচ বা কলম নিয়ে উলভারিনকে অনুকরণের চেষ্টা করেছি। আর এভাবেই হলিউডে সাধারণ একজন মঞ্চ অভিনেতা থেকে সকলের পরিচিত মুখ হয়ে যান জ্যাকম্যান। এক্স-ম্যান সিরিজের সফলতার পর এর চরিত্রগুলোর অরিজিন স্টোরি নিয়ে কাজ শুরু হয়। এরপরই দর্শক সর্বপ্রথম সিনেমার পর্দায় উলভারিনের মৌলিক কোনো সিনেমা দেখতে পায়।

তবে এক্ষেত্রে দর্শকদের পুরোটা সময় হতাশ হতে হয়। ‘এক্স-ম্যান অরিজিন্স: উলভারিন‘ নামক প্রিকুয়েল সিনেমায় হিউ জ্যাকম্যানের অনবদ্য অভিনয় থাকা সত্ত্বেও ন্যারেটিভজনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে একপ্রকার সাদামাটা অভিষেক ঘটে উলভারিনের। এমনকি সিনেমা রিলিজের কয়েক মাস আগে সিনেমার ওয়ার্ক প্রিন্ট লিক হয়ে যায় ইন্টারনেটে, যা সিনেমা রিলিজের সময় পর্যন্ত ৪.৫ মিলিয়ন বার ডাউনলোড হয়েছিল। বিশিষ্ট ফিল্ম ক্রিটিক রজার ইবারট সিনেমাটি সম্পর্কে বলেন,

কেন এই লোকটির (উলভারিন) সম্পর্কে আমার চিন্তা করা উচিত? সে কোনো ব্যথা অনুভব করে না, কিছুই তাকে মারতে পারে না, সুতরাং সে অবশ্যই মূলত অ্যাকশন সিকোয়েন্সের জন্য গল্পের একটি ডিভাইস।

এরপর অরিজিন্স উলভারিন সিনেমা রিলিজের মাত্র চারদিন পরই ঘোষণা দেওয়া হয়, উলভারিনের আরেকটি সিক্যুয়াল বের করা হবে, লোকেশন হিসেবে জাপানকে বেছে নেওয়া হয়। এই লোকেশনটি ইঙ্গিত দিচ্ছিল ক্রিস ক্লেয়ারমন্ট এবং ফ্র্যাঙ্ক মিলারের লেখা ১৯৮২ সালের উলভারিনের লিমিটেড কমিকবুক সিরিজকে। এবার ডিরেক্টর হিসেবে ব্রায়ান সিঙ্গারকে নেওয়ার চিন্তা করা হয়। তবে ২০১০ সালে কাজটি দেওয়া হয় ব্ল্যাক সোয়ান সিনেমার পরিচালক ড্যারেন আরনোফস্কিকে। ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি সরে দাঁড়ান। এরপর ২০১১ সালের জুনে জেমস ম্যানগোল্ডকে ডিরেক্টর হিসেবে বেছে নেয় ফক্স, স্ক্রিনপ্লের জন্য নেওয়া হয় মার্ক বোমব্যাক এবং স্কট ফ্র্যাঙ্ককে। ডিরেক্টর হিসেবে ম্যানগোল্ড বুদ্ধিমানভাবে তার পূর্বসূরীদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেন। জ্যাকম্যান এই বিষয়ে বলেন,

এটা আশা করি আমার জন্য আউট অফ দ্য বক্স কাজ হতে চলেছে। আমি আশা করি… ভাল। আমি এটাই বলব, আমি সত্যিই এটা অনুভব করছি, এবং আমি মনে করি এটা হতে যাচ্ছে আগেরবারের থেকে আরও ডার্ক এবং ভিন্ন।

দ্য উলভারিন মুভির পোস্টার  © 20th Century Studios 

অবশেষে ২০১৩ সালে মুক্তি দেওয়া হয় ‘দ্য উলভারিন’। এবার দর্শক-সমালোচক দুদিক দিয়েই প্রশংসা পায় সিনেমাটি। সিনেমায় উলভারিনের হতাশা, অপরাধবোধ এবং নিজেকে লোকালয়ে নিয়ে যাওয়া- এই সকল ব্যাপার চরিত্রটিকে পুনরায় জীবিত করে তোলে। এছাড়াও জেমস ম্যানগোল্ড তার ডিরেকশন এবং কাহিনির থিম দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি এই চরিত্র নিয়ে সামনে আরও কিছু করতে চান, যা সিনেমার কিছু সংলাপেও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

একই বছর নভেম্বর মাসে ফক্স আরও একটি সোলো উলভারিন মুভি বানানোর জন্য ম্যানগোল্ডের সাথে আলোচনায় বসে। তবে মজার ব্যাপার হলো এবার ম্যানগোল্ড শুধু সিনেমার পরিচালকই নন, তিনি স্ক্রিনপ্লে তৈরিরও দায়িত্ব নেন। প্রডিউসার হিসেবে আসেন সাইমন কিনবারগ। অনুপ্রেরণা হিসেবে নেওয়া হয় মার্ক মিলারের ‘ওল্ডম্যান লোগান’। সিনেমার পর্দার পেছনের গল্প নিয়ে ম্যানগোল্ড বলেন, 

আমি এবং হিউ শেষ কাজ করার পর নতুনটায় আমরা কী করব সেই সম্পর্কে কথা বলছিলাম। দুজনেরই প্রয়োজন ছিল আগের কাজ থেকে বের হয়ে এসে সম্পূর্ণ নতুন একধরনের পরিবর্তন আনা, যা কেবল পরিবর্তনের স্বার্থে পরিবর্তন করা নয়, এমন কিছু তৈরি করা যা এখনকার সংস্কৃতিতে কথা বলছে। আমরা এমন একটি সুপারহিরো মুভি চাচ্ছিলাম যা সুপারহিরো মুভি নয়, তবুও এতে সুপারহিউম্যানের শক্তি এবং সংগ্রামের মতো থিম রয়েছে।

২০১৫ সালের জুলাই মাসে জ্যাকম্যান তার টুইটারে উলভারিনের একটি ক্ল মধ্যাঙ্গুলি হিসেবে দিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে হ্যাশট্যাগ থাকে “#OneLastTime”। আর এই পোস্টের মাধ্যমেই তিনি জানিয়ে দেন এটাই উলভারিন হিসেবে তার শেষ উপস্থিতি (আনুষ্ঠানিকভাবেও পরবর্তীতে ঘোষণা দেওয়া হয়)। ভক্তদের জন্য ব্যাপারটি দুঃখজনক হলেও সামনে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল ‘লোগান’।

সিনেমা মুক্তির তারিখ দেওয়া হয় মার্চ ২০১৭, যা সুপারহিরো সিনেমার জন্য এমন একটি বছর ছিল যেখানে ভক্তরা দেখতে পেয়েছিল ‘স্পাইডারম্যান: হোমকামিং’, লাইভ অ্যাকশন ‘ওয়ান্ডার ওমেন’, ‘গার্ডিয়ান্স অফ দ্য গ্যালাক্সি: পার্ট-২’, এমনকি ‘থর: র‍্যাগনারক’-এর মতো ব্লকবাস্টার। এই সময়ে এসে লোগান সিনেমা পাড়ায় কেমন জমবে সেটাই ছিল দেখার বিষয়। কারণ ম্যানগোল্ড এমনভাবে সিনেমার আমেজ তৈরি করেছিলেন যা ব্যাপারটিকে ভিন্ন করে তোলে। তিনি সিনেমার টাইটেলে কোনোরকম উলভারিন বা এক্স-ম্যান ট্যাগলাইন দেননি।

সারা জীবন আমরা যাকে উলভারিন হিসেবেই বেশি জেনেছি-শুনেছি, শেষবার তার টাইটেলে থাকছে লোগান, কমিক্সে যে নামটি তাকে দিয়েছিল ছোটবেলার বন্ধু রোজ। এমনকি তিনি কোনোপ্রকার মুভি
মার্চেন্ডাইজ বা টিশার্টও রাখেননি সিনেমার প্রমোশনে। কারণ তিনি মনে করেন সিনেমার মূল উদ্দেশ্য ছিল দর্শকের মনে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করা। যথাসময়ে মুক্তি দেওয়া হয় লোগান। ‘ডেডপুল‘-এর পর এটাই ছিল ফক্সের দ্বিতীয় R-রেটিংপ্রাপ্ত সুপারহিরো মুভি। মাত্র ১৩ দিনের মধ্যেই আগের দুই উলভারিন মুভির আয় অতিক্রম করে লোগান, এবং সবমিলিয়ে আয় করে ৬১৯ মিলিয়ন ডলার। সিনেমায় হিউ জ্যাকম্যান তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফর্মেন্স দেন।

লোগান মুভির একটি দৃশ্যে জ্যাকম্যান © 20th Century Studios 

পুরো সিনেমায় উলভারিনের ব্যক্তিত্বকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে এক নতুন রুপে উপস্থাপন করা হয়। সচরাচর যাকে দেখা যেত জিন্স, লেদার জ্যাকেট এবং ডাক টেইল হেয়ারস্টাইলে, তার পরিবর্তে দেখা মেলে কোট-প্যান্ট পরিহিত অবস্থায়, প্রাপ্তবয়স্ক, ঘন সাদা দাড়িওয়ালা এক ব্যাক্তির। মোটরসাইকেল বাদ দিয়ে লিমো ড্রাইভিং করে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজে দেখা যায় লোগানকে।

গল্পের সময় ২০২৯, সিনেমা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বুঝিয়ে দেওয়া হয় ২৫ বছর ধরে কোনো মিউট্যান্ট জন্ম নেয়নি। লোগানের আপনাআপনি সেরে ওঠার ক্ষমতাও ধীরে ধীরে ক্ষণস্থায়ী হয়ে আসছে। সিনেমায় সহ-অভিনেতাদের অভিনয়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে প্যাট্রিক স্টুয়ার্টের প্রফেসর এক্সের অভিনয় ছিল বিস্ময়কর। একসময়ের মিউট্যান্টদের অভিভাবককে দেখা যায় সব হারিয়ে অসুস্থ অবস্থায় এক পরিত্যক্ত তেল শোধনাগারের স্মেল্টিং প্ল্যান্টে। পর্দায় জ্যাকম্যান ও স্টুয়ার্টের অভিনয় ছিল অসুস্থ বাবা এবং তার সেবায় নানারকম দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকা ছেলের মতো।

লোগান এবং প্রফেসর এক্স © 20th Century Studios 

এত দুর্দশার মাঝে লোগানের জীবনে আসে তারই মতো আরেকজন, সে লোরা। লোগানের ডিএনএ তার মধ্যে থাকায় লোগানের মতো সে-ও ছিল একজন মিউট্যান্ট। শুরুর দিকে তাকে নিজের কাছে রাখতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত লোরা এবং তার সাথীদের জীবন রক্ষাই হয়ে ওঠে লোগানের মূল উদ্দেশ্য। পর্দায় পুরোটা সময় প্রায় বাকরুদ্ধ অবস্থায় থেকে দর্শকদের অবাকই করে দেয় ১২ বছর বয়সী ড্যাফনি কিন। এত অল্প বয়স হওয়া সত্ত্বেও সে তার চরিত্রে এতটাই ঢুকে পড়েছিল যে লোগানের সাথে তার শেষ দৃশ্যে তাকে কান্নার অভিনয় করতে বলা হলে সে বাস্তবেই কেঁদে দেয়। এছাড়াও বয়েড হলব্রুকের ডোনাল্ড পিয়ারসের চরিত্রও ছিল তীক্ষ্ণ।

একটি দৃশ্যে লোগান এবং লোরা © 20th Century Studios 

এত করুণ অবস্থার মধ্যেও লোরা এবং প্রফেসর এক্সকে নিয়ে লোগানের বেঁচে থাকার যে একটি ক্ষুদ্র আশা ছিল, সেটিই অনন্যরুপে প্রকাশ করতে পেরেছেন ডিরেক্টর জেমস ম্যানগোল্ড। তিনি ওয়েস্টার্ন সিনেমার ভক্ত ছিলেন। ফলে সিনেমায় যে ভাব তিনি তৈরি করেছেন তা ছিল অধিকাংশই ‘৬০ এবং ‘৭০-এর দশকের হলিউডের ওয়েস্টার্ন সিনেমার ধারা। একসময়ের যে ধারাটি মূলধারার সিনেমায় ছিল, বর্তমানে তা প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে। সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফির থিম্যাটিক টোনের মাধ্যমে তিনি সেই ক্লাসিক নইয়ার এবং ওয়েস্টার্ন ধারাকেই ফুটিয়ে তুলেছেন।

অনুপ্রেরণা হিসেবে নেন ‘আনফরগিভেন’, ‘শেন’, ‘দ্য কাউবয়েজ’-এর মতো সিনেমা। যেখানে জারম্যানিক এক্সপ্রেশনিস্ট ফিল্ম-মেকিং স্টাইল ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই স্টাইলই তিনি লোগানে ব্যাবহার করেন। এই অর্থে তিনি তার কথামতোই সিনেমাকে যেমন সুপারহিরো মুভি থেকে আলাদা করে তোলেন, একইভাবে সিনেমাকে সুপারহিরোইজমের আর্ট হিসেবে গড়ে তোলেন।

ডিরেক্টর ম্যানগোল্ডের থেকে নির্দেশনা বুঝে নিচ্ছেন হিউ এবং ড্যাফনি © 20th Century Studios 

সিনেমার শেষে লোগানের করুণ অবস্থাই তার বহিঃপ্রকাশ। লোগান তার মৃত্যু নিয়ে সারাজীবন নিজের অস্তিত্বকে প্রশ্ন করেছে, এমনকি সিনেমার একটি সংলাপে বলা হয় সে নিজেকে মেরে ফেলার জন্য সবসময় অ্যাডামেন্টিয়ামের একটি বুলেট সঙ্গে রাখত। কিন্তু জীবনে পরিবার নিয়ে বসবাস বা সুখ বলে যে কিছু আছে সেটি সে তার শেষ সময়ে এসে বুঝতে পারে।

এক দৃশ্যে দেখানো হয় লোগানের এক পরিবারের সাথে পরিচয় হয় যারা তাকে নিজেদের বাসায় আমন্ত্রণ জানায় এবং রাতের খাবারের সময় তারা একপর্যায়ে কিছু হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠে। এরপরই লোগানকে উদ্দেশ্য করে প্রফেসর এক্স বলেন,

You know Logan, this is what life looks like… A home, people who love each other. A safe place you should take a moment and feel it.

এই উপলব্ধি লোগান শেষমেশ বুঝতে পারলেও তার সময় ঘনিয়ে এসেছিল। তাই মৃত্যুর পূর্বে যখন লোরা তার হাত লোগানের হাতে রাখে, তখন লোগান তার শেষ সংলাপটি বলে, “So this is how it feels like!” বুঝিয়ে দেওয়া হয় লোগান তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে না পারলেও সে লোরা এবং তার সাথীদের এক নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করেছে এবং অবশেষে সে তার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে চলেছে। প্রকৃতির যে বাস্তবতা কেউ এড়িয়ে যেতে পারে না, লোগানও তার ব্যতিক্রম নয়। এভাবেই সমাপ্তি ঘটে লোগান আর জ্যাকম্যানের টানা ১৭ বছরের পথচলার।

এই কমিক সিরিজের উপর নির্ভর করেই সিনেমাটি বানানো © Marvel Comics

সমালোচকরা অনেকেই মনে করেন, লোগান হলো বিশ্বের সেরা সুপারহিরো মুভিগুলোর একটি। এমনকি মুক্তির পর লোগান নাকি ডার্ক নাইট সেরা এমনও বিশ্লেষণ শুরু হয়েছিল। তবে সিনেজগতে এত পরিমাণে প্রভাব ফেলার পরও লোগানকে দেওয়া হয়নি কোনো বড় ধরনের সম্মাননা। ২০১৮ সালে ৯০ তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে লোগানকে নমিনেশন দেওয়া হয় মাত্র একটি ক্যাটাগরিতে। গোল্ডেন গ্লোবেও ছিল না কোনো নমিনেশনের ছোঁয়া, যেখানে সাম্প্রতিক ‘জোকার’ মুভিটি অ্যাকাডেমিতে তোলে ১১টি নমিনেশনসহ ২টিতে জয়।

বর্তমানে সুপারহিরো সিনেমা মানেই যা ছিল বড় আয়োজনে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসের ছড়াছড়ি, সেই জায়গায় এসে লোগানের মতো সিনেমা নিশ্চয়ই অতুলনীয় কিছু। যে উলভারিন চরিত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এডওয়ার্ড নর্টন, মেল গিবসন, ডুগ্রে স্কট, রাসেল ক্রো-র মতো শিল্পীরা, সেই উলভারিন করার জন্যই প্রতিদিন রুটিনমাফিক কখনো বরফের মতো ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করে চরিত্রে ঢোকার চেষ্টা করতেন জ্যাকম্যান, আবার কখনো দেহকে ৪৮ ঘন্টা ধরে ডিহাইড্রেশনে রাখতেন যাতে তার দেহ যতটা সম্ভব পানির ওজন হ্রাস করে এবং টোনড শেপ তৈরি করে।

এত কিছুর পরও অনেকেই ভাবেন লোগান ছিল শুধুই আরেকটি সুপারহিরো সিনেমা। তবুও এখন অনেক ভক্তের মনেই প্রশ্ন ওঠে- আবার কবে এমন কোনো সিনেমা আসবে বা কেমন হবে নতুন উলভারিন? সেটিই এখন দেখার বিষয়।

This bengali article discusses about the superhero movie 'Logan'.

Related Articles