Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্ট্রেঞ্জার থিংস: বাস্তব ও পরাবাস্তবতার মেলবন্ধন

নেটফ্লিক্সে প্রচারিত ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ বর্তমান সময়কার একটি জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ। সায়েন্স ফিকশন ও হরর জনরার মিশ্রণে নির্মিত এই সিরিজটির প্রথম সিজনের ৮টি পর্ব মুক্তি পায় ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই। প্রথম সিজনের ব্যাপক সফলতা ও জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় এ বছর অক্টোবরের ২৭ তারিখ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সিরিজটির দ্বিতীয় সিজন। আগ্রহী দর্শকদের জন্য স্ট্রেঞ্জার থিংস-এর প্রথম সিজনের রিভিউয়ের সাথে প্রতিটি পর্বের স্পয়লারমুক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিয়ে হাজির হয়েছি আজ আপনাদের সামনে।

স্ট্রেঞ্জার থিংস টাইটেল লোগো; সোর্স: Netflix

কাহিনীর প্রেক্ষাপট ১৯৮৩ সালে। এক ছুটির দিনে মাইকের বাসায় এসে খেলছিল ওর তিন বন্ধু উইল, ডাস্টিন ও লুকাস। খেলা শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে রহস্যময়ভাবে উইল নিখোঁজ হয়। উইলের বন্ধুরা হন্যে হয়ে ওকে খুঁজতে শুরু করে। উইলের নিখোঁজ হওয়ার প্রায় পরপরই দৃশ্যপটে প্রবেশ করে অদ্ভুত একজন মেয়ে। যার মাথার চুল কামানো, বোবার মতো চুপ করে থাকে এবং সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার মেয়েটির কিছু অতিমানবীয় ক্ষমতাও আছে! এই মেয়েটির পরিচয় কী? কোত্থেকে এলো? উইলের নিখোঁজ হওয়ার সাথে কি এই মেয়ের উদয় হওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে?

অন্যদিকে উইলের মা ও বড় ভাই জোনাথনও খুঁজছে উইলকে। খোঁজাখুঁজি করতে দিয়ে তারা আবিষ্কার করল তাদের ছোট্ট শহর হকিন্সের বিভিন্ন জায়গায় অস্বাভাবিক, অদ্ভুত ও বিপদজনক কিছু কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। স্ট্রেঞ্জার থিংসের শুরু এভাবেই।

সিরিজটি মুক্তি পাবার আগে পরিচালকদ্বয় ডাফার ব্রাদার্স জানিয়েছিলেন, স্টিভেন স্পিলবার্গ, জন কার্পেন্টার এবং স্টিফেন কিং-এর বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও সাহিত্যকর্ম তাদের এই প্রজেক্টটির অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। স্বভাবতই আশংকা জেগেছিল, স্ট্রেঞ্জার থিংস হয়তো কোনো মৌলিক প্রজেক্ট নয়, বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির সৃষ্ট সাহিত্যের মিশ্রণ মাত্র। কিন্তু সব আশংকাকে উড়িয়ে দিয়ে ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ প্রমাণ করে দিয়েছে, স্রেফ অনুপ্রেরণা নিয়েও কীভাবে সম্পূর্ণ নতুন একটি সিরিজ দর্শকদের উপহার দেয়া যায়।

বাস্তবসম্মত, জীবন ঘনিষ্ঠ একঝাঁক চরিত্র, প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশু শিল্পীদের দুর্দান্ত অভিনয়, সাসপেন্সযুক্ত চিত্রনাট্য ও বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালনায় স্ট্রেঞ্জার থিংস হয়ে উঠেছে অনন্য ও উপভোগ্য একটি সিরিজ। শুধু তা-ই নয়, সিরিজটির আবহ সঙ্গীত থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নিপুণতার ছাপ সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সিনেমাটোগ্রাফি এতটাই দুর্দান্ত যে, সিরিজটি দেখতে বসে দর্শকের মনে হবে তারা যেন কোনো সিনেমা দেখছেন।

প্রথম সিজনের স্পয়লারমুক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

১. চ্যাপ্টার ওয়ান: দ্য ভ্যানিশিং অব উইল বায়ার্স

এই পর্বে কিশোর উইল বায়ার্স নিখোঁজ হয়। উইলের মা একটি গোলযোগপূর্ণ ফোন কলে উইলের কণ্ঠস্বর শুনতে পান। এর পরপরই তার ফোনটি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিেটের কারণে পুড়ে যায়। উইলের তিন বন্ধু মাইক, ডাস্টিন ও লুকাস উইলকে খুঁজতে জঙ্গলে বের হয়। সেখানে ওরা মাথার চুল কামানো অদ্ভুত এক মেয়ের দেখা পায় ওরা।

ইলেভেনকে যখন উইলের বন্ধুরা খুঁজে পায়; সোর্স: Netflix

২. চ্যাপ্টার টু: দ্য উইয়ার্ডো ইন ম্যাপল স্ট্রিট

মেয়েটিকে নিয়ে ওরা মাইকের বাড়িতে লুকিয়ে আশ্রয় দেয়। এই পর্বে মেয়েটির অতিমানবীয় শক্তির নমুনা দেখতে পায় ওরা। অন্যদিকে মাইকের বড় বোন ন্যান্সি বাসায় মিথ্যে বলে রাতে তার বান্ধবী বার্বের সাথে নিজের বয়ফ্রেন্ড স্টিভের বাসায় পার্টি করতে যায়। রহস্যময়ভাবে পার্টি থেকে নিখোঁজ হয় বার্ব।

৩. চ্যাপ্টার থ্রি: হলি, জলি

বান্ধবী বার্বকে খুঁজতে বেরিয়ে অদ্ভুতদর্শন এক জানোয়ারের এক ঝলক দেখা পায় ন্যান্সি। উইলের মা ক্রিসমাস লাইটের মাধ্যমে বিশেষ এক কোডিং স্টিস্টেমে উইলের সাথে যোগযোগ করতে সক্ষম হন। উইল তাকে জানায়, সে জীবিত আছে, কিন্তু নিরাপদ নয়। উইলের মা দেখতে পান, দেয়াল ভেদ করে কোনো এক জানোয়ার তার দিকে এগিয়ে আসছে। রাতে এক জলাশয়ের ভেতরে উইলের লাশ পাওয়া যায়।

লাইটের সাহায্যে বিশেষ কোডিং সিস্টেমে যোগাযোগ করছেন উইলির মা; সোর্স: Netflix

৪. চ্যাপ্টার ফোর: দ্য বডি

অতিমানবীয় ক্ষমতাধর ইলেভেন নামের মেয়েটি উইলের বন্ধুদের সামনে ওয়াকি-টকির মাধ্যমে অলৌকিক শক্তি প্রয়োগ করে উইলের কণ্ঠস্বর শুনিয়ে প্রমাণ করে দেয় উইল এখনও মারা যায়নি। উইলের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে মর্গে রাখার পর ওর মাকে খবর দেয়া হয়। তিনি দাবি করেন, উইলের সাথে ক্রিসমাস লাইটের মাধ্যমে তার যোগাযোগ হয়, এটা উইলের লাশ হতে পারে না।

৫. চ্যাপ্টার ফাইভ: দ্য ফ্লিয়া অ্যান্ড দি অ্যাক্রোব্যাট

উইলের বাবা জানান, লাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করার ব্যাপারটা মানসিকভ্রম মাত্র। অন্যদিকে উইলের বন্ধুরা ইলেভেনের কাছ থেকে জানতে পারে উইল অন্য এক জগতে আটকা পড়েছে, যার নাম ‘আপসাইড ডাউন’। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অন্য ডাইমেনশনে কীভাবে যাওয়া যেতে পারে সেটা কৌশলে স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নেয় উইলের বন্ধুরা। অনাকাঙ্খিত এক ঘটনার মাধ্যমে ন্যান্সি সেই ডাইমেনশনে চলে যায় এবং ভয়ঙ্কর এক জানোয়ারের সামনে পড়ে।

বিজ্ঞান শিক্ষকের কাছ থেকে অন্য ডাইমেনশনে যাওয়ার তত্ত্ব জেনে নিচ্ছে উইলির বন্ধুরা। সোর্স: Netflix

৬. চ্যাপ্টার সিক্স: দ্য মনস্টার

জোনাথনের সহায়তা কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বাঁচে ন্যান্সি। বাসায় ফিরে বাবা-মাকে লুকিয়ে জোনাথনকে নিয়ে যায় নিজের রুমে। রাতে ন্যান্সির বয়ফ্রেন্ড স্টিভ জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে ওদের দু’জনকে একরুমে দেখে ভেবে নেয় ওরা প্রেম করছে। অন্যদিকে স্পেশাল এজেন্টরা ইলেভেনের খোঁজে হানা দেয় মাইকের বাড়িতে।

৭. চ্যাপ্টার সেভেন: দ্য বাথটাব

ইলেভেনের স্পেশাল পাওয়ার ব্যবহার করে একঝাঁক এজেন্টকে পরাস্ত করে গা ঢাকা দেয় উইলের বন্ধুরা। অন্য ডাইমেনশনে যাওয়ার ব্যবস্থা করে ইলেভেনের অতিমানবীয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে। ন্যান্সি ও জোনাথন কিম্ভুতকিমাকার জানোয়ারটিকে হত্যা করার জন্য বিভিন্ন অস্ত্র ও ফাঁদ সংগ্রহ করে প্রস্তুতি নেয়।

মাইক্রোবাস নিয়ে ধেয়ে আসা এজেন্টদের হাত থেকে ইলেভেনকে রক্ষা করার জন্য মরিয়া হয়ে ছুটছে উইলির বন্ধুরা; সোর্স: Netflix

৮. চ্যাপ্টার এইট: দ্য আপসাইড ডাউন

প্রথম সাত পর্বে সৃষ্টি হওয়া যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই পর্বে। তাই এই পর্বের ব্যাপারে কিছু লিখলেই স্পয়লায় হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

যারা একইসাথে রহস্য, সায়েন্স ফিকশন, হরর ও সুপারন্যাচারাল কাহিনি পছন্দ করেন, ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ তাদের জন্য দারুণ বিনোদনের উৎস হতে পারে। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সবাইকে নিয়ে দেখার মতো একটি সিরিজ এটি। প্রথম সিজনের সবকিছু চমৎকার হলেও কয়েকটি জিনিসের পরিস্কার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। দর্শকের মনে কিছু খটকা থেকে গেছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় সিজনে খটকাগুলো দূর হয়ে যাবে । দ্বিতীয় সিজনে মোট নয়টি পর্ব থাকছে। নির্মাতা ডাফার ব্রার্দাস প্রথম ছয়টি পর্বের নাম প্রকাশ করলেও প্লটের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে শেষের তিনটি পর্বের নাম এখনও প্রকাশ করেননি।

যমজ ভাই; রস ডাফার ও ম্যাট ডাফার। যারা মূলত ডাফার ব্রাদার্স নামে পরিচিত। সোর্স: Tv Insider

‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ নেটফ্লিক্সে প্রচারিত হলেও আমাদের এই অঞ্চলের দর্শকদেরকে প্রথম সিজনটি অন্য কোনো সোর্স থেকে ডাউনলোড করে দেখতে হবে। মজার বিষয় হলো, সিরিজটির প্রথম সিজনের সবগুলো পর্বের চমৎকার বাংলা সাবটাইটেল পাওয়া যাচ্ছে। তাই, ইংরেজিতে কারও দুর্বলতা থাকলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বাংলা সাবটাইটেল দিয়ে নির্বিঘ্নে পুরো সিরিজ উপভোগ করা যাবে।

সিরিজের অফিসিয়াল ব্যানার; সোর্স: Netflix

স্ট্রেঞ্জার থিংস (প্রথম সিজন)

পর্ব সংখ্যা: ০৮ টি
প্রতি পর্বের ব্যাপ্তি: ৪২-৫৫ মিনিট
ভাষা: ইংরেজি
প্রচারের মাধ্যম: নেটফ্লিক্স
মুক্তির তারিখ: ১৭//০৭/২০১৬
নির্মাতা: ডাফার ব্রাদার্স
IMDb রেটিং: ৮.৯/১০
রটেন টম্যাটোস: ৯৬% ফ্রেশ
মেটাক্রিটিকস: ৭৬%

স্ট্রেঞ্জার থিংস প্রথম সিজনের অফিসিয়াল ট্রেইলার:

ফিচার ইমেজ- Concrete Playground

Related Articles