Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শেপ অফ ওয়াটার: মানবীয় এক জলজ প্রেমের অস্কারজয়ী উপাখ্যান

প্রেম কীভাবে আসে কে পারে বলতে? কিন্তু তাই বলে এক উভচর প্রাণীর সাথে মানবীর প্রেম? মানবী না হয় ভালোবাসলো, কিন্তু পর্দায় দর্শক ভালোবাসবে তো? বেসেছে ভালো বটে। অস্কারই জয় করে নিলো গিয়ের্মো দেল তরোর জলজ প্রেমের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী The Shape of Water। আজকের আয়োজন অস্কারজয়ী এ মুভিটিকে নিয়েই।

The Shape of Water মুভিটির পোস্টার; Source: IMDb

সময়টা ১৯৬২ সাল। আমেরিকার মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোর। সেখানে রয়েছে মার্কিন সরকারের এক গোপন ল্যাব। দক্ষিণ আমেরিকার এক নদী থেকে কর্নেল রিচার্ড স্ট্রিকল্যান্ড এক রহস্যময় জীব ধরে নিয়ে আসে যেটি কিনা দেবতা হিসেবে পূজিত হচ্ছিল গহীন অরণ্যে। আর সেটিকে নিয়েই চলতে থাকে নৃশংস গবেষণা। আমাদের গল্পের নায়িকা এলিসা এস্পোসিতো এ ল্যাবেই এক পরিষ্কারকর্মী হিসেবে কাজ করে। একদিন সে আবিষ্কার করে ফেলে যে এ রহস্যময় প্রাণীটি মানুষ না হলেও মানুষের মতোই দেখতে, একইসাথে জলজ আবার স্থলজও বটে, তবে বেশিক্ষণ পানি ছাড়া থাকে না বলে তাকে জলজ বলেই চালিয়ে দেয়া যায়। ধীরে ধীরে লুকোনো এক সখ্যতা গড়ে ওঠে দুজনের মাঝে। এক’টি’ থেকে এক’জন’-এ পরিণত হয় সে এলিসার কাছে।

The Shape of Water মুভির একটি দৃশ্য; Source: IMDb

তাদের সখ্যতার আরেকটা কারণ ছিল। আর সেটি হলো এলিসা একজন বাকপ্রতিবন্ধী, কানে শুনতে পেলেও বলতে সে পারে না কিছু। তাই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েই কাজ সারতে হয় তাকে। ছোটবেলায় তাকে কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল পানিতে, কাঁধের কাছে তার ক্ষতের দাগ। সে ক্ষতের কারণেই সে কথা বলতে পারে না ভয়েস বক্স নষ্ট হয়ে যাওয়াতে।

আর জলজ প্রাণীটিও কথা বলতে না পারায় দুজনের এ মিল মুখ্য হয়ে ওঠে। শীঘ্রই এলিসা বুঝতে পারে সে ডিম খেতে পছন্দ করে, তাই প্রতিদিন তার জন্য সে ডিম আনতে শুরু করে। ডিম থেকে সম্পর্ক গড়ায় গান পর্যন্ত, গোপন সে ল্যাবে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে গ্রামোফোনের রেকর্ড থেকে গান ছাড়ে প্রাণীটির জন্য। নিজের অজান্তেই কখনো প্রেমের স্বাদ না পাওয়া এলিসা ভালোবেসে ফেলে নাম না জানা এক জলজ অমানব আরণ্যক দেবতাকে। কিন্তু সুখের সময় কি আর বেশিদিন টেকে?

The Shape of Water মুভির একটি দৃশ্য; Source: IMDb

সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে স্পেস রেসে এগিয়ে থাকার জন্য এ প্রাণীটিকে ব্যবচ্ছেদ করে সুবিধে উদ্ধারের আদেশ আসে স্ট্রিকল্যান্ডের ওপর। সোভিয়েত গুপ্তচর ও এ ল্যাবের বিজ্ঞানী পরিচয়ে থাকা রবার্ট হফস্টেটলার এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। যখন বোবা এলিসা জানতে পারে আমেরিকার পরিকল্পনার কথা তখন সে আর শান্ত থাকতে পারে না। তারই এক বুড়ো বন্ধু আর সহকর্মী আরেক নারী পরিষ্কারকর্মীকে নিয়ে কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। একদিকে মার্কিন পরাশক্তি, আরেক দিকে সোভিয়েত চক্রান্ত, আর এদিকে কেবল গুটিকয়েক নগণ্য মানুষ এক নারীর অবলা প্রেমের স্বার্থে এটে ফেলে কঠিন পরিকল্পনা। কী সেই পরিকল্পনা? মেয়েটি কি তার অব্যক্ত ভালোবাসার নাগাল পেয়েছিল? পরিপূর্ণতা পেয়েছিল তার প্রেম?

গিয়ের্মো দেল তরো কেবল এক অসম প্রেমকাহিনীই আঁকেননি এখানে, বানিয়ে ফেলেছেন এক স্নায়ুযুদ্ধের থ্রিলার। টানটান উত্তেজনার পাশাপাশি ষাটের দশকের গান, একটুখানি আনন্দ, কিছু হিংস্রতা, আর এক পশলা প্রেমের মিশেলে অস্কারের রেসিপি রেঁধে ফেললেন দেল তরো।

The Shape of Water মুভির একটি দৃশ্য; Source: IMDb

কিন্তু, বইপড়ুয়ারা সিনেমাখানা দেখতে দেখতেই এক দেজা ভ্যুর দেখা পাবেন। মনে হবে, কোথায় যেন পড়েছি এ গল্প? ১৯২৮ সালে রুশ লেখক অ্যালেক্সান্ডার বেলায়েভ (Alexander Belyaev) লিখেছিলেন তার কালজয়ী বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘উভচর মানব’ বা ‘Amphibian Man‘। সেখানেও এক জলজ প্রাণীর সাথে এক মানবীর প্রেমের গল্প বলা, একই সাথে তাকে অত্যাচারও করা হয়েছে সে গল্পে। মজার ব্যাপার, Amphibian Man ছবি বের হয় ১৯৬২ সালে, ঠিক যে বছরের পটভূমিতে ২০১৭ সালে বের হওয়া গিয়ের্মো দেল তরো-র The Shape of Water। এটা নিশ্চিত যে তেল তরো এ গল্পের বিষয়ে সম্যক অবগত।

কিন্তু বিতর্ক হয় অন্য জায়গায়। ২০১৫ সালে এক ডাচ স্টুডেন্ট ফিল্ম বের হয়েছিল, যার নাম ছিল The Space Between Us। শেপ অফ ওয়াটারের মতোই তার একই কাহিনী। একই রকম দেখতে, একই রকম রঙও বলা যায়। পার্থক্য এটাই যে, দেল তরোর আছে বড় বাজেটের সুবিধে। কিন্তু অবশ্যই স্ক্রিনপ্লের কোনো ক্রেডিট দেল তরো ছাড়া আর কেউ পাননি। অস্কারের আগে স্ক্যান্ডার এড়াতে নেদারল্যান্ডে তাদের সাথে যোগাযোগ করেন দেল তরো, এবং তাদেরকে রাজি করান যেন তারা কোনো দাবি করে না বসেন। আসলেই, তারা বিবৃতি দেন যে, এ দুই মুভির কাহিনীতে কোনো মিল নেই।

দ্য স্পেস বিটউইন আস ছবির দৃশ্য; Source: http://indie-cinema.com

পুলিতসার পুরস্কার জয়ী পল জিন্দেলের বিখ্যাত এক নাটক Let Me Hear You Whisper মঞ্চায়িত হয় ১৯৬৯ সালে, ১৯৯০ সালে সেটি টিভি মুভি হিসেবে চিত্রায়িত হয়। এখানেও আমরা দেখতে পাই কাছাকাছি এক গল্প। পল জিন্দেল মামলাও ঠুকে দেন ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আবার, ১৯৯১ সালে মুক্তি পাওয়া Delicatessen চলচ্চিত্রের একটি নাচের দৃশ্যের সাথে শেপ অফ ওয়াটারের একটু দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

দেল তরো অবশ্য এগুলো অস্বীকার করেন। তিনি জানান যে, তিনি ও Daniel Kraus এ মুভির রূপ দেয়ার কাজ শুরু করেন ২০১১ সাল থেকে।

The Shape of Water মুভির একটি দৃশ্য; Source: IMDb

জলজ জীবের প্রতি প্রেমের আগে থেকেই আমরা দেখতে পাই পানির প্রতি এলিসার এক অমোঘ আকর্ষণ। পানি থেকে কুড়িয়ে পাওয়া এলিসা পানিতে খুবই আরামে থাকে, এক দৃশ্যে পানিতে বাথরুম ডুবে গেলেও তার কোনো আপত্তি অনুভব হচ্ছিল না।

অভিনয়, চিত্রায়ন, মিউজিক আর ভিজুয়াল ইফেক্ট কোনো দিক দিয়েই চেষ্টার কোনো ত্রুটি দেখা যায়নি মুভিটি জুড়ে। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় মুক্তি পাওয়া এ ছবিতে এলিসার চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন স্যালি হকিন্স। আর ভিলেইন স্ট্রিকল্যান্ডের চরিত্রে মাইকেল শ্যানন ছাড়া অন্য কাউকে বুঝি মানাতো না। এছাড়া রিচার্ড জেনকিন্স আর অক্টাভিয়া স্পেন্সারের কথাই বা কীভাবে না উল্লেখ করে থাকা যায়?

শেপ অফ ওয়াটার নিয়ে ভক্তকুলের মাঝে আরেকটি বিষয়ে সাড়া পড়ে যায়, আর সেটি হলো এটি কি ডেল তরোর আরেক মুভি সিরিজ হেলবয়ের (Hellboyপ্রিকুয়েল? হেলবয়ের Abe Sapien চরিত্রের সাথে বাহ্যিক দিক থেকে মারাত্মক মিল পাওয়া যায় শেপ অফ ওয়াটারের উভচর মানবের। এমনকি মুভির ক্রেডিটেও তাকে The Amphibian Man নামে উল্লেখ করা হয়েছে। মজার ব্যাপার, হেলবয়ের Abe Sapien আর শেপ অফ ওয়াটারের অ্যাম্ফিবিয়ান ম্যান উভয়ের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন Doug Jones! তবে কি আসলেই এটি হেলবয়ের কোনো প্রিকুয়েল? টুইটারে এ প্রশ্ন করার পর ডেল তরো সরাসরি উত্তর দেন, “না।”

তাহলে হয়ত এটি প্রিকুয়েল না হলেও কেবল Abe চরিত্র নিয়ে। এক ভক্তের এ কথার জবাবেও ডেল তরো সাফ জানিয়ে দেন, “মোটেও Abe নয়।” ভক্তকুলকে তাই শেপ অফ ওয়াটারকে Abe Sapien এর আনঅফিসিয়াল অরিজিন স্টোরি ভেবে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। হেলবয় আর শেপ অফ ওয়াটার উভয় ক্ষেত্রেই যে তার পরিচয় অ্যাম্ফিবিয়ান ম্যান!

কানাডায় চিত্রায়িত ১২৩ মিনিটের এ চলচ্চিত্রটি ৯০তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে ১৩টি নমিনেশন পায়, জিতে নেয় চারটি ক্যাটেগরিতে অস্কার- বেস্ট পিকচার, বেস্ট ডিরেক্টর (অর্থাৎ গিয়ের্মো দেল তরো), বেস্ট প্রোডাকশন ডিজাইন এবং বেস্ট অরিজিনাল স্কোর। তাছাড়া গত গ্রীষ্মে ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গোল্ডেন লায়নও জিতে নেয়। তবে অনেকেই ধারণা করছিলেন,  Get Out কিংবা Three Billboards Outside Ebbing, Missouri বুঝি অস্কার জিততে যাচ্ছিল। কিন্তু তাদের আশায় গুড়ে বালি দিয়ে জিতে যায় শেপ অফ ওয়াটার।

The Shape of Water মুভির একটি দৃশ্য; Source: IMDb

মজার ব্যাপার, স্যালি হকিন্স এ ছবিতে পানির নিচের দৃশ্যগুলো সম্পন্ন করবার পর লন্ডনে ওড়াল দেন Paddington 2 (2017) ছবির চিত্রায়নের জন্য। সেখানে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন যে, ওখানেও পরদিন তাকে পানির নিচে অভিনয় করতে হবে। ২০১৪ সালে স্যালিকে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসের দিন দেল তরো এ ছবির কথা বোঝান, কিন্তু তিনি ছিলেন মাতাল। পরে তিনি বলেছিলেন যে, এক জলজ প্রাণীর সাথে মানবীর প্রেমকাহিনীর প্রস্তাব দেয়ার সময় মাতলামি যেন আরো বেশি প্রকট মনে হচ্ছিল। ১৯.৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের এ ছবিটি মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত আয় করে নেয় ১৮৫.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!

আইএমডিবি-তে ৭.৫ রেটিং, রটেন টমেটোজের টমেটোমিটারে ৯২% স্কোর পাওয়া অস্কারজয়ী অসম প্রেমের এ রুপালি পর্দার সৃষ্টি দেখে আপনার কেমন লাগলো?

The Shape of Water মুভির একটি নাচের দৃশ্য; Source: IMDb; Source: The Film Experience

ফিচার ইমেজ: hdqwalls.com

Related Articles